হিরো হওয়ার জন্য যা যা ক্রাইটেরিয়া- লম্বা, সুদর্শন, মাথা ভর্তি চুল- কোনটাই আমার নেই। উচ্চতা ৫ ফুট ৬, চুল অর্ধেক এমনিতেও নেই। তবে...
"আমার প্রথম সিনেমাটা চলে নি। অভিনয়ও প্রশংসা পায়নি। বাবা ছিলেন সিনেমার ডিরেক্টর; যে ধরনের আলাপ শুরু হওয়ার কথা, সেটা শুরু হয়ে গেল- 'এরকম ডিরেক্টরের ছেলে হয়ে এক্টিং এর এই অবস্থা?' 'বাবা নিজেই ছেলের প্রথম সিনেমা ডিরেকশন দিল, আর প্রথম সিনেমারই বক্স অফিসে এই অবস্থা?'
কথাগুলো খুব খারাপ লেগেছিল। বাবা আমাকে এই অবস্থা থেকে উদ্ধার করলেন। আমাকে অভিনেতা মোহনলালের কাছে নিয়ে গেলেন। তিনি আমাকে বললেন- 'যতক্ষণ পাকস্থলীর ভেতর থেকে অভিনয়টা না আসছে, ততক্ষণ ব্রেইন দিয়ে অভিনয়ের চেষ্টা কর না।' তার কথাটা আমার খুব ভাল লাগলো। আমি বুঝতে পারলাম, ক্যারেক্টারকে ফিল না করে শুধু যদি অনুভূতি প্রকাশে মগজ খাটাই- তাতে কোন লাভ হবে না।
সব ছেড়ে পড়াশোনা শেষ করতে গেলাম, সাথে এক্টিংটা আরও ভালভাবে শেখার চেষ্টা করলাম। আট বছর পর এসে ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালাম। এরপরে থেকে এখনও টিকে আছি।
মাঝেমধ্যেই মনে হয়, প্রথম সিনেমাটা না চলে মনে হয় ভালোই হয়েছে। ডিরেক্টর বাবার ছেলের প্রথম সিনেমা হিট হয়ে গেলে হয়ত স্টারডম মাথায় চেপে বসতো, তাতে কোথায় যেতাম কে জানে? এখন হয়ত বলতে পারি এক্টিংটা মোটামুটি জানা আছে, খুব সহজে হয়ত বিলীন হব না।
হিরো হওয়ার জন্য যা যা ক্রাইটেরিয়া- লম্বা, সুদর্শন, মাথা ভর্তি চুল- কোনটাই আমার নেই। উচ্চতা ৫ ফুট ৬, চুল অর্ধেক এমনিতেও নেই। তবে ট্যালেন্ট থাকলে এগুলো যে ম্যাটার করেনা, সেটা বুঝতে পেরেছি।
যেকোনো সিনেমার শুটিং শেষ হলে আমি সবসময়ই ডিরেক্টরকে বলি, সম্ভব হলে আমার প্রথম দুইদিনের অংশ আবার শুট করেন। প্রথম দুইদিন আমার কাছে অনেকটা এক্সারসাইজের মত মনে হয়, তখনও সেভাবে ক্যারেক্টারে ঢোকা হয় না। Kumbalangi Nights এর শুটিং শেষ হওয়ার পর, আমার ক্যারেক্টর ইন্ট্রোডিউসের যে সিনটা, সেটা আমরা আবার শুট করেছিলাম। আর নিঃসন্দেহে সেটা আগের চেয়ে বেটার ছিল।
সুপার ডিলাক্স করার আগে আমি মাত্র তিনটা তামিল শব্দ জানতাম। কিন্তু এরপরেও এই সিনেমাতে আমার ডাবিং পুরোটা আমি নিজে করেছিলাম। চাইলেই অন্য কাউকে দিয়ে করানো যেত, তবে তাতে অথেনটিসিটি নষ্ট হত। মালায়ালাম ভাষার অভিনেতা হয়েও আমি তামিল ভাষাটা নতুন করে শিখেই এরপরে ডাবিং করেছিলাম।
সুপার ডিলাক্সের ডিরেক্টর কুমার রাজা সাধারণত ৫০০ থেকে ৫৫০ রিটেক নেয়। আমি নিজেও ৬০ থেকে ৭০ টা টেক দিয়েছি। দেয়ার পর সে হুট করে এসে বলে- ১৭ নম্বর টেকে আপনার লুক ভাল ছিল, ১২ নম্বর টেকে এক্সপ্রেশন ভাল ছিল আর সব মিলিয়ে বেস্ট ছিল ৩৫ নম্বর টেকটা। কুমার রাজা এই লেভেলের ক্রেজি ডিরেক্টর। আমার এইসব ক্রেজিনেস ভাল্লাগে। তাই আমি এই ধরনের ডিরেক্টরের সাথে কাজ করে মজা পাই।
ভাল অভিনেতা হতে গেলে বাস্তবতার প্রতি নির্মমভাবে সৎ হতে হবে। নিজের চারপাশে যা ঘটছে তা সম্পর্কে জানতে হবে আর বাস্তবতাকে স্বীকার করতে হবে। আমি অন্তত এটাই মনে করি।
ফ্যানক্লাব জিনিসটা আমার সেভাবে পছন্দ না, সরি টু সে। ফেসবুকে একটা গ্রুপ খুলে সারাক্ষণ আমাকে নিয়ে পোস্ট দেয়া, সারাক্ষণ আমাকে নিয়ে মেতে থাকা, 'ফাহাদের হাসি', 'ফাহাদের নতুন লুক', 'ফাহাদ বসকে ড্যাশিং লাগছে'- জিনিসগুলো আমাকে খুবই অস্বস্তি দেয়! আমার সাথে আপনার পরিচয় সিনেমা দ্বারা, আমার সিনেমা নিয়ে আলোচনা করুন, সেটা বেটার। কীভাবে আরও ভাল করা যেতে পারে বা কোন কোন জায়গায় আরও উন্নতির সুযোগ ছিল- সেই ব্যাপারে বাহাস হতে পারে। কিন্তু সারাক্ষণ আমাকে নিয়ে মেতে থাকা আমার পছন্দের না। নিজের পড়াশোনা, নিজের চাকরিতে মনোযোগ দিন। আমাকে নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেয়া আপনার পড়াশোনা বা ক্যারিয়ার - কোনটাতেই উন্নতি নিয়ে আসবে না"
- ফাহাদ ফাসিল, জন্মদিনের শুভেচ্ছা, প্রিয় অভিনেতা
*
প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন