অপরাধীদের জীবন অবলম্বনে তৈরি হয়েছে যে সিনেমাগুলো
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
বিখ্যাত ব্যক্তিদের জীবন নিয়ে অনেক সময় তৈরি হয় চলচ্চিত্র, যাকে ইংরেজিতে বায়োপিক বলা হয়ে থাকে। এই বিখ্যাত ব্যক্তিরা হয়ে থাকেন খেলোয়ার, রাজনীতিবিদ, অভিনেতা অথবা লেখক। কিন্তু কখনো চোর-ডাকাত বা এই ধাচের অপরাধীর জীবনী নিয়ে সিনেমা তৈরি হতে দেখেছেন? হ্যাঁ, এমনও কিছু ছবি আছে, যা অপরাধীদের জীবন অবলম্বনে তৈরি হয়েছে।
কিন্তু সব ছেড়ে কেন অপরাধীদের বায়োপিক করতে হবে? কারণ সেইসব অপরাধীরা ছিলেন অন্য দশজন অপরাধীর থেকে বিচিত্র ও তাদের কাজের ধরনটাও ছিলো ভিন্ন, আর এই ভিন্ন ধরনের কাজের জন্য তারা পেয়েছে দুনিয়া জুড়ে ব্যাপক খ্যাতি। না আসলে; একে খ্যাতি না, বলা যায় কুখ্যাতি। তো আজ এমনই কিছু সিনেমা নিয়ে আলোচনা করবো, যা তৈরি হয়েছে কুখ্যাত অপরাধীদের জীবন অবলম্বনে।
(১) ফ্র্যাংক অ্যাবাগনেল, যার জীবন অবলম্বনে ২০০২ সালে তৈরি হয় হলিউডের বিখ্যাত সিনেমা ক্যাচ মি ইফ ইউ ক্যান। এখানে অভিনয় করেন লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিও এবং টম হ্যাংস। ফ্র্যাংক অ্যাবাগনেল ছিলেন একজন প্রতারক, যিনি চেক জালিয়াতির উপর দক্ষ ছিলেন। তিনি আমেরিকার বারোটি ব্যাংকের চেক জালিয়াতি করে লক্ষাধিক ডলার হাতিয়ে নেয় মাত্র তেইশ বছর বয়সে। এ ছাড়াও পাইলট, ডক্টর ও উকিল পরিচয়ে বিভিন্ন জায়গায় প্রতারণা করেছে এই ধূর্ত অপরাধী।
ফ্র্যাংক অ্যাবাগনেল ছিলেন তার বয়সের তুলনায় অত্যন্ত মেধাবী একজন মানুষ, যে কোনো কাজ খুব সহজে রপ্ত করতে পারতেন ও নিজের কথার জাদুতে অন্যকে নিজের সপক্ষে এনে কাজ হাসিল করে নিতে তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্ত। এমন মেধাকে বোধহয় আমেরিকান সরকার জেলে পচিয়ে নষ্ট করতে চায়নি, তাই বারো বছর সাজা হওয়ার পরেও ফ্র্যাংক অ্যাবাগনেল মাত্র পাঁচ বছর জেল খেটে ছাড়া পান ও এফবিআইয়ের ফিন্যানশিয়াল ফ্রড ডিপার্টমেন্টে কাজ করা শুরু করেন।
(২) ১৯৭৬ সালে ফ্র্যান্সে সোসাইটি জেনারেল নামের একটি ব্যাংকে ঘটে যায় এক দুধর্ষ ব্যাংক ডাকাতি। যে ডাকাতি হয় সবার অজান্তে এবং কোনো প্রকার রক্তপাত ছাড়াই। এই ব্যাংক ডাকাতির মাস্টার মাইন্ড ছিলেন অ্যালবার্ট স্প্যাগগিয়ারি। তিনি ফ্যান্সের সেনাবাহিনীর একজন সাবেক সৈনিক ছিলেন, শোনা যায় তিনি সামরিক গোয়েন্দা বিভাগেও কাজ করেছেন। বিলাসি জীবন ও বড় কিছু করার ইচ্ছা থেকেই তিনি এই ডাকাতির পরিকল্পনা করেন।
অ্যালবার্ট স্প্যাগগিয়ারি ও তার দল সুরঙ্গ খুড়ে ব্যাংকের বাহির থেকে ভিতরে প্রবেশ করে, ও ব্যাংকের ভোল্ট ও চারশ'টি লকার ভেঙ্গে সব লুট করে নিয়ে যায়। বড়দিনের ছুটি থাকায় কাজটি করে তারা সম্পূর্ন বিনা বাধায়। সবার অজান্তে লুট হয়ে যায় সোসাইটি জেনারেল ব্যাংক, কিন্তু শেষ রক্ষা হয় না। দলের একজনের মাধ্যমে ধরা পরে অ্যালবার্ট স্প্যাগগিয়ারি। কিন্তু অ্যালবার্ট স্প্যাগগিয়ারি ভরা কোর্ট রুমের জানালা ভেঙ্গে জাম্প করে পালিয়ে যান এবং তারপর তাকে ও তার লুট করা অর্থসম্পদের আর কোনো হদিস পাওয়া যায় না।
অ্যালবার্ট স্প্যাগগিয়ারি ও তার দুধর্ষ ব্যাংক ডাকাতি নিয়ে ফ্র্যান্সে ২০০৮ সালে তৈরি হয় দ্য ইজি ওয়ে সিনেমাটি।
(৩) চ্যাপো: এস্কেপ অব দ্য সেঞ্চুরি ২০১৬ সালে মুক্তি প্রাপ্ত মেক্সিকান চলচ্চিত্র, যা তৈরি হয়েছে মেক্সিকোর কুখ্যাত ড্রাগ লর্ড এল চ্যাপোকে কেন্দ্র করে। মেক্সিকোর শক্তিশালি নিরাপত্তা বেষ্টনী ঘেরা জেল থেকে এল চ্যাপো পলায়ন করে, আর এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সিনেমার কাহিনী গড়ে উঠেছে। এই মুভিতে এল চ্যাপোর ব্যক্তিগত জীবনসহ তার ড্রাগ মাফিয়ার বিশাল নেটওয়ার্ক ও বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্বের সাথে সম্পর্কের বিষয়ে বিস্তারে তুলে ধরা হয়েছে।
(৪) ওয়ান্স আপন অ্যা টাইম ইন মুম্বাই সিনেমাটি মুম্বাইয়ের আন্ডারওর্য়াল্ডের শুরুর দিনের ঘটনাগুলো নিয়ে তৈরী। এখানে মুম্বাইয়ের দুইজন ডনকে দেখানো হয়েছে। একজন হাজি মাস্তান ও আরেকজন দাউদ ইব্রাহীম।
সিনেমাটিতে হাজি মাস্তানের জীবনের উত্থান ও তার পতন দুটোই দেখানো হয়েছে এবং হাজি মাস্তানের পতনের মধ্য দিয়ে দাউদ ইব্রাহিমের উত্থান দেখানো হয়েছে। কীভাবে দাউদ পুরো মুম্বাইয়ে তার একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে তার একটা ছোট বর্ননা এই ছবিতে দেওয়া হয়।
(৫) সর্বশেষ যাকে নিয়ে আলোচনা করবো তার অপরাধগুলো সংগঠিত হয়েছে বেশিরভাগ ভারতীয় উপমহাদেশে, এবং তাকে নিয়ে নির্মিত সিনেমাটিও বলিউডের। তিনি হচ্ছেন চার্লস সোভরাজ, যার বিরুদ্ধে চুরি প্রতারণাসহ সিরিয়াল কিলিংয়েরও অভিযোগ আছে। গোয়াতে বেড়াতে আসা বিদেশি টুরিস্টদের ড্রাগের ওভার ডোজ দিয়ে মেরে ফেলতো চার্লস, কিন্তু তাকে একজন সিরিয়াল কিলার বলা যায় কি না এই নিয়ে বির্তক আছে। কারণ সিরিয়াল কিলিং এ নির্দিষ্ট কোনো মোটিভ কাজ করে না, বিকৃত মস্তিস্কের চিন্তাভাবনা থেকে এই অপরাধ হয়ে থাকে। কিন্তু চার্লসের বক্তব্য- সে গোয়াতে বেড়াতে আসা বিদেশি টুরিস্টদের মারতো তাদের পাসপোর্ট হাতানোর জন্য।
চার্লস ছিল একজন অসম্ভব মেধাবী অপরাধী, প্রচুর বই পড়া ও মুভি দেখার নেশা ছিল তার। সাইক্যালোজি ও আইন শাস্ত্রে ছিল অগাধ জ্ঞান। কারাগারে থাকাকালীন অন্যান্য কয়েদিদের আইনি পরামর্শ দেওয়ার জন্য সে জেলের ভিতর বেশ পরিচিত ছিল।
চার্লসের বিষয়ে যে দুটি ঘটনা সবচেয়ে বেশি আলোড়ন ফেলেছিল, তাদের ভিতর একটি হলো নেপালের এক রাজকুমারীকে বিয়ে করা। চার্লস নিজেকে রাজপুতানার কোনো এক রাজপরিবারের রাজ্যচ্যুত রাজকুমার হিসেবে পরিচয় দিয়ে সেই রাজকুমারীকে বিয়ে করে।
চার্লসের জীবনের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনাটি ছিল তার জেল থেকে পালানো। বন্ধুসুলভ ও আমোদপ্রিয় স্বভাবের চার্লস গোটা জেলকে মাতিয়ে রাখতো, কখনো পার্টি দিত, কখনো সিনেমা দেখানোর আয়োজন করতো, আবার রবিবার করে নিজে ভালো ভালো রান্না করে গোটা জেল স্টাফ ও কয়েদিদের খাওয়াতো। এমনই এক রবিবার চার্লস জেলের সবার জন্য তৈরি করলো কাস্টার্ড (মিষ্টি জাতীয় এক ধরনের খাবার)। যা খেয়ে সবাই গভির ঘুমে ঢলে পড়লো, আর এই সুযোগে চার্লস ও তার বন্ধুরা নিশ্চিতে জেলের সামনের ফটক খুলে পালিয়ে যায়। এই ঘটনা ভারতের পুলিশ বিভাগের রাতের ঘুম কেড়ে নেয়।
চার্লস ছিল এক বিচিত্র চরিত্রের অপরাধী, এই কারণে সাধারন মানুষের তার সম্পর্কে ব্যাপক কৌতুহল ছিল, পেপার-পত্রিকায় তার ব্যাপারে জানতে চাইতো। চার্লস এতোটাই ধুরন্ধর যে এই ব্যাপারটাকেও কাজে লাগিয়ে ইনকামের ব্যবস্থা করলো। সে পেপার ও টেলিভিশনে প্রত্যেকটা ইন্টারভিউ দেওয়ার জন্য ঘন্টা প্রতি পারিশ্রমিক নিতো। বর্তমানে এই কুখ্যাত অপরাধী নেপালের জেলে সাজা কাটছে। ২০১৪ সালে বলিউডে তাকে নিয়ে তৈরি হয় ম্যায় ওউর চার্লস সিনেমাটি। এখানে চার্লসের ভূমিকায় অভিনয় করেন বলিউডের গুণী অভিনেতা রনদীপ হুদা।
এখানে ৫ টি সিনেমা নিয়ে আলোচনা করলাম, এছাড়াও বিভিন্ন ফ্লিম ইন্ড্রাস্ট্রিতে অনেক বড় বড় অপরাধীকে কেন্দ্র করে সিনেমা তৈরি হয়েছে।
-
* প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন
* সমাজের নানান অসঙ্গতি নিয়ে আওয়াজ তুলুন। অংশ নিন আমাদের মিছিলে। যোগ দিন 'এগিয়ে চলো বাংলাদেশ' ফেসবুক গ্রুপে
আরও পড়ুন-