গত ৬৭ বছর ধরে কোনো নারীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়নি আমেরিকায়। বিষাক্ত ইনজেকশন প্রয়োগ করে লিসা মন্টেগোমারির মৃত্যু নিশ্চিতের মাধ্যমে আবার শুরু হবে এই প্রথা। কিন্ত কী এমন অপরাধ করেছিলেন লিসা, যে ৬৭ বছর পর কোন নারীকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দিলো ফেডারেল কোর্ট?

এখন যে ঘটনা নিয়ে লিখছি, সে ঘটনাটি শুনলে শিউরে উঠবেন স্বাভাবিক বোধসম্পন্ন যে কোনো মানুষ। ২০০৪ সাল তখন। ঘটনার কেন্দ্রীয় চরিত্র যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী এক মেয়ে, নাম- লিসা মন্টেগোমারি। ২০০৪ সালের এক দুপুর, লিসার বয়স তখন ২৩, সে তার ক্যানসাসের বাড়ি থেকে মিসৌরির ববি জো স্টিনেটের বাসায় যাচ্ছিলো। এখানে ববি জো স্টিনেটের পরিচয় দিয়ে দিই একটু। ববি ছিলেন মিসৌরির এক কর্মজীবী মহিলা।  কুকুর কেনা নিয়ে অনলাইনে একটা বিজ্ঞাপনের ফলশ্রুতিতেই লিসার সাথে পরিচয় হয়েছিলো ববির। লিসা মূলত ববির বাসায় যাচ্ছিলেন, কুকুর কেনার জন্যে।

লিসার মাথায় কী পরিকল্পনা ছিলো, জানা নেই কারো, তবে ববির বাসায় ঢুকেই সে হুট করে আক্রমন করে ববিকে। ববি তখন আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা। বিছানায় ববিকে শুইয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করার পরেই ক্ষান্ত হয় না সে। রান্নাঘরে থাকা ছুরি দিয়ে ববির তলপেট কেটে লিসা বের করে আনে আট মাসের সেই শিশুটিকে। এরপর সেই শিশুকে নিয়ে, ববির লাশকে বিছানায় রক্তাক্ত অবস্থায় ফেলে রেখে চলে যায় সে। পরবর্তীতে সেই আট মাসের শিশুটিকে  নিজের সন্তান বলেও দাবী করে লিসা। পুলিশ পরে যখন জানতে পারে পুরো বিষয়, তখন গ্রেফতার করা হয় তাকে।

২০০৭ সালে সমস্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ এর ভিত্তিতে দোষী সাব্যস্ত করা হয়ে লিসাকে, পশ্চিম মিসৌরির জেলা আদালত দেয় মৃত্যুদণ্ডের রায়। কিন্তু কার্যকর হচ্ছিলো না রায়টি। ক্ষমাভিক্ষার আর্জি নিয়ে নানারকম আলোচনা চলছিলো। শৈশবে লিসা যৌননিপীড়ন এর স্বীকার হয়েছে, মানসিকভাবে অসুস্থ সে, নানারকম যুক্তি দেখিয়ে মৃত্যুদণ্ডের অভিযোগ থেকে মুক্তি পেতে চাচ্ছিলো সে, ক্ষমাপ্রার্থনা করছিলো।

এ বিষয়ে আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানিয়ে রাখা ভালো, আমেরিকায় কোন নারীর মৃত্যুদণ্ডের রায় কার্যকর হয় না গত ৬৭ বছর ধরে। সর্বশেষ ১৯৫৩ সালে এক মহিলাকে দেয়া হয়েছিলো মৃত্যুদণ্ড। এরপর থেকে আর কাউকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়নি। তাছাড়া বেশ লম্বা একটা সময় ধরে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয়াও বন্ধ ছিল আমেরিকায়। ১৯৭২ সালে আমেরিকান সুপ্রিম কোর্ট রায় দেয়, ফেডারেল কোর্ট বা আঞ্চলিক কোর্ট মৃত্যুদণ্ডের রায় দিতে পারবে না। ১৯৭৬ সালে এসে এই রায়কে কিছুটা লঘু করা হয়। নতুন রায় হয়- ফেডারেল কোর্ট মৃত্যুদণ্ডের রায় দিতে পারবে। সর্বশেষে ২০১৮ সালে এসে বলা হয়, আঞ্চলিক কোর্টও মৃত্যুদণ্ডের রায় দিতে পারবে।

এই সিদ্ধান্তের পরে সর্বশেষ ঘোষনা আসে, লিসা মন্টেগোমরি হতে যাচ্ছেন ৬৭ বছর পরে মৃত্যুদণ্ডের দণ্ড কার্যকর হওয়া প্রথম মহিলা। বিষাক্ত ইঞ্জেকশন দিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হবে তার। যেসব বিষয়ের উপর ভিত্তি করে ক্ষমা প্রার্থনা করেছিলেন লিসা, খারিজ করে দেয়া হয়েছে সে সব বিষয়কেও। বিচারকদের সাফ উত্তর, এরকম বর্বরতার একটিই শাস্তি হওয়া উচিত, এবং সেটি মৃত্যুদণ্ড। 

বিষাক্ত ইঞ্জেকশন প্রয়োগের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হবে লিসা মন্টেগোমারির! 

আগেই বলেছি, ৬৭ বছর আগে সর্বশেষ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছিলো এক নারীর। সেই আসামীর সাথে বর্তমান লিসা মন্টেগোমরি'র রয়েছে কিছু বিষয়ে মিল। ১৯৫৩ সালে গ্যাস চেম্বারে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয় যার, তার নাম বনি হেডি, তিনিও ছিলেন মহিলা। এবং লিসার মতই শিশু চুরির দায়ে অভিযুক্ত হয়েছিলেন তিনিও!

৬৭ বছর পরে যেন তাই ইতিহাসেরই পুনরাবৃত্তি হচ্ছে খানিকটা।

*

প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন







 

 


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা