ক্রসফায়ার: যে আগুন শুধু জ্বালাতে জানে, পোড়াতে জানে!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
আজকে যখন দেশের একটা 'এলিট' বাহিনীর কেউ ক্রসফায়ারের শিকার, তখন মিডিয়া, সরকার, জনগণ সবাই নড়েচড়ে বসেছে, ক্রসফায়ারের বিরুদ্ধে মুখ খুলছে। তবে কি 'ক্রসফায়ার' শুধু নন এলিট, নাঙ্গা ভুখা বাঙ্গালীর জন্যে?
সর্বশেষ জোকার মুভিতে শেষের দিকে মুরে ফ্র্যাংকলিনের ইন্টারভিউয়ে জোকার এক সময় কনফেস করে বসে যে আন্ডারগ্রাউন্ড ট্রেনের তিন যুবক হত্যা সে করেছে। এ নিয়ে তার ভেতর কোন অনুশোচনা নেই। সে সময় যে কথাগুলো সে বলে, তা হলো -
...Have you seen what it's like out there, Murray? Do you ever actually leave the studio? Everybody just yells and screams at each other. Nobody's civil anymore. Nobodoy thinks what it's like to be the other guy. You think men like Thomas Wayne, men at ease, ever think what it's like to be a guy like me? To be anybody but themselves...
সমাজের এলিট অংশের ঐ তিন যুবক, যারা ট্রেনে নারীর শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেও, একজন অসুস্থ, মানসিক রোগাক্রান্তকে শারীরিক নির্যাতন করা সত্ত্বেও তারা খুন হলে সারা শহরের মানুষ, এমন কি মেয়র পদপ্রার্থী থেকে শুরু করে সকলে তাদের জন্য অশ্রুপাত করে, কিন্তু জোকার বা আর্থার এর মতো নিচুস্তর এর মানুষজনের জন্য সে অশ্রুর কোন কোটা নেই, বরাদ্দ নেই মায়া।
দিনের পর দিন 'ক্রসফায়ার' বা 'বন্দুকযুদ্ধ' এর বিরুদ্ধে আমরা বলে যাচ্ছি, লিখে যাচ্ছি, কারও কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। একটি গণতান্ত্রিক দেশের জন্য, স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা সমৃদ্ধ একটি দেশের জন্য এটা যে কতো লজ্জার, অপমানের, আমরা বারবার বলেও সেটা বোঝাতে পারিনি। সাময়িক হিরোইজম এর আওতায় অর্গাজম হয়ে যাওয়া জনগন এই ক্রসফায়ারকে নিয়ে ফ্যান্টাসিতে ভোগে।
নট গিল্টি আনলেস প্রুভেন- এর আওতায় 'সম্ভাব্য ধর্ষক'-কে খুন করে তার গলায় ঝুলিয়ে দেয়া হয় প্ল্যাকার্ড, 'বিচারকারী'-র নাম হারকিউলিস, আর পাতলুন ভিজে যায় চিটচিটে বীর্যে জনতার, খুশীতে৷ একটাবার প্রশ্ন করে না, তাহলে দেশে আদালতের কি দরকার? সেটাকে কাঁচাবাজারে পরিণত করা হোক তবে! সেখান থেকে বেগুন কিনে যে যার নিতম্বে ভরে রাখবে ক্ষন। আপনারা যারা ক্রসফায়ারকে সমর্থন করেন, হাতেতালি দেন, আপনাদের কানে কি একবার বাজে না কথাটা, 'আব্বু তুমি কানতাছো যে?'। আমি দিনের পর দিন ঘুমাইতে পারি নাই, আমার বুকের ভিতরে দুমড়ে মুচড়ে গেছে, বারবার বাজে একরামকে মারবার আগে তার মেয়ের সেই কান্না, সেই চিৎকার, 'আব্বু তুমি কানতাছো যে৷'
পলিটিশিয়ান হোক, আর সম্ভাব্য ধর্ষক হোক আর সাধারণ জনগণ হোক আর যেই হোক, এদের কারও ক্রসফায়ারের খবরে কাউকে বিচলিত হতে দেখিনি, হাতে পায়ে ধরেও বোঝাতে পারিনি কেনো এইটা অন্যায়, কেনো এইটা রাষ্ট্রের জন্য লজ্জার, আপনার আমার জন্যে হুমকি। একটা দেশ সেই দেশের কতিপয় বাহিনীর 'মর্জি' দ্বারা পরিচালিত হতে পারে না, আর যদি হয় তবে আইন করে গনতান্ত্রিক শব্দটি 'বাহিনীতান্ত্রিক' করবার জোর দাবী রইলো৷ অথচ আজকে যখন দেশের একটা 'এলিট' বাহিনীর কেউ সেই একই পরিস্থিতির স্বীকার, আজকে মিডিয়া, আজকে সরকার, আজকে জনগণ সবাই তাদের নিতম্ব নেড়েচেড়ে বসেছে। তবে কি 'ক্রসফায়ার' শুধু নন এলিট, নাঙ্গা ভুখা বাঙ্গালীর জন্যে? নিতম্ব নাড়াচাড়া দিয়ে বসা কি তবে শুধু এলিটদের জন্য বরাদ্দ?
আগুন শুধু জ্বালাতে জানে, পোড়াতে জানে। কে এলিট আর কে এলিট না, সে জানে না৷ আগুন নিয়ে খেলা তাই বন্ধ করেন। দেশের আইন, আদালতকে উন্নত করেন, আদালত এর বিকল্প হিসেবে ক্রসফায়ার নামক স্টান্টবাজি বন্ধ করেন।
*
প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন