গোল্ডেন কেলা এওয়ার্ড - নিকৃষ্টতম সিনেমা এবং অভিনয়ের জন্য যে পুরস্কার!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
বলিউড বিশাল ইন্ডাস্ট্রি, এখানে সব কাজ ভাল হবে এই আশা করার মানে নেই৷ এই পুরস্কারের কথা জেনে মনে হলো, বাংলাদেশে যদি এমন পুরস্কার দেয়া হতো, কেমন হতো তবে?
পৃথিবীজুড়ে কতরকম পুরস্কার, তার পেছনে থাকে কতরকম স্পন্সর, হিসাব নিকাশ। বেশিরভাগ পুরস্কারই বিতর্কিত হয় বিভিন্ন কারণে। নিরপেক্ষতার অভাব, স্পন্সর প্রতিষ্ঠানের প্রভাব, ট্রেন্ডের ভাব বুঝে যেসব পুরস্কার দেয়া হয় সেগুলো নিয়ে মানুষ আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। সেসব প্রাইজের ভ্যালুও কমে যায়। তবুও, কিছু কিছু পুরস্কার বেশ প্রতিষ্ঠিত এবং সম্মানজনক হিসেবে স্বীকৃত।
সিনেমার লাইনে অস্কার এমন এক পুরস্কার, যা কার হাতে উঠবে সেটা দেখার জন্য সিনেমার লাইনের লোকেদের বাইরে সাধারণ দর্শকদেরও আগ্রহের কমতি থাকে না। খুব বেশি দূরে না গিয়ে আমাদের পাশের দেশ ভারতের ফিল্মফেয়ার এওয়ার্ডের কথা বলা যায়। প্রতিবছর জাকজমক আয়োজনে দেশসেরা সিনেমা, অভিনেতা, কলাকুশলীরা পুরস্কৃত হন সেরা কাজটির জন্য।
কিন্তু, যারা পয়সা খরচ করে খারাপ সিনেমা বানান, অনেক 'পরিশ্রম' করে খারাপ অভিনয় করেন তাদের জন্য কি কোনো পুরস্কার নেই? আছে। বলিউডেই এমন একটি পুরস্কার প্রচলিত আছে যার নাম 'গোল্ডেন কেলা এওয়ার্ড'; বাংলায় বললে সোনার কলা পুরস্কার। কলামার্কা পারফরম্যান্স যারা দিয়ে থাকেন, তাদেরকে ব্যঙ্গ করতেই এই পুরস্কারের প্রচলন। ২০০৯ সালে শুরু হয়েছিল এই সোনার কলা পুরস্কার। তারপর থেকে মোটামুটি প্রতিবছরই দেয়া হচ্ছে এই পুরস্কার।
বলিউড বিশাল ইন্ডাস্ট্রি, এখানে সব কাজ ভাল হবে এই আশা করার মানে নেই৷ এই পুরস্কারের কথা জেনে মনে হলো, বাংলাদেশে যদি এমন পুরস্কার দেয়া হতো কেমন হতো তবে? হয়ত দেখা যেত, কলা পুরস্কারের নমিনেশন নিয়েও কাড়াকাড়ি পড়ে যেত দেশে। কেউ কেউ কলা নেয়ার জন্য স্টেজে উঠে কান্না করে বলে ফেলত, ইটজ মাই গ্র্যান্ডফাদার ড্রিম। আমি খুবই আনন্দিত আজকে এই কলা পেয়ে..
এভারেজ জিনিস নিয়ে আমাদের এখানে যে মাতামাতি হয়, আবেগের রসগোল্লা চিপে রস বের করা হয়, আমরা যেভাবে আবার এসব এভারেজ গার্বেজকে 'ফাটায় দিসেন ভাই' বলে সহমত জানাই, এখানে সোনার কলা না সোনার মুলা পুরস্কার প্রচলন করলেও সেটা নিয়েও বিশাল হাঙ্গামা হবে। এসএমএস এর মাধ্যমে জনগণ জানিয়ে দিবে, কোন প্রিয় অভিনেত্রী এবার পেতে যাচ্ছেন মুলা পুরস্কার! মুলার কথা বাদ দেই। যে গরম পড়েছে মুলার কথা ভাবলেই কেমন গন্ধ গন্ধ লাগে। তারচেয়ে সোনার কলা দ্য গোল্ডেন কেলা এওয়ার্ড নিয়ে একটু বলি।
দশটি ক্যাটাগরিতে দেয়া হয় এই পুরস্কারটি। এর বাইরে আছে আবার স্পেশাল ক্যাটাগরিও। সব ক্যাটাগরি নিয়ে বলবো না। এত কলার ছড়াছড়ি ছড়িয়ে কলার বাজারমূল্য উর্ধ্বমুখী না-ই-বা করলাম। ২০০৯ সালে যে সিনেমাটি সবচেয়ে নিকৃষ্ট সিনেমা হিসেবে গোল্ডেন কেলা এওয়ার্ড পায় তার নাম 'লাভ স্টোরি ২০৫০'। এই দুর্দান্ত বাজে সিনেমায় অভিনয় করে বাজে অভিনেত্রীর পুরস্কারটি সেবছর ঝুলেছে প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার কাঁধে। চাঁদনি চক টু চায়না সিনেমায় অভিনয় করে বাজে সহ-অভিনেতা ক্যাটাগরিতে পুরস্কারটি পেয়েছিলেন অক্ষয় কুমার।
২০১০ সালে সেরা বাজে সিনেমার পুরস্কার জিতে 'কামবাখত ইশক' ছবিটি। একই সিনেমায় অভিনয় করে লোভনীয় বাজে অভিনেত্রীর পুরস্কারের কলাটি জিতেন কারিনা কাপুর। সে বছর সেরা বাজে জুটির পুরস্কার জিতেন শহিদ কাপুর এবং রানী মুখার্জি 'দিল বোলে হরিপ্পা' সিনেমার জন্যে। ২০১১ সালে সালমান খানের ভক্তদের স্বপ্ন পূরণ করে তিনি সেরা খারাপ অভিনেতার পুরস্কার পান 'দাবাং' সিনেমার জন্যে। একই সিনেমা সেবছর সবচেয়ে বাজে সিনেমা হিসেবে জিতে নেয় গোল্ডেন কেলা এওয়ার্ড! আর একই বছর 'আয়েশা' সিনেমার জন্য বাজে অভিনেত্রীর পুরস্কার বাগিয়ে নেন সোনম কাপুর। সেবছর স্পেশাল ক্যাটাগরিতে সিনেমার ইতিহাসে সেরা বাজে ট্রিলজির পুরস্কার জিতে গোলমাল সিরিজটি!
২০১২ সাল। সালমান খান স্ট্রাইকস এগেইন। তার অভিনীত সিনেমা 'বডিগার্ড' পায় বছরের সবচেয়ে বাজে সিনেমার কলা পুরস্কারটি। খারাপ অভিনয়ের জন্য লোভনীয় পুরস্কারটি জিতেন ইমরান খান, মেরে ব্রাদার কি দুলহান সিনেমার জন্য। আর খারাপ ম্যাজিক্যাল পারফর্ম করে 'আরাকশান' সিনেমার জন্যে বাজে অভিনেত্রীর মোহনীয় পুরস্কারটি জিতেন দীপিকা! মজার ব্যাপার হলো, সেবছর একটি নতুন ক্যাটাগরিতে পুরস্কার দেয়া হয় যার নাম দ্যা ফালতু এওয়ার্ড। পুরস্কারটি পায় 'ফালতু' সিনেমাটি! শাহরুখ খানের সময় খুব একটা ভাল যাচ্ছে না ক'বছর। তার একাধিক সিনেমা এই লিস্টে স্থান পেয়েছে বিভিন্ন সময়। যেমন- দিলওয়ালে সিনেমাটি বাজে সিনেমা ক্যাটাগরিতে নমিনেটেড হয়েছে।
এই এওয়ার্ডটি যারা ঘোষণা দেন, তারা যদিও বলেন, এটা কাউকে ছোট করার জন্যে নয়, কিন্তু এই এওয়ার্ড অনুষ্ঠানে আসলে কেউই যান না। হয়ত তারা এটাকে লজ্জাজনক মনে করেন। একমাত্র ব্যতিক্রম সোনম কাপুর। তিনি সত্যি সত্যি গোল্ডেন কেলা এওয়ার্ড রিসিভ করতে গিয়েছিলেন একবার!
যাইহোক, বুঝতেই পারছেন সোনার কলা খাওয়ানোর অভিজ্ঞতা প্রায় সবাইকে দিয়েছে এই গোন্ডেন কেলা এওয়ার্ডটি। বছর ধরে ধরে নাম নিতে গেলে সবার নামই এসে পড়বে হয়ত। কিন্তু, দারুণ ব্যাপার হলো, বলিউডের এইসব অভিনেতা অভিনেত্রী, ডিরেক্টররা কিন্তু দুর্দান্ত কামব্যাক করেন, শক্তিশালী সিনেমা নিয়ে হাজির হন, চোখ ধাঁধানো পারফর্ম উপহার দেন। একারণেই এরাই কিন্তু আবার কোনো না কোনো সময়ে এসে জিতে নেন দেশসেরা পুরস্কারটিও। এই ডেডিকেশন, প্রতিযোগিতা আছে বলে এই ইন্ডাস্ট্রি থেকে বেশ কিছু ভাল সিনেমা বের হয়, সিনেমার জগতটি হয় আরো বিস্তৃত!
*
প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন