শেখ হাসিনা, আপনি কই? মমতা ব্যানার্জিকে দেখুন!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
উদাহরণ খোঁজার জন্য কানাডার প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত যাওয়া লাগে না। ঘরের পাশের মমতাই উদাহরণ হতে পারে।
রকিব শাওন: গত কয়েক বছর ধরে একজন নেত্রীকে খুব ফলো করি, যিনি তৃণমূল থেকে উঠে এসেছেন। পরিবারের কারো উত্তরাধিকারী হিসেবে রাজনীতিতে এসে একটা পদ বা ক্ষমতা কুক্ষিগত করেননি। উনার দলের নামও তৃণমূল, মমতা ব্যানার্জির কথা বলছি। শুধুমাত্র তিস্তা চুক্তির দিকে দেখলেও বুঝবেন কেন্দ্রীয় সরকারের বিপক্ষে রাজ্যের মানুষের পক্ষ নিয়ে প্রবল প্রতিরোধ গড়তে পারছেন। আগের হিসেব নিকাশ বাদ দেন, গত কয়েকদিনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে তিনি কী কী করেছেন, চলুন দেখি-
*রাজ্যের ৭ কোটি ৮৫ লক্ষ মানুষ আগামী ৬ মাস বিনামূল্যে চাল পাবে। প্রত্যেকে ৫ কেজি করে। অর্থাৎ ৫ জনের পরিবারে মাসে ২৫ কেজি চাল।
*বেসরকারী চাকুরীজীবি কর্মীদের কাজের সময় কতটুকু কমিয়ে আনা দরকার সেই নির্দেশনা, কর্মীদের হাজিরা ৫০ শতাংশে নামিয়ে আনার পরামর্শ দিয়েছেন।
*স্বাস্থ্যকর্মীদের যেহেতু আপাতত ছুটি বাতিল হয়ে গেছে গেছে, তাদের জন্য বিশেষ প্রণোদনার ব্যবস্থা করছেন। তাদের জন্য আলাদা করে পূজোর পর বিশেষ ছুটির ব্যবস্থা করছেন।
*করোনার জন্য ইমার্জেন্সি রিলিফ ফান্ড গঠন করছেন।
*নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজার খোলা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
*বিভিন্ন হাসপাতালে করোনার জন্য আলাদা বেড সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।
*করোনায় সেবা দিচ্ছেন এরকম হাসপাতালগুলোকে হোয়াইটসঅ্যাপ গ্রুপ করার নির্দেশ দিয়েছেন।
*হোম কোয়ারেন্টাইন নিয়ে জনগণের উদ্দেশ্যে বারবার বলছেন, "এটা জেল নয় কিন্তু। নিজের হোমের মতো থাকাটাই হলো কোয়ারেন্টাইন। সুস্থ রাখার জন্যই এই ব্যবস্থা"।
*বিদেশ থেকে যারা আসছেন তারা 'স্বেচ্ছায় গৃহবন্দি না হলে বলপ্রয়োগ করা হবে' বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন।
*সবচেয়ে ইম্পর্টেন্ট, সরকারী তো বটেই বেসরকারী হাসপালগুলোকেও 'নো রিফিউজাল' নীতি নেওয়ার কথা বলেছেন। আক্রান্ত কোনো ব্যক্তিকে ফিরিয়ে দেওয়া যাবে না। আর আমাদের এখানে সরকারি হাসপাতাল থেকেও প্রত্যাখ্যাত হয়ে মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। আমাদের ডাক্তারদের কোনো দোষ নেই, তাদেরকে নিজেদের নিরাপত্তা দিতে না পারলে তারা করবেইটা বা কী!
*বাচ্চাদের স্কুল যেহেতু বন্ধ, তারা বাসায় থাকবে। আর বাসায় পুষ্টির অভাব হতে পারে। তাই বাচ্চাদের মিড ডে মিল বাসায় পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করছেন।
উদাহরণ খোঁজার জন্য কানাডার প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত যাওয়া লাগে না। ঘরের পাশের মমতাই উদাহরণ হতে পারে। মমতা প্রতিদিন সামনে এসে পুরো পরিস্থিতির সামনোতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। পশ্চিমবঙ্গ কোনো স্বর্গ না, কিন্তু তারা তাদের সাধ্যের মধ্যে সর্বোচ্চ চেষ্টাটাই করছে। নেপাল, চীন, ভূটান, বাংলাদেশ- এতগুলো আন্তর্জাতিক বর্ডার থাকার পরও তারা এখন পর্যন্ত করোনা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছে। আজকে পর্যন্ত আক্রান্ত ৪ জন।
এখন কথা হলো, শেখ হাসিনা আপনি কই? আপনার ভোট দেওয়া শেষ হয়েছে? মুজিববর্ষের উৎসব শেষ হয়েছে? ধরলাম, করোনার বিপর্যয় আগামী ৪ মাসে আমরা কাটিয়ে উঠলাম। এরপর কী সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে যাবে? অর্থনীতিতে বড় ধকল আসছে। সেটা সামাল দেওয়ার বিষয়ে কী ভাবছেন, সেটা তো জাতিকে জানানো উচিত।
লকডাউন পরিস্থিতি শেষ হওয়ার পর (এর আগেও) প্রচুর মানুষ চাকরী হারাবে। ছোটখাটো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে। বড় ধরণের অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে দিয়ে যাবে পুরো দেশ। কোনো বিষয়ে সরকারের কোনো বিকার নাই। আজকে দেখলাম মিটফোর্ড হাসপাতাল ঘোষণা দিছে সেখানে কর্মরতদের নিজ উদ্যোগে মাস্ক কিনতে হবে, অর্থ সংকটের কারণে কর্তৃপক্ষ মাস্ক সরবরাহ করতে পারবেনা! একজন স্বাস্থ্যকর্মীকে ৫/৬ টাকা দামের একটা মাস্ক আপনারা দিতে পারছেন না! ডাক্তারদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম ও সেফটি কিট সরবরাহ করতে পারছেন না! অথচ ৫ লাখ টাকার বালিশ আর ৬০ লাখ টাকার নারিকেল গাছ লাগিয়েছেন বছরের পর বছর! এসব অব্যবস্থাপনা লুটপাটের দায় ওবায়দুল কাদেররের না, হাসান মাহমুদের না, আবুল মাল বা লোটাস কামালেরও না। প্রত্যেকটা দায় শেখ হাসিনার। তাকেই দায় নিতে হবে।
শেখ হাসিনা আপনি কই?