গালে ব্রণের দাগ, মেকআপের বাগাড়ম্বরও নেই, জোর করে আবেদনময়ী সাজার কোনো চেষ্টা নেই। প্রেমাম দেখে আমরা হতবাক হয়েছিলাম, এমনও নায়িকা হয়!

গালে ব্রণের দাগ, খুব একটা মেকআপও নেই মুখে, জোর করে আবেদনময়ী সাজার কোনো চেষ্টা নেই তার মধ্যে। পোষাক পরিচ্ছদও গতানুগতিক। চেহারাও যে খুব নায়িকাসুলভ, তাও নয়। কিছুটা লাজুক এবং মুখে সবসময় স্বলজ্জ হাসি তার। এইটুকুই। তবুও, এই মানুষটিকে নিয়ে অসম্ভব রকম ক্রেজ শুরু হয়েছিল ২০১৫ সালে। মালায়ালাম সিনেমার সর্বকালের অন্যতম সুন্দর একটি চলচ্চিত্র 'প্রেমাম'। এই সিনেমায় অভিষেক  হয়েছিল তার।

সিনেমাটিতে জীবনের তিনটি অধ্যায়ের তিনরকমের প্রেমের গল্প দেখানো হয়। তার একটিতে ছিলেন তিনি। ক্যারেক্টারটার নাম 'মালার'। মালার চরিত্রে তিনি যেই অভিনয়টা দিয়েছেন, এর চেয়ে সেরা বোধহয় আর কেউ দিতে পারত না। এই চরিত্রটি শুধু মালায়ালাম না, গোটা ভারত এবং ভারতের বাইরেও বেশ প্রশংসিত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি তিনি প্রশংসিত হয়েছেন স্টেরিওটাইপ ভেঙ্গে দিয়ে নায়িকার সংজ্ঞা বদলে দেয়ার জন্যে। সিনেমা ক্রিটিকরা সেই চরিত্রের অকুণ্ঠ প্রশংসা করেছে।

তারপর আর তাকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তিনি যে সিনেমাই করেন, সেটাই হিট। সেইসব সিনেমার গল্প, সিনেম্যাটোগ্রাফি, পরিচালনার বাইরেও তিনি হয়ে উঠেন বাড়তি আকর্ষণ। যারা মালায়ালাম সিনেমা দেখেছেন, তারা নিশ্চয়ই এতক্ষণে বুঝে গেছেন তিনি কে। তিনি দ্য ওয়ান এন্ড অনলি পিম্পল কুইন সাই পল্লবি! 

প্রেমাম সিনেমা দিয়ে অভিনয় জগতে পা রাখেন তিনি

মালার চরিত্রটাই সাই পল্লবিকে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে। অদ্ভুত সুন্দর একটি ক্যারেক্টার, তার চেয়ে সুন্দর সাই পল্লবির অভিনয়। একদমই সাদামাটা আটপৌরে ঢঙয়ে তিনি সাবলীল অভিনয়টাই করেছিলেন। মালার এমন একটি চরিত্র, যার প্রেমে না পড়ে উপায় নেই, যেমনটা পড়েছিলেন জর্জ। জর্জ চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন আরেক মালায়ালাম সুপারস্টার নিভিন পৌলি। প্রেমাম সিনেমা নিভিনের ক্যারিয়ারেরও গেম চেঞ্জার একটি সিনেমা ছিল৷

যাই হোক, সেই সিনেমায় সাই পল্লবি একঘন্টার কিছু বেশি সময় স্ক্রিন শেয়ার করেছেন এবং এই পুরোটা সময় তিনি বাধ্য করেছেন তারা প্রতি মনযোগ ধরে রাখতে। একজন অভিনেত্রীর এই প্রাকৃতিক গুণই তাকে অন্য সবার চেয়ে আলাদা করে। সাই পল্লবিও যেমন নিজের ভক্তগোষ্ঠী তৈরি করেছেন নিজের স্বতন্ত্র গুণাবলি দিয়ে। অথচ, ভাবাই যায় না এরকম একজন সাধারণ মানুষকে সিনেমার নায়িকা হিসেবে উপস্থাপন করা যায়। অন্তত নায়িকা বলতে আমরা যা বুঝতাম, সেই ধ্যানধারণাই পালটে গেছে সাই পল্লবিকে দেখে।

অদ্ভুত হলেও সত্য, সাই পল্লবির অভিনয় দেখবার পর কিংবা তাকে যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, সেটা দেখে আপনার মনে হবে- নায়িকাদের এমনই হওয়া উচিত। একজন মানুষ স্বাভাবিক যেরকম দেখতে, তার সেই স্বাভাবিকতার মধ্য থেকেই তার সেরাটা বের করে আনা যায়। মালায়ালাম সিনেমায় সেটাই করানো হয়েছে সাই পল্লবিকে দিয়ে৷ 

সাই পল্লবি মানেই তাই নায়িকার এক নয়া ডেফিনেশন। নায়িকা মানেই এমন না ভীষণ উগ্ররকমের সুন্দরী হতে হবে, অনেক অপ্রয়োজনীয় মেকআপ দিয়ে চোখ মুখ ভর্তি করতে হবে, অযথাই উদ্ভট পোষাক পড়ে বুঝাতে হবে আমি নায়িকা, প্রয়োজনহীন গ্ল্যামার মানেই তো নায়িকা নয়। নায়িকা এমনও হয়, যেমনটা সাই পল্লবি। 

দর্শক যে এরকম বাস্তব উপস্থাপনা পছন্দ করেন, সেটা বোঝা যায় সাই পল্লবির প্রতি ক্রেজ দেখে। কেন সাই পল্লবিকে দর্শক এতটা পছন্দ করেছে? খুব সম্ভবত গালে ব্রণের দাগ, কার্লি চুল, খুব সাদাসিদে সাজগোজ, ট্রেডিশনাল পোষাকের সাই পল্লবিকে তারা নিজেদের একজনই ভেবেছে, তাই এত সহজেই তাকে আপন করে নিয়েছে দর্শক। তাকে যতটা না নায়িকা বলে ভেবেছে তার চেয়ে ভেবেছে একজন চরিত্রঅভিনেত্রী হিসেবে, যে অভিনেত্রীকে দূরের কোনো মানুষ মনে হয় না। নিজেদেরই একজন বলে মনে হয়। 

তিনি অভিনয়ে না আসলে পুরোদস্তুর বোধহয় ডাক্তারই হতেন। এমনিতেই পেশায় তিনি ডাক্তার। ২০১৬ সালে তিনি ডাক্তারিবিদ্যার পড়ালেখা শেষ করেন। নিজের ভবিষ্যত সম্পর্কে অবশ্য তিনি বলেছিলেন, তিনি অন্য কোনো ব্যাপারে নিশ্চিত না, তিনি শুধু জানেন- তিনি একদিন ডাক্তার হবেন পুরোপুরি। বাকিটা তিনি সৃষ্টিকর্তার হাতেই ছেড়ে দিতে চান।

এছাড়া তার আরো একটি বিশেষ প্রতিভা আছে। অসাধারণ নাচতে পারেন তিনি। প্রেমাম সিনেমায় সেই ঝলক দেখা গিয়েছিল। মুগ্ধ না হয়ে উপায় নেই তার নৃত্যপ্রতিভা দেখে। পাঁচবছর আগের একটা নাচের প্রতিযোগিতায় তার নাচ দেখেই সাই পল্লবিকে মাথায় রাখেন পরিচালক আলফোনসে। অবশেষে প্রেমাম ছবির এই পরিচালক তাকে মালার চরিত্রের জন্য প্রস্তাব দেন। ফেসবুকের মেসেজে। সাই পল্লবি কখনো ভাবেননি তাকে এরকম একটা প্রস্তাব কেউ দিবে। তিনি বিশ্বাসও করেননি, পাত্তা দেননি৷ ভেবেছেন তাকে নিয়ে কেউ প্র‍্যাংক করছে। পরে পরিচালক কিছুদিন পর তার মায়ের নাম্বারেই ফোন করেন। মা অনুমতি দিলেও বাবা প্রথমে চাননি মেয়ে অভিনয় লাইনে আসুক। কিন্তু, তিনি আসলেন, এমনভাবেই আসলেন যেন এলেন এবং জয় করে নিলেন সবকিছু। 

মুখের সবসময়ের হাসিটা সৌন্দর্য্যে যোগ করেছে আলাদা মাত্রা

এই সিনেমায় তাকে নেয়ার কারণও বলেছিলেন পরিচালক। সাই পল্লবি দুশ্চিন্তায় ছিলেন, তিনি কি পারবেন কিনা। পরিচালক তাকে অভয় দিয়েছিলেন, তিনি পল্লবির কাছ থেকে সেই নরমাল আচরণটাই পেতে চান যেটা তিনি সবসময় করে থাকেন। পরিচালকও সাই পল্লবির কাছ থেকে ন্যাচারাল অভিনয়টাই বের করে আনেন। ব্যাক্তিজীবনেও সাই পল্লবি নিজেকে মালার চরিত্রের মতোই মনে করেন। এজন্যেই বোধহয় এই সিনেমায় সেরা অভিনয়টা দেখিয়েছেন তিনি। অবশ্য অভিনয় আর করলেন কই, তিনি তো শুধু সেটাই করেছেন যেমনটা তিনি বাস্তবে। 

প্রেমামের পর সাই পল্লবি অভিনয় করেছেন দুলকার সালমানের বিপরীতে, সিনেমাটির নাম কালি। এই সিনেমায় দুলকার পল্লবির হাজব্যান্ড চরিত্রে অভিনয় করেন যার হুটহাট রেগে যাওয়ার বদঅভ্যাস ছিল। এমনিতে সে ভাল মানুষ, কিন্তু রেগে গেলে যা তা করে বসে। এরকম একজন মানুষের সাথে সংসার করতে গিয়ে কি হতে পারে সেরকম কিছু ঘটনা মিলেই হয়েছে গল্পটি। এই গল্পেও পল্লবি আশ্চর্য রকমের সাবলীল। 

তাকে প্রশ্ন করা হলো এই ব্যাপারে যে, আপনার তো অভিনয়ের ব্যাকগ্রাউন্ড নেই। তাহলে এমন ন্যাচারাল অভিনয়টা কিভাবে রপ্ত করলেন? পল্লবির সোজাসাপটা জবাব- "আমি জানি না। আমি জানি না আসলে কিভাবে অভিনয় করতে হয়। আমি শুধু সেটাই করি ক্যামেরার সামনে যেটা আমি বাস্তবেও ওমন সিচুয়েশনে থাকলে করতাম। এই চরিত্রগুলো - প্রেমামের মালার বা কালির অঞ্জলি- এরা আমার পরিচিত মানে আমি এমন চরিত্র ডেইলি লাইফে দেখি। তাই রিলেট করতে পারি। আমার যদি এমন কারো সাথে বিয়ে হতো যার ওমন বাজেরকম রেগে যাওয়ার অভ্যাস, তাহলে তার সাথে আমি যেমন ব্যবহার করতাম, আমার মনে হয় অনস্ক্রিন আমি সেটাই করার চেষ্টা করেছি। আলাদা কিছু না। আমি অনেকগুলো সিনেমার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছি শুধু সেই চরিত্রগুলোর সাথে আমি নিজেকে কানেক্টেড মনে করিনি এজন্যে। কারণ, আমি যা না, যা অনুভব করি না সেটা কিভাবে জোর করে অভিনয়ে দেখাবো?" 

প্রেমামের পর কালি সিনেমাতেও তিনি মেকআপ ছাড়াই স্ক্রিনের সামনে দাঁড়িয়েছেন। নিজেই বলেছেন, তিনি তার জীবনে কখনো মেকআপ নেননি। এটা ছাড়াই তিনি আরামবোধ করেন। শুধু প্রয়োজনে একটু সানস্ক্রিন আর আইলাইনার, এতটুকুই। পরিচালক বললে তিনি হয়ত মেকআপ নিবেন, তবে এটাকে কখনোই তার অত্যাবশক মনে হয় না এখন। বিশেষ করে প্রেমামের পর তার নিজের মধ্যেই আত্মবিশ্বাস এসেছে যে, মেকআপটা খুব বেশি জরুরি কিছু নয়। 

একসময় তিনি নিজেও গালে ব্রণ উঠাকে ঘৃণা করতেন। তারও যে খানিকটা হীনমন্যতা ছিল না তা নয়। এছাড়া তার আরো একটা সমস্যা আছে। ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালেই তার গালে লালচে আভা দেখা যায়। তিনি যখন স্নায়ুচাপে ভোগেন তখনই এমনটা হয়। এটা নিয়েও বেশ দুশ্চিন্তায় ছিলেন অভিনয়ের সময়। কিন্তু, পরে এই লালচে আভাটাও যেন সৌন্দর্যের আরেকটি চিহ্ন হয়ে উঠেছে, ট্রেডমার্ক হয়ে গেছে তার জন্যে। 

আজকাল যখন তার পিম্পল কিংবা চেহারা নিয়ে কথা হয়, তিনি এটাকে দেখেন একদম সাধারণভাবেই। তার কথা হলো, সৌন্দর্যের তো কোনো গ্রেডিং সিস্টেম নেই, তাই না। আমরা কাউকে সুন্দর বলি, সেটা আমাদের একটা পারসেপশন। একজনের সৌন্দর্যের সাথে আরেকজনের সৌন্দর্যকে তুলনা দেয়া যায় কিভাবে? যখন কেউ বলে, মানুষ তোমাকে সেভাবেই গ্রহণ করবে যেমনটা তারা ভাবে। আমি বলি, হোয়াট দ্যা হেল! তারা গ্রহণ করার কে? আমি আমার মতো করেই সুন্দর।

তাঁর মতে, প্রত্যেকেই নিজের মতো করে সুন্দর

যদিও এখনকার জেনারেশনের মধ্যে এই সমস্যাটা অনেক। তারা নিজেদের লুক নিয়ে অতিমাত্রায় চিন্তিত থাকে। কলেজে যাওয়ার সময়ও ভারী মেকআপ করে যায়। কারণ, এখন স্যোশাল মিডিয়ার যুগ, সবসময় ছবি তুলার জন্য প্রস্তুত থাকতে হয়, এই ছবি আবার ফেসবুক, ইন্সটাগ্রামে আপলোড দিতে হয় যেন মানুষ রিয়েক্ট দেয়। সবার মধ্যে নিজেকে ভাল দেখানোর জন্য কি একটা অস্থিরতা। কিন্তু, এগুলো কি আসলেই আমাদের সুন্দর করে? 

যাইহোক, মালায়ালাম ইন্ডাস্ট্রিতে অভিষেক সিনেমার বিশাল সাফল্যের পর তেলেগু সিনেমায়ও নাম লিখিয়েছেন তিনি। তেলেগু সিনেমা 'ফিদা' দিয়ে অভিষেক হয়েছিল সেখানে। এই সিনেমাটিও সুপারহিট এবং বিপুল পরিমাণে প্রশংসিত হয়েছিল। ফিদা সিনেমায় সাই পল্লবিকে দেখে ফিদা না হওয়ার উপায় নেই, এতোটাই অসাধারণ ছিলেন তিনি। এই সিনেমায় তিনি একটি গ্রামের মেয়ের চরিত্রের অভিনয় করেছেন, চরিত্রটি গ্রামের মেয়ের হলেও তিনি ছিলেন ভীষণ বুদ্ধিমান এবং অকপট। নিখাদ আনন্দদায়ক একটি সিনেমা, তেলেগু সিনেমা যেমন হয়। তবে সাই পল্লবির কারণেই কিনা সিনেমাটিতে আরো বেশি 'ফিল গুড' ভাব এসেছে।ফিদা সিনেমায় ভানুমতি চরিত্রের জন্য তাকে তেলেঙ্গানা ভাষা রপ্ত করতে হয়েছে, কারণ এই চরিত্রের ডায়ালগ ডেলিভারি ছিল তেলেঙ্গানাতে। তার ডায়ালগ ডেলিভারি এতোটাই পারফেক্ট এবং শ্রুতিমধুর ছিল যে, সেটে এক ভদ্রলোক তেলেঙ্গানা ভাষাকে ঘৃণা করতেন, তিনি পর্যন্ত এই ভাষাকে ভালবাসতে শুরু করেন।

সিনেমার চরিত্র নিয়ে সাই পল্লবি নিজে কতটা সিরিয়াস থাকেন, সেটার একটা প্রমাণ পাওয়া যায় এই সিনেমার এক টুকরো গল্পে। পরিচালক শেখর তাকে সাই পল্লবি বলে ডাকতেন বলে, তিনি বিরোধিতা করতেন। পরিচালককে বলতেন, আমাকে এই নামে ডাকবেন না। পরিচালক অবাক হয়ে বললেন, তাহলে কি নামে ডাকব? সাই পল্লবি জবাব দিলেন, ডাকবেন ভানুমতি বলে। কারণ, আপনার নায়িকার চরিত্রকে সবচেয়ে আগে আপনারই বিশ্বাস করতে হবে। সেটে এখন সাই পল্লবি নেই, আছে ভানুমতি। পরিচালক তারপর থেকে তাকে ডাকতেন ভানুমতি বলে! 

সাই পল্লবির তামিল ইন্ডাস্ট্রিতে অভিষেক হয় 'দিয়া' সিনেমাটি দিয়ে। এটি একটি মোটামুটি ভৌতিক গল্পের সিনেমা। তবে এই সিনেমার বিশেষত্ব হচ্ছে, এখানেই সাই পল্লবি মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন! বয়স মাত্র ছাব্বিশ, এই বয়সেই মায়ের চরিত্রে অভিনয় কেন করবেন সুপারহিট একজন নায়িকা? তিনি বললেন, তার কাছে দিন শেষে এটা একটা চরিত্রই। স্ক্রীপ্ট দেখার পর তার যদি মনে হয় এখানে তার কিছু করার আছে, তাহলে সেটা যেমন চরিত্রই হোক তিনি করবেন। তবে স্ক্রীপ্টের সাথে নিজেকে রিলেট করতে না পারলে সেটা যত আবেদনময়ী সিনেমাই হোক, তাতে সাড়া দিতে চান না। 

সিনেমার পর্দার বাইরে এখন সাই পল্লবি পর্দার অন্তরালের নারীদের কাছে অনুপ্রেরণা হয়ে উঠছেন। সাধারণ চেহারা, সাধারণ বেশভূষা দিয়েই বাজিমাত করা সাফল্যের পর এখন অনেক নারীরা ভীষণরকম অনুপ্রাণিত তাকে দেখে। যারা আগে টেলিভিশনে রং ফর্সাকারী ক্রিমের বিজ্ঞাপন দেখে হতাশ হতেন, টিভিতে সুন্দরী নায়িকাদের দেখে হীনমন্যতায় ভুগে ভাবতেন চেহারাটাই বুঝি সব এখন তারা এসে সাই পল্লবিকে ধন্যবাদ জানান। বলেন, আপনার জন্য এখন আমরা আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছি। আমরা যখন দেখলাম আপনি যেমন তার জন্যই লোকে পছন্দ করছে তখন আমরা বুঝতে পারলাম এটাই আসল সৌন্দর্য আসলে। আমরা এখন বিশ্বাস করতে শুরু করেছি আমরা যা তেমন থাকলেও কেউ না কেউ আমাদের পছন্দ করবেই! 

সিনেমার একটা প্রচ্ছন্ন প্রভাব ব্যাক্তিজীবনেও পড়ে। তাই সিনেমা বাস্তবধর্মী হলে ভাল লাগে সাই পল্লবির। তার কথা হলো, সিনেমায় নায়িকাদের যেই চিরচেনা রুপে দেখানো হয়, নায়কের মুখাপেক্ষী হিসেবে দেখানো হয় সেটা আসলে উচিত নয়। এভাবে ভুল মেসেজ যায়। তাই সিনেমায় যখন শক্তিশালী নারী চরিত্র থাকে, সেটা অনেককে ভাবায়। আর নারীদের একটা নিজস্বতা আছে। সেটা প্রকাশ করতে দেয়া উচিত। তিনি তার সিনেমার পরিচালকদের প্রতি কৃতজ্ঞ যারা তাকে ভেবে গল্প লিখছেন, তিনি যেমন সেভাবেই দেখাচ্ছেন। সাই পল্লবির হাত ধরে এখন এটা প্রতিষ্ঠিত যে, মেকআপ ছাড়াও নায়িকা হয় এবং মানুষ সেটা গ্রহণও করে। 

২০১৫ তে প্রেমাম দিয়ে যে যাত্রা শুরু হয়েছিল, এখন সেটা আরো পরিপক্কতা পাচ্ছে। প্রতিবছরই নতুন নতুন সিনেমায় নাম লেখাচ্ছেন তিনি, প্রচুর প্রস্তাবও পাচ্ছেন। তবে যতটা কাজ করেন, তার চেয়ে বেশি প্রত্যাখান করেন সিনেমার প্রস্তাব। কারণ, সাফল্য তাকে আরো দায়িত্ববান করেছে। তিনি স্ক্রীপ্ট ছাড়া কাজ করতে পারেন না। হুট করেই তিনি অন্য মানুষ হয়ে যেতে পারেন না। তার সময় লাগে চরিত্রে প্রবেশ করতে। তাই সময় নিয়ে কাজ করতে চান তিনি। আর এই কৌশল তাকে আরো বেশি সাফল্য এনে দিচ্ছে।

এখন তাকে ভারতের অন্যান্য ইন্ডাস্ট্রি থেকেও ডাকছে। সেটাই স্বাভাবিক। যে সবার চেয়ে আলাদা, সে সবার চেয়ে একটু বাড়তি এটেনশন পাবে এটাই স্বাভাবিক৷ সাই পল্লবির মতো অভিনেত্রী সিনেমার জন্য ব্লেসিং। তার কারণ, এমন অভিনেত্রীরা আসলে স্টেরিওটাইপ ভেঙ্গে দিয়ে নতুন ট্রেডমার্ক তৈরি করেন। অভিনেত্রীরা তো বাইরের কেউ নন, তারা এই সমাজের অংশ, রক্ত মাংসের মানুষ৷ সাই পল্লবিকে দেখে সেটাই মনে হয়, যিনি শুধু অভিনেত্রী নন, অনুপ্রেরণার নাম। যিনি প্রমাণ করেছেন, এভাবেও অভিনয় করা যায়, তুমি যেমন সেই সত্যিটাই ঠিকমতো ধারণ করলে সেটাই শক্তি হয়ে যায়!

*

প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন


ট্যাগঃ

শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা