বাতিল স্ক্রিপ্ট থেকে ব্লকবাস্টার হিট: ডন এর অজানা কথন!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট

প্রোডিউসার নারিমান ইরানির অবস্থা তখন খুব শোচনীয়। ধার-কর্জে এমনভাবে ডুবে আছেন যেমনটা পুকুরের মাছ পানিতে ডুবে থাকে। এই অবস্থা থেকে বাঁচার একটিই উপায় তখন- একটা ব্যবসাসফল সিনেমা উপহার দেয়া।
সেই সময়ে সবচেয়ে রমরমা অবস্থা স্ক্রিপ্টরাইটার জুটি সেলিম জাভেদের। তারা যাই লিখেন, তাই হিট। দুই হাতে লিখেও কূলাতে পারছেন না দুজন। নারিমান তাদের কাছে গিয়ে স্ক্রিপ্ট চাইলেন। তারা জানালেন, নতুন কোন স্ক্রিপ্ট লিখে দেয়ার সময় তাদের কাছে নেই। তবে অনেকদিন আগে একটা স্ক্রিপ্ট লিখেছিলেন যা কেউ নেয় নি। বাতিল স্ক্রিপ্ট হিসেবে রেখে দিয়েছিলেন তারা। এমন সব মানুষের কাছ থেকে এই স্ক্রিপ্ট বাতিল হয়ে এসেছে যে শুনলেই ভয় লাগে! প্রকাশ মেহরা, দেব আনন্দ, জিতেন্দ্র- এরা হচ্ছেন সেইসব মানুষ, যারা এই স্ক্রিপ্টকে না করে দিয়েছিলেন।
নারিমান সাহেবের এতকিছু ভাবার সময় ছিল না। এই বাতিল স্ক্রিপ্টকেই নিয়ে আসলেন তিনি সিনেমা বানানোর জন্য। তার কাছে টাকাপয়সার পরিমাণ তখন খুব কম, এই বাজেটে এই স্ক্রিপ্টের সিনেমা করতে হলে খুবই হিসেব করে করতে হবে। হিসেব করতে করতে সিনেমা শুটিংয়ে চার বছর চলে গেল তার। যারা অভিনয় করেছিলেন, তারা সবাই জানতেন নারিমানের অবস্থা। কেউ একটি পয়সাও নেননি। ঠিক হয়েছিল, সিনেমা লাভ করলে সেই লাভের শেয়ার নিবেন সবাই।
অভিনেতা প্রাণ এই সিনেমাতে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি ক্যারেক্টারে অভিনয় করেছিলেন। শুটিং শুরু করার কয়েকদিন আগে তিনি ছোট্ট একটি দুর্ঘটনায় পায়ে আঘাত পান এবং হালকা খুঁড়িয়ে হাঁটা শুরু করেন। তার এই অবস্থা দেখে সিনেমার স্ক্রিপ্টে পরিবর্তন এনে তার ক্যারেক্টারকে খোঁড়া বানিয়ে দেয়া হয়, অথচ শুরুতে স্ক্রিপ্টে তিনি একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ হিসেবেই ছিলেন। প্রাণ একটি শর্ত রেখেছিলেন এই সিনেমাতে অভিনয়ের। লিড এক্টর সিনেমার প্রফিট শেয়ার থেকে যা ইনকাম করবে, তার চেয়ে বেশি অর্থ তাকে দিতে হবে। প্রাণের এই শর্ত মেনে নেয়া হয়েছিল।

সিনেমাটা কতটা টানাটানির মাঝে শুটিং হয়েছিল তার ছোট্ট একটি উদাহরণ দেই। সিনেমার শেষ দৃশ্যে একটি কবরস্থানে মারামারি দেখানো হয়। বাস্তবে এটি কোন কবরস্থান ছিল না, একটি বাগান ছিল। আর যেসব নামফলক দেখা যাচ্ছিল, সেসব নামফলকে সিনেমার সাথে জড়িত টেকনিকাল আর্টিস্টদের নাম লিখে রাখা হয়েছিল।
সিনেমার শুটিং শেষ হওয়ার পর এটি প্রথমে দেখানো হয় মনোজ কুমারকে। মনোজ বলেন- সিনেমাটা এত বেশি টাইটে যে, সিট থেকে নড়ার উপায় নেই। একটা হলেও টয়লেট ব্রেক দরকার। একটা গান দিয়ে দেন সিনেমাতে।
এই কথা শোনা হল। পান নিয়ে একটি গান সিনেমাতে জুড়ে দেয়া হল, অথচ এই গানটি দেব আনন্দের একটি সিনেমাতে দেয়ার কথা ছিল। গানটি গাইলেন কিশোর কুমার, গাওয়ার সময় মুখে পান নিয়েই গানটি গাচ্ছিলেন তিনি যেন গানের পুরো "ফিল" পান তিনি।
সিনেমা মুক্তির পর দুর্দান্ত ব্যবসা করল। ৭০ লাখ বাজেটের সিনেমার ইনকাম হল প্রায় সাত কোটির মতো। সিনেমার কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয়কারী ৬ ফুট লম্বা মানুষটি বেস্ট এক্টরের ফিল্মফেয়ার এওয়ার্ডও পেলেন। নাম তার অমিতাভ বচ্চন।

কিন্তু এতকিছু পেয়েও লাভ হয়নি। সিনেমার শুটিংয়ের শেষদিকে একটি জায়গায় একটি দেয়াল ধ্বসে পড়লে প্রোডিউসার নারিমান ইরানি সেই দুর্ঘটনায় মারা যান। তবে তাকে আর তার পরিবারকে ভুলে যাননি অমিতাভ আর প্রাণ। নিজেদের লাভের শেয়ার রেখে বাকি সমস্ত অর্থ নারিমানের পরিবারকে দিয়ে দেয়া হয়। আফসোস একটাই, সিনেমাটির সাফল্য মানুষটি দেখে যেতে পারেননি।
সিনেমার নাম ডন, আজকে যার মুক্তির ৪২ বছর পূর্ণ হল।