কে জানতো, অন্যের জুতা মেরামত করতে করতে একদিন ঠিক নিজের ভাগ্যটাই মেরামত করে ফেলবেন তিনি!

জুতা মেরামত, পলিশ করে জীবিকা নির্বাহন করতেন তিনি। সেই কাজ করতে করতে গুন গুন করে গান গাওয়ার অভ্যেস। কোনও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই, নেই  কোনও সঙ্গীতাঙ্গনের ছাড়পত্র। সৃষ্টিকর্তা বোধহয় এই গুণী মানুষগুলোকে মায়ের উদরে থাকতেই সব শিখিয়ে দেন। নয়তো এভাবে শুধু গুণের জোরে দারিদ্রকে পরাজিত করা সম্ভব না।    

বলছিলাম রিয়ালিটি শো ইন্ডিয়ান আইডলের এবারের বিজয়ী ভাটিন্ডা সানি হিন্দস্তানীর কথা। অর্থহীন জীবনের অন্ধকার থেকে স্পটলাইটের আলোতের আসার গল্পটা যে খুব একটা সহজ ছিলো না সেটা জানিয়েছিলেন অডিশন রাউন্ডেই। অল্প বয়সে বাবাকে হারান। মাথার ওপর ঋণের বোঝা, রাস্তায় বেলুন বেচে যে পয়সা আয় হতো তা দিয়েই সংসার চালাচ্ছিলেন মা। সেই আয় দিয়ে কি আর সংসার চলে? তাই নিজের কাঁধেই দায়িত্ব তুলে নিলেন। শুরু করলেন জুতা পলিশ...   

সঙ্গীত যার আত্মায়, তাকে কি আর সেই পথ থেকে ফেরানো যায়? হাতের কাজের সাথে মুখও চলতো, গাইতেন গুন গুন করে। ওস্তাদ নুসরাত ফাতেহ্ আলী খানের গান শুনে শুনে শিখতেন। চেষ্টা করতেন একটু ভালো করে গাওয়ার, আর তা থেকেই ছড়ালেন আলো। ইন্ডিয়ান আইডল-১১ এর অডিশনে আসলে স্বশিক্ষার দক্ষতা নিয়ে।

ইন্ডিয়ান আইডলের পুরস্কার হাতে ভাটিন্ডা সানি হিন্দস্তানী 

অডিহশন রাউন্ডে ভাটিন্ডা সানি হিন্দস্তানীর গলায় ‘আফরিন’ গান শুনে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলেন বিচারকরা। তারপর একে একে প্রত্যেকটি বাধা পার করে ইন্ডিয়ান আইডলে সেরা হলেন তিনি।  এই রিয়্যালিটি শো চলাকালীন বেশিরভাগ সময়েই তিনি গাইতেন নুসরাত ফতেহ্ আলি খানের গান। যা বারবার মুগ্ধ করেছিলো বিচারকদের। বারংবার গান দিয়ে নিজেকে এই মঞ্চে প্রমাণ করার ফলস্বরূপ জয়ের মুকুট এখন তার মাথাতেই শোভা পাচ্ছে। ২৫ লাখ রুপি প্রাইজ মানিও জিতেছেন। সাথে পেয়েছেন একটি গাড়ি এবং টি-সিরিজের সাথে গান গাওয়ার কন্ট্রাক্ট।   

অডিশনের সময় থেকেই তার গলা নজর কেড়েছিলো বিচারকদের। এই শোয়ের প্রাক্তন বিচারক অনু মালিক তার গান শুনে দাঁড়িয়ে বাহবা দিয়েছিলেন। সানির গান শুনে তার মনে হয়েছিলো স্বয়ং নুসরাত ফতেহ আলি খান মঞ্চে দাঁড়িয়ে গান গাইছেন। সেই অডিশনের ভিডিও ভাইরাল হয়ে গিয়েছিলো সোশ্যাল মিডিয়াতে। অনেকেই মন্তব্য করেছিলেন দারুণ কিছু করতে যাচ্ছে এই ছেলেটা। আর সেটাই সত্য হলো। ফিনালে মেলোডিতে মেলেডিতে বাজিমাত করেছেন। তাঁর মেলেডিতে ছিল, ‘মেরে রাশকে কামার’, ‘ভার দো মেরি ঝোলি’ ও ‘হালকা হালকা সুরুর’। তার গান শুনে মুগ্ধ হন আয়ুষ্মান খুরানাও।  

জনম দুঃখিনী মায়ের হাতে পুরস্কার তুলে দিয়ে খুব উচ্ছ্বসিত ছিলেন সানি। স্টেইজে তুলে নিয়ে গিয়েছিলেন নিজের মাকে। এই অভিজ্ঞতাকে জীবনের সেরা অনুভূতি বলেও জানান তিনি। আবেগে আপ্লুত হবেনই বা না কেন, জীবন তো আর কম কঠিন ছিলো না। সেই কাঠিন্যকে কাজে লাগিয়েই জীবনের পথটা সহজ বানিয়ে নিলেন। শুধু কি প্রতিভা থাকলেই হয়, প্রয়োজন অদম্য সাহস ও হার না মানা চেষ্টা। সেই চেষ্টার ফসলই আজ অগণিত মানুষের অনুপ্রেরণার গল্প। এভাবেই কষ্টগুলোকে জয় করতে হয়। এভাবেই হার না মেনে এগিয়ে চলতে হয়। এগিয়ে চলোর গল্পগুলো তো এমনই হয়।  

 


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা