যারা জানেন না এই গল্পটি, তাদের কাছে হয়ত বিস্ময়করই লাগবে। বিস্ময়কর হলেও এটাই সত্য, একসময় বাংলাদেশে এমন এক ফেরি ঘাট ছিল, যে ঘাট দিয়ে পারাপার হতো রেলগাড়ি!

কত আশ্চর্যের কথাই তো আমরা শুনি। তবে এটা একটু ভিন্নরকম আশ্চর্যের কথাই বটে। যারা জানেন না এই গল্পটি, তাদের কাছে হয়ত বিস্ময়করই লাগবে। বিস্ময়কর হলেও এটাই সত্য, একসময় বাংলাদেশে এমন এক ফেরি ঘাট ছিল, যে ঘাট দিয়ে পারাপার হতো রেলগাড়ি!

সেটা ১৯৩৮ সালের কথা। ওই বছরই যে এই রেলপথ চালু হয় এই বঙ্গে। তখনকার দিনে ঢাকা মোটামুটি একটা চেনা শহর কিন্তু এই শহরের সাথে গোটা দেশের সর্বত্র যোগাযোগ ব্যবস্থা একরকম ছিল না। বিশেষত উত্তরাঞ্চলের সাথে রেল যোগাযোগের ব্যবস্থা খুব করুণ।

এমনই সময়ে ভাবা হলো, এই পথে রেল যোগাযোগের উন্নয়ন করা হবে। কিন্তু কিভাবে? জলের উপর দিয়ে রেলগাড়ি যাবে কোন উপায়ে? তখন ভাবা হলো ফেরির কথা। ফেরিতে করে অনেক কিছু পারাপার হতে আমরা শুনেছি। সাইকেল থেকে ট্রাক সবই যেতে পারে, তাই বলে ট্রেন? সমান্তরাল লাইনে চলা রেলগাড়ি কি করে পারাপার হবে? সেই আচানক ঘটনাটাই ঘটালেন তারা। ফেরিঘাটের নাম হলো বাহাদুরাবাদ ফেরি ঘাট। এই ঘাট দিয়েই ফেরিতে করে পারাপার হতে শুরু করলো ট্রেন।

জায়গাটির অবস্থান জামালপুরে। জামালপুরের বাহাদুরাবাদ ইউনিয়নের সেই ফেরিঘাট যে ঘাট দিয়ে ট্রেন পারাপার চালু হয়, সেই জায়গাটি দিনে দিনে বেশ পরিচিতি পায়। বাংলাদেশ তো বটেই বিশ্বেও এই ফেরিঘাটের খবরটি ছড়ায়।

বাহাদুরাবাদ ফেরিঘাটের অন্যপাশে ছিল তিস্তামুখ ঘাট। সেই ঘাটের অবস্থান ছিল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি উপজেলায়। দুই ঘাটের মাধ্যমে এই ফেরি সার্ভিস দিতো আসাম বেঙ্গল রেলওয়ের অধীনে।

পরিত্যক্ত বাহাদুরাবাদ ফেরী ঘাটের বর্তমান চিত্র

কৌতুহল হতেই পারে কি করে এতো লম্বা রেলগাড়ি ফেরিতে পারাপার হতো...উত্তরটা হচ্ছে, রেলের বগিগুলো খুলে আলাদা করে ফেলা হতো। রেল ফেরিটিতে লাইনের সংখ্যা ছিল ১৩টি। একেকটি লাইনে ৩টি করে রেল বগি / ওয়াগন নেয়া যেত।

১৯৯০ সালে বাহাদুরাবাদ ঘাট- তিস্তামুখ ঘাটের রুট একটু বদলে যায়। যমুনা নদীতে নাব্যতা সংকট দেখা দেয়। ফলে তিস্তামুখ ঘাটটি স্থানান্তর করা হয় গাইবান্ধারই আরেকটি ঘাট - বালাসী ঘাটে।

২০০৪ সাল পর্যন্ত আন্তনগর এক্সপ্রেস ট্রেন তিস্তা, একতা এবং একটি মেইল ট্রেন দিনাজপুর থেকে রংপুর হয়ে গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের বালাসীঘাট পর্যন্ত চলাচল করত। রংপুর বিভাগের আটটি জেলার মানুষ বালাসীঘাট থেকে রেলওয়ে ফেরিতে জামালপুরের বাহাদুরাবাদে পৌঁছে ট্রেনে ময়মনসিংহ ও ঢাকায় যাতায়াত করত। ২০০৫ সালে বঙ্গবন্ধু সেতুতে রেলপথ নির্মাণের পর ট্রেনগুলো সেতু দিয়েই চলতে শুরু করে।

২০০৪ এর পর বালাসী-বাহাদুরাবাদ রেল ফেরিটি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর নৌকার চলাচল শুরু হয় এই পথে। প্রতিদিন চলে ৩টি নৌকা, যাত্রী পারাপারের কাজে। কিন্তু পণ্যসামগ্রী আনা নেয়া থেকে শুরু করে যাতায়াতের সুবিধাজনক পন্থা হিসেবে এই পথে ফেরির প্রয়োজনীয়তা এখনো অনুভব করেন এখানকার মানুষরা...


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা