গুরুত্বপূর্ণ যেকোনো বিষয়ে গুরুত্ব বজায় রেখে তার প্রতিবাদ করাটাও একটি দায়িত্ব। এবং সেই দায়িত্ব পালন করা প্রতিটি মানুষেরই কর্তব্য।

ভারতে চলছে বিতর্কিত ও ধর্মভিত্তিক নাগরিকত্ব আইনকে ঘিরে সমালোচনা। প্রতিবাদ ও বিক্ষোভও অব্যাহত আছে। এ ইস্যুতে ভারতীয় পুলিশের অত্যাচার প্রমাণ করতে গিয়ে, একটি ভিডিও টুইট করেছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। গতকাল নিজের টুইটার থেকে ঐ ভিডিওটি পোস্ট করে ইমরান দাবি করেন, ‘যোগী আদিত্যনাথের রাজ্যে এভাবেই মুসলিমদের ওপর অত্যাচার চালাচ্ছে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। এই ঘটনাটি মুসলিমদের দেশছাড়া করতে নরেন্দ্র মোদি সরকারের ভারতীয় পুলিশের হামলার অঙ্গ।’

শেয়ার করার পর তা যোগাযোগ মাধ্যমে খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে বোঝা যায়, ভিডিওটি আসলে বাংলাদেশের র‍্যাপিড একশন ব্যাটেলিয়ন (র‍্যাব) এর। ২০১৩ সালের ৫ই মে হেফাজতে ইসলামের ঢাকা অবরোধ এবং শাপলা চত্বরে অবস্থান নেয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিলো। ঐ ঘটনার ভিডিও দিয়ে ভারতকে ফাঁসাতে গিয়ে প্রবল ট্রলের শিকার হোন ইমরান খান। পোস্টের দু’ঘণ্টার মধ্যেই কোনো প্রকার ক্ষমা প্রার্থনা ছাড়া, এক প্রকার চোরের মতোই ঐ টুইট সরিয়ে নেয়া হয় পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রীর টুইটার থেকে।  

যে ভিডিও ফুটেজ টুইট করে সমালোচিত হয়েছেন ইমরান খান

With great power comes great responsibility... ক্ষমতা সাথে করে নিয়ে আসে খুবই গুরুতর দায়িত্ব। ক্ষমতাবানেরা কোনোভাবেই এ দায় এড়াতে পারেন না। যেকোনো দেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে থেকেই আমরা দায়িত্বপূর্ণ আচরণ আশা করি। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে বেফাঁস বক্তব্য করে বিতর্কিত হয়েছিলেন ইমরান খান। ভারত এমনিতেই দাবি করে আসছে ক্রমাগত উস্কানি দিচ্ছেন তিনি। একটি দেশের প্রধানমন্ত্রী যাচাইবাছাই না করে কিছু একটা বলে দিলেন, এবং তারপর সেটা নিয়ে শুরু হলো ট্রলিং। অতঃপর সিরিয়াস একটা ইস্যু ভুলে মানুষ শুরু করলো মজা করা। এভাবেই গুরুত্ব হারায় যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। ভারতে যা হচ্ছে তার প্রতিবাদ হওয়া দরকার আরো কঠোরভাবে, ইমরান খান কি এ সহজ ব্যাপারটা এখনো অনুধাবন করতে পারেননি?

হাসতে হাসতে কোনো কিছুর বীভৎসতা উড়িয়ে দেয়াটা আমাদের স্বভাবের মধ্যেও পাকাপাকিভাবে ঢুকে গেছে। সিরিয়াস ব্যাপারগুলো নিয়ে আমরা হাসি তামাশা করি। আর হাস্যকর ব্যাপারগুলো নিয়ে হয়ে যাই ড্যাম সিরিয়াস। এ মজার ছলেই গুজব, অপপ্রচারেও প্রাণ হারায় নিরীহ মানুষ। আমাদের কিছুতেই এখন আর কিছু আসে যায় না মনে হয়।  

সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজব ছড়ানোর ঘটনা নতুন নয়। পদ্মা সেতুতে লাগবে শিশুর মাথা, নিখোঁজ হয়ে গেছে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, বেসিনে হারপিক ঢাললে মরবে এডিস মশা- এসব গুজবেও মেতেছিলো বাংলাদেশ। এমন গুজবে কান দিয়ে জামায়াত নেতা সাঈদীকে চাঁদেও দেখেছিলেন কেউ কেউ। আসলে যেকোনো ইস্যুতেই এমনটা হয়। অন্য কোনো ঘটনার ফুটেজ ব্যবহার করে গুজব ছড়ানোর চেষ্টা করা হয়। ভারতীয় পুলিশ যে খুবই নিন্দনীয় কাজ করছে তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। কিন্তু সেটা প্রমাণ করার জন্য মিথ্যার আশ্রয় নিতে হবে কেন? কোনো অপরাধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে মিথ্যা এবং গুজবের আশ্রয় নেয়াটাও কিন্তু আরেকটি অপরাধ। এক অপরাধ দিয়ে আরেক অপরাধের প্রতিবাদ কখনোই সফল হয় না। এবং আমরাও নির্দ্বিধায় জানা-অজানায় এমন অপরাধ করে ফেলি।

ফিরে আসি ইমরান খান প্রসঙ্গে। ক্রিকেট সুপারস্টার থেকে প্রাইমমিনিস্টার হয়ে ওঠা মিস্টার খানের ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম বছরটি ছিলো বেশ আলোড়নময়। সমালোচকরা অভিযোগ করেন যে তিনি বিশ্বের কাছে যে চেহারা উপস্থাপন করেন, পাকিস্তানের অভ্যন্তরে তার রূপ একেবারেই আলাদা। সব কিছু মিলিয়ে আলোচনায় থাকতেই পছন্দ করে তিনি। সেটি হোক পজিটিভ বা নেগেটিভ। কিন্তু এভাবে ক্ষমতার লড়াইয়ে খুব বেশিদিন যে টিকে থাকতে পারবেন না, সেটি যতো তাড়াতাড়ি বুঝবেন তার জন্যেই মঙ্গল হবে। পাকিস্তানের রাজনৈতিক ইতিহাস কিন্তু খুব বাজে কিছুরই ইঙ্গিত দেয়। জাতিসংঘে ভাষন দিয়ে মুসলিম উম্মাহর দায়িত্ব নিয়ে নেয়া এ মহাপুরুষের উচত ছিলো একটু ক্রসচেক করে মন্তব্য প্রকাশ করা।  


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা