ইব্রাহিমোভিচ: ক্ষ্যাপাটে এক চরিত্র, অথবা ফুটবলের স্বঘোষিত ঈশ্বর!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
সাংবাদিক- "ইব্রা, আপনি কি সমকামী?" ইব্রাহিমোভিচ- "মাই ডিয়ার ফ্রেন্ড, আমার বাড়িতে এসো একদিন, সঙ্গে তোমার স্ত্রীকে নিয়ে এসো। আমি তোমাকে দেখিয়ে দেবো কে সমকামী…!”
তিনি দারুণ এক ফুটবলার, তবে পায়ের চেয়েও বেশী চলে তার মুখ। নিজের সেন্স অব হিউমারের জন্যে বিখ্যাত তিনি। ফুটবলজগতেই দারুণ আলোচিত এক চরিত্র; যার নামের প্রথম অংশটা লেখার সাধ্য রিদমিক বা অভ্র কীবোর্ডের নেই, তিনি ইব্রাহিমোভিচ। বয়স ঘড়ি উনচল্লিশে পা দিলেও এখনও তিনি দারুণ চনমনে, তার ক্ষীপ্রতা এখনও দুর্দান্ত। ইব্রাহিমোভিচের জন্মদিনে ‘এগিয়ে চলো’র পাঠকদের জন্যে আমাদের পক্ষ থেকে ছোট্ট উপহার আছে, আপনাদের জানাবো এই ফুটবলারের মজার কিছু কথা আর কাণ্ডকীর্তি সম্পর্কে।
# ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে, সুইডিশ ক্লাব মালমোতে তিনি যখন খেলতেন, তখন একবার আর্সেনাল খুব আগ্রহী হয়েছিল তাকে কেনার ব্যপারে। তার নাম লেখা আর্সেনালের জার্সিও বানিয়ে ফেলা হয়েছিল! কিন্ত শেষ পর্যন্ত ইব্রা আর্সেনালে যাননি, কারণটা জানেন? আর্সেন ওয়েঙ্গার নাকি তাকে ট্রায়াল দিতে বলেছিলেন! আর ইব্রাহিমোভচ এসব ট্রায়ালের ধার ধারেন না বলে সেটা নাকচ করে দিয়েছিলেন!
# ২০১৪ বিশ্বকাপের আগের ঘটনা, পর্তুগালের সঙ্গে প্লে অফ ম্যাচ সুইডেনের, যে দল জিতবে তারাই ব্রাজিলের টিকেট পাবে। এক সাংবাদিক প্রশ্ন করলেন ইব্রাকে, কে জিতবে প্লে অফে? ইব্রা বললেন, ঈশ্বর জানেন। সাংবাদিক নাছোড়বান্দা, আবার বললেন, কিন্ত তার নাগাল পাওয়াটা কঠিন। ইব্রাহিমোভিচ হেসে জবাব দিলেন- কেন, ঈশ্বর তো তোমার সামনেই বসে আছে, জিজ্ঞেস করে ফেলো!”
# ২০১৪ বিশ্বকাপে খেলতে পারেনি ইব্রাহিমোভিচের সুইডেন, পর্তুগালের কাছে প্লে-অফে হেরে ব্রাজিলের টিকেট কাটা হয়নি ওদের। ইব্রা তখন বলেছিলেন- “আমাকে ছাড়া যে বিশ্বকাপ, সেটায় আসলে দেখার কিছু নেই”...!
# নরওয়ের ফুটবলার জন ক্যারো’কে নিয়ে ইব্রাহিমোভিচ বেশ চটে গিয়েছিলেন, বলেছিলেন- “ক্যারো ফুটবল নিয়ে যা করতে পারে, আমি একটা কমলালেবু নিয়েও তা করতে পারি।”
# ইব্রাকেকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল প্রেমিকার জন্মদিনে তাকে কি উপহার দিয়েছেন। তিনি সোজাসাপ্টা বলে দিয়েছিলেন- কিছুই দেইনি, কারণ আমার মতো একটা দারুণ উপহার আগে থেকেই ওর কাছে আছে!”
# প্যারিস সেন্ট জার্মেই’তে যখন খেলতে গেলেন, প্রথমদিকে থাকার জন্যে পছন্দসই বাড়ী খুঁজে পাচ্ছিলেন না ইব্রাহিমোভিচ। এটা নিয়ে একবার বলেছিলেন- বাড়ি তো খুজছি, না পেলে আর কি করা, আস্ত একটা হোটেলই কিনে ফেলতে হবে!”
# ইব্রাহিমোভিচ তখন প্যারিসে খেলছেন, দলবদল করে এসেছেন এক মৌসুমও হয়নি। একবার এক সাংবাদিক তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ফ্রান্সের দর্শনীয় স্থানগুলো যেমন আইফেল টাওয়ার দেখতে তিনি কখনও গিয়েছেন কিনা। ইব্রা জবাব দিয়েছিলেন- "বছরে যতো লোক আইফেল টাওয়ার দেখতে আসে, তারচেয়ে বেশি মানুষ আসে আমার খেলা দেখতে। আমি কেন আইফেল টাওয়ার দেখতে যাবো? আইফেলের শখ থাকলে আমাকে এসে দেখে যাক!"
# অন্য খেলোয়াড়দের নিয়ে মজা করতে তার জুড়ি ছিল না কখনোই। লিভারপুলের সাবেক সেন্টার ব্যাক স্টেফান হ্যাঙ্কককে নিয়ে একবার বলেছিলেন- আমি ডানে গেলাম, ও আমার পেছন পেছন ডানে এলো, আমি বামে গেলাম, সেও বামে এলো। বল নিয়ে আমি আবার ডানে চলে গেলাম, ও তখন বিরক্ত হয়ে হটডগ কিনতে বের হয়ে গেল মাঠ থেকে!”
# ২০১২ ইউরোর নকআউট রাউন্ড চলছে। সুইডেন এর আগেই বাদ পড়ে গেছে। ইব্রাকে সাংবাদিকেরা জিজ্ঞেস করেছিলেন, কে জিততে পারে ইউরো? ইব্রা জবাব দিয়েছিলেন- “কে জিতবে এসব নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই, আমি ছুটি কাটাতে যাচ্ছি।”
# ইব্রাহিমোভিচকে চটানোটা দুনিয়ার সবচেয়ে ভয়ঙ্কর কাজগুলোর একটি, সেটাই করে বসেছিলেন এক ফ্রেঞ্চ সাংবাদিক। সেই সাংবাদিক ইব্রাহিমোভিচকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, তিনি নিজেকে সমকামী ভাবেন কিনা। ইব্রা তার চোখের দিকে তাকিয়ে জবাব দিয়েছিলেন- “বন্ধু, আমার বাড়ীতে এসো একদিন, সঙ্গে তোমার স্ত্রীকে নিয়ে এসো। আমি তোমাকে দেখিয়ে দেবো কে সমকামী...!”
# মারিও বালোতেল্লি একবার খবরের শিরোনাম হয়েছিলেন নিজের ঘরে আগুন লাগিয়ে। সেই ঘটনা নিয়ে ইব্রাহিমোভিচ বলেছিলেন- আগুন আমারও পছন্দ। কিন্ত আমি সেটাকে ফায়ারপ্লেস বা কাবাব স্ট্যান্ডে রাখতেই পছন্দ করি। নিজের দামী ঘরে আগুণ দেয়ার মতো বোকা আমি নই!” ইব্রাহিমোভিচ ফুটবল দারুণ খেলেন, আগুণ নিয়ে খেলতেও খারাপ জানেন না।
# তাকে একবার কেউ জিজ্ঞেস করেছিল, স্ট্রাইকার না হলে তিনি কোন পজিশনে খেলতে পছন্দ করতেন? ইব্রাহিমোভিচের জবাবটা শুনুন- আমি ফুটবলের এগারোটা পজিশনেই খেলতে জানি, কারণ একজন ভালো খেলোয়াড়ের যেকোন জায়গায় খেলতে জানা উচিত, এমনকি গোলকীপিংটাও শিকে রাখা দরকার!”
# ইব্রাহিমোভিচের ট্যাকলে একবার ইনজুরির শিকার হয়েছিলেন নেদারল্যান্ডের ভ্যান ডার ভার্ট, উদ্দেশ্যমূলকভাবে তাকে আঘাত করা হয়েছে বলে ইব্রাহিমোভিচের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছিলেন তিনি। জবাবে ইব্রাহিমোভিচ বলেছিলেন, “আমি যদি ওকে আঘাত করতে চাইতাম, ও কি এতসব ফালতু কথা বলার জন্যে বেঁচে থাকতো?”
# সপ্তাহখানেক আগে করোনায় আক্রান্ত হলেন ইব্রাহিমোভিচ। স্বভাবসুলভ ভঙ্গিনায় টুইটারে লিখেছেন- করোনা আমার সাথে পাঙ্গা নেয়ার দুঃসাহস দেখিয়েছে, নির্বোধের মতো একটা কাজ করেছে ভাইরাসটা। যদিও অনেকে দাবী করেন, ইব্রার আসলে করোনা হয়নি, বরং করোনাভাইরাসই 'ইব্রা পজিটিভ' প্রমাণিত হয়েছে!
অনেকে ভাবতে পারেন ইব্রাহিমোভিচ বুঝি অহঙ্কারী, উদ্ধ্বত, কিংবা নিজেকেই সর্বেসর্বা ভাবেন... সেটা লোকে ভাবতেই পারেন। ইব্রাহিমোভিচ এমনই। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে যখন তিনি এসেছিলেন, তাকে বলা হয়েছিল, এখানে আপনি এমন কি করতে পারবেন? ম্যানচেস্টারের তো একজন ‘কিং’ আছেনই, এরিক ক্যান্টোনা। ইব্রা সপাটে পেনাল্টি শট নিয়েছিলেন, বলেছিলে- “আমি এখানে গড হবার জন্যে এসেছি, ওসব কিং ফিং এর ভাত নেই আমার কাছে!”
অহঙ্কার নয়, এটাই ইব্রাহিমোভিচ। খানিকটা পাগলাটে, অনেকটা মজার একটা মানুষ। অনেকগুলো বছর যিনি দোর্দণ্ড প্রতাপে খেলে গেছেন বিশ্বের সেরা ক্লাবগুলোতে, এখন খেলছেন ইতালিয়ান ক্লাব এসি মিলানে, ৩৯ বছর বয়স, তবু রেখে চলেছেন নিজের জাদুকরী প্রতিভার ছাপ, করছেন অত্যাশ্চর্য্য সব গোল। আরো অনেক বছর এভাবেই বিনোদিত করে রাখুন আমাদের, এটাই কামনা। শুভ জন্মদিন ইব্রাহিমোভিচ!
*
প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন