বাসমালিকদের ডাহা নির্লজ্জ মিথ্যাচার কেন মেনে নেব আমরা?
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
বাসমালিকদের যুক্তি, গত দুই মাসে তাদের অনেক লস হয়েছে! তো এই দুই মাসে আমরা সবাই এত এত লাভ করেছি যে এখন আমাদের পকেট থেকে ওদের লস পুষিয়ে দিতে হবে, তাই না?
ঢাকা-চিটাগাং আর ঢাকা-সিলেট রুটে নন এসি আর এসি বাসের ভাড়ার ফারাক আগে থেকেই বিনা কারণে বেশি ছিল। কেউ কখনো ব্যাখ্যা চায় নাই/দেয় নাই যে কেন নন এসির ভাড়া ৪৮০ টাকার চাইতে এসিতে ১০% তেল বেশি খরচ হলেও ভাড়া কেন ১৫০% বেশি নেয়া হতো (১২৫০ টাকা)। বছর দুয়েক ধরে গ্রীন লাইন ১৩০০ টাকায় বুফেসহ ডাবল ডেকার চালু করলে এই ১২৫০ টাকার অলিগোপলি ভেঙ্গে ভাড়া ১০০০ টাকায় নামে। স্টিল যা অনেক বেশি। অন্য রুটের হিসাব করলে যার দাম ৬০০ টাকা লজিকাল। (উদাহরণ এনা পরিবহনের ঢাকা থেকে ৬৫০ কিলো দূরের পঞ্চগড়ের ভাড়া ৮০০ টাকা আর ২৫০ কিলো দূরের সিলেটের ভাড়া ১০০০ টাকা)
আজকের আপডেট হলো সরকার এখন থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাস চালানো বাবদ ভাড়া এক হাজার টাকা থেকে ৮০% বাড়িয়ে ধার্য করেছে ১৮০০ টাকা! ব্যাপারটা একবার সিম্পলি ভাবেন যে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম ২৫০ কিলোর ভাড়া ১৮০০ টাকা! কীভাবে বিক্রি হয়ে গেলে এমন একটা সিদ্ধান্ত কেউ নিতে পারে তা আসলেই ভাবনার বাইরে। মনে রাখতে হবে যে এই বিদ্যমান ভাড়াও যখন পাঁচ বছর আগে নির্ধারিত হয়েছিলো তার থেকে এখন জ্বালানী তেলের দাম ঢের কমেছে!
আচ্ছা বুঝলাম এসি বাসে সামর্থ্যবানেরা চড়েন! তাদেরকে পিষেই টাকা কামাবেন। কিন্তু নন এসি বাস তো গরীবের বাহন। সেখানে কীভাবে হাজার টাকা ভাড়া ধার্য্য হয় সে ব্যাখ্যাটা কি কেউ দিবেন?
এরপরেও সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এনা বাসের মালিক খন্দকার এনায়েত উল্ল্যাহ দাবি করেছেন, ‘‘৮০ ভাগ ভাড়া বাড়ালেও আমাদের ক্ষতি পোষাবে না৷’’
এটা যে একটা ডাহা আর নির্লজ্জ মিথ্যাচার তা একটা উদাহরণ দিলেই বুঝবেন। ঢাকা চিটাগাং রুটে এসি গাড়ীর বেশিরভাগই ১ঃ২ হুন্দাই বা ম্যান। হুন্দাই ২৭ সিটার বাসের কথা বলি। এতোদিন ২৭ সিটের টিকেট ফুল বুকিং হলে তারা পেতো ২৭০০০ টাকা। আর এখন স্বাস্থ্যবিধি মেনে ১৮ সিটের টিকেট বিক্রি করা হবে ১৮০০ টাকায়, ফলে প্রতি ট্রিপে ১৮ সিটের ভাড়া উঠবে ৩২৪০০। আগে তো পুরো ২৭ টিকেটই বেচতে হতো ফুল বুকিং করতে যা ঈদ ছাড়া সব ট্রিপে হতোনা। এখন অনায়াসে দিনের সব ট্রিপেই ১৮ টিকেট বেচা হয়ে যাবে। কষ্ট কম, লাভ আগের চেয়েও অনেক বেশি। বুঝা গেছে ব্যাপারটা?
মালিকেরা গত দুমাসে একটা পরিবহণ শ্রমিককেও বেতন দেয়নি। দিতে হয় নাই কারণ গাড়ির চাকা চললে ক্যাশ টাকা- এটাই এই সেক্টরের নিয়ম। যে নিয়ম কোনদিন কেউ ভাঙ্গে নাই কোনদিন নিজেদের স্বার্থ সমুন্নত রাখতে। কারণ ফিক্সড বেতন ধরলে একটা ড্রাইভার হেল্পারের বেতন কত বেশি ধরতে পারবেন? অথচ চাকা চললে সিটি সার্ভিসের একেকজন শ্রমিক পার ডে দুই হাজার টাকার উপরে পকেটে ঢুকাতে পারে। সেই টাকা বদভ্যাসের দরুন যদি তারা রাখতে না পারে সেটা তাদের সমস্যা। মায়াকান্নার কিছু নাই!
তারপরেও বাসমালিকদের শেষ যুক্তি হলো বাসমালিকদের গত দুইমাসে অনেক লস হয়েছে! তো গত দুই মাসে আমরা সবাই এত এত লাভ করেছি যে এখন আমাদের পকেট থেকে টাকা নিয়ে সরকারী ব্যবস্থাপনায় ওদের লস পুষিয়ে দিতে হবে তাইনা?
(বাইরে যা খুশি যা হোক এসবের ফাঁদে পা দিয়েন না। সামর্থ্য থাকলে ঘরে থাকুন। আর নিরুপায় হলে শুভকামনা রইলো। )