হুমায়ূন আহমেদের এমন একটা সময় চুটিয়ে লেখালিখি করে গেছেন, যখন মানুষের হাতে হাতে ইন্টারনেট আর স্মার্টফোন সেভাবে যায় নাই। বিনোদন বলতে মানুষ উনার বই-ই পড়তো। পড়ে ১-২ দিন ঘোরে থাকতো। ব্যস।
এই সময়টায় উনি পুরোপুরি সুস্থ থাকলেও মন খুলে কতটুকু লিখালিখি করতে পারতেন, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে!
এখন হলো অনুভূতিতে আঘাত লাগার যুগ। মানুষ এক প্লাটফর্ম পেয়েছে, কেউ কোন কিছু নিজেদের পছন্দের বাইরে করলে তাকে দিনের পর দিন ছিলে ফেলা হয়, চলে চুলচেঁড়া বিশ্লেষণ, মাফ চেয়েও পার পাওয়া যায় না, অনলাইন বুলিং চলেই!
বহুব্রীহি নাটকে এক ডাক্তারকে হাবাগোবা দেখানোয় ঐ সময় ডাক্তার সমাজ নাকি তাঁকে বয়কটের ডাক দিয়েছিল। চিন্তা করতে পারেন এই যুগে কী হতো তাহলে?
মনে আছে মোশাররফ করিম, সাফা কবিরের কথা? মিথিলা ডিভোর্সের পরে অন্য একটা রিলেশনে গিয়ে, অন্য কাউকে বিয়ে করাতে মনে হয় এদেশের মানুষের দুইবেলা ভাত খাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে, নিজেদের একটা বিচি খুলে গেছে- এমনই বীভৎস তাদের রিয়েকশন। আর টেন মিনিট স্কুল নিয়ে কী হলো তা তো দেখলামই। ইভেন সামান্য দাঁড়ি ছাটাই নিয়ে ক্যাপশন দিয়ে গায়ক হাবিব পর্যন্ত রক্ষা পেলেন না।
তাঁর আপন ছোট ভাইকে নিয়ে তো নিয়মতই ফেসবুকে তুলোধুনো করা হয়! অফলাইনেও আক্রমণ করা হয়েছে!
কেমন একটা দম বন্ধ করা পরিবেশ। চুন থেকে পান খসলেই হয় অনলাইনে আক্রমণের শিকার হতে হবে বা অফলাইনে খেতে হবে মামলা!
হুমায়ূন আহমেদ এখনও বেঁচে থাকলে তাঁর প্রতিটা নতুন বই নিয়ে হতো সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ। দেয়ালের মতো কিছু লিখে এখন আর তিনি পার পেতেন না, দেশের কয়েক জায়গায় তার বিরুদ্ধে মিছিল হতো, অনলাইনে তাকে স্বাধীনতাবিরোধী ট্যাগ দিয়ে ছেঁচে ফেলা হতো শিউর। আবার পুফি বা লিলুয়া বাতাস টাইপ কিছু লিখলে অশ্লীলতা ছড়ানো, সমাজবিরোধী কতাবার্তা লিখার দায়ে আরেকদল তাকে বয়কট করার ডাক দিতো, তার কল্লা দাবী করতো। উনি মৃত্যুর আগে মহানবী (সাঃ) এর জীবনী লিখতে চেয়েছিলেন, কে জানে তাঁর প্রতিক্রিয়া কেমন হতো, এখন সেটা প্রকাশিত হলে! এই জমানায় তাকে সব সময় ভয়ে ভয়ে থাকা লাগতো, কখন না জানি কার কোন অনুভূতিতে আঘাত করে ফেলেন!
হুমায়ূন আহমেদ কতিপয় ফাতরা সমালোচক বাদে একতরফা তীব্র ভালোবাসাই পেয়ে গেছেন, জীবনকে পরিপূর্ণভাবে উপভোগ করেছেন, যখন যা শখ হয়েছে, অদ্ভুত পাগলামি ইচ্ছা মাথায় এসেছে, বন্ধু বান্ধব নিয়ে হৈচৈ করে তা বাস্তব করেছেন। তাঁকে ফেসবুকে ঢুকে ইনবক্সে একগাদা গালাগালি শুনতে হয়নি, তাঁর বই নিয়ে দুইদিনের চ্যাংড়া পোলাপানের উদ্ভট রিভিউ দেখতে হয়নি, মানসিক শান্তি নষ্ট হয়নি ভার্চুয়াল কারণে!
সুন্দর একটা সময়ে হুমায়ূন আহমেদ লেখালিখি করে গেছেন, যখন মানুষ বাস্তবতার নিষ্ঠুরতা পালাতে তাঁর বইয়েই ডুব দিতো, অনলাইনের কাঁদা ছোড়াছুঁড়ির পঙ্কিলতায় নয়!
-
* প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন
* সমাজের নানান অসঙ্গতি নিয়ে আওয়াজ তুলুন। অংশ নিন আমাদের মিছিলে। যোগ দিন 'এগিয়ে চলো বাংলাদেশ' ফেসবুক গ্রুপে
আরও পড়ুন-