হাজারটা ট্রলের পরও সেই ডেইজি আপাই আছেন মানুষের পাশে!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
আমরা ট্রল করেছি ডেইজি আপাকে, যিনি অপকর্মে না জড়িয়ে, রাজনৈতিক ক্ষমতাকে নিজের আখের গোছানোর কাজে না লাগিয়ে বরং মানুষের জন্যে কাজ করতে চেয়েছেন, এখনও করছেন...
৩১ নং ওয়ার্ডের সাবেক কমিশনার ডেইজি সারওয়ারের কয়েকটা ভিডিও দেখলাম ফেসবুকে। এলাকায় লোকজনের মধ্যে মাস্ক বিলিয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। রিক্সাচালক, হকার- এরকম নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে গিয়ে তাদের হাতে মাস্ক তুলে দিচ্ছেন, সবসময় মাস্ক পরে থাকার অনুরোধ করছেন, বলছেন নিজেদেরকে নিরাপদ রাখার জন্যে।
ডেইজি সারওয়ারের কর্মতৎপরতা দেখে ভালো লাগলো। নির্বাচনে তিনি হেরে গিয়েছিলেন, জনপ্রতিনিধি নন তিনি। চাইলেই 'সবকিছু চুলোয় যাক, লোক মরলে মরুক, করোনায় ভুগলে ভুগুক, আমার তাতে কী?'- এই বলে ঘরে বসে থাকতে পারতেন তিনি, নিজের নিরাপত্তাও নিশ্চিত হতো তাতে। কিন্ত সেই সহজ আর নিরাপদ রাস্তা তিনি বেছে নেননি, কঠিণেরে ভালোবেসেছেন, আপন করেছেন, নেমে এসেছেন রাস্তায়, মানুষের মাঝে।
ডেইজি সারওয়ার যে কাজটা করছেন, যেভাবে মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন, এটা এদেশের ৩০০ জন সাংসদের করার কথা ছিল। প্রায় পাঁচশো উপজেলা চেয়ারম্যান আছেন এদেশে, তাদের করার কথা ছিল। বারোটা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, আর আর তাদের আওতায় থাকা অজস্র ওয়ার্ড কমিশনার- সবার উচিত ছিল যারা তাদের নির্বাচিত করেছে, তাদের পাশে থাকা, তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, করোনার ভয়ালগ্রাস যাতে খুব বেশি ক্ষতি করতে না পারে, প্রাণপণে সেই চেষ্টা করা। অথচ করোনার আক্রমণের এই সময়টাতে সাংসদদের মধ্যে মাশরাফি বিন মুর্তজা ছাড়া আর কাউকেই সেভাবে কাজ করতে দেখছি না, মেয়র বা ওয়ার্ড কমিশনারদের কথা বাদই দিলাম!
ডেইজি সারওয়ার সদ্যসমাপ্ত ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ৩১ নং ওয়ার্ড থেকে আওয়ামী লিগের মেয়র প্রার্থী ছিলেন। আওয়ামী লিগেরই বিদ্রোহী এক প্রার্থীর কাছে হেরে গেছেন ভোটের লড়াইয়ে। হারার পরে এক সাক্ষাৎকারে এসে বলেছিলেন, তিনি তৃণমূল থেকে রাজনীতি করে আসা মেয়ে, একটা পরাজয় তাকে থামিয়ে দিতে পারবে না, তার মনোবল ভেঙে দিতে পারবে না। তিনি মানুষের জন্যে কাজ করতে এসেছেন, করে যাবেন। ডেইজি আপাকে ধন্যবাদ, কথা দিয়ে তিনি কথা রাখার চেষ্টা করছেন, বাকী রাজনীতিবিদদের মতো ওয়াদা ভুলে যাননি।
ভোটের মাঠে সবচেয়ে আলোচিত চরিত্রগুলোর একটি ছিলেন ডেইজি সারওয়ার। তার প্রচারণার জন্যে বানানো র্যাপ গানটা তো ভাইরাল হয়ে গিয়েছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে, লোকের মুখে প্রায় দেড়টা মাস ধরে শুধু ডেইজি আপাই ছিলেন। ৩১ নং ওয়ার্ডের এই প্রার্থীর নাম ছড়িয়ে পড়েছিল পুরো দেশেই। তাকে নিয়ে ট্রল হয়েছে, মিম বানানো হয়েছে অজস্র, সেসবে তিনি পাত্তা দেননি অবশ্য, নিজের কাজটাই করেছেন একমনে, এখনও করে চলেছেন।
ডেইজি সারওয়ার গত মেয়াদে সংরক্ষিত নারী কমিশনার ছিলেন। ক্যাসিনো কাণ্ড যখন উন্মোচিত হলো, তখন আমরা দেখেছি, ঢাকার ওয়ার্ড কমিশনারদের অনেকেই ক্যাসিনো ব্যবসা, বেআইনী মদের ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে শত শত কোটি টাকার মালিক হয়ে গেছেন! নরসিংদির পাপিয়ার কাহিনীটা তো এই ক'দিন আগের ঘটনা, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে কিভাবে টাকার পাহাড় বানিয়েছে এরা- সবই আমরা দেখেছি।
তারপরে আমরা ট্রল করেছি ডেইজি আপাকে, যিনি অপকর্মে না জড়িয়ে, রাজনৈতিক ক্ষমতাকে নিজের আখের গোছানোর কাজে না লাগিয়ে বরং মানুষের জন্যে কাজ করতে চেয়েছেন। বিমানবন্দর এলাকায় ডেইজি সরওয়ারের গাড়িতে মেশিন নিয়ে মশা মারার একটা ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল বছর দুয়েক আগে, তিনি তখন ঢাকা উত্তরের প্যানেল মেয়র। সেই ছবি নিয়েও কত হাসিঠাট্টা! চিকুনগুনিয়া, ডেঙ্গুতে ভোগা ঢাকাবাসী, মশার অত্যাচারে অতিষ্ট জনগন এখন নিশ্চয়ই বুঝতে পারছে, ডেইজি আপা খানিকটা হলেও চেষ্টা করেছিলেন তার জায়গা থেকে, বাকীরা সেটুকুও করেনি!
আপনারা হয়তো বলবেন, উনি নিজের প্রমোশন করছেন এসব করে। আমি তাতেই খুশি। তার এই আত্মপ্রচারণাতেও যদি দশ-বিশটা মানুষের উপকার হয়, হোকনা। আমি চাই এভাবে দেশের সব রাজনীতিবিদ, সব ধনী মানুষেরা আত্মপ্রচারণায় নামুক, অসহায় মানুষ, যাদের রোজগার বন্ধ হয়ে গেছে করোনার প্রকোপে, তাদের পাশে দাঁড়াক। এই লড়াইয়ে মানুষের পাশে মানুষ না দাঁড়ালে দিনশেষে মানুষ হারবে, জিতে যাবে ভাইরাস।
ভোটের দিন ডেইজি আপার ওপর হামলা হয়েছিল, তার কাপড় ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে, তারপরও তাকে নিয়ে আমাদের ট্রল থামেনি। আমাদের কাজ আমরা করেছি, ডেইজি আপার কাজ তিনি করে চলেছেন, আমাদের কাছে হাসির পাত্র হয়েও বারবার তিনি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছেন- মানুষের পাশে দাঁড়ানোটাই সবচেয়ে বড় কাজ। লোকে কি বললো, হাসাহাসি করলো কিনা- এসবের চেয়ে কারো উপকারে আসাটা অনেক বেশি জরুরী। এভাবেই এগিয়ে যান ডেইজি আপা, মানুষের পাশে দাঁড়ান বারবার, যার খুশি দে হাসুক, ট্রল করুক আপনাকে নিয়ে, তাতে থেমে যাওয়ার পাত্রী তো আপনি নন!