হল না খুলে পরীক্ষা নেবেন কীভাবে? ছেলেমেয়েরা কোথায় থেকে পরীক্ষা দেবে? উদ্দেশ্যে যদি হয় সনদ দিয়ে বিসিএসের আবেদন করা তাহলে এক কাজ করুন, পরীক্ষাও নেয়ার দরকার নেই। অটো পাস দিয়ে দিন...

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কীসের ভিত্তিতে কোন সিদ্ধান্ত নেয় আমি আসলে আজকাল আর বুঝতে পারি না। আচ্ছা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর হল না খুলে কী করে পরীক্ষা না নেওয়ার ভাবনা মাথায় আসে? ছেলেমেয়েরা কোথায় থেকে পরীক্ষা দেবে?

করোনা পরিস্থিতির কারণে গত মার্চ থেকে বন্ধ আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়৷ গত জুন থেকে অনলাইনে ক্লাস চললেও কোনো পরীক্ষা হয়নি। কিন্ত গত বৃহস্পতিবার হুট করেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ২৬ ডিসেম্বর থেকে স্নাতক শেষ বর্ষ ও স্নাতকোত্তরের পরীক্ষাগুলো নেওয়া হবে।

কিন্তু ১০ মাস বন্ধ থাকার পর কেন হুট করে এই পরীক্ষা? বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান বলছেন, এই পরীক্ষাগুলো নেওয়া খুব জরুরি৷ কাজেই তারা পরীক্ষা নেবেনই। 

কিন্তু কেন জরুরী আপনারা জানেন না? কারণ ৪৩ তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। পরীক্ষা শেষ না হলে যে বিসিএসে আবেদন করা যাবে না। এই কথাটা বলতে উপাচার্যের লজ্জা লাগে? 

ভাবেন একবার এই দেশটার অবস্থা? এই দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখন ছেলেমেয়ে ভর্তি হয় চার বছর পর একটা সনদের জন্য যা দিয়ে সে বিসিএস বা সরকারি বেসরকারি চাকুরির একটা পরীক্ষা দিতে পারবে। 

শুধু ঢাকা না জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের ছেলেমেয়েরা চাইছে তারা যেন বিসিএসে আবেদন করতে পারেন। কাজেই তাদের পরীক্ষা নিতে হবে। পারলে পরীক্ষা ছাড়াই অটো সনদ চায় তারা! 

একবার ভাবেন কোন গবেষণা নয়, লেখাপড়া নয়, জ্ঞানচর্চা নয় শুধুমাত্র একটা বিসিএসের জন্য এখন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পরীক্ষা নিচ্ছে ভাবা যায়? গোটা দুনিয়া খুঁজে এমন আর কোন দেশের উদাহরণ আনতে পারবেন না।

না আমি বলছি না লেখাপড়া শেষ করে ছেলেমেয়েরা চাকুরির পরীক্ষা দেবে না, অবশ্যই দেবে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ কী তাহলে? এই যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছেলেমেয়েরা এখন ভর্তি হয় তাদের প্রায় অধিকাংশই প্রথম বর্ষ থেকেই বিসিএসের লেখাপড়া করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও তাদের টানতে পারেন না, ছেলেমেয়েদেরও একাডেমিক লেখাপড়ার আগ্রহ নেই।

একবার ভাবুন ইংরেজি, বাংলা, পদার্থ, রসায়ন যেই বিষয়েই ছেলেমেয়েরা পড়ুক তাদের লক্ষ্য এখন বিসিএস বা চাকুরি। লাইব্রেরীতে যান, ছেলেমেয়েদের হাতে চাকুরির বই। অন্য কোন বই কেউ ছুঁয়ে দেখে না। আচ্ছা এই যে লাখ লাখ ছেলেমেয়ে সরকারি চাকরির জন্য পড়ছে দেশে কয়টা সরকারি চাকরি আছে? কেন তাহলে আমরা লাখ-লাখ ছেলের ভবিষ্যৎ নষ্ট করছি? 

আমি মনে করি আমরা যদি আমাদের ছেলেমেয়েদের শুধু চাকরির জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি করাতে চাই তাহলে সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিসিএস নামে একটা বিষয় খুলে বাকি সব বন্ধ করে দেয়া হোক। আর যদি মনে হয় যে আমাদের উদ্দেশ্য কর্মসংস্থান তাহলে সবার জন্য কারিগরি প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করা হোক। আর যদি মনে হয় বিশ্ববিদ্যালয় উদ্দেশ্য জ্ঞানচর্চা তাহলে সেভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে।

অবশ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ যে জ্ঞানচর্চা করা সেটা বোধহয় আমরা পুরাপুরি ভুলে গিয়েছি। তাহলে কেন আমরা জেলায় জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় করছি? আমি জানি না এই দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিয়ে নীতি নির্ধারকেরা ভাবেন কী না! এই যে করেনারা দশটা মাস গেল! আমাদের দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভূমিকা কী? কী করলেন এখানকার হাজার হাজার শিক্ষক? শুনতে খারাপ লাগলেও অধিকাংশই তো শুধু বসে বসে বেতন নিচ্ছেন। আমার ভাবলে মাঝে মধ্যে হতাশ লাগে। 

যাই হোক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভবিষ্যত নিয়ে আরও আলোচনা পরে করা যাবে। এই মুহুর্তে শুরুর আলোচনায় ফিরি। আচ্ছা হল না খুলে পরীক্ষা নেবেন কীভাবে? এটা তো ছেলেমেয়েদের কষ্ট দেয়া। আর গত ১০ মাসে তো আসলে লেখাপড়াও হয়নি। তাহলে কী দিয়ে পরীক্ষা দেবেন। আর উদ্দেশ্যে যদি হয় সনদ দিয়ে বিসিএসের আবেদন করা তাহলে এক কাজ করেন পরীক্ষাও নেওয়ার দরকার নেই। অটো পাস দিয়ে দেন। 

দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ নীতি নির্ধারকদের বলবো, আরও খারাপ হয়ে যাওয়ার আগেই পারলে সংকটের সমাধান করুন। দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে লেখাপড়া বা জ্ঞানচর্চা করুন। নয়তো উচ্চ শিক্ষার নামে এই তামাশা বন্ধ করে দিন একেবারে।


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা