একদিন স্কুল থেকে খবর দেয়া হলো। গেলাম। ক্লাস শিক্ষক এসে হাতে রেজাল্ট কার্ড দিয়ে বলেছিলেন, মেয়ে দুই বিষয়ে খারাপ করেছে! আমি বললাম, আচ্ছা দেখবো যাতে ভবিষ্যতে খারাপ না করে। শিক্ষক তখনই বলে উঠলেন, না না, এই কারণে আপনাকে ডাকা হয় নাই...

বানসুরি মোহাম্মদ ইউসুফ: চট্টগ্রামে বাচ্চাদের একটা স্কুল আছে, ফুলকি। চট্টগ্রামে চাকরী করা অবস্থায় মেয়েকে ফুলকিতে দিয়ে ছিলাম। একদিন স্কুল থেকে গার্জিয়ানকে খবর দেয়া হলো। গেলাম। ক্লাশ শিক্ষক এসে হাতে রেজাল্ট কার্ড দিয়ে বলেছিলেন, মেয়ে দুই বিষয়ে খারাপ করেছে! আমি বললাম, আচ্ছা দেখবো যাতে ভবিষ্যতে খারাপ না করে। শিক্ষক তখনই বলে উঠলেন, না না, এই কারণে আপনাকে ডাকা হয় নাই। আপনাকে ডাকা হয়েছে যাতে রেজাল্ট কার্ড দেখে বাচ্চাকে বকাঝকা না করেন। রেজাল্টের বিষয়টা আমাদের উপর ছেড়ে দেন।

আমি জানি না বর্তমানে ফুলকির কী অবস্থা। আমি বলছিলাম ২০০৮/৯ সালের কথা। ফুলকিতে যাদের বাচ্চা পড়ে তারা নিশ্চয় ফুলকির এই রেয়াজ সম্পর্কে অবহিত আছেন। ফুলকির সবচেয়ে বড় গুণ ছিলো, নো হোমওয়ার্ক। ক্লাসেরটা ক্লাসেই শেষ করে দেয়ার বিশেষ পদ্ধতি। ঢাকাতে শিফট হওয়ার পর যতবারই স্কুল থেকে আমাকে ডেকেছে, ততবারই আমি ফুলকিকে মিস করেছি। অভিভাবক না হলে উপলব্ধি করা সম্ভব নয় যে, এদের অপমানের কি জ্বালা!

সর্বশেষ মাস ছয়েক আগে মেয়ের হাফইয়ার্লি পরীক্ষার আগে স্কুল থেকে ডাক আসে। একটা অভদ্র অরুচিকর অশিক্ষিত ক্লাস শিক্ষকের মুখোমুখি আমাকে হতে হয়। মেয়ে যেহেতু মিডটার্মে একদুই বিষয়ে খারাপ করেছে, এখন আমাকে স্ট্যাম্পে লিখে দিতে হবে যে, হাফইয়ার্লি পরীক্ষায় কোন বিষয়ে ফেল করলে এই স্কুল থেকে সেন্টার পরীক্ষা দিতে দেয়া হবে না এবং তা আমি মেনে নেবো! মেজাজ চরমে উঠে গেলো। এই স্কুলের শিক্ষকদের কোয়ালিটি সম্পর্কে আমি বেশ জানি, কারণ বাসায় মেয়েকে আমি পড়াই। মেয়ে কোচিং করে না বলে, শিক্ষকদের কাছে প্রাইভেট পড়ে না বলে তার সাথে মিসবিহেভ করতো এবং মিডটার্ম পরীক্ষায় উলটাপালটা মার্কিং করতো। কিন্তু হাফ ইয়ারলি কিংবা বার্ষিক পরীক্ষায় এদেরই অন্য ক্যাম্পাস খাতা দেখতো বলে মেয়ে পার পেয়ে যেতো।

ফুলকি স্কুল, চট্টগ্রাম

তো, সেদিন আমি সেই ক্লাস শিক্ষককে বলেছিলাম, স্ট্যাম্পে সই লাগবে না মশাই। মেয়েকে এই স্কুল থেকে সেন্টার দেয়াবো না। হাফইয়ার্লির পরে রেজিস্ট্রেশন শিফট করবো। এত বড় একটা বাজে স্কুলের নাম মেয়ের সার্টিফিকেটে লাগতে দেবো না। ২/৩ দিন পরে মেয়ের পরীক্ষা শুরু হলো। পরীক্ষা শেষে রেজাল্ট হলো। কমার্স সেকশনে সেই ক্যাম্পাসে একমাত্র সে-ই সব সাবজেক্টে পাশ করলো, ফার্স্ট হলো। পরদিনই তাকে সিভিল এভিয়েশন স্কুলে শিফট করলাম। এত কথা কেন বললাম! দোষ আমাদেরই। আমরাই কিছু সিলেক্টিভ স্কুলের শিক্ষকদেরকে অডাসিয়াস হতে সহায়তা করেছি। কিভাবে?

আমরা কেন হাতেগোনা কয়েকটি স্কুলের পেছনে দৌড়াই? ভিকারুন্নেসায় বাচ্চা পড়ানোর জন্য উঠেপড়ে লাগি! রাজউকের পেছনে লাগি! আচ্ছা বলেন তো, যে বাচ্চা হাড্ডাহাড্ডি প্রতিযোগিতায় ভিকারুন্নেসা স্কুলে ভর্তির যোগ্যতা রাখে, সে বাংলাদেশের যে কোন স্কুল থেকে সেন্টার পরীক্ষা দিলেই ভালো রেজাল্ট করবে না? ভিকারুন্নেসার মত স্কুলগুলো কি কোন খারাপ ছাত্র ভর্তি করিয়ে ভালো রেজাল্ট করিয়ে দিতে পারছে? তবে কেন আমরা এদের পেছনে দৌড়ে এদের অহম আকাশসম করে দিচ্ছি? 


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা