অনেকেই দেখি এই সিনেমাকে বাংলাদেশের সাথে মেলাতে চান। কী ফালতু লোকজন সব! ছিঃ!

“হীরক রাজার দেশে” একটি ভারতীয় চলচ্চিত্র। এটি পরিচালনা করেছেন সত্যজিৎ রায় নামক একজন পরিচালক। এই সিনেমাটিতে হীরকরাজ্য নামক একটি কাল্পনিক দেশের কথা বলা হয়। সেই দেশের শাসক হীরক রাজা। রাজার শাসন মানেই তো স্বৈরতন্ত্র। হীরক দেশের রাজাও তার ব্যতিক্রম নন। বর্তমান পৃথিবীতে স্বৈরতন্ত্র একটি অপ্রাসঙ্গিক বিষয়। আমাদের দেশ সহ প্রায় সব দেশেই বইছে গণতন্ত্রের সুবাতাস। তাই বর্তমান সময়ের সাথে, বিশেষ করে আমাদের দেশ ও দশের সাথে সিনেমাটি সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক। সিনেমাটিতে আমরা হীরকরাজ্যের যেসব কর্মকান্ড দেখতে পাই তা এমন,

১। হীরক রাজা তার মন্ত্রী এবং বিদেশী অতিথিদের ইচ্ছেমত হীরার মালা উপহার দেন। কিন্তু তার রাজ্যের মানুষ খেতে পায় কি না তা নিয়ে তার মাথাব্যথা নেই। উল্টো আরো খাজনার বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছেন, আর বলছেন “বাকি রাখা খাজনা, মোটে ভালো কাজ না”। সত্যজিৎ রায় নামক পরিচালক সম্ভবত এখানে নাইজেরিয়ার কথা ইঙ্গিত করেছেন। কারণ নাইজেরিয়াতেও হিরার খনি আছে, এবং সেখানে হিরা নিয়ে প্রচুর দুর্নীতি হয়।

২। হীরকরাজা বর্ষপূর্তি (বা ভরসা ফূর্তি) উদযাপনের জন্যে বিশেষ এবং বিশাল আয়োজন করেন। প্রচুর আতশবাজি পোড়ানো হয়, বেলুন ওড়ানো হয়, এবং বিদেশী অতিথিদের আমন্ত্রণ করা হয়। উৎসবের জন্যে দারিদ্রের চিহ্ন দূর করা হয়। আর এজন্যে কৃষিকাজে মন্দাভাব সত্তেও কৃষকদের খাজনা মাফ করা হয় না। মন্দা পূর্ববর্তী ভোগবিলাসী ভেনিজুয়েলার সাথে বেশ ভালোভাবেই মিলে যায়, তাই না?

আমাদের দেশ ও দশের সাথে সিনেমাটি সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক

৩। উৎসবের দিন থেকে হীরক রাজার নামে শুরু হয় নতুন বর্ষ, হীরকাব্দ। এটা সম্ভবত প্রাচীন চিন ডাইনেস্টির প্রতি ইঙ্গিত করা।

৪। গানে গানে সত্যি কথা বলার জন্যে একজন গায়ককে মস্তিষ্ক প্রক্ষালক যন্ত্রে নিয়ে গিয়ে মগজ ধোলাইয়ের শাস্তি দেয়া হয়। এর সাথে আপনি মিল পাবেন ২০১২ সালে ভারতের কার্টুনিস্ট অসীম ত্রিবেদির গ্রেফতার হওয়ার ঘটনার। বেচারা সরকারী দলকে উদ্দেশ্য করে ব্যঙ্গ কার্টুন এঁকেছিলো বলে তাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। আরে, আপনি শিল্প সংস্কৃতিকে আবদ্ধ করে রাখেন, ছিহ ভারতীয় সরকার, ছিহ!

৫। মস্তিষ্ক প্রক্ষালক যন্ত্র সম্পর্কে বিশেষভাবে বলা দরকার। এটা এমন একটা যন্ত্র, যাতে মগজ ধোলাই করা হত। ফলে যারা হীরক রাজার বিরুদ্ধে কথা বলতো, তারাও তার জয়গান গাওয়া শুরু করে। মানে আপনার নূণ্যতম বাকস্বাধীনতা থাকবে না। আপনি সরকার এবং সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কিচ্ছু বলতে পারবেন না। আপনাকে মুখস্থ তোতাপাখির মতো বলতে হবে “যায় যদি যাক প্রাণ, হীরকের রাজা ভগবান”। কী একটা দুর্বিসহ পরিস্থিতি, চিন্তা করে দেখেছেন? স্তালিনের সময়কালের রাশিয়ার সাথে আপনি এই পরিস্থিতির খুউব মিল পাবেন।

সিনেমাতে বেশ কিছু গান আছে। তার মধ্যে সবচেয়ে ভালো লেগেছে “আহা কী আনন্দ আকাশে বাতাসে” গানটি। আইটেম সং থাকলে আরো ভালো হত। যাক, সবকিছু তো আর একসাথে পাওয়া যায় না। আইটেম সং এবং নারীচরিত্র না থাকার কারণে সিনেমাটির রেটিং ১০ থেকে ১ কমিয়ে ৯ দেয়া গেলো।


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা