আদিত্য চোপড়া মূলত টম ক্রুজের কথা মাথায় রেখেই সাজিয়েছিলেন ছবির স্ক্রিপ্ট। তার চিন্তায় চরিত্রটি পুরোপুরি ভারতীয় ছিল না, বরং ছিল ইন্দো-আমেরিকান...

দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গের রাজ মালহোত্রাকে মনে আছে? শুধু শাহরুখ খানের ক্যারিয়ারেরই অন্যতম সেরা নয়, গোটা বলিউড ইতিহাসেরই একটি আইকনিক চরিত্র এটি। এবং এই অনন্য সাধারণ চরিত্রটিই বলিউডে শাহরুখ খানের লাভার বয় ইমেজকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছিল, যার বদৌলতে আরও আড়াই দশক পরও স্বমহিমায় উজ্জ্বল রয়েছেন কিং খান। 

কিন্তু ভাবুন তো, মুম্বাইয়ের মারাঠা মন্দিরে পঁচিশ বছর ধরে চলে বিশ্বরেকর্ড সৃষ্টিকারী ডিডিএলজে-তে কাজলের বিপরীতে রাজ মালহোত্রা চরিত্রে যদি শাহরুখ অভিনয় না করতেন! পারবেন শাহরুখের জায়গায় ভারতেরই অন্য কোন অভিনেতাকে বসাতে? কী, পারবেন না তো? আর সেখানে যদি কোন ভারতীয় অভিনেতাই না থাকতেন? থাকতেন বিদেশী কোন নায়ক? এ তো এক কথায় অসম্ভব! 

কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, অসম্ভবকে সম্ভব করা যার কাজ, সেই হলিউড সেনসেশন টম ক্রুজেরই আসলে রূপদান করার কথা ছিল রাজ মালহোত্রা চরিত্রটিতে! লেখক-পরিচালক আদিত্য চোপড়া মূলত টম ক্রুজের কথা মাথায় রেখেই সাজিয়েছিলেন ছবির স্ক্রিপ্ট। তার চিন্তায় চরিত্রটি পুরোপুরি ভারতীয় ছিল না, বরং ছিল ইন্দো-আমেরিকান।

দিলওয়ালে দিলহানিয়ার সেই আইকনিক দৃশ্য

তবে কেন শেষ পর্যন্ত রাজ মালহোত্রা চরিত্রে দেখা মিলল না টম ক্রুজের? এর নেপথ্যে রয়েছে আদিত্য চোপড়ার বাবা, যশরাজ ফিল্মসের এক সময়কার কর্ণধার যশ চোপড়ার ভূমিকা। তিনিই বাগড়া দেন ছেলের পরিকল্পনায়। সাফ জানিয়ে দেন, এমন একটি ছবিতে মূল ভূমিকায় কোন অ-ভারতীয়কে রাখা যাবে না। বাবার উপদেশ মেনেই রাজ মালহোত্রা চরিত্রটিতে বড় রকমের পরিবর্তন আনতে বাধ্য হন আদিত্য চোপড়া। আর সেই পরিবর্তিত চরিত্রের নতুন চিত্রনাট্য নিয়ে তিনি হাজির হন শাহরুখ খানের দোরগোড়ায়। 

তখন অবধি লাভার বয় ইমেজে পাকাপোক্ত হয়ে ওঠেননি শাহরুখ। তবু তাকেই এ চরিত্রের জন্য সবচেয়ে যোগ্য মনে করে চ্যালেঞ্জ লড়তে চেয়েছিলেন আদি। কিন্তু তখনকার শাহরুখ খান আজকের মত নির্ভীক, আত্মবিশ্বাসী ছিলেন না। তখন পর্যন্ত সিরিয়াস কিংবা নেগেটিভ রোলেই সাফল্যের দেখা পেয়ে এসেছিলেন তিনি। তাই তার মধ্যে সংশয় ছিল, তিনি আদৌ এ ধরণের রোমান্টিক একটি চরিত্রকে পর্দায় ঠিকঠাক ফুটিয়ে তুলতে পারবেন কি না। আর দর্শকই বা তাকে কতটা গ্রহণ করবে এমন চরিত্রে। সবমিলিয়ে বেশ কিছুদিন দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগার পর আদিত্য চোপড়াকে 'না' করে দেন তিনি।

শাহরুখের কাছে প্রত্যাখ্যাত হয়ে যারপরনাই আশাহত হন আদিত্য চোপড়া। কিন্তু একেবারে হাল তিনি কখনোই ছাড়েননি। এ চরিত্রে তার দ্বিতীয় পছন্দ ছিল আরেক খান, পতৌদির নবাব সাইফ আলি খান। কিন্তু তিনিও রাজ মালহোত্রা চরিত্রটি করতে সাহস পাননি। তিনিও যখন প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেন, তখন আদিত্য চোপড়া আবারও দ্বারস্থ হলেন শাহরুখের। বেশ কয়েকদিন বসে শাহরুখকে চিত্রনাট্য পড়ে শোনান তিনি। দুজনের মধ্যে অসংখ্যবার মিটিং বসে। শেষমেষ শাহরুখকে রাজি করিয়ে ফেলেন তিনি। 

রাজ চরিত্রে শাহরুখ প্রথম পছন্দ ছিলেন না

অবশ্য শাহরুখ যে খুব আগ্রহের সাথে এ ছবিতে সাইন করেছিলেন, তেমনটি বলা যাবে না। বরং তিনি ধরেই নিয়েছিলেন এখন পর্যন্ত তার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় ডিজাস্টার হতে চলেছে এটি। এমনকি ছবির কাজ সম্পন্ন হয়ে যাওয়ার পরও তিনি এমন ধারণারই বশবর্তী হয়ে ছিলেন।

ছবিটি আনুষ্ঠানিকভাবে মুক্তির আগে একটি স্পেশাল স্ক্রিনিং হয়, যেখানে উপস্থিত ছিলেন বলিউডের বড় বড় সব তারকারা। সেখানে ছিলেন শাহরুখের প্রিয় বন্ধু সালমান খানও। ছবি দেখে ভূয়সী প্রশংসা করেন সালমান। সাফ জানিয়ে দেন, এখন অবধি শাহরুখের সেরা কাজ এটিই। বক্স অফিসেও তার প্রমাণ মিলবে। কিন্তু প্রিয় বন্ধুর কথাতেও ভরসা পাননি শাহরুখ। ধরেই নিয়েছিলেন এই সবই ভদ্রতার খাতিরে বলা। 

কিন্তু ছবি মুক্তির পর থেকেই পাল্টে যেতে থাকে সব হিসেব নিকেশ। প্রমাণিত হয় যে সাধারণ দর্শক আসলে এ ধরণের চরিত্রেই দেখতে চায় শাহরুখকে। এবং এই একটি ছবিই ঠিক করে দেয় তার ক্যারিয়ারের পরবর্তী সময়ের গতিপ্রকৃতি। এরপর তিনি বহু ছবি করেছেন, বিচিত্র সব চরিত্রে দেখা গেছে তাকে। কিন্তু রাজ মালহোত্রার চরিত্র করে যে লাভার বয় ইমেজ গড়ে তুলেছিলেন তিনি, তা অক্ষুণ্ন রয়েছে আজও। 

*

প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা