নবীন উদ্যোক্তাদের পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং করার ৯ উপায়!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
অনলাইন বিজনেসে সফলতার জন্য প্রথম যে ব্যাপারটির উপর সবচেয়ে বেশী গুরুত্ব দিতে হয় তা হলো পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং। নতুন উদ্যোক্তারা কীভাবে পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং করতে পারেন, তার ৯টি টিপস দেওয়া হলো এই লেখায়।
করোনা মহামারিতে সারা বিশ্ব থমকে গেলেও ই-কমার্স ব্যাপক জনপ্রিয় মাধ্যম হিসেবে পরিচিতি লাভ করছে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলাতে ই-কমার্স কেনাকাটার জন্য পছন্দের তালিকায় থাকলেও বাংলাদেশে তেমন জনপ্রিয়তা লাভ করেনি। কিন্তু বর্তমান মহামারিতে বাংলাদেশে ই-কমার্স ব্যবসায় ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। বাংলাদেশে ই-কমার্সের জনপ্রিয় প্লাটফর্ম হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক। যথাযথ ট্রেনিং ও নির্দেশনা পেলে ই-কমার্স হাজার হাজার শিক্ষিত বেকারদের জন্য আয়ের অন্যতম একটা মাধ্যম হিসেবে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবে।
ই-কমার্সে সফলতার জন্য প্রথম যে ব্যাপারটির উপর সবচেয়ে বেশী গুরুত্ব দিতে হয় তা হলো পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং। ব্যবসায়িক ব্র্যান্ডিং এর কথা আমরা শুনে থাকলেও পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং শব্দটা আমাদের দেশে একদম নতুনই বলা যায়। ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রিতে পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং ব্যবসায়িক প্রসারে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আপনার অনলাইন বিজনেসে এটা একটা অভিনব পদ্ধতি যার মাধ্যমে আপনি একজন সফল উদ্যোক্তা হতে পারবেন। অনলাইন ব্যাবসায় ভূবনে আপনি নিজেকে কেমন দেখতে চান এবং আপনার সম্ভাব্য কাস্টমার আপনার প্রতি কেমন ধারণা পোষণ করবে সেটা নির্ভর করবে আপনার পার্সোনাল ব্র্যান্ডিংয়ের উপর।
অনলাইন ব্যবসায় বা ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রিতে পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং খুব শক্তিশালি একটা ভূমিকা পালন করে। আপনার অনলাইন ব্যবসায় সর্বোচ্চ আউটপুট পেতে হলে অবশ্যই ব্যবসায়িক ব্র্যান্ডের পাশাপাশি পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং এর প্রতি পূর্ণ মনোযোগ দিতে হবে। পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং কাস্টমারের কাছে আপনার স্বতন্ত্র পরিচয় বহন করবে। আপনার ব্যক্তিত্ব, আপনার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য, আপনার আগ্রহ, আপনার বিচক্ষণতা এই সবকিছুই পার্সোনাল ব্র্যান্ডিংয়ের মাধ্যমে কাস্টমারের কাছে যথাযতভাবে উপস্থাপন করতে পারবেন। সঠিক পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং এর মাধ্যমে আপনার বিক্রয় বৃদ্ধি করতে পারবেন, সেই সাথে ব্যবসায় পরিচিতির পরিধি। তাই চমকপ্রদ পার্সোনাল ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য কিছু সাধারণ টিপস নিয়ে আলোচনা করলাম। আশা করি নবীন ই-কমার্স উদ্যোক্তাদের জন্য টিপসগুলো কাজে লাগবে।
১। উদ্ভাবনী ক্ষমতা: যে বিষয় সম্পর্কে আপনার উৎসাহ ও উদ্ধিপনা অনেক বেশী, যে কাজ করতে আপনার ভিতর থেকে একটা আকর্ষন কাজ করে সেই কাজ যথাযত মার্কেটপ্লেসে উপস্থাপন করাই হচ্ছে আপনার উদ্ভাবনী ক্ষমতা। অর্থাৎ আপনার স্বপছন্দের কাজকে পেশা হিসেবে অনালাইন মার্কেটপ্লেসে জাহির করার মাধ্যমে সফলতা অর্জন করা।
২। সৃষ্টিশীলতা: কাস্টমার আকর্ষন করার জন্য ব্যাতিক্রম ব্যাক্তিত্বই হচ্ছে সৃষ্টিশীলতা। আপনার ব্যক্তিত্বের মাধ্যমেই আপনি অন্যান্যদের থেকে আলাদা হবেন। অনলাইনে ক্রেতা আকর্ষনের জন্য আপনাকে জাহির করতে হবে আপনি কী জানেন! আপনার কী কী গুনাবলী আছে! যে প্রোডাক্ট আপনি মার্কেটপ্লেসে বিক্রি করতে চাচ্ছেন সেই প্রোডাক্ট কাস্টমার কেন অন্যের কাছ থেকে না নিয়ে আপনার কাছ থেকে কিনবে! কেন আপনি অন্য উদ্যোক্তা হতে ব্যতিক্রম তা প্রকাশ করার জন্য অবশ্যই আপনাকে সৃষ্টিশীল হতে হবে।
৩। যোগাযোগ: কাস্টমারের সাথে যোগাযোগ বৃদ্ধি করার ক্ষমতা অর্জন করুন যেহেতু আপনি অনলাইন প্লাটফর্ম ব্যবহার করে উদ্যোক্তা হতে চান সেই ক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে কিংবা ব্লগে আপনার প্রোডাক্ট সম্পর্কে আর্টিকেল লিখতে পারেন। এতে আপনার ভবিষ্যৎ কাস্টমার আপনার সম্মন্ধে একটা স্পষ্ট ধারণা পাবে।
৪। সমন্বয় বজায় রাখা: মানুষ আপনার সম্পর্কে কী বলে? আপনার প্রোডাক্ট সম্পর্কে কী বলে সেই দিকে মনোযোগ দিন এবং মানুষের কথার যথাযথ সাড়া দিন। কাউকে সাড়া দিতে গিয়ে রেগে গেলেন কিংবা মানুষের কানকথা শুনে থেমে গেলেন- এমনটা করা যাবে না মোটেও। এই জন্য আপনার নিজের অভিমত ও মানুষের কথার মাঝে একটা সেতু বন্ধন তৈরি করুন। তবেই আজকে যিনি আপনার সমালোচক, আগামীকাল তিনিই আপনার কাস্টমার হবেন।
৫। বিশ্বাসযোগ্যতা: ইন্টারনেটে ভালো মার্কেটপ্লেসের সাথে পাল্লা দিয়ে ব্যাঙের ছাতার মতো আনাচে কানাচে গজিয়ে উঠেছে ফেইক ই-কমার্স সাইট বা ফেইসবুক বিজনেস পেইজ। সফল ই-কমার্স উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইলে এইসব ফেইক পেইজের সাথে প্রতিযোগীতা করে প্রমাণ করতে হবে আপনি ফেইক নন। আপনার প্রতি মানুষের আস্থা অর্জন করে নিতে হবে সম্পূর্ন নিজের দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে। একবার মানুষের মনে বিশ্বাস স্থাপন করেই দেখুন, হাজার হাজার ফেইক পেইজের ভিড়ে মানুষ আপনাকে খুঁজে নিবে।
৬। দৃঢ়তা: ব্র্যান্ডিং এর জন্য দৃঢ়তা একটি চমৎকার হাতিয়ার। আপনি যদি মাসে একবার সোস্যাল মিডিয়ায় একটা সেল পোষ্ট দিয়ে কিংবা কন্টেন্ট লিখে ভাবেন আপনার দায়িত্ব শেষ, এখন আপনাকে সবাই চিনবে, তাহলে ভুল পথে এগোচ্ছেন আপনি।
সোস্যাল মিডিয়া এমন একটি প্লাটফর্ম, যেখানে প্রতিনিয়ত নতুনের আগমন ঘটছে আর সেই নব আগন্তুকদের মাঝে টিকে থাকতে হলে আপনাকে দৃঢ়তা নিয়ে এগোতে হবে, প্রতিদিন অন্তত একটি কন্টেন্ট নিয়ে পোষ্ট লিখতে হবে; হোক সেটা সোস্যাল মিডিয়া কিংবা ব্লগিং সাইট। তবে ভূলভাল তথ্য বা দূর্বল তথ্যের কন্টেন্ট লিখার চেয়ে কিছু না লিখাই শ্রেয়। তাই যাই লিখবেন সেটা যেন অবশ্যই তথ্য বহুল হয় সেই দৃঢ়তা নিয়ে এগিয়ে চলুন।
৭। গল্প করতে শিখুন: এখানে আমি প্রচলিত নাটক, সিনেমা কিংবা ফিকশনের গল্পকার হতে বলিনি আপনাকে। এখানে জীবন, জীবিকা, সাফল্য, ব্যর্থতা ও অদম্য পরিশ্রমের গল্পেরর কথা বুঝিয়েছি।
প্রতিটা মানুষের জীবনে কিছু না বলা গল্প থাকে। বানানো গল্প না, বাস্তব অভিজ্ঞতার ঝুলি যেখানে আপনার অব্যক্ত কিছু কথা লুকিয়ে আছে সেই কথাগুলিকে সাজিয়ে গল্প করতে শিখুন। কোন পথে? কী করে আপনি আপনার উদ্যোক্তা জীবনের প্রতিটি দিন পার করেছেন, কী কী প্রতিবন্ধকতা পেড়িয়ে এসেছেন, বর্তমানে আপনার উদ্যোগটি কোন পর্যায়ে এসেছে, ভবিষ্যতে আপনার প্রতিষ্ঠানকে কোন পর্যায়ে দেখতে চান- সেই কথাগুলো গল্পাকারে লিখতে শিখুন। যখন মানুষ জানবে আপনি কে, কোথা থেকে আজকের এই অবস্থানে এসেছেন, ভবিষ্যতে নিজেকে কোথায় দেখতে চান বলে স্বপ্নের জাল বুনে যাচ্ছেন- তখন আপনি মানুষের আস্থাভাজন ব্যক্তি হিসেবে পরিচিতি পাবেন, যা আপনার উদ্যোক্তা জীবনে সাফল্যের মাইল ফলক হিসেবে কাজ করবে ।
৮। ব্যক্তিত্বের ভিত পোক্ত করুন: কাস্টমারের কাছে সদা সর্বদা সৎ থাকুন, সেই সাথে ব্যক্তিত্ববোধকে এমনভাবে লালন পালন করুন যে, যখন কোন কাস্টমার আপনার নাম শুনবে, তখন যাতে তাদের মনে একজন আদর্শবান, শিক্ষিত, স্মার্ট, পেশাদার, বন্ধুত্বপূর্ণ ইত্যাদি বিশেষণ সমৃদ্ধ ইতিবাচক মানুষের চেহারা ভেসে উঠে। তার মানে হচ্ছে যখন আপনার পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং প্রতিষ্ঠিত করতে যাবেন, তখন এমনভাবে কাজ করুন যেখানে আপনাকে মানুষের মাঝে কোন পর্যায়ে দেখতে চান সেই প্রতিবিম্ভ ছকে এঁকে নিতে পারেন এবং তা আন্তরিকভাবেই করবেন।
কোন প্রোডাক্ট বা সেবা সম্পর্কে না জানলে সেই ব্যাপারে মিথ্য বলবেন না বরং সময় নিয়ে রিসার্চ করুন এবং যথাযত জ্ঞান অর্জনের পর সেই প্রোডাক্ট নিয়ে কাস্টমারের সাথে আলোচনা করুন। বিশ্বাস করুন এসব টুকিটাকি গুলাবলিই আপনার ব্যক্তিত্বের ভিতকে কাস্টমারে মনে ইস্পাতের ন্যায় পোক্ত করবে ।
৯। মতবিনিময় করুন: কাস্টমারের সাথে আপনার সুসম্পর্ক বজায় রাখার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আরো বেশী এক্টিভ হোন, আপনার প্রোডাক্ট, সার্ভিস কিংবা কন্টেন্ট সম্পর্কে কাস্টমারে প্রতিটা কমেন্ট মনোযোগ সহকারে পড়ুন এবং যথাযথ প্রতিউত্তর দিন। প্রতিটি ম্যাসেজের জবাব দিন। যদিও এটি সময় সাপেক্ষ ব্যাপার, কিন্তু এই কাজগুলোই ব্যাপকভাবে আপনার পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং বৃদ্ধি করতে সহায়তা করবে।
-
* প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন
* সমাজের নানান অসঙ্গতি নিয়ে আওয়াজ তুলুন। অংশ নিন আমাদের মিছিলে। যোগ দিন 'এগিয়ে চলো বাংলাদেশ' ফেসবুক গ্রুপে