কেউ যদি কষ্টে থাকে, ডিপ্রেশনে থাকে, তাকে পারলে এই এমপ্যাথিটা দেখান। আর সেটা দেখানোর আগে, নিজে একটু অনুভব করেন। কারো কষ্টের কথা শুনলে নিজেকে দিয়ে তাকে বিচারকে যে এমপ্যাথি বলে না, তার জায়গায় নিজেকে কল্পনা করে কষ্ট অনুভবকে এমপ্যাথি বলে, সেটা বুঝতে শেখেন।
এই যে ব্যক্তিজীবনে ও ক্যারিয়ারে আপাতদৃষ্টিতে সুখী ও সফল কেউ ডিপ্রেশনের কারণে আত্মহত্যা করলেই বেশিরভাগ লোক বলতে শুরু করে, "ওর তো জীবনে সবকিছু ছিল। এত প্রিভিলেজড ছিল ও। ওর আবার ডিপ্রেশনে ভোগার কী কারণ? এগুলো সবই হলো ধনী লোকের বিলাসিতা।" এই মানসিকতাই আসলে দিন দিন সমাজের কিছু সংবেদনশীল, স্পর্শকাতর ও অনুভূতিপ্রবণ মানুষকে ডিপ্রেশনের এমন চূড়ান্ত পর্যায়ে ঠেলে দেয় যে, সেখান থেকে আর বের হয়ে আসা সম্ভব হয় না। বেশি দূর যাওয়ার দরকার নেই।
ধরেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো একটা সাবজেক্ট নিয়ে পড়ে, সিজিপিএ ভালো, পড়াশোনার বাইরে আরো দক্ষতাও কিছু আছে, প্রেম-ভালোবাসা সংক্রান্ত কোনো জটিলতাও কিছু নেই, পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থাও খারাপ না; এরকম একটা ছেলে বা মেয়ে যদি ডিপ্রেশনে ভুগতে শুরু করে, কার কাছে গিয়ে বলবে সে?
সে-ও তো কাউকে নিজের মনের কথা বলতে শুরু করলেই সবাই তেড়ে আসবে, "আরে ভাই, তোর আবার কিসের ডিপ্রেশন! তোর এই আছে, সেই আছে। তারচেয়ে তুই আমার দুঃখের কাহিনী শোন। ওইদিন হইছে কী..."
আরেকদল পাবেন খুব বাস্তববাদী এবং একই সাথে মোটিভেশনাল লোকজন। তারা বলবে, "শোন, দেশের ২০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। খেতে পায় না। তুই কি না খেয়ে আছিস? নাই তো? তাইলে আবার তোর কিসের ডিপ্রেশন! জাস্ট চিল!"
আর এর বাইরে কিছু মানুষ থাকবে যারা সরাসরি কিছু বলবে না, কিন্তু আড়ালে আবডালে বলবে, "আরে ওর আবার কিসের ডিপ্রেশন! এসব কিছু না। জাস্ট একটু অ্যাটেনশন সিক করছে।"
তো মোটাদাগে এই হলো তিন ধরনের মানুষ। কেউ ডিপ্রেশনে ভুগছে শুনলে এগুলোই তাদের প্রতিক্রিয়া ও বক্তব্য। এমন একটা মানুষও খুঁজে পাওয়া খুব বিরল, এমনকি নিজের পরিবার, বাবা-মায়ের মধ্যেও, যে বুঝতে পারবে যে আসলেই ওই ছেলে/মেয়েটার কোনো সমস্যা হচ্ছে।
সাম্প্রতিক কোনো ঘটনাই হতে হবে এমন না, শৈশবের কোনো স্মৃতি হয়তো তাকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে, ফলে সে সবসময় ডিপ্রেসড হয়ে থাকছে। আর এটুকু বোঝার পর যে ওই ছেলে/মেয়েটার কাছে গিয়ে, তাকে কোনো রকম জাজ না করেই বলবে, "বল, তোর কী সমস্যা? আমাকে বলে মন হালকা কর।"
তারপর আনডিভাইডেড অ্যাটেনশন দিয়ে, মাঝখানে নিজে একবারও ইন্টারফেয়ার না করে, সব কথা শুনবে। শোনার পরও নিজে কোনো সমাধান দিতে আসবে না, ডিপ্রেসড ব্যক্তির ডিপ্রেশনটাকে ছোট বা অর্থহীন দেখাতে চাইবে না, শুধু কাঁধে হাত রেখে বলবে, "আমি বুঝতে পারছি তোর কষ্টটা। আর কেউ থাকুক বা না থাকুক, আমি তোর পাশে আছি।"
এটুকুই অনেক সময় যথেষ্ট হতে পারে একজন ডিপ্রেসড ব্যক্তির জন্য। এটুকুই, যে একজন হলেও অন্তত আছে যে তাকে বুঝতে পারে, কিংবা বোঝার চেষ্টা করে। এই সহমর্মিতা, এই এমপ্যাথিটুকু খুবই জরুরি।
কেউ যদি কষ্টে থাকে, ডিপ্রেশনে থাকে, তাকে পারলে এই এমপ্যাথিটা দেখান। আর সেটা দেখানোর আগে, নিজে একটু অনুভব করেন। কারো কষ্টের কথা শুনলে নিজেকে দিয়ে তাকে বিচারকে যে এমপ্যাথি বলে না, তার জায়গায় নিজেকে কল্পনা করে কষ্ট অনুভবকে এমপ্যাথি বলে, সেটা বুঝতে শেখেন।
আর একান্তই যদি এগুলো আপনার দ্বারা সম্ভব না হয়, তাহলে স্রেফ চুপ থাকেন। আপনার জাজমেন্টাল কিংবা সিউডো-মোটিভেশনাল মানসিকতা, দুটোর কোনোটাই উপকারী না।
আরও পড়ুন-