লস কিউলস, দ্য ভাইকিংস বা ইয়েলো সাবমেরিন নামের পেছনে লুকিয়ে থাকা অদ্ভুত সব গল্প!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
বার্সেলোনার সমর্থকেরা নিজেদের 'লস কিউলস' বলে পরিচয় দেয়, কাতালান ভাষায় শব্দটার অর্থ পশ্চাৎদেশ প্রদর্শনকারী। এতকিছু থাকতে পেছন প্রদর্শন করার দরকার হলো কেন? সেই রহস্যভেদ করতে হলে জানতে হবে মজার এক ঘটনা...
বিশ্বজুড়ে ফুটবলপ্রেমীরা জানে- বার্সেলোনার সমর্থকেরা নিজেদের লস কিউলস বলে পরিচয় দিতে পছন্দ করে। কাতালান ভাষায় এর অর্থ পশ্চাৎদেশ প্রদর্শনকারী। চোখ কপালে উঠে গেলো? মনে হচ্ছে এ কেমন নাম? আসলে এমন বিচিত্র নামের পিছনে আছে মজার ইতিহাস। চলুন আজকে এমন কিছু ক্লাবের ডাকনামের পেছনের বিচিত্র গল্প জেনে নেওয়া যাক।
বার্সেলোনা - লস কিউলস
বার্সেলোনা দলটি মুলত ব্লাউগ্রানা নামেই পরিচিত। কাতালান ভাষায় ব্লাউ মানে নীল আর গ্রানা মানে গভীর লাল। বোঝা যাচ্ছে মুলত তাদের জার্সির রং থেকে এই নামের উদ্ভব। কিন্তু এই বিখ্যাত ক্লাবের সমর্থকরা নিজেদের পরিচয় দেন লস কিউলস বলে। যার অর্থ পশ্চাৎদেশ প্রদর্শনকারী। কিন্তু কিভাবে এলো এই নাম? তা জানতে আমাদের ফিরে যেতে হবে গত শতাব্দীর বিশ এর দশকে।
তখন বার্সেলোনা ক্লাবের নতুন স্টেডিয়াম হয়েছে। সে ছোট্ট স্টেডিয়ামে মাত্র ৬০০০ দর্শকের বসার ব্যবস্থা ছিলো। ততদিনে বার্সেলোনা ক্লাব তুমুল জনপ্রিয় হতে শুরু করেছে। ফলে প্রায়ই দেখা যেতো ৬০০০ সীটে জায়গা সংকুলান হচ্ছে না। সমস্যা সমাধানে স্টেডিয়ামের সাথে লাগোয়া প্রাচীরে বসে লোকে খেলা দেখা শুরু করলো। এই দেওয়ালটা আবার ছিলো বার্সেলোনার মূল রাস্তার উল্টোদিকে। ফলে খেলা চলার সময় রাস্তা দিয়ে যাতায়াতকারী দর্শকদের সারি সারি পশ্চাৎদেশ দেখতে পেতো। এই দৃশ্য দেখে পথচারীরা তাদেরকে মজা করে কিউলস বলে ডাকতে থাকে।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, এতে বার্সা সমর্থকরা বিরক্ত না হয়ে বরং সাদরে গ্রহন করে। এরপর থেকেই তারা নিজেদের লস কিউলস বলে পরিচয় দিতে শুরু করে। বর্তমানে প্রায় এক লাখ ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ক্যাম্প ন্যু'তে বাইরে থেকে কারও পেছনের অংশ না দেখা গেলেও বিশ্বজুড়ে বার্সা সমর্থকরা লস কিউলস নামেই পরিচিত এবং গর্বিত।
রিয়াল মাদ্রিদ - লস মেরেংগুয়েস বা দ্যা ভাইকিংস
রিয়াল মাদ্রিদ মূলত লস ব্লানকোস বা 'আমরা সাদা' বলে অধিক পরিচিত। এর কারণ তাদের জার্সির রং। তাদের আরেকটি নাম লস মেরেংগুয়েস বা দ্যা ভাইকিংস। ৫০ এর দশকে রিয়াল মাদ্রিদ যখন ইউরোপ শাসন করছিলো তখন ইংল্যান্ডের প্রেস তাদের এই নাম দেয়। তবে এই নাম জনপ্রিয় হয় ৭০ দশকে। এর পেছনে আথলেটিকোর সমর্থকদের মূল অবদান।
সেসময় তাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা একেবারে তুঙ্গে। রিয়ালের প্রয়াত সভাপতি সান্টিয়াগো বার্নাব্যু সেসময় বেশ কিছু ড্যানিশ ও জার্মান খেলোয়াড় কেনেন, যারা সবাই ছিলো লম্বা, সোনালী চুল এবং পুর্ব ইউরোপের। সেটাকেই বিদ্রুপ করে অ্যাটলেটিকোর সমর্থকেরা তাদের লস মেরেংগুয়েস বা ভাইকিংস বলে ডাকতে থাকে। সেটা শুনে কি আর রিয়ালের সমর্থকরা বসে থাকবে? তারা তাহলে অ্যাটলেটিকোর কী নাম দিলো?
অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ - লস কনকোনেরস বা দ্যা মাট্রেস মেকার
রিয়াল মাদ্রিদ যেমন পুর্ব ইউরোপের খেলোয়াড় সাইন করিয়েছিলো তেমন অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ একের পর এক ল্যাটিন আমেরিকান খেলোয়াড় সাইন করাতে থাকে ৭০ দশকে। তাই রিয়াল মাদ্রিদ সমর্থকরা ইটের জবাব পাটকেল দিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো। তারা অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের নাম দিলো লস ইন্ডিওস বা দ্য ইন্ডিয়ানস।
অবশ্য অ্যাটলেটিকোর সর্মথকরা এতে বিরক্ত না হয়ে দ্রুতই এই নাম গ্রহণ করে। এমনকি তাদের মাস্কটের নামও রাখে ইন্ডি। এছাড়াও অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের আরেকটি নাম লস কনকোনেরস বা দ্যা মাট্রেস। অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের জার্সি ডিজাইনের সাথে স্পেনের ঐতিহ্যবাহী তোশকের ডিজাইনের মিলের কারনে তাদের এই নাম।
ভিয়ারিয়াল - আমারিলো সাবমারিনো বা দ্য ইয়োলো সাবমেরিন
সময়টা ১৯৬৮। সারা ইউরোপ আমেরিকাজুড়ে বিটলস এর তুমুল জনপ্রিয়তা। স্পেনও তার বাহিরে নয়। সে বছর ভিয়ারিয়াল তৃতীয় বিভাগে উঠি উঠি করছে। একদিন ভিলারিয়ালের গোলের পর মজার কান্ড করে বসলো ভিলারিয়ালের সমর্থকরা। বিটলসের তুমুল জনপ্রিয় গান 'ইয়োলো সাবমেরিন' এর স্প্যানিশ ভার্সন ছেড়ে দিলো। আর তাদের হলুদ জার্সির সাথে মিল রেখে নিজেরা গলা মিলিয়ে গাইতে থাকলো 'আমারিলো এল এস ভিয়ারিয়াল/ আমারিলো এস/ আমারিলো এস (ভিয়ারিয়াল ইজ ইয়োলো / দে আর ইয়োলো)'। আর এভাবে জন্ম হলো নতুন এক ডাকনামের।
লেগানেস - লস পেপিনেরস বা করলা চাষী
আজকের ডাকনামের গল্প শেষ করবো আরেকটা মজার নাম দিয়ে। সেটা হলো লস পেপিনেরস বা করলা চাষী। স্পেনের এক ছোট্ট শহর লেগানেস। ভদ্র, ছিমছাম এই শহরে বেশিরভাগ লোকই কৃষক। তাদের মুল ফসল হচ্ছে করলা। তারা তাদের ফসল বিক্রি করতে আসতো মাদ্রিদ মতো বড় শহরে। তাদেরকে মাদ্রিদবাসী ডাকতো লস পেপিনেরস বা করলা চাষী বলে। সেই ছোট্ট শহরের ছোট্ট ক্লাব লেগানেসকে এলিট লোকজন লস পেপিনেরস ডাকবে, তাতে আর আশ্চর্য কী!
*
প্রিয় পাঠক, এই লেখাটি একজন কন্ট্রিবিউটর লিখেছেন। চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন