দেশের তরে ছুটে আসা মানুষটার অ্যান্টিবডির সনদ থাকা সত্ত্বেও এয়ারপোর্ট থেকে সরাসরি পাঠানো হয়েছে আশকোনার হজ ক্যাম্পে। সঙ্গে আনা ৮ সুটকেস মাস্ক, গ্লাভস ও পিপিই আটকে দিয়েছেন কাস্টমস কর্মকর্তারা। কী দারুণ আপ্যায়ন!

আমাদের দেশে সবচেয়ে বড় অর্জন কি জানেন? এই দেশটা সফলভাবে ছেড়ে চলে যাওয়া। একবার এই দেশটা ছাড়তে পারলে, সহজে কেউ আর পেছন ফিরে তাকাতে চায় না- একমাত্র বোকারা ছাড়া। তেমনই একজন ডাক্তার ফেরদৌস খন্দকার।

নইলে আমেরিকার জীবন ছেড়ে কেউ এই বাংলাদেশে কেনো আসবে হিংস্র জানোয়ারদের সেবার করার জন্য। একমাত্র বোকাদের পক্ষেই এমন সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব। বুদ্ধিমান হলে তো ‘আই পাক ইওর ছিস্টেম’ বলে চলে যেতেন।

নিজের টাকায়, দেশের টানে, মানুষের সেবায়,  শত শত মাইল পাড়ি দিয়ে এসে কী পেলেন? দেশে এসে পৌঁছানোর আগেও তার নামে ছড়ানো হলো অপপ্রচার। তিনি নাকি বঙ্গবন্ধুর খুনীদের আত্মীয়। তিনি নাকি কুমিল্লার এমপি হতে এসেছেন।  খুনি রশিদের খালাতো ভাই বানানো হয়েছে তাকে। আরো বলা হয়েছে, উনি নাকি পলাতক তারেক রহমানকে নিয়মিত ফান্ডিং করেন। নামের শেষে খন্দকার, আর আদিবাড়ি কুমিল্লা হওয়াতেই যত দোষ তার।

মিঃ হাইজিন জীবাণুমুক্ত হাতের প্রতিশ্রুতি

এসব অপপ্রচারের জবাব দিতে দিতেই বিমান বন্দরে ঘটলো আরেক বিপত্তি। আমেরিকা থেকে আনা অ্যান্টিবডির সনদ থাকা সত্ত্বেও, তাকে বাড়ি যেতে দেয়া হয়নি। এয়ারপোর্ট থেকে সরাসরি পাঠানো হয়েছে আশকোনার হজ ক্যাম্পে। বাধ্যতামূলক ১৪ দিন থাকতে হবে সেখানে।  

আর সঙ্গে আনা ৮টি সুটকেস আটকে দিয়েছেন কাস্টম কর্মকর্তারা। মাস্ক, গ্লাভস ও পিপিই ভর্তি এসব সুটকেসের জন্য শুল্ক দাবি করে আটকে দেয়া হয়েছে। দেশের ক্রান্তিকালে করোনা প্রতিরোধে কাজ করবেন, মানুষের সেবায় নিয়োজিত হবেন- এটাই ছিলো তার সবচেয়ে বড় অপরাধ এবং ভুল সিদ্ধান্ত।

এমনকি কোথাও কোথাও তাকে দালালও বলা হচ্ছে। এমন আপ্যায়ন পেয়ে রীতিমত বিস্মিত তিনি। কণ্ঠে অসহায়ত্ব নিয়েই ফেসবুক লাইভে এসেছেন। বলেছেন নিজের কষ্টের কথা। ঐ চিকিৎসা সামগ্রীগুলো কাস্টম থেকে ছাড়ানোর আকুল আবেদন জানিয়েছেন। এটাও বলেছেন যে তার এসব লাগবে না, করোনাযুদ্ধে ফ্রন্টলাইনে আছেন এমন কেউ যদি ওগুলো ব্যবহার করেন, তবেই তার কষ্ট সার্থক।

তিনি তো কোথাও দাবী করেননি যে করোনার ভ্যাক্সিন নিয়ে এসেছেন। কিংবা করোনা আক্রান্ত সবাইকে তিনি সুস্থ করে দিতে পারবেন। তিনি তার চেস্টাটা চালিয়ে যেতে এসেছিলেন। আর এতেই যতো সমস্যা। তিনি দেশে আসায় কার এতো ক্ষতি হলো সেটাও ঠিক বোধগম্য না।

কেন এসেছিলেন এই বঙ্গে, নিয়ে ভালোবাসা সঙ্গে?

যে মানুষটার এখন চিকিৎসাসেবা দেবার কথা, তিনি এখন হজ ক্যাম্পে বন্দী জীবন কাটাচ্ছেন। তিনি নিজেই তো একজন চিকিৎসক, ভালো করেই জানেন কাদের কখন কোয়ারেন্টিনে থাকা লাগে। তার শরীরে করোনার অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে, মানে কোনো না কোনোভাবে তার শরীর করোনা প্রতিরোধী।

এটা তার মুখের দাবী না, সার্টিভাইড ফ্যাক্ট। সেই কাগজপত্র দেখানোর পরেও তাকে জোর করে আটকে রাখার মানে নেই। এতোই যদি সন্দেহ থাকে তাকে নিয়ে তাহলে তার করোনা টেস্ট করালেই তো সব বিভ্রান্তি চুকে যায়। সেটা না করিয়ে, তাকে অযথা আটকে রাখা কতটুক যুক্তিসঙ্গত?

তিনি তো গৃহবন্দী থাকার জন্য আসেননি। এসেছিলেন মানুষকে সাহায্য করার জন্য। এই ক্রান্তিকালে, এক একটা দিন এক একটা মাসের সমান। এই সময়ে তাকে দুই সপ্তাহ আটকে রাখার মানে, কতখানি তার কাজ পিছিয়ে দেয়া সেটা কি জানে প্রশাসন? নাকি সেই উদ্দেশ্যেই এসব করা হচ্ছে? কারা তার নামে অপপ্রচার চালাচ্ছে, কারা তাকে এভাবে থামিয়ে দিতে চাইছে সেটাও খতিয়ে দেখা দরকার। এটা একই সাথে হতাশার এবং অপমানের।

ডা. ফেরদৌস, আমাদের কখনো ক্ষমা করবেন না প্লিজ! কেন এসেছিলেন এই বঙ্গে, নিয়ে ভালোবাসা সঙ্গে? আপনি তো মানুষের ডাক্তার, হিংস্র পশুদের সাথে লড়াইয়ে কি টিকে থাকতে পারবেন?

আরো পড়ুন-


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা