সব কিছু খুলে দিচ্ছেন, দেন৷ যেহেতু স্বাধীন দেশ, যার যার বুঝ তার তরমুজ! কিন্তু দয়া করে এটা বলবেন না প্লিজ যে আমরা herd immunity এচিভ করার দিকে যাচ্ছি! কারণ এটা সম্ভব না!
অনার্স ফাইনাল ইয়ারে তিন ক্রেডিটের একটা সাবজেক্ট পড়েছিলাম এপিডিমিওলজি। চার বছরে একটা বইও কিনি নাই আমি। সুতরাং আমার বিদ্যা আর জ্ঞান-গম্যির দৌড় কতদূর, তা নিশ্চয় বুঝতেই পারছেন। সেই আমি ছয় মাস Epidemiology কোর্সটা এক কানে শুনে আরেক কানে বের করে দেয়ার পরেও জানি Herd immunityর বেসিকটা কী। তাই কেউ যখন ইচ্ছা করে এই ওয়ার্ডটার অপব্যবহার করে পুরো জাতিকে ফাঁকি দিতে চায়, তখন বুড়া আঙ্গুলে সায় না দিলেও কয়েক লাইন না লিখে পারিনা!
Herd মানে একটা নির্দিষ্ট গ্রুপ বা জাত। আগের দিনে যখন মহামারীতে মানুষ বেশি মরতো তখন পৃথিবীর মানুষ জাতি বা গোত্রভুক্ত হয়ে সমজাতি ক্লাষ্টারের মতো কাছাকাছি ও ভিন্ন ভিন্ন জাত বিচ্ছিন্ন হয়ে দূরে দূরে থাকতো। তাই তখনকার সাপেক্ষেই যুথবদ্ধ আরোগ্য টার্মটা এসেছে। আমরা ছোটবেলা থেকে শুনে এসেছি যে জলবসন্ত বা চিকেন পক্স জীবনে একবার হলে আর হয়না। ঠিক তেমনি ভাবে হাম, গলাফুলা মাম্পস বা এ জাতীয় আরো অনেক রোগের ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য। এর কারণ হলো- একবার এই রোগগুলো হলে শরীরে এদের ভাইরাসের বিরুদ্ধে যে এন্টিবডি তৈরী হয়, তা চিরজীবন শরীরে থেকে যায় তাই পরবর্তীতে কোনভাবেই এই রোগের ভাইরাস শরীরকে আর কাবু করতে পারে না।
এখন ধরে নিলাম বান্দরবানের একটা পাড়ার জনসংখ্যা ১০০ জন। এই ১০০ জন কোনোভাবেই বাইরের পৃথিবীর প্রতি নির্ভরশীল না। এখন এদের মধ্যে একজন অজানা উৎস থেকে একটা ভাইরাসে আক্রান্ত হলো, এখন তার মাধ্যমে তার পরিবার আক্তান্ত হলো। এখন গ্রামের কারবারী বা সর্দার যা করতে পারেন তা হলো এই পরিবারটিকে লকডাউন করে ঘরে বন্দী রেখে তাদের আরোগ্য পর্যন্ত অপেক্ষা। কিন্তু যখন ২০জন আক্রান্ত হবে এবং পাড়ার সর্দার নিশ্চিত হবেনা যে এই বিশজন কে তখন সর্দার ঘোষণা করতে পারে সবাই আগামী এক মাস ঘরে থাকবা তাহলে এই ২০ জনের এসপার ওসপার কিছু একটা হবে বাট বাকি ৮০জন নিরাপদ থাকবে। একমাস পর সবাই স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে৷
কিন্তু একমাস কেউ সর্দারের কথা না শুনে দলবেঁধে শিকারে গেলো, শিকারের পর সবাই এর ওর বাসায় দাওয়াত খেলো, একমাস পর দেখা গেলো রোগী তো কমেই নাই বরং এখন রোগী ৩০জন৷ এবার রাগ করে সর্দার সবাইকে বললো স্বাভাবিক জীবনে ফেরত আসো। সবাই স্বাভাবিক জীবনে গিয়ে ৭০-৮০ জনই আক্রান্ত কিন্তু বাকি ২০-৩০ মানুষের কিছু হলোনা। কেন হলোনা? কারণ ম্যাট্রিক্স আর সম্ভাব্যতার মতো অংকের নিয়মেই সবার সাথে সবার এনকাউন্টার হবে না। যে একবার সেরে গিয়ে লাইফটাইম ইমিউনিটি পেয়ে গেছে, বারবার আক্রান্তের সংস্পর্শে আসলেও সে আর আক্রান্ত হবেনা। আর এভাবেই ভাইরাসটি ৭০জনের ভেতর ঘুরপাক খেতে খেতে ৭০ তম ব্যক্তির ইমিউনিটি লাভের মাধ্যমে সে বিশেষ পাড়ায় কার্যকারিতা হারাবে৷ এই ৭০% আক্রান্তের বিনিময়ে সবার ইমিউনিটি পাওয়ার এই প্রক্রিয়ার নামই Herd immunity. আমাদের সর্দার বা সরকার এখন এই পথেই হাঁটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং এখানেই আছে শুভঙ্করের ফাঁকি। কারণ-
প্রথমত, করোনা ওয়ানস ইন আ লাইফটাইম ডিজিজ না। একবার শরীরে এন্টিবডি আসলেও লাভ নাই। চীন, ইউরোপে তৃতীয় এমনকি চতুর্থবার করোনায় আক্রান্ত হবার অনেক অনেক নজির দেখা যাচ্ছে। সুতরাং করোনায় herd immunity থিউরি কাজ করবে না।
দ্বিতীয়ত, করোনার ফ্যাটালিটি রেট ৩-১০%। আমি সহজ হিসাবের জন্য সর্বনিম্নটাই ধরে নিলাম ৩%। দেশের ২০ কোটি মানুষের মধ্যে ১৪ কোটি যদি আক্রান্ত হয়, অন্তত দেড় কোটি মানুষের হাসপাতাল সাপোর্ট লাগবে। তা আমরা দিতে পারবো কিনা তা আমরা জানি।। কিন্তু বলবো না! কিন্তু তাতে অন্তত ৫০ লাখ প্লাস মানুষ মারা যেতে পারে! এত এত জীবন যাবে, তারপরেও প্রথম কারণে herd immunity পাবেন না।
তৃতীয়ত, ফ্যাটালিটি রেট বেশি থাকলেও কার্যকর টিকা আর ভ্যাকসিন বাজারে থাকলে ৭০-৮০% মানুষকে ভ্যাক্সিনেশনের আওতায় এনে herd immunity এচিভ করা যায়। কিন্তু এটাও হবেনা কারণ করোনার কার্যকর কোনো ভ্যাকসিন নেই।
সুতরাং, যেহেতু দুই মাসের "সাধারণ ছুটি" ব্যর্থ, সব কিছু খুলে দিচ্ছেন দেন৷ যেহেতু স্বাধীন দেশ, যার যার বুঝ তার তরমুজ! আর এটাও ঠিক যে আমরা সবাই কোনো না কোনো দিকে যাচ্ছি, কিন্তু করোনার ক্ষেত্রে এটলিষ্ট দয়া করে এটা বলবেন না প্লিজ যে আমরা herd immunity এচিভ করার দিকে যাচ্ছি! কারণ এটা সম্ভব না!
আপনার অসুস্থ, ভালনারেবল, বৃদ্ধ মা-বাবা বা প্রিয়জনের প্রতি আপনার দরদ থাকলেও বাকি দুনিয়ার নাই- এটা মাথায় রেখেই পরবর্তী মুভগুলো নেন৷ কারণ হাশরের ময়দানে খালি ইয়া নাফসি! ইয়া নাফসি!