স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কৈফিয়তনামাটিও চুড়ান্ত এক তামাশা!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
তারা নাকি রিজেন্টের মালিক সাহেদের বিষয়ে অবহিত ছিল না। আর এখন মিডিয়াতে নিষ্ঠাবান কর্মকর্তারা কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন না!
আবদুন নূর তুষার
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জনসংযোগ এতই নিকৃষ্ট যে তাদের কৈফিয়তনামাটিও চুড়ান্ত এক তামাসা।
১. তারা বলেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর রিজেন্টের মালিক সাহেদের বিষয়ে অবহিত ছিল না।
অবহিত থাকার কোন দরকারও নাই। সে একটি নিবন্ধিত হাসপাতালের মালিক। চুক্তি তার হাসপাতালের সাথে হয়েছে। ব্যক্তি সাহেদের সাথে না। অতএব তার হাসপাতাল সম্পর্কে অবহিত থাকা তাদের উচিত ছিল।
দুষ্টু লোকেরা বলে রিজেন্টের নিবন্ধন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের। তাদের হাসপাতালের কোনদিনই নিবন্ধন ছিল না। কথা সত্য কিনা কে জানে?
২. লিখেছে মার্চের ২১ তারিখে নাকি অনেক কোভিড রোগী ছিল। অথচ মার্চের ২১ তারিখে মোট সনাক্ত রোগী ছিল ২৪ জন। ২৪ জনের চাপ! কি ভয়াবহ!
৩. লিখেছে রোগীদের পছন্দ নাকি বেসরকারী হাসপাতাল। তাই তারা রিজেন্টকে বেছে নিয়েছে। রোগীর পছন্দ বিবেচনায় নিয়ে একটি নিবন্ধনবিহীন হাসপাতাল এর সাথে চুক্তি করতে হবে? কবে থেকে সরকারী দপ্তর রোগীদের পছন্দ অনুযায়ী চলে?
রোগীর পছন্দই যদি বিরাট বিবেচ্য তবে রোগীদের এত দাবী স্বত্ত্বেও র্যাপিড টেস্ট অ্যালাও হলো না কেন? কেন বেসরকারী আরটিপিসিআর চালু করতেও দেরী করা হলো?
৪. তারপর লিখেছে মন্ত্রনালয়ের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তারা এটা করেছে।
তারা মন্ত্রনালয়কে কি জানিয়েছিল যে রিজেন্টের লাইসেন্সের নবায়ন নাই? তার মানে তারা কি বলতে চায় সাহেদের সাথে তাদের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের চেনাজানা ছিল? তারা নিজেরাই তাদের উর্দ্ধতনদের বিষয়ে অংগুলীনির্দেশ করছে?
৫. তারা বলেছে তারা রিজেন্টে চিকিৎসার উপযুক্ত পরিবেশ দেখেছে।
তাহলে সেখানে সরকারী ডাক্তাররা নিয়োগ পেয়ে অভিযোগ করলেন কেন? টেলিভিশনে আমরা যে পরিবেশ দেখেছি ও হাসপাতালের চারপাশে যে আবর্জনা সেটা কি চিকিৎসার পরিবেশ?
৬. এত ভাল হাসপাতাল ৬ বছর ধরে নবায়ন করে না। তারা সেটা জানতেন বলে চিঠিতে স্বীকার করেছেন।
তাদের নবায়ন করানো কি খুব কঠিন ছিল? কাগজ পত্রে অনিয়ম আছে এমন প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি করার ক্ষেত্রে সরকারী বিধি কি বলে? কোন কোন তারিখে তাদের নবায়ন করানোর জন্য তাগাদা দিয়ে ডিজি অফিস চিঠি দিয়েছিল সেটা বলুক।
৭. নবায়ন করানো হয় নাই কিন্তু ঠিকই তারা রিজেন্টকে অর্থ পরিশোধ করার জন্য তাগাদা দিয়ে পত্র দিয়েছেন। নবায়নের তাগিদ দেন ফোনে আর রিজেন্টকে টাকা দেয়ার তাগিদ দেন চিঠি লিখে।
৮. তারা একমাস আগে ডা বায়েজিদ খুরশীদ রিয়াজের পত্রটির কথা বেমালুম চেপে গিয়ে বলেছেন অন্যান্য সূত্রে তারা রিজেন্টের অনিয়ম জানতে পারেন। সেখানে নিযুক্ত সরকারী ডাক্তারদের তারা প্রত্যাহার করেছিলেন কেন? তখন কি অনিয়ম ছিল? তারা কেন নিয়মিত রিজেন্ট পরিদর্শন করেন নাই? করলে কোন অনিয়ম পান নাই কেন? রিজেন্ট টেস্ট করাতে টাকা নিচ্ছে জানার পরেও তাদের ৫০ টা করে টেস্ট করাতে দিলেন কেন?
৯. তারপর তারা প্রত্যাশা করেছেন যে দোষীদের শাস্তি হবে।
প্রত্যাশা কেন করবেন? প্রতারণার দায়ে বাদী হয়ে মামলা কেন করছেন না? বিচার না চেয়ে কেন বিচার পাবেন আশা করছেন?
১০. জেকেজি নিয়ে তারা আরো হাস্যকর কথা বলেছেন। বলেছেন জেকেজির প্রধান সমন্বয়ক আরিফ ওভাল গ্রুপের মালিক। তারা স্বাস্থ্য বিভাগের ২০১৮ সালের স্বাস্থ্যসেবা সপ্তাহ ও বিএমএর বিভিন্ন ইভেন্টের ইভেন্ট ম্যানেজার ছিল।
এটা দিয়ে কি প্রমাণিত হয়? ইকবাল ক্যাটারিং ও ইভেন্ট ম্যানেজার। তারা যদি এসে বলে তাদের একটা হেলথ কোম্পানী আছে, তাহলে তারা যেহেতু বাংলাদেশের প্রায় সব বড় বড় অনুষ্ঠানে থাকে ও ভালো খাশীর রান কাবাব বানায়, তাদের অভিজ্ঞতাহীণ হেলথ কোম্পানীও কি করোনা স্যাম্পল কালেকশনের কাজ পাবে?
মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সাথে তারা কি ইভেন্ট করেছিল? এটা কি স্যাম্পল কালেকশন ও বুথ বানানোর অভিজ্ঞতা? এখানে আবার মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের ঘাড়ে গু এর বোঝা দেয়ার চেষ্টা। মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন কি জেকেজিকে রিকমেন্ড করেছিল?
তারপর তারা জেকেজি হেল্থ কেয়ারকে জেকেজি গ্রুপ বলে উল্লেখ করেছে। অথচ এখন সাবরিনা নামে জেকেজির চেয়ারম্যান পরিচয়দানকারী ব্যক্তি বলছেন জেকেজি নামে কোন নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান নাই। এটা ওভালের অংগ সংগঠন। জেকেজি নিজেকেও কখনো গ্রুপ বলে নাই। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর লিখেছে তারা জেকেজি গ্রুপ । তারা তাদের ফেসবুক পেজ ও ওয়েবসাইটও নাই করে দিয়েছে।
১১. জোবেদা খাতুন হেলথ কেয়ারের কি কি কাগজপত্র দেখে তারা চুক্তি করেছিলেন?
তারা বলেছেন জেকেজি ফ্রি কাজ করবে বলেছে। অথচ জেকেজিকে তারা বিনামূল্যে কিট ও পিপিই দিয়েছেন। বিছানা বালিশ দিয়েছেন। এসব কিনতে সরকারের পয়সা লাগে নাই? ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট এর অভিজ্ঞতাকে পূঁজি করে ভাইরাল স্যাম্পল কালেকশনের মতো কাজ দিয়ে দিয়েছেন যেখানে একজন সরকারী প্রথম শ্রেনীর কর্মকর্তা চেয়ারম্যান?
এখন যে জেকেজি বলছে জেকেজি বলে কিছু নাই এটা ওভাল গ্রুপের অংগ? তাহলে তারা কার সাথে চুক্তি করলেন ? জেকেজি নাকি ওভাল?
সরকারী কর্মকর্তা দিনে দুপুরে জেকেজিতে ডিজি সাহেবকে পরিদর্শন করাচ্ছেন সেটা তাদের চোখের সামনে ঘটলো। তারা জানতে চাইলেন না দিনের বেলা অফিস সময়ে সরকারী কর্মকর্তা তিতুমীর কলেজে কি করছিলেন? তারা না বায়োমেট্রিক দিয়ে লোকজনকে প্রমোশন দেন আজকাল?
১২. সরকারী চুক্তি কবে থেকে ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের মতো কাগজপত্র পরীক্ষা না করেই হচ্ছে? মনপসন্দ , রোগীপসন্দ বিবেচনায় নিয়ে?
১৩. তারা লিখেছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান।
এটা সঠিক নয়। অধিদপ্তর স্বাস্থ্যসেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলির নিয়ন্ত্রক একটি প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠান। তারা কাউকে সেবা দেন না। তারা প্রশাসনিক নিয়ম শৃংখলা বিধি ক্রয় বিক্রয় দরপত্র, নানাবিধ অনুমতি, তদারকী এসব নিয়ে কাজ করেন। তারা সরকার কর্তৃক নিযুক্ত নিয়ন্ত্রক বা রেগুলেটরী প্রতিষ্ঠান।
১৪. কল্পিত ও মিথ্যা তথ্য দিচ্ছে কিছু লোক, এ বিষয়ে তারা অভিযোগ করেছেন।
তারা জেকেজি ও রিজেন্টের কল্পিত ও মিথ্যা তথ্য বুঝতে পারেন নাই। অথচ তাদের অনিয়ম নিয়ে কিছু বললে সেটা কল্পিত ও মিথ্যা হয়ে যায়। এটা তারা বুঝতে পারেন।
১৫. পরিস্থিতি নাকি এমন হয়েছে যে মিডিয়াতে নিষ্ঠাবান কর্মকর্তারা কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন না।
মিডিয়াতে কথা বলবে মুখপাত্র। কেন নিষ্ঠাবানরা কথা বলবেন? নিষ্ঠাবানদের নিয়ে মিডিয়া কোন প্রশ্নই করে না। যারা কথা বলছেন তারা নানা রকম অভিযোগের উত্তর দিচ্ছেন। এত অভিযোগ উঠছে কেন?
যে দপ্তর নিজেই নিজের নিয়ম মানে না। কাগজপত্র না দেখেই কাজ করে। আর কিছুদিন পরপর প্রকাশ্যে কৈফিয়ত দেয় তাদের জন্য সহানুভুতি ও সমবেদনা রইল।
ভাড়াটিয়া স্যাম্পল কালেকটর না নিয়ে বরং ভালো ম্যানেজমেন্ট পরামর্শক নেন। তাহলে ইভেন্ট ম্যানেজার আর হেলথ সিস্টেম ম্যানেজার এর তফাত বুঝতে পারবেন। ভুল কাজ করে, ভুল কথা বলে সরকারের শত শত হাজার হাজার ভালো কাজ ও পদক্ষেপকে বিব্রত করবেন না।
এই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাজকর্মে আমরা নিজেরাই লজ্জিত।
বিঃ দ্রঃ- লেখাটি ডা. আবদুন নূর তুষারের ফেসবুক প্রোফাইল থেকে সংগৃহীত।
*
প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন