আপনি যদি উদ্যোক্তা হন, তাহলে এই চারটি বিষয় শিখে নিতে পারেন ফারহান আখতারের কাছ থেকেই!

প্রশ্নটা যদি হয় ট্যালেন্টের, এই প্রশ্নের উত্তরে বলিউডে উদাহরণ হিসেবে যে কজন মানুষের নাম মাথায় আসবে, তাদের মধ্যে শুরুর দিকেই থাকবেন ফারহান আখতার। তাকে কী বিশেষণ দিয়ে আপনি বিবেচনা করবেন, সেটা নির্ভর করবে আপনি তার কোন গুণটির কারণে বেশি মুগ্ধ তার উপর! একজন মানুষ একাধারে লিখেন, গান করেন, সিনেমা বানান, সিনেমায় অভিনয় করেন। ক্রিয়েটিভ ফিল্ডগুলোতে নিজের পদচিহ্নটা ফারহান খুব ভালভাবেই রেখেছেন, রেখে চলেছেন। তার কাছ থেকে শেখার আছে অনেক কিছু, বিশেষ করে আপনি যদি উদ্যোক্তা হন, তাহলে এই চারটি বিষয় আপনি শিখে নিতে পারেন ফারহান আখতারের কাছ থেকেই! কিভাবে? চলুন জেনে আসা যাক। 

১। মাল্টি টাস্কিং-শব্দটা শুনে থাকবেন নিশ্চয়ই। একই সময়ে একাধিক কাজ সাফল্যের সাথে করতে পারাটা বিশেষ ব্যাপার। সবাই পারে না। একসাথে মাল্টি টাস্ক করতে গিয়ে জল ঘোলা করে ফেলে। এই জায়গাটায় ফারহান আখতার ব্যাতিক্রম। ফারহান আখতার যে মাল্টি ট্যালেন্টেড সেই পরিচয় তো শুরুতেই দিয়েছি। কিন্তু, কিভাবে সামলান এত সব, একসাথে? রহস্যটা হলো তিনি ব্যালেন্স করতে পারেন খুব ভাল। তিনি জানেন, কোন বিষয়টাকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। যেমন শোনা যাচ্ছে, সামনে ডন থ্রি সিনেমার পরিচালনার কাজ করবেন তিনি। এই জন্য আপাতত অভিনয় থেকে বেরিয়ে পরিচালনার কাজটা গুছিয়ে নেয়াটাতেই মনোযোগ বেশি তার। উদ্যোক্তারা একটা স্টার্টআপের সবগুলো দিক সামলাবেন ঠিকই কিন্তু ফারহান আখতারের মতো শিখতে হবে কখন কোনটা বেশি জরুরী। এই ব্যালেন্সটা শিখে নিলেই মাল্টি টাস্কিংয়ে উদ্যোক্তারাও স্কিলড হয়ে যাবেন।  

২। সফল উদ্যোক্তাদের জীবন বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, তারা কখনো ঝুঁকি নিতে পিছপা হননি। এবং ঝুঁকি মানেই শুধু অর্থনৈতিক ঝুঁকি তা নয়। উদ্যোক্তাদের অনেকরকম সিদ্ধান্ত নিতে হয়। তারা জানেন না, সব সিদ্ধান্ত ফলপ্রসূ হবে কিনা। সবসময় সিদ্ধান্ত সঠিক হবে সেই নিশ্চয়তা উদ্যোক্তার থাকে না, তবুও নিতে হয়। এই ঝুঁকিটা ভাল নিতে পারেন ফারহান আখতার। সিনেমার ক্ষেত্রে অনেকে সরলীকরণ করে ফেলে। সিনেমা আর্টিস্টিক হলে কমার্শিয়ালি হিট হবে না, আর যেসব সিনেমা হিট হয়, সেগুলো আর্টিস্টিক হয় না, ক্রিটিকরা পছন্দ করে না।

ফারহান আখতার এই ক্ষেত্রে ব্যাতিক্রম৷ তার সিনেমাগুলো ক্রিটিকদের কাছে সমাদৃত, কমার্শিয়ালিও হিট। কিন্তু, তিনি কি আর জানতেন ফলাফল এরকম হবে? তিনি শুধু তার জুয়াটুকু খেলে গেছেন। এই ঝুঁকি নেয়ার জুয়া খেলার মধ্যেই আসলে কারসাজি! এরপর তিনি কি করলেন? ডিরেক্টর থেকে নেমে আসলেন অভিনয় জগতে। অভিনেতা হিসেবে দর্শকরা তাকে গ্রহণ করবে নাকি করবে না, তা কি তিনি জানতেন? তিনি শুধু ফিল করেছেন এটা তার করতে হবে। সিদ্ধান্ত নেয়ার জুয়া আবারো তার পক্ষেই গেছে। মানুষ তার সিনেমা দেখে অনুপ্রাণিত হয়, বাঁচতে শেখে এখন। উদ্যোক্তারাও তাই ফারহান আখতার থেকে শিখতে পারেন, কিভাবে ইনার কল শুনে সিদ্ধান্ত নেয়ার জুয়া খেলতে হয়! 

ফারহান আখতার

৩। আপনাকে একটা স্ট্যান্ড নিতেই হবে, মাঝামাঝি বলে কিছু নেই। কিছুদিন আগে সুন্দরী প্রতিযোগিতায় একটা মেয়ে বিতর্কিত হয়েছে H2O কে রেস্টুরেন্ট বলে। এই নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড়। কিন্তু, উদ্যোক্তারা কিংবা মার্কেটাররা কি করেছিল মনে আছে? এই বিতর্কিত বিষয়টাকে পুঁজি করে তারা মার্কেটিং করেছিল। একটা স্ট্যান্ড নিয়েছিল। ফ্রেশ পানি থেকে শুরু বিভিন্ন কোম্পানি এই বিতর্কিত বিষয়টিকে কাজে লাগিয়েছে।

একজন উদ্যোক্তা হিসেবে সোশ্যাল মিডিয়ার এই যুগে আপনার এই বিষয়গুলোকে এড়িয়ে গেলে চলবে না। প্রায়শই বিতর্কের জন্ম হয়। সেটা মি টু মুভমেন্ট হোক কিংবা শিশু নির্যাতন৷ আপনি এসব ইস্যুতে চুপচাপ থেকে গুডবয় ইমেজ ধরে রাখতে চাইলে ধরা খাবেন। কেউ আপনাকে গুড বয় ইমেজের জন্য মনে রাখবে না। নিজের মতামত প্রকাশ করেই নিজের ইমেজ তৈরি করে নিতে হবে। কেন বললাম? ফারহান আখতারও এই ঘরানার মানুষ। অন্যরা যেখানে বিতর্ক এড়িয়ে সাধু সেজে থাকেন, সেখানে ফারহান বলিষ্ঠ সুরে নিজের মন্তব্য প্রকাশ করেন।

যেমন 'পদ্মাবত' সিনেমা নিষিদ্ধের বিরুদ্ধে তিনি দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। বলেছেন, সিনেমা নিষিদ্ধ করে ভাল কিছু সম্ভব নয়। এর মাধ্যমে কোনো লক্ষ্য অর্জিত হয় না। তিনি নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধেও একটা ইনিশিয়েটিভ হাতে নিয়েছেন MARD – Men Against Rape and Discrimination নামে! উদ্যোক্তারাও যদি চান নিজেদের সার্ভিস/প্রোডাক্ট দিয়ে পৃথিবীতে ভিন্নতা আনবেন, তাদেরকে ভিন্নতা প্রমাণ করতে হবে কাজে, কথায়, বিজ্ঞাপনে।

৪। সবশেষে সবার জন্যই যা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তা হলো, ধৈর্য ধারণ করা। ধৈর্যশীলরা পুরষ্কার পাবেনই, আজ হোক কিংবা আগামীকাল। 'ভাগ মিলকা ভাগ' সিনেমার মিলকা সিং চরিত্রের জন্য ফারহান আখতার নিজেকে আমূল পরিবর্তন করেছিলেন। শরীরের শেপ পাল্টাতে দীর্ঘ সময় একাগ্রতার সাথে পরিশ্রম করে গেছেন। এখনো তার এই অনবদ্য সিনেমা এবং সিনেমার জন্য তার ডেডিকেশন প্রশংসিত হয়।

আমাদের ৫০% উদ্যোগ শুরু হওয়ার এক বছরের মধ্যেই মুখ থুবড়ে পড়ে। কারণ, উদ্যোক্তারা ধৈর্য হারিয়ে ফেলেন। রাতারাতি বদল আসে না৷ এজন্যে অনেক রাত জাগা নির্ঘুম সময় পাড়ি দিতে হয়। লেগে থাকতে হয়। ডেডিকেশন ধরে রাখতে হয়। আর ডেডিকেশন মানুষকে কোথায় নিয়ে যায় তার উদাহরণ হিসেবে তো ফারহান আখতার আছেনই। যা কিছুই আসুক, যেমনই হোক না কেন পরিস্থিতি, আইডিয়া থেকে পিছিয়ে আসা যাবে না। আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রাখতে হবে স্বপ্নকে... 

ছবি কৃতজ্ঞতা- ফ্রি প্রেস জার্নাল, হ্যান্স ইন্ডিয়া

*

প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা