মাল্টি লেভেল বেড বা ভার্টিকাল ফার্মিং কিংবা সোলার এনভেলাপের মতো ধারণাগুলোর সাথে সাধারণ মানুষকে পরিচিত করতে হবে ঢাকা শহরের বাসযোগ্যতা রক্ষার তাগিদেই। এই মহামারী যদি আমাদের কিছু শিখিয়ে থাকে, তাহলে তার সারকথা হচ্ছে আমাদের বদলাতে হবে...

ডিজাইন পেশায় কাজের একটা বড় অংশ বেশ কয়টি বছর ধরেই কম্পিউটার আর মোবাইলের স্ক্রীণের চারকোণা ফ্রেমে বন্দী। “ঘরে থেকে কাজ করা সম্ভবপর হলে ঘরেই থাকুন”- এই স্বাস্থ্যবিধি মানতে গিয়ে অনেক ডিজাইন সংক্রান্ত পেশাজীবির অফিস-কাজ সব বন্ধ হয়ে আছে কয়েক ফিট বাই আরো কয়েক ফিট ঘরের বেড়াজালে। দুনিয়া জুড়ে আমাদের চেহারা দেখিয়ে চলছে আমাদের ওয়েবক্যামগুলি।

আমরা সবাই বেঁচে থাকতে চাই। বেঁচে থাকার চাহিদার কাছে আমাদের 'বসবাস এর মান' হেরে গেছে আজ। অবশ্য এই হারের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে অনেক বছর আগে থেকে। যখন শহরকে শহর এর বদলে আমরা ভাবতে শুরু করেছি ইট কাঠের খাঁচা, যখন আমাদের পরিকল্পনা, ড্রয়িং আর নির্মাণশিল্পে আমরা স্মৃতির বদলে বিক্রি করতে শুরু করেছি স্কয়ার ফিট এবং বিজ্ঞাপনের খেরোখাতায় সবুজ হয়ে উঠেছে একটি প্রিন্ট এর রঙ, একটি বিলাসিতা।

আজ সকালে এই বন্দী কর্মজীবনের রেশ টানতে ঘুম থেকে উঠতে দেরী হয়েছে বরাবরের মতই। তারপর যখন সেই চারকোণা স্ক্রীণে নিজের কর্ম ও শিক্ষাজীবনকে আবার বন্দী করে ফেলার সংগ্রামে নামতে যাব, ফটোগ্রাফার দীপু মালাকারের তোলা একটি ছবিতে চোখ আটকে গেল। ছবির ক্যাপশন হচ্ছে- 'পলাশী-নীলক্ষেত সড়কের বিভাজকে সবজি চাষ করেছে একটি ছিন্নমূল পরিবার'।

পলাশী নীলক্ষেত সড়কটি যেখানে শেষ হয় সেখানে জীবনের বড় অংশ হেসে খেলে কাটিয়ে দেয়ায় জায়গাটির অনেক কিছুই খুব পরিচিত। ২০১৮ সালের দিকে এক বন্ধু ও সহপাঠির ছিন্নমূল পরিবারের বাসস্থান নিয়ে করা থিসিস প্রজেক্টের কল্যাণে ঠিক এই পরিবারগুলির সাথে আমার কিছুদিন কথাবার্তা হয়। অত্যন্ত বিচিত্র তাঁদের জীবন। রোদ যেদিকে যায়, তাঁদের ঘর তাঁর সাথে তাল রেখে সরে সরে যেতে থাকে।

যে কোন ডিজাইনের আগে স্থপতি ও স্থাপত্য শিক্ষার্থীরা ফাংশান, ফর্ম বা সৌন্দর্য্যের মতো অনেক ভারী ভারী শব্দ নিয়ে ভাবি ও কথা বলি। অথচ এই ঘরের কোন ফাংশান সলভ এর বালাই নেই, ফর্ম নিয়ে চিন্তা তো রীতিমত বিলাসিতা। কেবল এক টুকরো মাথা গোজার ঠাঁই। অথচ ভেবে দেখুন এই ছবিটি চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে পারে আমাদের নগরে সমস্যাগুলি আসলে কোথায় বা আমরা কীভাবে সেটার সমাধান করতে পারি।

দক্ষিণ পূর্ব এশিয়াতে একটি আদর্শ ভবন বা আদর্শ শহর দেখতে কেমন হওয়া উচিত- এই পরিচয় আমরা হারিয়ে ফেলেছি কংক্রিটের স্ল্যাব বানানো সহজ হয়ে যাওয়ার পর থেকেই। আমাদের জনসংখ্যা বিস্ফোরণের সাথে সাথে বহুতল ভবন ধনাঢ্য অবস্থার পরিচায়ক থেকে হয়ে উঠেছে প্রয়োজনীয়তা। অর্থনীতির দাবী দাওয়ার সাথে তাল রেখে আমরা ভুলে গিয়েছি ঢাকা শহর তথা বাংলাদেশের ভবনের চরিত্র এবং নিজেদের নিতে চেষ্টা করেছি একটা বৈশ্বিক প্রোটোটাইপের মধ্যে।

তারপর এক সময় আমরা ধরতে শুরু করেছি যে আমাদের হিসাবে বেশ বড়সড় ভুল হয়ে গেছে। ব্যবসা বা কর্পোরেট জীবনধারায় এর ছাপ পুরোপুরি না পড়লেও কংক্রিটের ভবন কাচ দিয়ে মুড়ে সহজ নির্মাণ ও অধিক লাভের গুড়ে এসে পড়েছে বসবাসের অযোগ্য শহর হয়ে পড়ার শংকারূপী মাছি। সারা বিশ্বে যখন পরিবেশ সচেতনতা ও শক্তির উৎস নিয়ে নতুন করে চিন্তা ভাবনা চলছে, আমরাও চেষ্টা করতে শুরু করেছি তাল মেলাতে। যদিও আমাদের প্রতিক্রিয়াটি হয়েছে বরাবরের মতই ভাবনা-চিন্তাবর্জিত, বিজ্ঞাপনী ধরনের এবং বিলাসী শ্রেনিপেশার জন্য নিবেদিত।

ঢাকা শহরের যে কোন রিয়েল এস্টেট বিলবোর্ড বা বহুতল ভবনের বিজ্ঞাপনের দিকে তাকালে আপনার চোখে পড়বে দুইটি বিষয়। প্রথমত, সামর্থ্যের সাথে তাল রেখে অধিকতর স্কয়ার ফিটের হাতছানি এবং দ্বিতীয়ত সবাই আপনাকে এক টুকরো মাটির লোভ দেখাবে। সবুজে ভরা প্রকৃতিকে আপনার ঘরের মাঝে ঢুকিয়ে দিতে আপনাকে অফার করা হবে কিছু planter box এবং সেখানে পাতাবাহার ভরা সবুজ। সাথে আরেকটু বিলাসী হলে আপনার ছাদে সুইমিং পুল বা সরকারী বিধি মেনে চলা কম্যুনিটি স্পেসে আপনাকে দেখানো হবে বাগান করার লোভও। আপনার বিনিয়োগ এই শিল্পকে সচল রাখছে। তাই আপনার চাওয়া পাওয়াকে একটু হলেও তো তুলে আনতে হবে? তাই না?

বাংলাদেশের গেজেট অনুসারে ঢাকা শহরে ভবন তুলতে গেলে ভবনের ফ্লোরের সাথে জমির মাপের অনুপাত এবং সর্বোচ্চ জমি আচ্ছাদনের নিয়ম মেনে বাড়ি করার কথা প্রত্যেক জমি মালিক ও ডেভেলপারের। এই নিয়ম অনুসারে একটি বাড়ির জমির উপর ৫০%-৫৫% এর মধ্যে আচ্ছাদন শেষ হয়ে যাবার কথা। অর্থাৎ জমির ৪৫% বা তার বেশি থেকে যাওয়ার কথা ফাকাই।

অর্থ দিয়ে জমি কেনার বায়নায় অনেক মালিক বা ডেভেলপার আইনের মারপ্যাচে নিয়ম মানলেও এর মধ্যে অনুমোদিত পার্কিং অঞ্চল ঢুকিয়ে দেন প্রায় সবগুলো ভবনেই। এরপরও ফাকা জায়গার অন্তত ২৫% অর্থাৎ মূল জমির ১০ ভাগ থাকার কথা পানি শোষনযোগ্য (soakable green) যেটি বৃষ্টির পানি শোষনে সহায়তা করবে এবং মাটি থেকে খাবার ও ব্যবহারের পানি বের করে আনতে শহরকে উপযোগী রাখবে। আর এই জায়গাটিতে অনেক অভিজাত এলাকাতেই দেখা যায় বাগান করতে। যাকে স্থাপত্যের পরিভাষায় বলা হয় landscaping.

সাথে চটকদার বিজ্ঞাপনের খাতিরে অনেক ভবনে আজকাল দেখা যাচ্ছে মাটি দেয়া টেরাস কিংবা ঝুলিয়ে দেয়া গুল্মের সমাহারও। কিন্তু এই আরোপিত সবুজ আমাদের উপকারে আসছে কি? অবশ্যই নগরে নিসর্গ ও অক্সিজেনের চাহিদা মেটাতে এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধাচারণ করার উপায় নেই। কিন্তু ভেবে দেখুন তো একবার, পাতাবাহার, সাইকাস- পাইনাস কিংবা নাম না জানা গুল্ম যা ঝুলছে আপনার আলিশান ভবনের দেয়াল জুড়ে, তা কি অর্থনৈতিকভাবে আপনাকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা রাখে? এর রক্ষণাবেক্ষনে যে খরচ আপনি প্রতি বছর করছেন, তা দৃষ্টিসুখ ছাড়া আপনাকে কোনভাবে প্রতিদান দিচ্ছে কি?

না, আমি এখানে সমস্যা নিয়ে মর্মস্পর্শী লেখা লিখতে আসিনি। বর্তমানে আমরা সমস্যা নিয়ে কথা বললেও জনসমক্ষে সমাধানের আইডিয়াগুলো নিয়ে কথা বলতে স্বচ্ছন্দ হয়ে উঠতে পারি না। আসুন দেখি আমাদের ভবন এবং শহরকে শুধু দেখার বিষয় থেকে কিভাবে ব্যবহারিক দিক থেকে কাজের বিষয় বানানো যায়? শহরকে আমাদের খাওয়াতে পারবে? হতে পারবে আমাদের প্রাত্যহিক উৎপাদনের উৎস আমাদের বাড়িঘরগুলোই?

BNBC কোড অনুসারে জমিতে ফাকা জায়গা ছেড়ে দেবার নিয়ম; ডায়াগ্রাম কৃতজ্ঞতা: শাদ হোসেন

খাদ্যাভ্যাস, বর্ধিত জনসংখ্যা এবং ২০২০ সালে এসেও প্রযুক্তির সাথে অভ্যস্ত না হওয়া সহ অনেক কারণেই প্রায় প্রতি বছর আমরা শুনতে পাচ্ছি কৃষক তাঁর ফসলের ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না। এক স্কয়ার ফিট জমিতে তিন থেকে চার মাসের পরিশ্রমে যে ধান হয়, বর্তমান সময়ে জায়গা ও ফসলের দামের তুলনাতে হিসাব না মেলাতেই অনেক কৃষক জমির ভবিষ্যত নিয়ে সন্দিহান। এর সাথে ঢাকা সহ সব বড় শহরের আশেপাশে আগ্রাসী জমি ডেভেলপ করার প্রক্রিয়া আমাদের কৃষি জমি কমিয়ে আনছে প্রায় প্রতি বছরই।

তাই কৃষি শুধুই গ্রামে সীমাবদ্ধ থেকে যাওয়া বা পরিবহন ব্যবস্থার উপরে অতি নির্ভরশীল থাকাটা এক সময় আমাদের জীবনযাত্রার খরচকে আরো বাড়িয়ে দেবে উৎপাদনের সীমাবদ্ধতার নিরীখে এটা এখন এক রকম নিশ্চিতভাবেই বলে দেয়া যায়। আর কোভিড মহামারী  আমাদের বর্তমান ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতাগুলি আমাদেরস প্রায় চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। আমরা বাজারে যেতে ভয় পাচ্ছি অথচ আমাদের সেখানে যেতে হচ্ছে এবং লকডাউন এর মত পরিস্থিতিতে সব জায়গায় শুনতে হচ্ছে যে আমরা বাংলাদেশের মত অঞ্চলে সুরক্ষাব্যবস্থা চালু রাখতে পারব না।

নগর এবং গ্রামের এই সমস্যাগুলি আসলে একে অপরের সাথে সম্পর্কিত এবং সমাধানের চাবিও লুকিয়ে রয়েছে সেই লেখার শুরুতে বলা গ্রাম থেকে আসা ছিন্নমূল পরিবারের কাজেই। বর্তমানে স্থাপত্যের গবেষনার সর্বোচ্চ পর্যায়ে edible landscape শব্দযুগলকে বলা যায় নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধি। এর সাথে দিনে দিনে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে closed cycle economy, এটি যদিও বাংলাদেশের নিরীখে নতুন কোন আইডিয়া নয়। তবে এই দুইটি মিলিয়ে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের চর্চা যদি পরিবর্তিত হত তাহলে হয়তো আমাদের জীবনে আমাদের ভবনগুলি এবং আমাদের শহর হয়ে উঠতে পারত আরেকটু আপন।

উদাহরণ দেই। ধরুন- আপনার জমির ১০% আপনি সরকারী নিয়ম মেনে সম্পূর্ন অপরিবর্তিত অবস্থায় সবুজ জমি হিসাবে ছেড়ে দিয়েছেন। এই জায়গাটিতে পাতাবাহারের জায়গায় যদি ফলনশীল গাছ লাগান হয়তো আপনার ভবনে নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করা মানুষটির খাবারের খরচ কমাতে সেটি ভূমিকা রাখতে পারত। এই লোকগুলির গড় বেতন ছয় থেকে আট হাজার টাকা এবং এরা গ্রাম থেকে কাজ করতে আসেন ঢাকা শহরে। এই টাকার আরো বড় অংশ সঞ্চয় করে গ্রামে পাঠাতে পারলে সেটা তার এই মাইগ্রেশানের ফলে অর্জিত অর্থকে শহর ও গ্রামের ভিতরে আরো সহজে সঞ্চালন করতে পারত।

মাটি ছাড়া ও কম পানিতে কৃষিকাজের জন্য তৈরি vertical farming bed

এই ফসলের দেখাশোনার কাজটিও আপনার ভবনের নিরাপত্তা বা কেয়ারটেকার এর ভূমিকায় নিয়োজিত মানুষটিই করতে পারেন খুব সহজেই। ভেবে দেখুন এই ফসলি জমি টুকুর স্মার্ট সদ্ব্যব্যবহারই আপনাকে বাঁচিয়ে দিতে পারে মহামারীর সময়ে বাজারে যাবার ঝুঁকি থেকেও।

এবার আসুন আরেকটু বড় করে চিন্তা করি। ধরুন আপনি আপনার বাড়িতে ১০% জায়গা ছেড়ে দিয়েছেন। আপনার পাশের প্লটের মালিকও একই কাজ করেছেন এবং আপনারা মুখোমুখি দুটি জায়গা ছেড়েছেন। এর সাথে আরেকটূ ছোট পদক্ষেপ হিসাবে আপনার প্লটের বাউন্ডারী দেয়ালগুলি সরিয়ে দিন। এতে যেমন বিচ্ছিন্ন জায়গাগুলি এক হয়ে যাবে তেমনি ঢাকা শহর ৪-৫% জায়গা পুনরুদ্ধার করতে পারে। বেঁচে যেতে পারে বহু কাঠ এবং ফলনশীল বৃক্ষ ও। এই তুলনামূলক বড় জায়গায় যদি Multi level bed বা vertical farming এর মতো কোন পদ্ধতি ব্যবহার করা হত, তাহলে ৯৫% কম পানি খরচে আপনি পেতে পারেন পূর্ণাংগ ফসলী জমির সকল সুবিধা।

EFFEKT আর্কিটেক্টস এর ডিজাইনে তৈরি ৭০০০০ স্কয়ার ফিটের গ্রিন হাউজ ধরনের ভার্টিকাল ফার্মিং অঞ্চল; ছবি কৃতজ্ঞতা: 99% invisible

তবে সেটা পুরোপুরি নিশ্চিত করতে চাই একটি সামাজিক ভূমিকা। সামাজিক দুরত্বের এই যুগেও একটি closed community তে গড়ে ওঠা একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা আপনাকে দিতে পারে সুরক্ষা। ধরুন আপনার রোডে ৩০ টি আলাদা বাসা রয়েছে এবং প্রত্যেকের ই এই আইন মেনে ১০% জায়গা ছেড়ে দেবার বাধ্য বাধকতা রয়েছে। তাই প্রত্যেকে যদি পাশের জনের সাথে মিলে কিছু জায়গা বের করেন আপনার রাস্তায় landscaping এর মত জায়গাটিই হতে পারে বিচিত্র ধরনের চাষাবাদের স্থল। এগুলোর বিনিময় ও বেচাবিক্রি আপনাকে ঢাকা শহরেও একটি তুলনামূলক স্বনির্ভর পাড়া প্রতিবেশির সম্পর্কের ভিত গড়ে দিতে পারে সহজেই।

এখন আপনার প্রশ্ন আসতে পারে, এই অল্প জায়গাতে কি আসলেই সম্ভব হবে এমন কিছু করা যাতে আমাদের খাদ্যের চাহিদা পূরণ হয়? এক্ষেত্রে সমাধানটি আসলে ডিজাইন নির্ভর। স্থপতির সাহায্য নিন শুধু বাড়ি সুন্দর করতে নয়, বরং একটি পরিকল্পনা নিতে যাতে আপনি আপনার জায়গার সর্বোচ্চ সুবিধা তুলতে পারেন। এই ধরনের একটি আইডিয়া বাস্তবায়নে আপনাকে কিছু টেকনিকাল প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।

যেমন ধরুন কীভাবে আসবে সূর্যের আলো ঢাকা শহরের এই ঘনবসতিপূর্ন এলাকায়? বা পুরাতন ও বর্তমান ভবনে কীভাবে এই ধরনের সুযোগ সুবিধা তৈরি করা সম্ভব? ছাদে বাগান করা বা টেরাস তৈরি করে কৃত্রিমভাবে যেমন নিসর্গ তৈরি করা সম্ভব হয়েছে তেমনি স্থপতিদের গবেষনা ও চর্চাতে বর্তমানে শহরে কৃষিও হয়ে উঠছে দরকারি উপাদান।

ভবনের নকশায় solar envelope ধারণার ব্যবহারের মাধ্যমে গাছের জন্য সূর্যালোক নিশ্চিত করা

সূর্যের আলো নিয়ে কাজ করতে এসেছে solar envelope এর মতো ধারণা, যেখানে ভবনের উপরের তলাগুলির নকশায় সামান্য পরিবর্তন এনে ভবনের নিচ পর্যন্ত সূর্যের আলো পৌছে দেবার ব্যাবস্থা করা সম্ভব। তাই ভবন নির্মাণের সময় স্মার্ট হতে শেখার সময় এসেছে। আপনার ভবন শুধু আপনার বসবাসের জন্য কিছু স্কয়ার ফিট এর বাক্স নয়। আপনার ভবন আপনার জীবনের অংশ। খাদ্যের পাশাপাশি আর কী কী ভাবে আপনার ভবন আপনার জীবনের সাথে সম্পৃক্ত হতে পারে তা জানতে আপনার স্থপতিকে ক্রমাগত জিজ্ঞাসা করুন বিভিন্ন সম্ভাবনা নিয়ে। শক্তির সঞ্চয়ের পাশাপাশি নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস সম্পর্কে সচেতন হোন। সূর্য বায়ু এবং পানি সহ প্রতিটি প্রাকৃতিক উপাদান আমাদের জীবনধারনে খুবই দামী ও গুরুত্বপূর্ন। মহামারীর এই সময়ে এগুলোর সর্বোচ্চ ব্যবহার সম্পর্কে সচেতন না হওয়াটাই হতে পারে আমাদের পতনের কারণ।

এই ধরনের ধারণাগুলির সাথে সাধারণ মানুষকে পরিচিত করতে হবে ঢাকা শহরের বাসযোগ্যতা রক্ষার তাগিদেই। এই মহামারী যদি আমাদের কিছু শিখিয়ে থাকে তাহলে তার সারকথা হচ্ছে আমাদের বদলাতে হবে। সবাইকে নিয়ে টিকে থাকতে হবে একটি সমাজ হিসাবে। বাক্সবন্দী জীবনধারা থেকে মুক্ত হতে হবে বিভিন্ন পর্যায়ে।

আমরা যদি আমাদের বর্তমান ভবন নকশার প্রক্রিয়ার অসাড়তা ও ভবনের সৌন্দর্যের নামে খরচ বৃদ্ধির হঠকারী প্রবণতা থেকে সরে এসে মানুষের কল্যানকে প্রথমে রেখে এবং স্থাপত্যচর্চার সর্বোচ্চ প্রযুক্তি এবং ধারণাগত উৎকর্ষ থেকে ভবন নির্মাণ শুরু না করি, এবং ভবন ও শহরের নকশাকে মানুষের জীবনের সাথে সংযুক্ত করতে আবারো ব্যর্থ হই, তাহলে ঢাকা শহরকে বাসযোগ্য করতে শুধুমাত্র কিছু পার্ক, ফ্লাইওভার বা মেট্রোরেল করাটা কখনোই যথেষ্ট হবে না।

আমরা ক্রমাগত অভিযোগ করি ঢাকা শহর আমাদের আপন হয়নি। ঢাকা শহরের বুকে কোন এক রোড ডিভাইডারের উপরে চারাগাছ লাগিয়ে পরম যত্নে তাকিয়ে থাকা শিশুটির দিকে তাকিয়ে আমরা দায় নিতে শিখি। এবং বলতে শিখি- আমরা এতদিন ঢাকাকে একটি মানবমুখী শহর করে তুলতে পারিনি। কিন্তু আজ থেকে নিজের জায়গায় থেকে অবশ্যই চেষ্টা করা উচিত।

*

প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা