এলফ অব লাক: আমরা আধুনিক হয়েছি, কিন্তু কুসংস্কার আমাদের পিছু ছাড়েনি!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
ফেসবুকে সম্প্রতি ঘুরে বেড়াচ্ছে 'এলফ অব লাক' নামের এক বামন আকৃতির বুড়ির ছবি। সবাই বিশ্বাস করছে, এই ছবি শেয়ার করলেই জীবনে আসবেই সৌভাগ্য। কিন্তু কয়েক কিলোবাইটের একটা ছবি ফেসবুকে শেয়ার করলেই কি সৌভাগ্য পাওয়া যায়? সবকিছু কি এতই সোজা?
ছোটবেলায় 'গ্রিম ভাইয়ের রূপকথা' বইয়ে একরকমের ছোট ছোট বামনের গল্প পড়তাম, যাদের সাদা চুল, লালচে চেহারা আর লম্বা লম্বা কান, নাক ছিলো। এদের স্কেচও থাকতো রূপকথার বইয়ের বিভিন্ন পৃষ্ঠায়। গ্রিম ভাইদের রূপকথা পড়ার বয়স একসময়ে শেষ হয়ে গেলো। একসময়ে সাধারণ বই অথবা 'বুক' পড়ার সময়ই শেষ হয়ে গেলো। সে জায়গায় এলো আরেক 'বুক', ফেসবুক। সে ফেসবুকেই কিছুদিন ধরে দেখছি, ঘুরে বেড়াচ্ছে 'গ্রিম ভাইদের রূপকথা' বইয়ের সে মিষ্টি বামন। যাদেরকে ডাকা হয় 'Elf' বা 'এলফ'. প্রথম প্রথমে খুব একটা গা করিনি ছবিটিকে। স্ক্রল করে চলে গিয়েছি। এর কিছু পরেই টনক নড়লো আমার।
ফ্রেন্ডলিস্টের প্রায় অর্ধেক মানুষ এই এলফ এর ছবিকে শেয়ার করে বসে আছে, যার পোশাকি নাম 'এলফ অব লাক।' বেশ অবাক হলাম যখন জানতে পারলাম, মানুষজন নাকি সৌভাগ্যের আশায় এই ছবি শেয়ার করছেন! অনেকে নাকি এই ছবি তাদের টাইমলাইম থেকে শেয়ার করার পরেই ভালো খবর পেয়েছেন! এই গুজব যখনই বাকিরা শুনেছেন, অমনি শুরু হয়েছে গিয়েছে 'শেয়ার করেই দেখে নিন ম্যাজিক' এর মহোৎসব। বিষয়টি ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বেই। বিশ্বজুড়েই মানুষজন শেয়ার করে যাচ্ছে এই ছবিকে। নেটফ্লিক্সের মত জায়ান্ট স্ট্রিমিংসাইট আবার এটিকে নিয়ে ট্রল করছে 'এই এলফ এর ছবি শেয়ার করুন, কেউ না কেউ আপনাকে অবশ্যই নেটফ্লিক্সের একটা ফ্রি এ্যাকাউন্ট দেবেন!' লিখে।
ভাবতে বসলাম, কেন এমন হয়! মানুষ মাঝেমধ্যেই কেন এরকম অবুঝের মতন কাজ করে? মেসেঞ্জারে, হোয়াটসঅ্যাপে মাঝেমধ্যেই 'ধর্মীয় বার্তা ফরোয়ার্ড করুন, বারো দিনের মধ্যে ভাল সংবাদ শুনবেন। ফরোয়ার্ড না করলে বারো বছরেও ভালো সংবাদ শুনবেন না' টাইপের বার্তা শেয়ার করার ধুম ওঠে মাঝেমাঝে। এ বছরে করোনাভাইরাস শুরু হওয়ার পরেও কতরকমের গুজব যে ছড়িয়েছে আর মানুষ যে সেগুলোর পেছনে 'কান নিয়েছে চীলে'র মত দৌড়েছে, তার শেষ নেই। অবাক হই, একই মানুষ গ্রহ, নক্ষত্র, প্রযুক্তি নিয়ে এত আগ্রহ ও ধারণা রাখে, সেই মানুষই আবার সকালবেলা খালি পেটে কাঁচা থানকুনি পাতা খায়, করোনাভাইরাস ভালো হবার আশায়! মানুষ আসলে কতটা অদ্ভুত ও বিস্ময়কর, বুঝে উঠতে পারি না মাঝেসাঝেই।
'এই সাদা চুলো বামন বৃদ্ধা' সৌভাগ্যের কিছুই না। সৌভাগ্য এমনি এমনি আসে না। সোশ্যাল মিডিয়ায় কয়েক কিলোবাইটের এক ছবি শেয়ার করলে যদি সৌভাগ্য আসতো, তাহলে সৌভাগ্যের কোনো দাম থাকতো না আদতেই। সৌভাগ্য বরাবরই আসে মেহনতে, পরিশ্রমে, ত্যাগে। এটাই সৌভাগ্যের একমাত্র সূত্র। সেখানে আপনি সাফল্যের এই নিয়ম না অনুসরন করে হাজার হাজার 'এলফ অব লাক' শেয়ার করলেও কোনো লাভ নেই। বরং এই ছবির নাম দেয়া উচিত ছিলো 'এলফ অব ইডিয়টস'। আমাদের বোকামো, গাধামো ও শর্টকাটে সাফল্য পাওয়ার যে চকচকে লোভ... সেটাকে খুব সহজভাবেই ধরিয়ে দেয় এই এলফ। তাই আমার কাছে এটি 'এলফ অব ইডিয়টস।' এটাই এর যথার্থ নামকরন।
একটা ছবি শেয়ার করলেই সাকসেসফুল হওয়া যদি যেতো, তাহলে প্রত্যেক সেকেন্ডে একটা করে মুকেশ আম্বানি জন্মাতো এই দেশে। এই সোজা জিনিসটা আমাদের মাথায় আসে না। কী প্রবল অন্ধবিশ্বাস, সারল্য ও হতাশ জীবন নিয়ে দিনানিপাত আমাদের!
*
প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন