জন স্নো 'গেম অফ থ্রোনস' টিভি সিরিজের জনপ্রিয় চরিত্র। চরিত্রটি তার ব্যক্তিস্বত্তাকেও যেন ছাপিয়ে গেছে, কারণ, এখনো তার আসল নামটাই পর্যন্ত জানে না অনেকে। বেশিরভাগ দর্শক যারা তাকে গেম অফ থ্রোনস দিয়ে জানে, তারা তাকে চেনে জন স্নো হিসেবেই।
জন স্নো 'গেম অফ থ্রোনস' টিভি সিরিজের জনপ্রিয় চরিত্র। চরিত্রটি তার ব্যক্তিস্বত্তাকেও যেন ছাপিয়ে গেছে, কারণ, এখনো তার আসল নামটাই পর্যন্ত জানে না অনেকে। বেশিরভাগ দর্শক যারা তাকে গেম অফ থ্রোনস দিয়ে জানে, তারা তাকে চেনে জন স্নো হিসেবেই। এই তরুণের আসল নাম অবশ্য জন স্নোয়ের ধারে কাছেও কিছু নয়। এবং তিনি জারজ সন্তানও নন অবশ্যই।
তার আসল নাম ক্রিস্টোফার ক্যাটসবি কিট হ্যারিংটন। কিট হ্যারিংটন জন্মেছিলেন লন্ডনে। ১৯৮৬ সালে। বয়স যখন ১৪, 'ওয়েটিং ফর গডট' প্রোডাকশন দেখে তার মনে অভিনেতা হবার ইচ্ছা জাগে। স্কুলে থাকতে একাধিকবার অভিনয়ও করেছেন। পড়ালেখা করেছেন ড্রামা থিয়েটার নিয়ে। ড্রামা স্কুলে ভর্তি হওয়ার অনুপ্রেরণা পান, হ্যামলেট চরিত্রে বেন হুইসাওয়ের অভিনয় দেখে।
অভিনেতা হওয়ার আগে তিনি অবশ্য সিরিয়াসলি চেয়েছিলেন সাংবাদিক হতে। হাতে ক্যামেরা থাকবে এবং তিনি বিশ্বের বিভিন্ন যুদ্ধের খবর কাভার করবেন এমন ইচ্ছে ছিল তার। কে জানত তিনিই একদিন 'যুদ্ধে' জড়াবেন আর মৃতদের বিপক্ষে সবচেয়ে বড় যুদ্ধে জীবিতদের এক করবেন! গেম অফ থ্রোনসে তো যুদ্ধের দক্ষতা, নেতৃত্ব দেখিয়েই জনপ্রিয় হয়েছেন কিট হ্যারিংটন ওরফে জন স্নো!
ড্রামা স্কুলে থাকার সময় ন্যাশনাল থিয়েটারে তিনি একটি নাটকে অভিনয় করেন। নাটকটি 'ওয়ার হর্স' থেকে অনুপ্রাণিত। এই নাটকটি দুটি এওয়ার্ড জিতে এবং কিট হ্যারিংটন একটু জনপ্রিয়তা লাভ করেন। তারপরই তিনি প্রথমবারের মতো টেলিভিশনে অভিনয়ের জন্য অডিশন দেন। প্রথম অডিশনটাই ছিল টিভি সিরিজ গেম অফ থ্রোনসে অভিনয়ের জন্য দেয়া অডিশন!
গেম অফ থ্রোনসের জন স্নো চরিত্রটি অবশ্য নিরঙ্কুশভাবে কিট হ্যারিংটনই যে পেতেন, এমন নয়। এই চরিত্রের জন্য একাধিক অভিনেতাকে ভাবা হচ্ছিলো। সিরিজটিতে রামজে বোল্টন চরিত্রে যে অভিনয় করেছিল, সেই ইওয়ান রিহনকে জন স্নো হিসেবে ভেবেছিলেন প্রথমে সিরিজটির কর্তাব্যক্তিরা। শেষ পর্যন্ত অবশ্য অনেক দ্বিধা দ্বন্দ্বের সমাধান আসে। জন স্নো'র জন্য কিট হ্যারিংটনকেই বেছে নেওয়া হয়।
রামজে বোল্টনের মতো তুখোড় এক ভিলেন চরিত্রে ইওয়ান যা পারফর্ম করেছিলেন তাতে তাকে জন স্নো ক্যারেক্টারের জন্য ভাবাই যায় না একেবারে! সে রামজে বোল্টনের চরিত্রেই মানিয়েছে, যেমনটা কিট হ্যারিংটন মানিয়ে গেছেন জন স্নো ক্যারেক্টারে! জন স্নো ক্যারেক্টারের সাথে সিরিজে প্রথমবারের মতো যে চরিত্রের ভাব ভালবাসা হয় তার নাম ইগরিট। সিরিজটি যারা দেখেছেন, তারা নিশ্চয়ই ইগরিটের বিখ্যাত ডায়ালগটা স্মরণ করতে পারেন 'You know nothing Jon Snow'! সেই ইগরিটের সাথে কিন্তু বাস্তবেও জন স্নোর সম্পর্ক আছে। তারা দুইজন ডেটিং করেছেন, ২০১২ সাল থেকেই। ২০১৬ সালে এসে কিট হ্যারিংটন তাদের মধ্যকার প্রেমের সম্পর্কের কথা প্রকাশ্যে স্বীকার করেন।
জন স্নো'র প্রতি অনেক বাঙ্গালি মেয়ের মনে ভালবাসা জমেছে কেবল তার কোঁকড়ানো চুল এবং বিয়ার্ড দেখেই। এই স্টাইলটা তার জন্য যেন ট্রেডমার্ক। অথচ, গেম অফ থ্রোনসের আগে তার চুল কখনোই লম্বা ছিল না, ছিল না গালে কোনো দাঁড়ি। শো কতৃপক্ষ তাকে বলে- চুল বড় করতে হবে, মুখে দাঁড়ি গজাতে হবে। এমনকি এটা এখন চুক্তিরও একটা অংশ যে, কিট হ্যারিংটন এই সিরিজের জন্য একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত চুল, দাঁড়ি বড় রাখবে!
এত জনপ্রিয় হবার পরও তাকে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখা যায় না। টুইটারে নেই তার ব্যক্তিগত কোনো একাউন্ট। তার নামে যেসব একাউন্ট আছে সবই ফ্যান পেজ। তিনি চান না, তার সম্পর্কে খুব বেশি কিছু লোকে জানুক। মানুষ তার ফিকশনাল ক্যারেক্টার নিয়ে ভাবুক, ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে নয় এটাই তার চাওয়া। তিনি নিজেও তার অভিনয়ে বেশি মনযোগ দিতে চান, সোশ্যাল মিডিয়ায় সময় নষ্ট না করে। একারণেই, তার সোশ্যাল মিডিয়া প্রেজেন্স কম। গেম অফ থ্রোনসে অনেক নগ্ন দৃশ্য আছে। জন স্নোর মতো শক্ত চরিত্রের লোককেও নগ্ন হতে হয়েছে। গল্পের প্রয়োজনে, এমন কিছু করতে হবে এটা অবশ্য আগে থেকেই জানতেন কিট। সিরিজ শুরু হবার আগেই চুক্তির একটা ধারায় এই সম্পর্কে বলা ছিল। তিনি জেনেশুনেই সেটায় সম্মতি দিয়েছেন, এটাতে লজ্জার কিছু নেই বলেই তার মনে হয়।
গেম অফ থ্রোনসের সাত নাম্বার সিজনের পর জন স্নো সম্পর্কে অনেকে গুরুত্বপূর্ণ একটি সিক্রেট জেনে গেছেন, তার রক্তের গোড়া কোথায় সেটা এখন কারো অজানা নয়, যারা সিরিজটি দেখেছেন তাদের জন্য বেশ ভাল টুইস্ট ছিল সেটি। বাস্তবে কিট হ্যারিংটনের দেহে কিন্তু অভিজাত বংশের রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে। তিনি অবশ্য সেই আভিজাত্য নিয়ে খুব বেশি ভাবতেই চান না। তবে, তাদের বংশের ধারায় বইছে ইংল্যান্ডের ব্রিটিশ রাজপরিবারের রাজা দ্বিতীয় চার্লসের রক্ত। কিট হ্যারিংটনের আটপুরুষ পূর্বে রাজা দ্বিতীয় চার্লস জীবিত ছিলেন, কিট সেই বংশেরই সন্তান!
যাই হোক, বাস্তবে যেমন তেমন গেম অফ থ্রোনসে জন স্নো মাতিয়েছেন, শ্বাসরুদ্ধকর দৃশ্যে অভিনয় করেছেন। দর্শকরা পাঁচ নাম্বার সিরিজের পর তার পরিণতি নিয়ে অনেক বেশি চিন্তিত ছিল। আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও এতটাই মজে গিয়েছিলেন সিরিজটির গল্পে যে, সিজন ফাইভ শেষ হওয়ার পরে সিজন সিক্সে প্রথম এপিসোড টেলিভিশনে প্রচারিত হওয়ার আগে তিনি দেখতে চেয়েছিলেন। সিরিজটির কর্তাদেরকে তিনি অনুরোধ করেছিলেন, জন স্নো'র ভাগ্যে কি ঘটেছে এটা তিনি দেখতে চান। এক্স প্রেসিডেন্টের অনুরোধ রাখা হয়েছিল।