মুক্তিযুদ্ধ, জয় বাংলা, বঙ্গবন্ধুর যথেচ্ছ ব্যবহারকারীদের শাস্তির আওতায় আনা হোক!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট

মুক্তিযুদ্ধ, জয় বাংলা, বঙ্গবন্ধু- এই শব্দগুলো এই বাংলার অস্তিত্বের শব্দ। পবিত্র শব্দ। এই শব্দগুলো ব্যবহার করে যে কোনো ধরণের অন্যায় কাজকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ ঘোষণা করা হোক।
মুক্তিযুদ্ধ, জয় বাংলা, বঙ্গবন্ধু- এই শব্দগুলো এই বাংলার অস্তিত্বের শব্দ। পবিত্র শব্দ। এই শব্দগুলো ব্যবহার করে যে কোনো ধরণের অন্যায় কাজকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ ঘোষণা করা হোক।
এই দেশ, সমাজ আর দীর্ঘদিনের সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতায় আমি দেখেছি, জয় বাংলা শ্লোগান দিয়ে ছাত্রলীগের এক পক্ষ আরেক পক্ষের উপর হামলা চালাচ্ছে। আমি দেখেছি, বহু অনিয়ম, দুর্নীতি করে এই রাষ্ট্রে একদল মানুষ নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার লোক দাবি করে বারবার পার পেতে চেয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা জানানোর ক্রেষ্টে তারা ভেজাল করে, সময় সুযোগ পেলেই লুটপাটে মাতে তারা। এগুলোর কোনোটাই কি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা?
আমার কাছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মানে দেশপ্রেম। আর দেশপ্রেম থাকলে দেশের ক্ষতি করা যায় না। ভিন্নমত দমনের নামে যখন তখন হামলা করা যায় না। আমি বিশ্বাস করি না মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করলে কেউ দুর্নীতি করতে পারে। তার মানে যারা দুর্নীতি করে, তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মানে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ। তার মানে সাম্প্রদায়িকতায় যারা বিশ্বাস করে, তারা অবশ্যই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করেন না।
আমি জানি না মুক্তিযোদ্ধা মঞ্চের ওরা দেশের সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধাদের চেয়েও বড় কি না। জানি না তাদের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাটা কে?

তবে নঈম জাহাঙ্গীর, মিজানুর রহমান খান (বীর প্রতীক), ফারুক্-ই-আজম (বীর প্রতীক), আলতাফ হোসেন (সেক্টর-৩), সাদেক হোসেন (সেক্টর- ২), শেখ রফিকুর ইসলাম বাবলু, অনিল বরণ রায় (নৌ- কমান্ড), মনোয়ারুল ইসলাম (সেক্টর-৬), আব্দুল কাইয়ুম খান, বদরুল আমিন সহ মোট ১৬ জন মুক্তিযোদ্ধা একটা বিবৃতি দিয়েছেন। তারা মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ও অঙ্গীকার পরিপন্থী গণবিরোধী কর্মকাণ্ডে ‘মুক্তিযুদ্ধ’ বা মুক্তিযোদ্ধাদের নাম ব্যবহারের তীব্র প্রতিবাদ করেছেন।
মুক্তিযোদ্ধারা বলছেন, আমরা বেশ কিছুদিন ধরে উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি যে, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের নাম ব্যবহার করে এমন অনেক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে যাদের বিতর্কিত ও গণবিরোধীকর্মকাণ্ডের কারণে দেশে-বিদেশে মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাগণ হেয় প্রতিপন্ন হচ্ছেন।
উদ্বেগের বিষয় যে, বিভিন্ন গণমাধ্যমে ছবি-ভিডিওসহ প্রকাশিত ও প্রচারিত হওয়া সত্ত্বেও, এমনকি আক্রান্ত শিক্ষার্থীরা থানা বা প্রশাসনকে বিষয়গুলো জানানোর পরও তাদের বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত কোনো ধরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে আমরা দেখিনি।
বিবৃতিতে বলা হয়, তথাকথিত ‘মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ’ বা মুক্তিযুদ্ধের সাথে সংশ্লিষ্ট নাম আগে-পিছে বসিয়ে যারা সেই মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধা এবং রাষ্ট্রের সাংবিধানিক অঙ্গীকার পরিপন্থী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে, তারা যে দল বা মতেরই হোক, তারা দেশদ্রোহী। আমরা তাদের অবিলম্বে চিহ্নিত করে বিচারের দাবী জানাচ্ছি।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান স্যারের কথাগুলো শুনতে পারেন। তিনি বলেছেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ’ শব্দ ব্যবহার করে সংগঠন বানিয়ে এ ধরনের কর্মকাণ্ড, এটা জঘন্যতম অপরাধ। পবিত্র শব্দ ‘মুক্তিযুদ্ধ’ কে কেউ কলুষিত করবে, এটা কখনই হতে দেওয়া যায় না। যারাই করুক, যে দর্শনই তাদের থাকুক, ‘মুক্তিযুদ্ধ’ শব্দকে কালিমালিপ্ত করতে দেওয়া উচিত নয়। যারা এসব কাজ করছে, তাদের বিরুদ্ধে সত্ত্বর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। রাষ্ট্রকে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে এ ব্যবস্থা নিতে হবে।
বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজামের কথাগুলো শুনুন। তিনি লিখেছেন, মুক্তিযুদ্ধ শব্দটিকে বিতর্কিত করার অধিকার তাদেরকে কে দিল? আমি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান। ইউটিউবে ওদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের ছবি দেখার পর বিদেশে মানুষ কী বলবে? মুক্তিযুদ্ধ শব্দ যোগ করে কোনো সন্ত্রাসী সংগঠন চলতে পারে না। অবশ্যই ওদেরকে আইনের আওতায় আনতে হবে। মুক্তিযুদ্ধ শব্দ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সাথে সম্পৃক্ত। এই পবিত্র শব্দকে কলংকিত করার অধিকার কারও নেই। আইন হাতে তুলে নেওয়ার অর্থ রাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ করা।
আশা করছি আরও বড় ক্ষতি হওয়ার আগে রাষ্ট্র ব্যবস্থা নেবে। পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধ, জয় বাংলা, বঙ্গবন্ধু এসব শব্দকে যারা অপমানিত করবে, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হোক। প্রয়োজনে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কমিশন হোক। তারাই ঠিক করুন মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে কারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করছে।