ক্রিসমাস ট্রি দেখতে সবাই যায়, বালি, ব্যাংককে গিয়ে মন্দিরে ঘুরতে যায়। তাদের নিয়তে কোন শিরক নাই, শিরককে তারা সমর্থনও করছেন না। তাহলে দেবী দূর্গার মূর্তি দেখতে গেলে এত আপত্তি কেন?
বর্তমানে প্রচুর মানুষ ঘোরাঘুরি করতে ব্যাংকক, বালি (ইন্দোনেশিয়া) ইত্যাদি জায়গায় যায়। বিয়ের পরে হানিমুনে বালি, ব্যাংকক যাওয়া খুব কমন। আমি পরিবার-বন্ধুবান্ধবদের অন্তত ৩০ জনকে দেখেছি যারা এসব জায়গায় ঘুরতে যায়। আমি নিজেও গেছি। ইউটিউবে প্রচুর বাংলা ভ্লগ আছে এসব জায়গার।
এখন বালিতে গেলে খুব কমন হচ্ছে ওখানকার মন্দিরগুলোতে যাওয়া। সবাই সেখানে যায় সৌন্দর্য দেখতে। কত শত বছরের পুরনো মূর্তি, সবাই ছবি তুলছে। কেউ পূজা করছে না। সবাই শুধুমাত্র সৌন্দর্য হিসেবে ব্যাপারটাকে দেখছে। ফেসবুকে ছবি দিলেও কেউ কিচ্ছু বলে না।
ইউরোপে গেলে কত পুরানো দিনের চার্চ দেখতে যায়। ইংল্যান্ড-আয়ারল্যান্ডে গিয়ে আমি হাজার বছরের পুরানো চার্চ দেখে এসেছি।
ইস্তানবুলে 'হ্যাজিয়া সোফিয়া' মিউজিয়ামকে কিছুদিন আগে মসজিদ করা হলো, সেখানেও আমি গিয়েছিলাম। মসজিদটা প্রথমে 'চার্চ' ছিল, সেখানে 'মাদার মেরির' ছবি ছিল। পরে মেরির ছবি ঢেকে দিয়ে আল্লাহ-মুহাম্মদ(সা) এর ক্যালিগ্রাফি করে মসজিদ বানানো হয়। পরে যখন মিউজিয়াম করা হয় তখন মাদার মেরি, আর ক্যালিগ্রাফিগুলো সবই ওপেন করে দেয়া হয়। মানুষ মিউজিয়ামে গিয়ে সেটার ছবি তুলতো।
নিউ ইয়র্কে ক্রিসমাসের সময়ে রকফেলারের বিশাল ক্রিসমাস ট্রি দেখতে সবাই আসে। বাইরের স্টেট থেকে, পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ আসে শুধু এতোবড় ক্রিসমাস ট্রি দেখতে। এটা সম্ভবত বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রিসমাস ট্রি। এইটা দেখতে ধার্মিক (সব ধর্মের) এবং অধার্মিক সবাই আসে। আমার ইচ্ছা ব্রাজিলে ক্রাইস্ট রিডিমার দেখতে যাওয়া। খ্রিস্টের ওই বড় স্ট্যাচু দেখতেও সবাই আসে।
যাই হোক, মূল কথা হচ্ছে, এই যে মানুষ এতো জায়গায় ঘুরতে যায়, কারও কোন সমস্যা হচ্ছে না। তাহলে দেবী দূর্গার মূর্তি দেখতে গেলে এতো সমস্যা কেন?
আমি একই মানুষ দেখেছি ফেসবুকে যারা ব্যাংককে-বালিতে সৌন্দর্য দেখতে মন্দিরে যায়, রাঙামাটি-বান্দরবানের বড় বুদ্ধের মূর্তির সাথে ফেসবুকে ছবি দেয় আবার দূর্গা পূজা আসলে এইটা দেখতে মন্দিরে যাওয়া যাবে না, মন্দিরে যাওয়া তো দূরের কথা- যারা ধর্মীয় উৎসব পালন করছেন তাঁদের শুভেচ্ছাও জানানো যাবে না- এই ধরনের কথা বলেন।
আপনি হয়তো হারাম বলতে, কোন দেব-দেবীর নামে বলি দেয়া মাংস খেতে পারেন না। কারণ যে আয়াতে শুকর খাওয়া হারাম, সেই আয়াতেই বলা আছে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও নামে উৎসর্গকৃত জন্তু খাওয়া হারাম!
কিন্তু যারা পূজার উৎসব দেখতে যায় তাঁরা কেবল সৌন্দর্য বা উৎসবটা দেখতে যাচ্ছে- অতোটুকুই। যেমনটা ক্রিসমাস ট্রি দেখতে সবাই যায়, বালি, ব্যাংককে ঘুরতে যায়, ব্যাপারটাকে সেই কনসেপ্টেই নেয়া যায়। তাঁদের নিয়তে কোন শিরক নাই, শিরককে তাঁরা সমর্থনও করছে না।
অন্য কোন জায়গায় সমস্যা না হলে এখানেই আউট্রেজ আসে কেন?