পানির অপচয় রোধ করার জন্যে সপ্তাহে একবার মাত্র গোসল করেন ডি ক্যাপ্রিও। অস্কার জয়ের পর দেয়া তার বক্তব্যের অনেকটা অংশ জুড়েই ছিল পরিবেশ বাঁচানোর আকুতি...

মা ছিলেন চিত্রশিল্পী লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির ভক্ত। সন্তান যখন পেটে এলো, তিনি একদিন বেড়াতে গিয়েছিলেন এক মিউজিয়ামে। ভিঞ্চির আঁকা ছবির সামনে তন্ময় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থাতেই পেটের সন্তান নড়ে উঠলো। তখনই তিনি ঠিক করলেন, ছেলে হলে ভিঞ্চির নামের সঙ্গে মিলিয়ে রাখবেন সন্তানের নাম। তাতে যদি লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির মতো বিশ্বখ্যাত হয় ছেলে! মায়ের অনুমান মিথ্যে হয় নি। ছেলেটা তার নিজ কর্মে, আপন প্রতিভায় জয় করে নিয়েছে বিশ্বের কোটি মানুষের হৃদয়। পর্দায় তালে দেখে প্রেমে পড়েছে কোটি তরুণ তরুণী। ১৯৭৪ সালের এগারোই নভেম্বরে জন্ম নেয়া সেই ছেলেটার নাম লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিও, টাইটানিক সিনেমার 'জ্যাক' হিসেবে যার সঙ্গে আমাদের প্রথম পরিচয়! মানুষটা জীবনের ছেচল্লিশতম বসন্তে পা দিলেন আজ। চলুন, এই উপলক্ষ্যে আজ জেনে নেয়া যাক তার সম্পর্কে কিছু অপ্রচলিত আর মজার তথ্য। 

#১- এগারো বছর বয়সে লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিওকে নিজের নাম বদলে ফেলার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। তিনি তখন একটা পার্টটাইম চাকুরীর চেষ্টা করছিলেন, কিন্ত যে এজেন্টের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ করেছিলেন তিনি ডি ক্যাপ্রিওকে বলেছিলেন, আমেরিকান কোন নাম নিতে। সেই এজেন্ট একটা নামও দিয়েছিলেন তার- লেনি উইলিয়ামস। কিন্ত ডি ক্যাপ্রিও এমন উদ্ভট প্রস্তাবে রাজী হননি। 

#২- অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিজঅর্ডার রোগটা লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিও'র সারা জীবনের সঙ্গী। এই কারণে 'ইনসেপশন' তারকা বদ্ধ জায়গায় বেশীক্ষণ থাকতে পারেন না। 

#৩- স্পাইডারম্যান তারকা টবি ম্যাগায়ার, অভিনেতা কেভিন কনোলে এবং জাদুশিল্পী ডেভিড ব্লেইনের সঙ্গে তার একদম ছোটবেলার বন্ধুত্ব। তাদের গ্রুপের নাম ছিল 'পুশি পোজ'।

#৪- জীবনে কখনও মাদক গ্রহণ করেননি ডি ক্যাপ্রিও। তাই তার পক্ষে 'দ্য ওলফ অব ওয়াল স্ট্রীট' সিনেমায় মাদকাসক্তের অভিনয় ফুটিয়ে তোলাটা বিশাল একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। কিন্ত সিনেমা মুক্তির পরে সবাই তাজ্জব হয়ে গিয়েছে তার অভিনয় দেখে। কিভাবে সম্ভব হলো এমন বাস্তবধর্মী অভিনয়? সাংবাদিকদের ডি ক্যাপ্রিও জানিয়েছেন, একজন পেশাদার ড্রাগ এক্সপার্টের সাহায্য নিয়েছিলেন তিনি, এছাড়া ইউটিউবে 'দ্য ড্রাঙ্কেস্ট ম্যান ইন দ্য ওয়ার্ল্ড' এর ভিডিও দেখতেন প্রস্ততির জন্যে। 

লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিও

#৫- টাইটানিক সিনেমাটা বিশ্বব্যাপী মুক্তি পাবার পরে তার চুলের স্টাইলটা দারুণ জনপ্রিয় হয়েছিল। এখনও বাংলাদেশের কোন সেলুনে গেলে টাইটানিকের জ্যাকের ছবি আপনি দেখবেনই। সেই সময়ে আফগানিস্তান ছিল তালেবানদের শাসনে, তালেবান মিলিশিয়ারা ২৮ জন নাপিতকে গ্রেফতার করেছিল, জ্যাকের মতো করে চুল কাটিয়ে দেয়ার অপরাধে। সরকারের পক্ষ থেকে সব সেলুনে নোটিশ পাঠানো হয়েছিল, বিদেশী বা পশ্চিমা কোন হেয়ারকাট যেন তারা খদ্দেরকে না দেয়! 

#৬- দশ বছর আগে লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিও বেলিজে ১০৪ একরের একটা দ্বীপ কিনেছেন, সেটাকে বিশ্বের প্রথম পরিবেশবান্ধব প্রাকৃতিক দ্বীপ হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন। সেই দ্বীপটি অতিরিক্ত মৎস আহরণ আর বৃক্ষনিধনের কারণে ধ্বংসের পথে ছিল, তখন ডি ক্যাপ্রিও কিনে নেন সেটিকে। সেখানে এখন রিসোর্ট আছে, বাইরে থেকে পর্যটকেরা ঘুরতে আসতে পারবেন। কিন্ত থাকতে হবে নিয়ম শৃঙখলার আওতায়, পরিবেশের ক্ষতি হয়, এমন কিছুই করা যাবে না সেখানে।

#৭- গ্লোবাল ওয়ার্মিং কিংবা পরিবেশ দূষণের মতো ব্যপারগুলো নিয়ে তিনি দারুণ সরব। পানির অপচয় রোধ করার বার্তা দিয়ে থাকেন সবসময়ই, তিনি নিজেও এই সচেতনতা প্রচারের জন্যে সপ্তাহে একবার মাত্র গোসল করেন। অস্কার জয়ের পর দেয়া তার বক্তব্যের অনেকটা অংশ জুড়েই ছিল পরিবেশ বাঁচানোর আকুতি। 

#৮- জ্যাঙ্গো আনচেঞ্জড সিনেমায় অভিনয় করতে গিয়ে বেশ বিব্রত পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলেন তিনি। স্যামুয়েল এল জ্যাকসনের মতো সিনিয়র অভিনেতার সামনে কিভাবে গালিগালাজ সমৃদ্ধ সংলাপগুলো উচ্চারণ করবেন, এটা নিয়ে খানিকটা ভাবনায় ছিলেন তিনি। কয়েকটা রিটেক শটের পরে স্যামুয়েল নিজেই তাকে একপাশে ডেকে নিয়ে আচ্ছামতো কয়েকটা গালি শুনিয়ে পরিবেশটা সহজ করে এনেছিলেন! এই সিনেমাতেই একটা দৃশ্যে অভিনয়টা বাস্তবের মতো ফুটিয়ে তুলতে নিজের হাত কেটে রক্তাক্ত করেছিলেন তিনি! 

#৯- বিশ মিলিয়ন ডলারের চুক্তিতে আমেরিকান সাইকো সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন তিনি। কিন্ত শিডিউল জটিলতায় শেষপর্যন্ত সরে যেতে হয় তাকে। পরে তার জায়গায় সিনেমাটায় অভিনয় করেছিলেন ক্রিশ্চিয়ান বেল। পরিচালক তারান্তিনো 'ইনগ্লোরিয়াস বাস্টার্ডস' সিনেমায় নাজী কর্ণেল ল্যান্ডার চরিত্রে তাকে নেয়ার কথা ভেবেছিলেন। কিন্ত ডি ক্যাপ্রিও সিনেমাটা করতে রাজী হননি। 

অস্কারের মঞ্চে ডি ক্যাপ্রিও

#১০- ২০০৪ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি ডেমোক্রেট প্রার্থী জন কেরি'কে সরাসরি সমর্থন দিয়েছিলেন। মোট এগারোটা রাজ্যে তিনি ঘুরেছিলেন, বক্তব্য রেখেছিলেন অন্তত বিশ জায়গায়। তার বক্তৃতার মূলভাব একটাই ছিল, পরিবেশ রক্ষায় বুশ প্রশাসনের নির্লিপ্ততা তিনি মেনে নিতে পারেননি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বারাক ওবার প্রচারণায় ২৮০০ ডলার দান করেছিলেন। ডি ক্যাপ্রিওর সামর্থ্য ছিল ২৮ মিলিয়ন ডলার দান করার, কিন্ত আমেরিকার আইন অনুসারে, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থীর জন্য একজন ব্যক্তি সরাসরি এই পরিমাণ অর্থই দান করতে পারেন নির্বাচনী প্রচারণায়।

#১১- দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্লাড ডায়মন্ড সিনেমার শুটিং চলাকালে সেখানকার একটা ছোট্ট কণ্যাশিশুকে তিনি দত্তক নিয়েছিলেন। একটা এতিমখানায় সেই মেয়েটাকে দেখেছিলেন লিওনার্দো। এখনও প্রতি মাসে একটা নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা সেই মেয়েটার নামে পাঠান তিনি, মাঝেমধ্যে ফোনে কথাও হয় দুজনের। 

#১২- তার অস্কার জয় নিয়ে কম কথা হয়নি। বারবার নমিনেশন পেয়েও কেন বিজয়ীর মুকুট তার ঘরে ওঠে না, এমন অতৃপ্তিতে তার ভক্তরে অনেক বছর ভুগেছে। কিন্ত শেষমেশ ২০১৬ সালে ইনারিতু'র 'দ্য রেভেনেন্ট' সিনেমায় অভিনয়ের জন্যে সেরা অভিনেতা হিসেবে অস্কার ঘরে তুলেছেন তিনি। সেদিন আক্ষরিক অর্থেই অন্তর্জালের বিশাল দুনিয়া 'ডি ক্যাপ্রিও'ময় হয়ে গিয়েছিল কিছুক্ষণের জন্যে। তার অস্কার বিজয়ের ঘোষণা আসার সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে শুরু হয় হুলস্থুল কাণ্ড! প্রতি মিনিটে সাড়ে চার লক্ষ টুইট হয়েছে ওই সময়টায়; এটা এখনও রেকর্ড! 

আরও পড়ুন- ডিক্যাপ্রিও: এক অবিশ্বাস্য অভিনেতার উপাখ্যান!

*

প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা