'আই ডোন্ট কেয়ার' মানেই কি পুরোপুরি কেয়ারলেস হয়ে যাওয়া? মানুষটা ছিল আজ নেই এটা যেমন সত্যি, বেইলি রোডের বৃষ্টিতে ভেজার স্মৃতিটাও প্রবলভাবে সত্যি...

গান গাইতে গাইতেই হুট করে উদাস হয়ে কথাগুলো বলেছিলেন তাহসান। বেইলী রোডে একটা অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন তিনি। 'দূরে তুমি দাঁড়িয়ে' গানটা গাইছিলেন অনুষ্ঠানে। গানের একটা লাইন আছে এরকম - "এখনো বৃষ্টি পড়ে- বৃষ্টিতে ভেজা আমার পাশে তুমি নেই"।

গানটির ভাইভ এবং আবহাওয়ার সাথে মিলেমিশে অন্যরকম এক আবহ তৈরি হয় সেখানে। এসময় তাহসান গানটির মাঝেই বলে ওঠেন, "একদিন এই বেইলী রোডে বৃষ্টিতে কত ভিজেছি রিকশায়, আজ তুমি নেই, আই ডোন্ট কেয়ার"।

'আই ডোন্ট কেয়ার' মানেই কি পুরোপুরি কেয়ারলেস হয়ে যাওয়া? মানুষটা ছিল আজ নেই এটা যেমন সত্যি, বেইলি রোডের বৃষ্টিতে ভেজার স্মৃতিটাও প্রবলভাবে সত্যি। এই স্মৃতিগুলো আজীবন থেকে যাবে। আজকে আর একইরকম স্মৃতি হয়ত তৈরি হবে না, সেখানে কোনো রিগ্রেট নেই, কিন্তু যা কিছু আছে স্মৃতিজুড়ে তাও মিথ্যে নয় একবিন্দু। তাই, 'আই ডোন্ট কেয়ার' মানে এই না তাহসান সব কিছুকে ছুঁড়ে ফেলেছেন, এমন না এই বাক্য তিনি কাউকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, কোনো বার্তা দিতে চেয়েছেন... দেখে মনে হয়েছে তিনি বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যার নস্টালজিয়ায় ক্যাজুয়ালি কথাটা বলেছেন।

এই গানের ছোট্ট একটি ক্লিপ ফেসবুকে মুহুর্তেই ছড়িয়ে যায়। ছড়িয়ে যায় তাহসানের উচ্চারিত গানের মাঝে বলা কথাগুলো। ফেসবুক হয়ে ওঠে তাহসানময়। সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহের কারণেই কিনা কে জানে, তাহসানের বলা লাইনগুলোকে মানুষ ভিন্ন দৃষ্টিকোন থেকে ভাবতে শুরু করে।

অথচ, সোশ্যাল মিডিয়ায় তাহসান অনলাইনবাসীর নিরঙ্কুশ ভালবাসা কোনোকালেই পাননি। কত শত ট্রল হয়েছে তাকে নিয়ে। তার অভিনয় নিয়ে, গান নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য, ট্রল, ব্যঙ্গ কম হয়নি ফেসবুকে।

মেয়ে আইরার সঙ্গে তাহসান

গানের মাঝে এই লাইনগুলো বলায় এখন সবাই তাহসানের বিরাট ভক্ত বনে গেছে, যারা সকাল বিকাল তাকে ট্রল করত তারাও এখন তাহসানের মনের অন্দরমহলের ব্যথায় যেন সমব্যথী।

এই সোশ্যাল মিডিয়া ভয়ংকর এক জায়গা। রাতারাতি একজনকে আমরা মহান বানিয়ে ফেলি, রাতারাতি একজনের জীবন ধ্বংস করে দিতে পারি। খুব অল্পতেই আমরা মানুষকে বিচারে তুলে ফেলি, বিচার করি। অথচ, ব্যক্তি তাহসান সবসময়ই নির্বিবাদী একজন মানুষ, মিডিয়ায় কখনো বিতর্কিত মন্তব্য করেন নি। শিক্ষার ছাপ তার কথাবার্তায়, চলাফেরায় সবসময়ই। তবুও, এতোদিন অজানা কারণে তাকে লোকে ট্রল করেছে।

তাহসানের জীবনে খুব বেশি পরিবর্তন আসেনি। আসেনি নতুন কোনো গান বা নাটকও। কিন্তু হুট করে এখন তিনি এই জাজমেন্টাল বাঙ্গালির অভূতপূর্ব ভালবাসা পাচ্ছেন। এই ভালবাসা কি খুব নিখাদ? কাল যদি তাহসান নতুন কারো সাথে সম্পর্কে জড়ান, এই ভালবাসার রং কি বদলাবে না একটু হলেও? বদলায়। যেমন বদলেছে মিথিলার প্রতি...

মিথিলার ব্যক্তিগত ছবি প্রকাশিত হওয়ার পর মিথিলার প্রতি এক শ্রেণীর মানুষের যে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হয়েছে তার বহিঃপ্রকাশ তারা বিভিন্নভাবে দেখাচ্ছেন। মিথিলাকে বিচার করছেন তাদের মধ্যযুগীয় ভাবনা থেকে। চরিত্রহননে নামছেন। একদিকে তারা মিথিলাকে গালি দিচ্ছেন, অন্যদিকে ভিডিও' লিংক খুঁজছেন। এমনই হিপোক্রেট এই জনতা। তাদের কেউ কেউ এই ধারণা পোষণ করে যে মিথিলা তাহসানের সাথে প্রতারণা করেছেন। এই বিশ্বাসে বিশ্বাসী জনতা যেমন মিথিলার বিরুদ্ধাচারণ করেছেন কিছু না বুঝেই, একই সাথে তারা তাহসানের 'আই ডোন্ট কেয়ার' বাক্যটার কারণে তার প্রতি সহমর্মিতা বোধ করছেন ভুল লজিকে।

তাহসান 'আই ডোন্ট কেয়ার' বললেও আপাতদৃষ্টিতে দেখে মনে হয়, তিনিই সবচেয়ে বেশি কেয়ার করেন। করেন বলেই যখন সবাই মিথিলার চরিত্রহননে ব্যস্ত তিনি স্মরণ করিয়ে দেন তার মেয়েটার কথা। তিনি কেয়ার করেন বলেই, তিনি মেয়েটার বড় হওয়ার এই সময়টাকে তাকে সবধরনের নেতিবাচক তর্ক বিতর্কের প্রভাবমুক্ত বলয়ে রাখার লড়াই করেন। আপনি যখন তাহসানের ভুল খোঁজেন কিংবা মিথিলার চরিত্র পোস্ট মর্টেম করেন, তাহসান তখন ভাবেন কিভাবে একটা স্বাভাবিক বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা যায়, মেয়েটা যেন কোনোভাবেই হার্ড ফিলিংস নিয়ে বেড়ে না ওঠে।

আপনারা কেবল জাজমেন্ট করেই যান। তাহসানের সমালোচক থেকে সবচেয়ে বড় ভক্ত বনে যান 'আই ডোন্ট কেয়ার' বলায়। ভাবেন, তাহসানের কষ্ট বেদনা সব বুঝে ফেলেছেন। যদি, বুঝার মতো মানসিক গ্রোথ থাকত, তাহলে তাহসানের কন্যার মায়ের ছবিগুলো ছড়িয়ে দেয়ার আগে ভাবতেন। তার ব্যক্তিগত ছবি ছড়িয়ে ভন্ডামির উৎসব করতেন না।

তাহসানের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে একটা মন্তব্যের জন্যে তার প্রতি 'পাবলিক সিম্প্যাথি' দেখে ভাল লেগেছে। অন্তত ঘৃণার চাষ তো নেই। কিন্তু, খারাপ লাগে এই ভেবে যে, এই জনতাই আবার আরেকজনের ব্যক্তিগত জীবনের ছবি নিয়ে তাকে চরিত্রহীনা প্রমাণের চেষ্টায় বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলে। তখন পাবলিকের মনে কোনো সিম্প্যাথির জায়গা থাকে না, তখন তাদের যুক্তিবাদী মন কাজ করে না। তখন তারা কারো মনের অন্দরমহলের কথা বুঝতে চাওয়ার সময় নেয় না। তখন তারাই হয়ে যায় সবচেয়ে বড় বিচারক....

*

প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা