ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে দেরি হওয়া ও পাইপে পানি না থাকার অভিযোগ এনে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ভাঙচুর ও কর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে একদল যুবক. রূপনগরের ট ব্লকে ঘটেছে এই ঘটনা।

কোথাও আগুন লাগলে, ভবন ধ্বসে পড়লে, কেউ পানিতে ডুবে গেলে বা প্রাকৃতিক অথবা মানবসৃষ্ট দুর্যোগ হানা দিলে সবার আগে যারা ঝাঁপিয়ে পড়ে, সেই প্রতিষ্ঠানটির নাম ফায়ার সার্ভিস। ঢাকার রূপনগর বস্তিতে লাগা আগুনেও এই মানুষগুলো নিজেদের প্রাণের পরোয়া না করে হাজির হয়েছেন, আগুন নেভানোর কাজে লেগে পড়েছেন। অথচ এই ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের ওপরেই হামলা হয়েছে সেদিন, মারধরের শিকার হয়েছেন তারা, ভাংচুর করা হয়েছে ফায়ার সার্ভিসের গাড়িও! আমাদের জন্যে যারা জীবন বাজী রাখেন, তাদের উপকারের এমনই প্রতিদান দিচ্ছি আমরা- কি চমৎকার, তাই না?

গতকাল সকালে আগুন লেগেছিল মিরপুরের রূপনগর বস্তিতে, পৌনে দশটার দিকে আগুনের সূত্রপাত। খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গেই ছুট লাগায় ফায়ার সার্ভিসের ১১টি ইউনিট। পরে আরও কয়েকটি ইউনিট যোগ দেয় সেখানে, মোট ২৫টি ইউনিট মিলে তিন ঘন্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। কিন্ত এরইমধ্যে বিব্রতকর একটা পরিস্থিতির সম্মুখীন হন আগুন নেভাতে আসা ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।

ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে দেরি হওয়া ও পাইপে পানি না থাকার অভিযোগ এনে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ভাঙচুর ও কর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে একদল যুবক। রূপনগরের ট ব্লকে ঘটেছে এই ঘটনা। ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ভাংচুর করা হয়েছে, মারধরে আহত হয়েছেন একজন কর্মীও। আগুন নেভাতে এসে, জীবন এবং সম্পদ বাঁচাতে এসে উল্টো তাদের সম্পদই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ফায়ার সার্ভিস কর্মীর জীবনই পড়েছে হুমকির মুখে!

ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হয়েছে হামলা

ঘটনাস্থলে থাকা প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, আগুন নিয়ন্ত্রণের এক পর্যায়ে বস্তির ৩৮ নম্বর রোডে অবস্থান নেওয়া ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে থাকা পানি শেষ হয়ে যায়। এতে ক্ষিপ্ত হয় উপস্থিত জনগণ। তারা ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের আক্রমণ করে। লাঠি নিয়ে হামলা চালায়। কয়েকজন ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে আগুন দেওয়ার চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে গাড়ি রেখে অন্যত্র সরে যান ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।

এই হামলার বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে কথা বলেছিলেন লে. কর্নেল জিল্লুর রহমান। তিনি বলেছেন, ‘ঘটনাস্থলে আসতে আমাদের বিলম্ব হয়নি। আগুন লাগার পর বস্তিবাসীরা বিভিন্ন আসবাব দিয়ে রাস্তা বন্ধ করে রেখেছিল। যে কারণে আমাদের গাড়ি ঢুকতে বাধাগ্রস্ত হয়।  সেখানে পানির প্রচুর সংকট ছিল, যে কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে আমাদের বেগ পেতে হয়েছে। প্রাকৃতিক জলাধার না থাকায় বরাবরের মতো পানি সংকটে পড়তে হয়েছে। আশে-পাশের বিভিন্ন ভবনের রিজার্ভ ট্যাংক থেকে পানি নিয়ে আমরা কাজ করেছি। তাছাড়া ফাঁকা জায়গায় তীব্র বাতাস থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে বেগ পেতে হয়েছে।’

জিল্লুর রহমান অভিযোগ করে বলেছেন, ‘বস্তিবাসী ফায়ারের গাড়ি ঢুকতে বাধা দেয়। তারা ফায়ার কর্মীদের ওপরে ও গাড়িতে আক্রমণ করে। এটা ঘরহারা বস্তিবাসীর আবেগ থেকে করেছে বলে মনে করি। পরে ধৈর্যের সঙ্গে এবং র‌্যাব- পুলিশের সহায়তায় বস্তিবাসীদের বুঝিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করা হয়।’

হামলায় আহত হয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মী

প্রথমত, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের ওপর হামলার যে ঘটনাটি ঘটেছে, সেটি প্রচণ্ড ন্যাক্কারজনক একটা কাজ। পানি শেষ হয়ে যাওয়ায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের দোষটা কোথায়? তারা তো পানির অফুরন্ত ভাণ্ডার সঙ্গে নিয়ে চলাচল করেন না, গাড়ির ট্যাংকার খালি হতেই পারে। রূপনগরের আগুনের যে ভয়াবহতা ছিল, সেটা যে তিন ঘন্টায় নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে- এই ব্যাপারটাই তো সাধুবাদ জানানোর মতো। অথচ তাদেরকে ছোট্ট একটা ধন্যবাদও কেউ না দিয়ে ঊল্টো কিনা ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের ওপর, তাদের গাড়ির ওপর হামলা চালানো হচ্ছে!

ফায়ার সার্ভিসের কাজের একটা ধরণ আছে, তারা একটা সিস্টেম মেনে কাজ করেন। ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা তো অন্তর্যামী নন যে চাইলেই পানির উৎস তৈরী করে ফেলতে পারবেন। যে মানুষগুলো প্রাণের মায়া না করে অন্যের বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়ছেন, তাদের সম্মান দিতে পারি বা না পারি, তাদের প্রতি এমন অমানবিক আচরণ মোটেই কাম্য নয়। এর পরেও কোথাও আগুন লাগলে, মানুষ বিপদে পড়লে সবার আগে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরায় ছুটে যাবেন ঝাঁপিয়ে পড়বেন কারো প্রাণ বাঁচাতে, নিজেদের জীবন বিসর্জন দেবেন অকাতরে। রানা প্লাজা, তাজরীন, চকবাজার কিংবা বনানীর আগুন- প্রতিবারই এই নজির আমরা দেখেছি। তারা তো আমাদের মতো স্বার্থপর আর অকৃতজ্ঞ হতে পারেননি…


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা