ডিপ্রেশন থেকে বাঁচার অনেক উপায়। তার মধ্যে প্রথম পদ্ধতি হলো নিজেকে ভালোবাসা। হুলস্থুল ভালোবাসা।

- ডিপ্রেশনের সাথে ফাইট দিব কীভাবে? 
- তোমার মোবাইল আছে? 
- আছে। কিন্তু এর সাথে ডিপ্রেশনের সম্পর্ক কী? 
- মোবাইলে কাভার আছে? 
- না, কাভার আজকাল আনস্মার্টনেস লেভেলে পৌছে গেছে। তাই ব্যবহার করি না। 
- যখন রুমে ফেরো, মোবাইলটা কীভাবে রাখো? 
- বিছানার উপর ছুড়ে দিই। নরম বিছানা। ভাঙ্গে না। 
- কখনো মোবাইলের ক্যাচিং এর ফাঁকে জমে থাকা ময়লা পরিষ্কার করেছ? 
- না। কিন্তু এসব বলছেন কেন? আমি ডিপ্রেশনের সাথে কীভাবে ফাইট দিব সেটা জানতে চেয়েছি। 
- এক কাজ করো। মোবাইলে একটা কাভার লাগাও। ক্যাচিং এর ফাঁকে জমে থাকা ময়লাগুলো আজ পরিষ্কার করো। এরপর থেকে মোবাইল ছুড়ে দিবে না। খুব সাবধানে টেবিলের এক কোনায় রেখে দিবে। একটা পরিষ্কার টিস্যু পেপার রাখবে মোবাইলের নিচে। মোবাইলের যত্ন নেওয়া শুরু করো। 

- কেন? আমি তো আপনাকে অন্য প্রশ্ন করেছি। 
- আমিও অন্য জবাব দিচ্ছি। নতুন ড্রেস কিনলে মন ভালো হয়? 
- জ্বি। 
- আগামী ছয় মাস নতুন কোনো জামা নিবে না। পুরাতন জামা কয়টা? 
- তিন চারটা। 
- এই জামাগুলো ধুয়ে পরিষ্কার করো। আয়রণ করো। পুরাতন জুতোটায় রঙ করো। 
- কেন? 
- কারণ পরে বলছি। রুমে ঝাড়ু দাও? 
- অল্প। 
- এখন প্রতিদিন দুইবেলা ঝাড়ু দিবে। দুপুরে গোসলের আগে একবার। রাতে ঘুমানোর আগে একবার। বিছানার চাদর কে ধোয়? 
- মা। কাজের মেয়েটা। 
- আগামী একমাস তুমি ধুবে বিছানার চাদর। বালিশের কাভারগুলো খুলে ধুতে দিবে সপ্তাহে একদিন। বাথরুমে হারপিক আছে? 
- আছে। 
- আগামীকাল গোসলের আগে হারপিক দিয়ে বাথরুম পরিষ্কার করবে। বেসিন মাজবে নিজহাতে। বাথরুমের আয়না পরিষ্কার করবে। বাথরুমে ফেলে রাখা শ্যাম্পুর খোসাগুলো খুঁজে খুঁজে বের করে ফেলে দিবে। 

- আপনি এসব বলছেন কেন? 
- ডিপ্রেশন দূর করার প্রথম পদ্ধতি হলো নিজেকে ভালোবাসা। হুলস্থুল ভালোবাসা। যে শার্টটা নতুন সেটা পরলে মন ভালো হয়ে যায়। আবার যে শার্টটা ধোয়া-পরিষ্কার, সেটা পরলেও মন ভালো হয়ে যায়। বাথরুম হল নোংরা বিসর্জনের স্থান। গায়ের ময়লা, শরীরের ময়লা সেখানে বিসর্জন হয়। সেই ঘরটা পরিষ্কার থাকলে মন ভালো হয়ে যায়। যে বিছানাটা পরিষ্কার, সেখানে ঘুম ভালো আসে। যদি রাতে শ্রান্ত হয়ে ফেরার পর একজন মানুষ হাত-মুখ ধুয়ে শুয়ে পড়ে তার ঘুম ভালো হবে। যে মানুষটা ঠান্ডা জলে গোসল করে ঘুমুতে যায়, তার ঘুম আরো ভালো হবে। পার্থক্যতা কোথায়? শরীরে। শুরুতেই নিশ্চিত করতে হবে আমি যা পরি, যা খাই, যা ব্যবহার করি, যেখানে থাকি, যেখানে যাব, সেগুলো যেন হয় আমার জন্য ভালো। আমার জন্য ভালো...এই একটা ব্যাপার নিজের প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি করবে। যে নিজেকে ভালোবাসা শুরু করবে, সে পৃথিবীর তাবৎ বিপদেও নিজের যত্ন নিবে। নিজের ক্ষতি হবে এমন ব্যাপারে নিজেকে সতর্ক করবে। সংরক্ষণ করবে। এটা হিউম্যান সাইকোলজি। যারা নিজেকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে, তাদের বলে নার্সিসিস্ট। নার্সিসিস্টদের মধ্যে ডিপ্রেশন কম। যদি নিজেকে ভালো না বাসতে পারো, অন্যজন এসে তোমাকে ভালোবাসবে এমন আশা করো কেন? নিজেকে যদি নিজেই অবহেলা করো, অন্যের অবহেলা দেখলে ভেঙ্গে পড়ো কেন? ডিপ্রেশন অত্যন্ত খারাপ ও বিপদজনক অনুভূতি। ডিপ্রেসিভ মানুষের ভুলভাল ডিসিশন নেবার সম্ভাবনা প্রবল। How to prepare against Depression? Love yourself. Be a emperor of your own world. 

- আরেকটু বাখ্যা করুন। 
- যে মানুষটা প্রতিদিন দুটো মাত্র শার্ট ঘুরে ফিরে ধুয়ে পরে, সেই লোকটার মোবাইল ফোনটাও আমাদের চাইতে পরিষ্কার। সেই লোক তার একমাত্র জুতোটাকে নিয়মিত পলিশ করে। একই লোক ঘরে ফিরে বিছানার নোংরা চাদর নিজ হাতে ধোয়। নিজের ব্যবহৃত বাথরুমটাও তার পরিষ্কার। তার সম্পত্তির পরিমান হয়তো অল্প। কিন্তু তার ঘরটা দেখলেই ভালো লাগে। কারণ তার মাত্র ছয়টা বই হতে পারে, সেগুলো টেবিলে সাজানো। তার মোবাইলটা কমদামী হতে পারে, কিন্তু সেটা যত্ন করে রাখা। তার হয়ত একটা কলম, কিন্তু সে কলমটা কহনোই হারায় না। কারণ সে যত্ন নেয়। তার হয়তো দুটো প্যান্ট, কিন্তু আমাদের চাইতে দীর্ঘদিন না ছিড়েই সে প্যান্টগুলো ব্যবহার করতে পারে। মানুষের সাথে তার ব্যবহারবোধ ভালো, কারণ সে জানে তার প্রপার্টিজ সীমাবদ্ধ, ক্ষমতাও অল্প। এতসব অভাববোধ তাকে একটা সময় শেখায় তার আবেগকে কীভাবে অল্প অল্প করে ব্যয় করতে হয়। ফলে সে ভুল করে কম, ধাক্কা খায় কম, বিপদে পড়ে কম। অল্প আবেগ খরচের জন্য ধাক্কা খেলেও সেটার প্রতিক্রিয়াও অল্প। দুঃখবোধও অল্প। সে সহজেই আবার নিজের ট্র্যাকে ফিরে আসতে পারে। পুরোটা ব্যয় করলেই...শেষ।

ডিপ্রেশন থেকে বাঁচার অনেক উপায়। তার মাঝে একটি হল...অভাবী থাকো, ক্ষুধার্ত থাকো। দুনিয়ার তাবৎ ডিপ্রেশনের উৎস তোমাকে স্পর্শ করতে ভয় পাবে।

আরও পড়ুন-


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা