এমন কেউ কি আপনার ফেসবুক ফ্রেন্ড লিস্টে আছে, যাদের সাথে আপনার বাস্তব জীবনে সখ্যতা আছে ঠিকই, কিংবা ছিল একটা সময়, কিন্তু ফেসবুকে তারা কোনো এক অজ্ঞাত কারণে নীরব দর্শক?

(১) আপনার ফেসবুকে কি এমন কিছু বন্ধু আছে যাদের নিয়ে আপনি কনফিউজড? যারা আপনার বন্ধু, নাকি ফলোয়ার নাকি স্টকার সেটা আপনি বুঝতে পারেন না? মানে হলো, তারা আপনার ফেইসবুক গতিবিধি দেখে আর ঢোক গিলে কিন্তু কিছু বলে না এই টাইপ?

এমন কেউ কি আপনার ফেসবুক ফ্রেন্ড লিস্টে আছে, যাদের সাথে আপনার বাস্তব জীবনে সখ্যতা আছে ঠিকই কিংবা ছিল একটা সময়, কিন্তু ফেসবুকে তারা কোনো এক অজ্ঞাত কারণে নীরব দর্শক? আপনার/আপনার সন্তান/আপনার পরিবারের সবচেয়ে সুন্দর ছবিতেও, তারা কমেন্ট তো করবেই না, লাইক দিতেও তাদের হাত ব্যথা করবে। কিন্তু আবার তারাই আপনি যখন ফেসবুক স্টোরি দিবেন, সেটা প্রথম ৫ মিনিটের মধ্যেই দেখে ফেলবে। ভুল করে দেখবে তা না, আপনি যতবার যত স্টোরি দিবেন, তার সব কয়টা তারা অতীব মনোযোগ দিয়ে দেখবে।

তাহলে শুনুন- তাদের নিয়ে ভাববেন না। আমি অনেকদিন ভেবেছি। আমি একটা সময় ভাবতাম যে, দিনে দুই তিনটা পোস্ট দেয়া মনে হয় পাপ। মনের ভিতর কুটিলতা না রেখে, যা মন চায় তা বলে ফেলাটা বোধহয় একটা অপরাধ। তাদের জন্য নিজের বহুত সুন্দর সুন্দর ছবিও পোস্ট করিনি। কী ভাববে, কী বলবে এসব ভেবে।

তারপর অনেকদিন পর, অনেক অনেক দিন পর আমি বুঝতে পেরেছি- এই মানুষগুলো আসলে ডিপ্রেসড। চোখ বন্ধ করে আপনি বলতে পারবেন, এরা কোনো না কোনো একটা জায়গায় ভয়াবহ ব্যর্থ। ব্যর্থ কে না বলুন? কিন্তু এইধরণের ব্যর্থ মানুষের জন্য আপনি আপনার সাকসেস স্টোরি বলা বন্ধ করবেন না প্লিজ।

দুনিয়াতে দুই ধরণের মানুষ আছে- এক ধরণের মানুষ যারা তাদের ব্যর্থতাকে আলিঙ্গন করে সামনে এগিয়ে যেতে পারে, আবার আরেক ধরণের মানুষ আছে যারা সবসময় তাদের ব্যর্থতা ঢাকার চেষ্টা করে। এই চেষ্টা তারা আজীবন করতেই থাকে এবং ভাবে বাকিরাও কেন করেনা ? এই দ্বিতীয় শ্রেণীর মানুষরাই কুটিল চোখে আপনার ফেইসবুক পোস্ট পরবে, আপনার ছবি দেখবে, আপনি কার সাথে খেতে গেলেন, কোথায় নাচতে গেলেন, সব পর্যবেক্ষণ করবে।

(২) এখন তারা হয়তো বলবেন “আমার ফেইসবুক এটা, আমি লাইক দিব না, আমি কমেন্ট করব না- আমার যা ইচ্ছা আমি তাই করবো কিংবা করব না, সেটা নিয়ে তুমি জাজ করার কে? তোমার যেমন নিজের ছবি দিনে তিনবার পোস্ট করার স্বাধীনতা আছে, আমারও তোমার সেসব ছবিতে কোনো কমেন্ট না করার, লাইক না দেবার স্বাধীনতা আছে ..”

জ্বি, অবশ্যই আছে, আপনার সব স্বাধীনতা আছে। আপনি যা ইচ্ছা তা করবেন, কিংবা করবেন না- আপনার ব্যাপার। কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি আমার ফ্রেন্ড লিস্টে আছেন, আমার জানতে হবে আপনি কোন কারণে আছেন। বাস্তবে আমি হয়তো আপনাকে চিনি, আমরা সো কল্ড বন্ধু, খুব ভালো কথা। সেখানেই হাই-হ্যালো হবে, নো প্রব্লেম। ফেসবুকে কেন কানেক্টেড হবো আমরা? দরকার নাইতো।

বিষয়টা হলো আমি আপনাকে আমার ভার্চুয়াল বাসায় দাওয়াত করেছি কিংবা আপনি নিজে সেধে দাওয়াত নিলেন, তারপর আপনি আমার বাসায় আসলেন (মানে প্রোফাইলে ঢুকলেন) কিন্তু এসে আমার সাথে কথা বলছেন না। আমার মেয়ের গাল টিপে আদর করে বলছেন না- 'কিউট মামনি', আবার ঘুরে ঘুরে আমার বাসা দেখছেন, আমি কী জামা পড়লাম, কেমনে সেলফি তুললাম এগুলো দেখছেন। এত বয়স হলো তবুও আমার এই লাফাঙ্গাগিরি কেন কমছে না, সেটা নিয়ে ঠিকই মনে মনে বিরক্ত হচ্ছেন।

এগুলো তো ঠিক না ডুড!

আরেকদল আছেন, যারা ভাব নিয়ে বলে, “আমার ব্যাক্তিগত জীবন আমি প্রাইভেট রাখতে চাই সেটা নিয়ে ফেসবুকে কথা বলতে চাই না। আমার অ্যাচিভমেন্ট আমার কাছে, মানুষকে দেখানোর কিছু নাই, আরো অনেক ব্লা ব্লা”

খুব ভালো। রাখেন আপনার প্রাইভেট লাইফ প্রাইভেট। সোশ্যাল মিডিয়ায় একাউন্ট খুলে, অন্যের প্রাইভেট লাইফে পার্সোনাল ইন্টারেস্ট রেখে, আপনি আপনার ব্যক্তিগত জীবন প্রাইভেট রাখেন। কিন্তু তাতে আপনার জীবন প্রাইভেট থাকলেও, আপনার ভণ্ডামি খুব একটা প্রাইভেট না আমার কাছে।

মোরাল অফ দিস পোস্ট: কেউ যদি ভাবেন, ফেসবুকে এক্টিভ লোকজন শুধু লাইক আর কমেন্ট এর কাঙ্গাল, তবে শুনুন- লাইক, কমেন্ট, শেয়ারিং এগুলো স্রেফ নম্বর না। এগুলো হলো ওয়ে অফ এপ্রেসিয়াশান। আমার মেয়ে নতুন শব্দ শিখেছে, আমি নতুন চাকরি পেয়েছি, পরীক্ষায় পাস করেছি, আমার চাকরিতে প্রমোশন হয়েছে- এগুলা ফেসবুকে এসে বলাটা, ‘শো অফ' নাকি 'শেয়ারিং' সেটা ডিপেন্ড করে আপনি আসলে এগুলা কীভাবে দেখেন, কিংবা ভাবেন তার উপর।

আপনি যদি হিংসুটে টাইপ হোন, আপনার কাছে মনে হবে শো অফ। আর যদি এটলিস্ট ওয়েল উইশার হন, তাহলে আপনি আমার আনন্দের সত্যিকারের ভাগীদার হবেন। আসুন ফেসবুকে যেহেতু আমরা দুজনেই আছি, আমরা বরং মিলেমিশেই থাকি।


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা