ঢাকা শহরের যে দশটি 'বিব্রতকর' দিক পর্যবেক্ষণ করেছিলেন ট্রাভেল ভ্লগার বিনস্কি!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
ঢাকা শহরে এসে বিনস্কি খেয়াল করেছেন, এখানকার মানুষ সাদা চামড়ার লোক দেখলে কেমন করে তাকিয়ে থাকে। এই তাকিয়ে থাকাতে রাগ বা বিরক্তি নেই যদিও, অবাক হওয়ার ব্যাপার আছে...
লোকটার নাম ড্রিউ বিনস্কি। তিনি পেশায় একজন ট্রাভেল ভ্লগার, ভিডিও মেকার। কন্টেন্ট নিয়ে তার কাজ কারবার। নাস ডেইলির মতো তিনিও বিখ্যাত একজন কন্টেন্ট মেকার, যিনি বিশ্বের নানা প্রান্তে ঘুরে ঘুরে ভিডিও কন্টেন্ট তৈরি করে থাকেন। এযাবতকাল পর্যন্ত তিনি প্রায় ১৫৩ টি দেশ ঘুরে ফেলেছেন।
এই বিখ্যাত ভ্লগার এসেছিলেন বাংলাদেশেও। ঘুরেছেন ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায়। কিন্তু তার ঢাকা শহর ঘুরার অভিজ্ঞতা মিশ্র। আবেগে তিনি শুধু শহরের প্রশংসা করেছেন এমন নয়, যেমন দেখেছেন এই শহরকে তেমনটাই বলেছেন ঢাকা সম্পর্কে। তিনি ঢাকাকে খুব সুন্দর গুছানো শহর বলতে যা বোঝায়, সেটা বলতে চান না। এই শহরে অনেক বিশৃংখলা আছে। অনেক জনসংখ্যা, অনেক ময়লা ছড়িয়ে আছে- এমনটাই তার মনে হয়েছে। অবকাঠামো পরিকল্পিত নয়, শহরে ট্যুরিস্ট আকর্ষণ করবার মতো জায়গাও খুব বেশি নেই।
এসবের বাইরে ঢাকা শহর সম্পর্কে তিনি নিজের ওয়েবসাইটে একটা লেখা প্রকাশ করেছেন, যেখানে আছে তার সবগুলো পর্যবেক্ষণ। যে দশটি পর্যবেক্ষণের কথা লিখেছেন তিনি ঢাকা সম্পর্কে, চলুন জেনে নেই।
১। তিনি ঢাকার শহরের বিখ্যাত ট্রাফিক জ্যামে আটকা পড়েছেন। তার দেখা পাঁচটা সবচেয়ে বাজে ট্রাফিক জ্যামের শহরের একটি ঢাকা। এখানে ঘন্টার পর ঘন্টাও মাঝে মধ্যে একজায়গায় আটকে থাকতে হয়, গাড়ি নড়ে না এক ইঞ্চিও, এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে তার।
২। ঢাকা শহরে এসে তিনি খেয়াল করলেন, এখানকার মানুষ সাদা চামড়ার লোক দেখলে কেমন করে তাকিয়ে থাকে। এই তাকিয়ে থাকাতে রাগ বা বিরক্তি নেই যদিও, অবাক হওয়ার ব্যাপার আছে। অনেকেই এখানে তাকে দেখে সেলফি তুলতে চেয়েছে। যারা ঢাকায় আসতে চায়, তাদের তিনি এই অবস্থা সম্পর্কে সতর্ক করে বলেছেন এমন হতেই পারে। এটার সাথে মানিয়ে নিতে হবে।
৩। তবে তিনি শহরের মানুষকে বেশ বন্ধুত্বপূর্ণ মানসিকতার বলেই উল্লেখ করেছেন। এইদিকটা তার বেশ ভাল লেগেছে এই শহরে এসে। এখানে মানুষ তাকে জিজ্ঞেস করেছে তার কোনো সাহায্য লাগবে কিনা, কেউ কেউ তাকে খাবার অফার করেছে নিজ বাড়িতে। রাস্তা দেখিয়ে দিয়েছে হাসিমুখে। ঢাকা শহরে এসে তিনি অনিরাপদ এই বোধ হয়নি তার একবারও!
৪। ড্রিউ বিনস্কি ঢাকাকে তার দেখা সবচেয়ে বেশি দূষিত শহর বলে উল্লেখ করেছেন। এটা আমাদের জন্য দুঃখজনক হলেও বাস্তবতা মেনে নিতেই হবে। আমাদের কতৃপক্ষ যখন ঢাকাকে লস এঞ্জেলেস, প্যারিস বলে বেলুন ফুলায়, তখন একজন বিখ্যাত পর্যটক তার ব্লগে এভাবে ঢাকার কথা লিখছেন। এটা কতটা লজ্জার এটা যদি বুঝাতে পারতাম। তবে, বিনস্কি মিথ্যা বলেননি একবিন্দুও। আমাদের শহরে বায়ু দূষণ দিল্লীকেও মাঝে মধ্যে ছাড়িয়ে যায়, এই শহর যে বসবাসের অনুপযোগী এটাও মিথ্যা নয়। বিনস্কি তাও কমিয়েই বলেছেন!
৫। বাংলাদেশের খাবারে ফিদা হয়েছেন সবচেয়ে বেশি তিনি। ঢাকায় এসে বিশ্ববিখ্যাত চেইন রেস্টুরেন্টগুলোর শাখা দেখে তিনি চিনতে পেরেছেন। এখানকার খাবারে ভ্যারিয়েশন এবং বিভিন্ন রকমের খাবারের সহজলভ্যতার দিকটা তাকে মুগ্ধ করেছে।
৬। তার মনে হয়েছে ভ্রমণের জন্য বাংলাদেশ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে স্বস্তা একটি দেশ। ভারত, ভিয়েতনাম থেকেও এই দেশে ভ্রমণের খরচ কম। এখানে সবকিছুই কম দামে পাওয়া যায়, নাগালের মধ্যেই। তাই কেউ যদি এদেশে আসতে চায়, তার অন্তত বাজেট নিয়ে মাথাব্যথা করতে হবে না, এমনটাই লিখেছেন তিনি।
৭। ঢাকায় বিভিন্ন রকমের যানবাহনের অপশন আছে। বাইক থেকে শুরু করে বাস, সিএনজি, গাড়ি, রিকশা কি নেই এখানে। তিনি সবগুলো বাহনেই চড়েছেন। তার সবচেয়ে মজা লেগেছে রিকশায় চড়ে ঘুরতে। রিকশায় বসে শহর ঘুরে বেশ ভালই আনন্দ পেয়েছেন তিনি! এতে নাকি ভিউ ভাল পাওয়া যায়।
৮। আরেকটি ব্যাপার তিনি লক্ষ্য করেছেন ঢাকায় চলতে হলে পকেটে খুচরা রাখতে হয় প্রচুর। এখানে ভাল রেস্টুরেন্টগুলোতে হয়ত কার্ড থেকে টাকা পে করা যায়। তবে বেশিরভাগ জায়গায় মানুষ ক্যাশ লেনদেন করে অভ্যস্থ। যাতায়াত থেকে শুরু করে ছোটখাটো কেনাকাটার জন্য ক্যাশ থাকা জরুরি।
৯। তিনি বেশ সারপ্রাইজড হয়েছেন এটা দেখে যে শহরের অধিকাংশ লোক মোটামুটি ইংরেজিতে কথা বলতে পারে। এটা দেখে তিনি খুশি হয়েছেন, এতে করে নতুন বন্ধুত্ব তৈরি হয়ে যায় সহজেই। অনেকে আবার বিদেশী দেখলে কথা বলা প্র্যাকটিস করতে আসে। তিনি বলেছেন এটাকে আন্তরিকভাবেই নিতে, বিব্রত হওয়ার কিছু নেই৷
১০। শেষে যে কথাটা তিনি বলেছেন, এটাও আমাদের জন্য বিব্রতকর তবে কথাটা নিখাদ সত্য। তিনি একজন ভীনদেশী হয়েও খেয়াল করে বের করে ফেলেছেন, এখানে কোনো কিছুই সময়মতো চলে না। কেউ সময় মেনে কোনো কাজ করতে পারে না। আপনাকে যদি বলা হয় মিটিং ১০ টায়, আপনি ধরে নিতে পারেন এই মিটিং হবে এগারোটারও পরে। যদি কেউ বলে ডিনার হবে ৭টায়, আপনাকে বুঝতে হবে এটা কখনোই এক্সাক্টলি ৭টায় শুরু হবে না। বিনস্কির মতে, ভয়াবহ ট্রাফিক জ্যামের কারণেই সময়ের এই পতন। আর সময়ের পতনে ঘটে যায় স্বাভাবিক নিয়মের পতনও..
*
প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন