
এই জাত পাতের বৈষম্য, সাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে কিছুদিন আগে ভারতের একটা সিনেমা দেখেছিলাম আর্টিক্যাল ১৫। সংবিধানের একটি ধারা যেখানে ধর্ম, বর্ণের ভিত্তিয়ে বৈষম্য করা যাবে না এমন একটি কথা বলা আছে অথচ তা কেউ মানে না, সে ধারার উপরেই আস্ত একটা সিনেমা বানিয়েছে ওরা। আমাদের দেশে এ ধরণের সিনেমা কেউ বানাবে সেই স্বপ্ন দেখার আগে
আমরা কতটা ভুল শিরোনামে আসক্ত তার আরো একটা প্রমাণ পেলাম। হরিজন/দলিত সম্প্রদায়ের বাচ্চাদের স্কুলে ভর্তি নেয়া হচ্ছিলো না গাইবান্ধায়। কারণ, তারা 'নিম্ন জাত', তারা 'অচ্ছ্যুত', তারা 'নিচু শ্রেণীর'! তাই বলে তাদের শিক্ষার অধিকার নেই? পড়ালেখা করবে না? তারাও শিখতে চায়, জানতে চায়। একটু স্বপ্ন দেখতে চায়। কিন্তু স্কুল তাদের নেয় না ভর্তি। তাই নিরুপায় হয়ে এই সম্প্রদায়ের লোকজন রাস্তায় নেমেছে, মানববন্ধন করেছে।
কিছু কিছু মিডিয়ায় এই সংবাদ এসেছে বটে কিন্তু আমাদের এই শিরোনামটি খুব বেশি কি আলোড়িত করেছে? জানি না। ফেসবুকে কত কিছু নিয়ে কথা বলা হয়। এই ইস্যু, সেই ইস্যু। এতো কিছুর মধ্যে হরিজন সম্প্রদায়ের এই দাবিটি নিয়েও কথা বলা হয়ত প্রয়োজন ছিল আমাদের। এটা তো খুবই লজ্জার আমাদের জন্য যে, আমরা বাংলাদেশকে অসাম্প্রদায়িক দাবি করি, বলি, স্বপ্ন দেখি বৈষম্যহীন সমাজের কথা সেখানে একটা সম্প্রদায়ের মানুষকে কি পরিমাণ বৈষম্য ফেস করতে হলে তারা রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়!
সংবিধানে স্পষ্ট করে বলা আছে ২৮ অনুচ্ছেদের ৩ নং দফায় যে,
"কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারীপুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে জনসাধারণের কোনো বিনোদন, বিশ্রামের স্থানে প্রবেশের কিংবা কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির বিষয়ে কোনো নাগরিককে কোনোরুপ অক্ষমতা, বাধ্যবাধকতা, বাধা বা শর্তের অধীন করা যাবে না।"

কি দারুণভাবে সংবিধান সবার অধিকারের কথা স্পষ্ট করে দিয়েছে। কিন্তু, গাইবান্ধায় যা হয়েছে তা সংবিধানকে লঙ্গন করারই শামিল। গাইবান্ধা সদর উপজেলা মডেল স্কুল এন্ড কলেজের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠেছে যদিও স্কুলের অধ্যক্ষ এই অভিযোগ স্বীকার করছেন না। কিন্তু, কোনো অপমানজনক ঘটনা না ঘটে থাকলে হরিজন সম্প্রদায় শুধু শুধু মানববন্ধনই বা কেন করবে!
আর মুখে যে যতই অসাম্প্রদায়িকতার কথা বলুক, মনের মধ্যে অনেকেই আসলে এই অসাম্প্রদায়িকতাকে প্রাণ দিয়ে বিশ্বাস করে না। তাই হরিজন সম্প্রদায়ের কেউ স্কুলে ভর্তি হতে পারছে না বা অধিকার বঞ্চিত এইসব খবর একদমই উড়ো খবর নয়। গুগল করেই দেখুন না৷ একই রকম খবর আরো চলে আসবে আপনার সামনে।
এই জাত পাতের বৈষম্য, সাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে কিছুদিন আগে ভারতের একটা সিনেমা দেখেছিলাম আর্টিক্যাল ১৫। সংবিধানের একটি ধারা যেখানে ধর্ম, বর্ণের ভিত্তিয়ে বৈষম্য করা যাবে না এমন একটি কথা বলা আছে অথচ তা কেউ মানে না, সে ধারার উপরেই আস্ত একটা সিনেমা বানিয়েছে ওরা।

আমাদের দেশে এ ধরণের সিনেমা কেউ বানাবে সেই স্বপ্ন দেখার আগে এই স্বপ্ন দেখতে চাই, এই বৈষম্য যার গোড়ায় জাত পাত, বর্ণ ধর্ম সেই বৈষম্যের মুক্তি নিয়ে লোকে অন্তত কথা বলুক। আওয়াজ তুলুক। কলরব হোক। কিন্তু, আমি তা দেখি না। দেখি লোকে বড্ড ভুল শিরোনামে আসক্ত, লোকে বড্ড বেশি সাম্প্রদায়িক মন নিয়ে নিজেকে অসাম্প্রদায়িক প্রমাণে ব্যস্ত। হরিজন, দলিতদের নিয়ে কথা বলা হয়ে ওঠে না তাদের...