একই পরিবারের ৯টা মানুষ একসাথে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিলো! কয়েক কিলোমিটার দূরে গিয়েও মিললো ছিন্ন ভিন্ন মাংসের টুকরা। বাকরুদ্ধ হয়ে ট্রেন ড্রাইভার জ্ঞান হারালেন তৎক্ষণাৎ। কিন্তু কেন এই আত্মহত্যা? জেনে আসা যাক অবিশ্বাস্য এই ঘটনা!

জামালপুর ময়মনসিংহ লাইনে নিয়মিত যাতায়াত করে এটি। কিন্তু ১১ জুলাই, ২০০৭ এর যাত্রাটি অন্যরকম। যদিও অন্যান্য দিনের মতো স্বাভাবিক নিয়মেই জামালপুরের জগন্নাথগঞ্জ স্টেশন থেকে ট্রেনটি ছেড়ে আসে। তবে কিছুটা দেরিতে, সকাল দশটা চল্লিশে। 

ট্রেন ড্রাইভার আবদুল মতিন দক্ষ মাস্টার। তার সহকারী হিসেবে ছিলেন মোঃ এনায়েত খান। যেহেতু দেরি হয়েছে তাই তারা চাচ্ছিলেন আর কোথাও সময় নষ্ট না করে দ্রুতই গন্তব্যে যেতে। বেলা তিনটা পনেরো। ট্রেন তখন ময়মনসিংহের কাশর পৌরসভা পার হচ্ছিলো। এমন সময়ে আবদুল মতিন খেয়াল করলেন, নয় জন মানুষ হাত ধরাধরি করে রেললাইনের দিকে এগিয়ে আসছে। 

এই নয়জনের সবাই একই পরিবারের। পুরুষ, নারী, শিশুদের এই দলটির বাড়ি রেললাইন এর ধারেই। সবাই একসাথে বের হয়েছে। রেললাইন ধরে তাদের সবাই চুপচাপ বসে পড়লো। আবদুল মতিন এবং এনায়েত কিছুই বুঝতে পারেননি প্রথমে। পরক্ষণেই যা ঘটেছে তা সারাজীবন চেষ্টা করেও আবদুল মতিন ভুলতে পারবেন না। হর্ণ দেয়ার পরও তারা যখন কেউ সরে যাচ্ছে না তখনই আবদুল মতিনের শিরদাঁড়া দাঁড়িয়ে গেলো। তিনি বুঝতে পারলেন এরা সবাই একসাথে আত্মহত্যা করতে যাচ্ছে। 

তিনি প্রাণপণ চেষ্টা করলেন ট্রেন থামাতে। ইমার্জেন্সি ব্রেক কষলেন। কিন্তু ততক্ষণে দেরি হয়ে গেলো। এতবড় ট্রেন থামানোর জন্যেও তো বড় জায়গার দরকার। তাই তিনি পারলেন না। ৯ জন মানুষ যেখানে বসে ছিলো ট্রেন তাদের ছেদ করে আরো একটু সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।

রেল থেকে নামার পর দেখা গেলো দুইজন মানুষ তখন পর্যন্ত বেঁচে আছে। ছিন্ন ভিন্ন শরীর নিয়ে এক তরুণী ও একটি ছেলে পানি পানি বলে চিৎকার দিচ্ছিলো। লোকজন তাদের বাঁচানোর চেষ্টায় হাসপাতালে নিয়ে যেতে চেয়েছিলো। পথেই তাদের মৃত্যু হয়। এক বীভৎস দৃশ্যের অবতারণা হয় রেললাইন জুড়ে। কয়েক কিলোমিটার দূরে গিয়েও ছিন্ন ভিন্ন মাংসের টুকরা পাওয়া যায়। ০৯ জন মানুষের শরীর কাটা অঙ্গ প্রত্যঙ্গ আশেপাশের জায়গাগুলোতে ছিটকে পড়ে। পাথর চাপা রেললাইন যেন সাময়িকভাবে রক্ত রাঙ্গা লাল হয়ে গিয়েছিলো সেদিন। 

সেদিনের রেলপথ রক্তে রাঙ্গা লাল হয়ে গিয়েছিল 

ট্রেন ড্রাইভার আবদুল মতিন এই দৃশ্য দেখে বাকরুদ্ধ হয়ে তৎক্ষণাৎ অজ্ঞান হয়ে যান। রক্ত মাংস হাড় এবং এই আকস্মিক মৃত্যু এক রহস্যের সৃষ্টি করে গোটা অঞ্চলে। চাঞ্চল্যকর ও হৃদয়বিদারক এ ঘটনাটি জানতে এবং তাদের লাশ এক নজর দেখতে আসা শত শত কৌতূহলি জনতার ভিড় সামলাতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের হিমশিম খেতে হয়। এই ঘটনার পরপর এই রেলপথে ট্রেন চলাচল সন্ধ্যা পর্যন্ত সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়েছিলো। উৎসাহী জনগন জানতে চায় কেন এই সপরিবারে আত্মহত্যা?

১২ জুলাই, ২০০৭

প্রথম আলো এই খবর নিয়ে প্রতিবেদন করে। ইত্তেফাকও খবর প্রকাশ করে এই ঘটনায়। আশেপাশের মানুষদের সাথে কথা বলে নিহতদের নাম ঠিকানা জানতে পেরেছিলো পুলিশ। তারা হলেন, মা- হেনা আনোয়ার (৬০), পুত্র- আরিফ আনোয়ার (৩০) ও রাহাত আনোয়ার (২২), কন্যা- আক্তারী আনোয়ার (৩৫), মুর্শেদা আনোয়ার (২৭), মুন আনোয়ার ওরফে মবি (৩০) ও শবনম আনোয়ার (১৮), নাতি- মৌলা আনোয়ার (৮) ও নাতনী মৌ আনোয়ার (১০)। 

রেল বিভাগ সুত্রে জানা যায়, এই সপরিবারে আত্মহত্যার খবর পেয়ে হাজার হাজার মানুষ ঘটনাস্থল ও ওই বাড়িতে ভিড় করে। ওই বাড়ির ভেতর গিয়ে দেখা যায়, সেখানে কেউই নেই। একটি পাকা ঘর। পাঁচ-ছয়টি কক্ষ। উঠানে কবরের মতো বড় একটি গর্ত খোঁড়া। বারান্দায় লাশ নেওয়ার খাট। রান্নাঘরে কাটা ছোট মাছ পড়ে আছে। তরিতরকারিও কেটেকুটে রাখা হয়েছে। কবর খোঁড়া এবং লাশ রাখার কফিন দেখেই বুঝা যায়, এই পরিবারটি বেশ কিছুদিন ধরেই আত্মহত্যার পরিকল্পনা করে আসছিল। 

বাড়ির ভেতর গর্ত করে কবর খোঁড়া ছিল

ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম তখন বলেছিলেন, “এ পরিবারের সদস্যরা সম্পুর্ণ ব্যতিক্রম এক ধরনের ধর্মীয় ভাবধারায় বিশ্বাসী বলে মনে হচ্ছে। আমরা এ পর্যন্ত যেসব কাগজপত্র পেয়েছি, তাতে এটাই মনে হচ্ছে।“ পুলিশ নিহতদের বাড়ি থেকে কয়েকটি ডায়েরি আর হাতে লেখা কাগজপত্র উদ্ধার করে। ডায়েরিতে কী লেখা ছিল?

মূলত ধর্ম নিয়েই বেশ কিছু লেখা ছিলো ডায়েরিতে। বিভিন্ন ধর্ম সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য ছিল। এই লেখাগুলো কিছু ইংরেজিতে ও কিছু ছিলো বাংলায়। ইংরেজিতে একটি ডায়েরির মধ্যে লেখা ছিলো, “আমরা পৃথিবীর একমাত্র পরিবার যারা স্বাধীন ও আত্মনির্ভরশীল। মোহাম্মদের আইনের বাইরে এবং সব ধর্মের সব কার্যকলাপের বাইরে। তাহলে আমরা কে? আমরা হলাম আদম।“এ ছাড়া ‘সবার উপরে আদম সত্য, জুলুমের বিচারের ব্যবস্থা করিব’ ইত্যাদি ধরনের বেশ কিছু মন্তব্য ছিল। 

ডায়েরিতে আদমকে নিয়ে বিভিন্ন মন্তব্য ছিলো। তারা ডায়েরিতে লিখেছে, আদম হচ্ছেন বিশ্বের প্রথম মানুষ। সেই সবকিছু সৃষ্টি করেছে। অন্যান্য সব মানুষ আদমেরই অংশ (বনি আদম)। তাদের মতে, আদম বিভিন্ন সময়ে মারা যান, আবার পরবর্তী সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে জন্মগ্রহন করেন। বিংশ শতাব্দীতে বাংলাদেশেও আদম জন্মগ্রহন করেছিলেন বনি আদম হিসেবে। 

বাড়িটির ভেতরে এরকম অদ্ভুত লেখা দিয়ে ভর্তি ছিল 

স্থানীয় প্রতিবেশী সূত্রে জানা গিয়েছিল, শহরের কাশর ইটখলা এলাকায় আশির দশকে জমি কিনে বাড়ি করেন আনোয়ার ফকির নামের এক ব্যক্তি। একজন আধ্যাত্মিক সাধক হিসেবে পরিচয় ছিল আনোয়ার ফকিরের। তবে প্রতিবেশীদের সাথে তেমন কোন সখ্যতা ছিল না। পরিবারটি যেন একঘরে হয়ে ছিল সমাজে। প্রায় ৫/৬ বছর পূর্বে আনোয়ার ফকির মারা যাবার পর তার লাশের দাফন ও কবর দেয়া নিয়ে তার পরিবার এলাকাবাসীর প্রতিরোধের মুখে পড়ে। 

আনোয়ার ফকিরের ছোট ভাই, রিটায়ার্ড আর্মি আব্দুল হান্নান থাকতেন ময়মংসিনহের গোহাইলখালিতে। সাংবাদিকদের কাছে তিনি বলেন, আমার ভাই হার্ট এটাকে মারা গিয়েছিল। মৃত্যুর পরে ওর পরিবারের বাকি সবাই খৃষ্টধর্ম গ্রহণ করে। তারপর থেকে তারা আমাদের এবং অন্যান্য আত্মীয়দের সাথে দূরত্ব তৈরি করে। তবে নিহতের বাড়িতে গিয়ে খৃষ্ট ধর্মের কোনো বইপত্র দেখা যায়নি। ময়মনসিংহ এলাকার চার্চে খোঁজ নিয়ে দেখা গিয়েছিল, এই পরিবার কখনো কোন খৃষ্টান ধর্মের অনুষ্ঠানেও যোগ দেয়নি।

১৪ই জুলাই, ২০০৭ 

ঘটনা নতুন দিকে মোড় নেয়। ব্রাহ্মবাড়িয়া জেলার মেদ্দা এলাকায় এক নারী নিজেকে আনোয়ার ফকিরের মেয়ে বলে দাবি করেন। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমার নাম মবি। পেপারে দেখছি যে আমি মৃত বলে ছাপা হয়েছে। তবে আমি বেঁচে আছি । ওই বাড়িতে আমি ছিলাম না, কিন্তু আমার ছেলে মওলা আর মুন ওই বাসায় ছিল। ওরা খুন হয়েছে।’ মবি এই ঘটনাকে আত্মহত্যা বলে মানতে রাজি নন। 

তিনি দাবি করেন, “এটা একটা সুপরিকল্পিত হত্যাকান্ড। আমার ভাই অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে পড়ত। ২০০৫ সালের ১০ সেপ্টেম্বর অজ্ঞাত কিছু লোক ওকে খুন করে। সেই একই লোকজন আমাদের বাড়ি দখল করতে চায়। তারাই আমার ফ্যামিলির ৯ জনকে ট্রেনের তলায় চাপা দিয়েছে।’’ 

পুলিশ নতুন করে ডেডবডির স্তুপ ঘাঁটাঘাঁটি শুরু করে। এত দিন ধরে যাকে মবি'র ডেডবডি বলে ধারণা করেছিল পুলিশ, এটা তাহলে কার লাশ? এই অজানা মেয়েটি কে? মেয়েটির নাম লিনা হতে পারে ধারণা করা হয়। কারণ, উদ্ধারকৃত ডায়েরিগুলোর মধ্যে লিনা নামে একজনের ডায়েরিও পাওয়া গিয়েছিলো। ডায়েরি পড়ে যানা যায়, লিনা এই পরিবারের সদস্য নয়। লিনার মা আর বাবা আনোয়ার দরবেশের মুরিদ ছিলেন। একসময় লিনা আনোয়ার দরবেশের প্রতিষ্ঠা করা ধর্ম 'আদম ধর্ম' গ্রহন করেন। পরে নিজ পরিবার ছেড়ে এই বাড়িতে থাকা শুরু করেন। তবে অন্যান্যদের ডায়েরিতে লিনার কোনো উল্লেখ নেই।

কে এই আনোয়ার ফকির ওরফে আনোয়ার দরবেশ?

আনোয়ার দরবেশ ছিলেন আর্মিতে। রিটায়ার করার পরে তিনি বেশ ধর্মকর্ম শুরু করেন। তবে ধীরে ধীরে তার চিন্তাভাবনা প্রচলিত ইসলামিক চিন্তা চেতনার চেয়ে একটু ভিন্ন দিকে প্রবাহিত হতে থাকলো। প্রায়ই ধর্মীয় আলোচনা শুরু হলে তার সাথে অনেকের মারাত্মক বাক-বিতণ্ডা হতো। একবার সেটি চলে যায় হাতাহাতির পর্যায়ে। ১৯৯৫ সালে গ্রামের একটি চায়ের দোকানে স্থানীয় মোল্লাদের সাথে তর্কের এক পর্যায়ে হাতাহাতি হয়। পরে চা দোকানের লোকজন তাকে মারধর করে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। 

আনোয়ার ফকিরের বাসায় নামফলক

এই ঘটনার পর থেকে তিনি বাইরে বের হওয়া একেবারে কমিয়ে দেন। পরিবারের অন্যান্যরাও বাইরে যাওয়া কমিয়ে দেয়। সম্ভবত তিনি তারপর থেকে তার ভক্ত কিংবা মুরিদদের বাদ দিয়ে শুধুমাত্র নিজের পরিবারের লোকদেরই তার মতবাদে প্রভাবিত করতে শুরু করেন। আনোয়ার দরবেশের সবচেয়ে বড় শিষ্য হয়ে উঠেছিল তার বড় ছেলে আরিফ আদম। ২ জন মিলে ঘন্টার পর ঘন্টা ধ্যান করতো।

কেন এই পরিবারটি এত রহস্যে ঘেরা?

এর কারণ স্বয়ং আনোয়ার ফকির নিজেই! আনোয়ার দরবেশ মৃত্যুর পরে তার ডেডবডি কীভাবে সৎকার করা হবে সে বিষয়ে তিনি একটি লিখিত নির্দেশনা দিয়ে যান। সেখানে উল্লেখ ছিল,

“মৃত্যুর পরে আমার কোনো জানাজা দিবা না, গোসল দিবা না, কাফনের কাপড় পরাবা না। যে কাপড় পরে মারা যাব, সেই কাপড়ে সেই অবস্থাতেই আমাকে কবর দিবা। কোনো কবরখানায় আমাকে নিবে না, বাড়ির ভিতরে গর্ত খুঁড়ে আমাকে কবর দিবে। আমার মাথা থাকবে পূর্বে, পা থাকবে পশ্চিমে আর মুখ দক্ষিন দিকে ঘুরানো থাকবে। যদি অন্যরকমভাবে কবর দাও, তাহলে আমি কঠিন প্রতিশোধ নিব।’’

আদম পরিবার তাকে এইভাবেই কবর দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু স্থানীয়রা বাঁধা দেয়। পুলিশ, ম্যাজিস্ট্রেট এবং স্থানীয় মোল্লাদের উপস্থিতিতে তার গোসল, জানাজা এবং কবর দেওয়া হয় সম্পূর্ন ইসলামী পদ্ধতিতে। যদিও আদম পরিবারের কেউ সেই জানাযায় উপস্থিত হয়নি। 

আনোয়ার দরবেশের মৃত্যুর পর আদম পরিবার ঢাকায় চলে যায়। সেখানে বড় ছেলে গোলাম মাহিন কাজ করে পরিবারের খরচ চালাতো। (একজনের ডায়েরি থেকে জানা যায়, মাহিন ঢাকার ৫২টা ইউনিভার্সিটির ডীন ছিল!) ২০০৫ সালে ঢাকায় মাহিন মারা যায় কিংবা খুন হয়। তখন বাকিরা সবাই আবার গ্রামে চলে আসে। তখন দায়িত্ব নেয় আরিফ ও রাহাত। রাহাতের ডায়েরিতে ইংরেজিতে লেখা পাওয়া যায়,

"We are the only family in the world that is independent and self depended. We are the only one family in the world that is totally in depended and self depended and out of Mohamed’s rules, law and religious activities and religions."

কনফেশন বিফোর ডেথ

বাড়ির প্রতিটি সদস্যই মৃত্যুর আগে তাদের নিজেদের কথা গুছিয়ে ডায়েরিতে লিখে গিয়েছিল। ডায়েরি থেকে জানা যায়, অনেক আগে থেকেই চলছিলো তাদের এই আত্মহত্যার পরিকল্পনা। এটা তাদের কাছে আত্মহত্যা নয়। তাদের কাছে এটা মূলত বাবা এবং বড় ভাইয়ের সাথে মিলিত হওয়ার সুযোগ।

জুলাই মাসের ৭ তারিখে তারা একবার আত্মহত্যার পরিকল্পনা করে, কিন্তু পরে ক্যান্সেল করে। বাবা আনোয়ার আদমের মৃত্যু দিবস ১০ই জুলাইতেও তারা একবার পরিকল্পনা করেছিলো, কিন্তু পরে সেটা আবার পিছিয়ে দেয়। অবশেষে ১১ই জুলাই তারা সবাই একসাথে আত্মহত্যা করে।

আদম পরিবারের বাড়িটি বেড়ার বাউন্ডারি দিয়ে সবার থেকে আলাদা করা 

সাইকোলজি কী বলে?

ঘটনাটি এতটাই আলোড়ন জাগাতে সক্ষম হয়েছিলো যে কলকাতার এক সাইকোলজিস্ট, প্রফেসর নাসিমা সেলিম এই ঘটনার প্রেক্ষিতে একটি থিসিস পেপার লিখেন। থিসিস প্যাপারে তিনি দাবি করেন, আদম পরিবার Shared Delusion অথবা Shared Psychotic Disorder (SPD) নামক মানসিক রোগে ভুগছিলো। পরিবারের অর্থনৈতিক দুরবস্থা, এলাকাবাসীর অপমান, একঘরে করে রাখা সব কিছু মিলিয়ে আনোয়ার আদম সম্ভবত সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। তাই নিজেকে তিনি আদম বলে দাবি করা শুরু করেন। 

পরিবারের অন্যান্য মেম্বাররা যেহেতু বাবার প্রতি খুব নির্ভরশীল ছিল, তাই তারা বাবার সব কথা বিশ্বাস করল। আর এতে এতটাই প্রভাবিত হয় তারা যে শেষপর্যন্ত সপরিবারে আত্মহত্যা করতেও কুণ্ঠা বোধ করেনি! 

এই জাগতিক পৃথিবী বড়ই রহস্যের। কোথায় তার অস্তিত্ব, কোথায় তার কিনারা- সেই অতল গহ্বর কেউ জানে না!


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা