জগতজ্যোতি দাস: মুক্তিযুদ্ধের প্রথম বীরশ্রেষ্ঠ হবার কথা ছিল যার!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট

লাশটা যাতে পাকিস্তানীরা খুঁজে না পায়, সেজন্য নিথর শরীরটাকে কাদা পানির ভেতরে পুঁতে ফেলা হলো। তাতেও শেষরক্ষা হয় না, সকালে লাশ কাদা পানির ভেতর দিয়ে ভেসে ওঠে। জগতজ্যোতির মা-বাবাকে লাশের সামনে আনা হলো, পাথরের মত পাষাণ হয়ে মা বললেন, এই লাশ তার জ্যোতির না, জ্যোতির বাম হাতে একটা আঙ্গুল বেশি...
সেদিন জগতজ্যোতির দলটা ছিল ৪২ জনের। খালিয়াজুড়ির কল্যাণপুর থেকে কয়েকটা নৌকায় মুক্তিযোদ্ধাদের এই দলটার মূল অপারেশন ছিল আজমিরীগঞ্জ পেরিয়ে বাহুবল গিয়ে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন উড়িয়ে দেওয়া। যাবার পথে মুক্তিযোদ্ধা সুবল দাসের দলকে সাহায্য করার জন্য ঘুঙ্গিয়ার গাও, শাল্লায় পাকিস্তান আর্মির সাথে গুলি বিনিময় করেছে জ্যোতির দল। সেখান থেকে ভোরে রওয়ানা হয়ে সকাল নয়টায় ইউনিয়ন অফিসের সামনে হঠাৎ তাদের চোখে পড়ে রাজাকারদের নৌকা, তেলাপোকাগুলো নিরীহ জেলেদের নৌকা আটকে লুটপাট করছে। এক জেলে ইলিয়াসকে চিনতে পেরে আকুল স্বরে অনুনয় করলো, 'ও দাসবাবুর ভাই, আপনারা আমাদের বাঁচান।'
তৎক্ষণাৎ আক্রমণে কয়েকজন রাজাকার মারা যায় সেখানেই। বাকিরা দুই নৌকায় ইঁদুরের বাচ্চার মত পালিয়ে আসতে থাকে। জ্যোতি বাকিদের অপেক্ষা করতে বলে বারোজন সাথে নিয়ে তাড়া করেন সেই পলায়নপর তেলাপোকাগুলোকে। অন্যরা তার সাথে আসতে চেয়েছিল, জগতজ্যোতি ধমক দিয়ে বলেছে, কয়টা রাজাকার ধরতে সবার আসার কি দরকার? নৌকা পাড়ে ভিড়িয়ে শুকনো বিল পেরিয়ে তেলাপোকাগুলো পালিয়ে যায় জলসুখার দিকে। জলসুখা জ্যোতির গ্রাম। নাড়িপোতা ঠিকানা। কিন্তু জ্যোতির তখন অপারেশনে, তাই কাছে এসেও ফিরে যান। যাবার সময় মর্টারের রেঞ্জে কাছাকাছি এক রাজাকারের বাড়িতে মর্টার শেলিং করে ওরা। ফেরার সময় হঠাৎই পাল্টে যায় সব কিছু।
হঠাৎ চায়নিজ রাইফেলের গুলির আওয়াজ ভেসে আসে অনতিদূর থেকে। চায়নিজ রাইফেল পাকিস্তানিদের অস্ত্র, রাজাকারদের কাছে চায়নিজ রাইফেল থাকার কথা না। ওদের দৌড় বন্দুক পর্যন্তই। বিলের কাছে আসার পর ওরা দেখে, একদিকে আজমিরীগঞ্জ, অন্যদিকে শাল্লা ও মাকুলির দিক থেকে গানবোটে করে পাকিস্তানী আর্মিরা এসে নদীর পাড়ে পজিশন নিচ্ছে। ঠিক উল্টোদিকের বদলপুরেও গুলির আওয়াজ। রাজাকারগুলো ছিল আসলে ঘুঁটি, ওদের টোপ হিসেব কাজে লাগিয়ে শেষপর্যন্ত সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলে পাকিস্তানিদের ত্রাস দাস পার্টিকে তিনদিক থেকে ঘিরে ফেলেছে পাকিস্তান আর্মি। সুপ্রশিক্ষিত হিংস্র পাকি হায়েনাগুলো এতোদিন রোম ওঠা নেড়িকুকুরের মত সকাল-বিকাল মার খেয়েছে দাস পার্টির দুর্ধষ গেরিলাদের হাতে, আজ তারা আটঘাট বেঁধেই এসেছে ...
দুইদিক থেকেই পাকিস্তান আর্মি পজিশন নেয় নদীর পাড় জুড়ে, আর জ্যোতির দলের ১২ জন পজিশন নেয় নদী আর শুকনো বিলের মাঝে। দুরত্বটা এতোই কাছে যে,পাকি জওয়ানদের পজিশন নেওয়ার জন্য অফিসারদের দেওয়া উর্দু কমান্ডও শুনতে পাচ্ছিলেন জগতজ্যোতিরা। জ্যোতি আর তার সেকেন্ড ইন কমান্ড ইলিয়াস সামনের কলামে, দুজনের হাতেই মেশিনগান আর দু'ইঞ্চি মর্টার- এরপরের সারিতে মতিউর, রশিদ, আইয়ুব আলী, বিনোদ বিহারী বৈষ্ণব,ধন মিয়া, কাজল, সুনীল, নীলু, কাইয়ুম ও আতাউর। বিপরীতে অগুনতি পাকিস্তানী সেনা... যুদ্ধ শুরু হলো সামনাসামনি... মাত্র ১২ জন যোদ্ধা নিয়ে নিতান্তই এক অসম যুদ্ধে লিপ্ত জগতজ্যোতির কণ্ঠ চিরে হঠাৎ বেরোয় এক অদ্ভুত উৎসাহের কথা, ''চল, আজ শালাদের জ্যান্ত ধরবো, একেবারে হাতেনাতে''।
মৃত্যুভয়কে তুড়ি মেরে অকুতোভয় দুঃসাহসে যুদ্ধ করে যাওয়া ছোট্ট দলটায় তবুও ছোবল দিতে আপ্রাণ চেষ্টায় মাতে মৃত্যু। আইয়ুব আলির মাথায় গুলি লাগে, তাকে দুজনের জিম্মায় দিয়ে পিছিয়ে বদলপুরের দিকে পাঠিয়ে দেন জ্যোতি। ভয়ংকর একপেশে সে যুদ্ধে একটু পর আহত হন আরেক মুক্তিযোদ্ধা। মাথার উপর চক্কর দিতে থাকে পাকিস্তান এয়ারফোর্সের ফগার, শিকারী হাউন্ডের মত... ওদিকে বদলপুরে থাকা মূল দলের বাকি ৩০ জনকে আটকে রাখে পাকিস্তানীদের আরেকটি দল। কোন সাহায্য পৌঁছায় না জ্যোতির দলের কাছে, দলের মাথাটা বাগে পেয়েছে আজ পাকিস্তানীরা, কেটে ফেলার প্রাণপণ চেষ্টা করে যায় তারা।
ক্রমশ কঠিন হয়ে যাওয়া যুদ্ধের এক পর্যায়ে ইলিয়াস জিজ্ঞেস করেন, ''দাদা, কি করবো?'' নির্মোহ গলায় জ্যোতি শান্ত জবাব,'' তোর যা খুশি কর।'' কমান্ডার যেন বুঝতে পেরেছিলেন এটাই তার শেষ যুদ্ধ। শেষ যুদ্ধ পরিচালনার ভার তাই প্রিয় সহযোদ্ধার কাঁধে দিয়ে জ্যোতি মন দেন নিখুঁত নিশানার দিকে। ফুরিয়ে আসতে থাকে গুলি। ইলিয়াস বিনোদবিহারীসহ আরো দু-তিনজনকে পাঠান বদলপুর থেকে যেভাবেই হোক গুলিসহ রসদ আনবার জন্য। বিকেল সাড়ে তিনটায় হুট করে গুলি লাগে ইলিয়াসের বুকের বাম পাশে। হাত দিয়ে দেখেন, কি আশ্চর্য, হৃদপিণ্ড ভেদ না করেই গুলি বেরিয়ে গেছে যেন কিভাবে... মাথার গামছা খুলে বুকের ক্ষতস্থান বেঁধে দিতে দিতে জ্যোতি জিজ্ঞেস করেন, "বাঁচবি?" বুকে বুলেটের ক্ষত নিয়ে আহত ইলিয়াস জবাব দেন, "মনে হয় বাঁচতে পারি।" কমান্ডার নির্দেশ দেন, "তবে যুদ্ধ কর।"

১২ জন থেকে যোদ্ধার সংখ্যা এসে দাঁড়ায় পাঁচজনে। একটু পরে স্রেফ ইলিয়াস আর জ্যোতি ছাড়া আর কারোর অস্ত্র থেকে গুলির শব্দ শোনা যায় না। এমনকি জ্যোতির এলএমজির গুলি সরবরাহকারীও নেই আর। মধ্য নভেম্বরের দীর্ঘ বিকেলের সেই ক্লান্ত সময়ে এক অসম্ভব যুদ্ধে লিপ্ত হন দুই যোদ্ধা। ইলিয়াস গুলি লোড করতে থাকেন, আর জ্যোতি ১০০ গজ দূরে সারিবদ্ধ পাকিস্তানীদের গুলি করতে থাকেন অকুতোভয় তীব্রতায়। নিখুঁত নিশানায়, একটার পর একটা... মাথার উপর দিয়ে তীব্র গর্জন করতে করতে বেরিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তানীদের একটার পর একটা গুলি। তাতে বাঁধ দিতে মাঝে মাঝেই মর্টার থেকে শেলিং করছেন তারা।মনে ক্ষীণ আশা, সন্ধ্যা হয়ে গেলে হয়তো পাকিস্তানীদের ফাঁকি দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া যাবে... হায়, সময় ওটুকু সময়ও দেয়নি সেদিন...
সন্ধ্যা হবার ঠিক আছে জ্যোতির মাথা ভেদ করে যায় এক আচমকা পাকিস্তানী বুলেট। গলাকাটা মহিষের মত ছটফট করে জ্যোতির শরীর, ইলিয়াস জড়ায়ে ধরেন তারে, ডাকেন, "দাদা, ও দাদা"... জ্যোতি একবার মাথা তোলেন, মাথা পড়ে যায়। যাবার আগে মাতৃভাষায় স্রেফ দুটো ক্লান্ত শব্দ উচ্চারিত হয় পাকিস্তানীদের সীমাহীন আতংক আর ভয়ের কারিগরের কণ্ঠ থেকে, "আমি যাইগ্যা"...
সেদিন কাঁদতে পারেননি, যুদ্ধক্ষেত্রে যোদ্ধাদের কাঁদার নিয়ম নেই যে! ইলিয়াস কাঁদেন ৪৩ বছর পর, ২০১৫ সালের ২০শে জুন, স্বাধীন মাটিতে সেদিনের সেই যুদ্ধের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে,দাদার স্মৃতিচারন করতে গিয়ে, চিৎকার করে কাঁদেন দাদার জন্য, তার কমান্ডারের জন্য... এ কান্না বড় শোকার্ত, তীব্র আর্তনাদের। এ কান্না হৃদয়ের গহীন ভেতরের, বড় যন্ত্রণার... নিষ্ঠুরের মত ইলিয়াসের ঘোর ভাঙ্গেন হাসান মুর্শেদ। প্রশ্ন করেন, "তারপর কি হলো ইলিয়াস ভাই?" ইলিয়াস বলেন সেই অসম্ভব যন্ত্রণার গল্প।
প্রিয় কমান্ডারের নিথর শরীর বিলের কাদাপানির ভেতর যতটা সম্ভব পুঁতে ফেলতে হয় তাকে, যেন শত্রুর হাতে এই বীরের কোন অবমাননা না হয়। নিজের এসএমজিটার সাথে তুলে নেন দলনেতার এলএমজিটাও। বুকে বাঁধা গামছা থেকে চুইয়ে পড়তে থাকা রক্ত উপেক্ষা করে গুলি ছুড়তে ছুড়তে পেছনে ফিরতে থাকেন ইলিয়াস। ইলিয়াসের চেষ্টাটুকু সফল হয় না। পরদিন সকালে লাশ কাদা পানি ভেতর দিয়ে ভেসে ওঠে। রাজাকার তেলাপোকাগুলো বেরিয়ে আসে তখন, টেনে-হিঁচড়ে লাশটা নিয়ে আসে তাদের ঘাঁটিতে। তারপর জগতজ্যোতির মা-বাবাকে লাশের সামনে টেনে আনলো ওরা। পাথরের মত পাষাণ হয়ে মা বললেন, এই লাশ তার জ্যোতির না, জ্যোতির বাম হাতে একটা আঙ্গুল বেশি। কেন জ্যোতির মা সন্তানের লাশকে অগ্রাহ্য করেছিলেন? মা হয়ে কিভাবে এ সাহস করলেন তিনি? তিনি কি তখন তার স্বামী আর বেঁচে থাকা অপর সন্তানের জীবন বাঁচানোর কথা ভাবছিলেন? জানা যাবে না আর কখনই।
মারা গেছেন তিনি ক'বছর আগে। তাতে খুব বেশি লাভ হলো না। বাড়ি ফিরে যেতে যেতে জ্যোতির বাবা-মা দেখলেন, তাদের ভিটায় আগুন, জ্বলছে সব। ওদিকে নর্দমার ময়লায় লুকিয়ে থাকা রাজাকার তেলাপোকাগুলো জ্যোতির লাশটা নৌকার সামনে বেঁধে নিল, আজমিরীগঞ্জ থেকে জলসুখা পর্যন্ত ঘাটে ঘাটে উৎকট উৎসাহের সাথে প্রদর্শন করলো ''গাদ্দার'' এর লাশ,পৈশাচিক উল্লাসে... তারপর আজমিরীগঞ্জ পৌঁছে বৈদ্যুতিক খুটির সাথে বেয়নেটে ক্ষতবিক্ষত লাশটা বেঁধে রাখলো তারা, সবাইকে দেখিয়ে দেখিয়ে জানালো, এই হচ্ছে সেই কুখ্যাত ভারতীয় দালাল, গাদ্দার...
আজ ১৬ই নভেম্বর, জগতজ্যোতির মৃত্যুদিন। প্রথম বীরশ্রেষ্ঠ হওয়ার কথা ছিল জগতজ্যোতি দাসের, স্বাধীন বাঙলা বেতার কেন্দ্র থেকে জগতজ্যোতির মৃত্যুর পর তাকে সর্বোচ্চ বীরত্বভূষণ দেবার কথা বলা হয়েছিল বারবার, কিন্তু অব্যাখানীয় কোন কারণে তা আর হয়ে ওঠেনি, বীরশ্রেষ্ঠ তো দূরে থাক, ভাটি অঞ্চলের কিংবদন্তী জগতজ্যোতিকে আজ প্রায় কেউই চেনে না, একাত্তরে শাল্লা-জামালগঞ্জ-তাহিরপুর-টেকেরহাটে ছোট্ট কিন্তু দুর্ধষ মুক্তিযোদ্ধা দল দাস পার্টির নেতৃত্বে ছিল যে। মাত্র একুশ বছর বয়সের অসমসাহসী এই বীর যোদ্ধা ৩৬ জনের গেরিলা দল নিয়ে হাজার পাকিস্তানী-রাজাকার বাহিনীর বুকে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন বৃহত্তর সিলেটের হাওড় অঞ্চলে। ঢাকার বুকে ক্র্যাক প্লাটুন ছিল যেমন দুর্ধষ, ঠিক তেমনি ভাটি অঞ্চলে পাকিস্তানীদের সাক্ষাৎ যমদূত হয়ে এসেছিল দাস পার্টি!
যথারীতি বাংলাদেশ অন্য আরো হাজারো বীরের মত দাস পার্টির অনন্য বীরত্বগাঁথা ভুলে এগিয়ে গেছে আরো সাড়ে চার দশক। বেঁচে থাকা গেরিলারা কে কোথায় হারিয়ে গেছে কেউ খোঁজ করে না। অবশ্য অন্য কাউকে দোষ দেবো কি, রাষ্ট্র নিজেই ভুলে গেছে এই বীরের কথা। ভুলে গেছে অকুতোভয় সাহসে অকাতরে জীবন দিয়ে স্বাধীনতা কিনে আনা দাস পার্টির কথা। ৪৯ বছর পরের এই বাংলাদেশে যেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের পিটিয়ে হাড়-গোড় গুড়ো করে মেরেই ফেলা হয়, সেখানে জগতজ্যোতির মত বিলীয়মান ধুলো পড়া অতীত যে কেউ মনে রাখবে, সে আশা করাটাও যে পাপ...
জগতজ্যোতিরা স্বপ্নের যে বাংলাদেশে আজ চমৎকার পরিকল্পনায় ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের বাড়ীঘর পুড়িয়ে, অত্যাচার নির্যাতন করে পাকিস্তানী কায়দায় তাদের দেশ ছাড়া করা হয়, সাঁওতালদের উচ্ছেদ করা তাদের নিজেদের ভিটা থেকে, মুক্তিযোদ্ধাদের উপর চালানো হয় অকল্পনীয় নির্যাতন ও অত্যাচার, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য বুড়িগঙ্গায় ছুঁড়ে ফেলার হুমকি দেয়া হয় প্রকাশ্যে, নতুন প্রজন্মের হাজারো সন্তান জগতজ্যোতিদের উত্তরসুরী হয়ে পাকিস্তানের সমর্থনে গলা ফাটায়, আফ্রিদি-মিসবাহকে খেলার সাথে পাকিস্তান না মিলিয়ে ভালোবাসে, সেই বাংলাদেশে জগতজ্যোতিদের কথা মনে রাখার সময় কোথায়? জগতজ্যোতিরা মরে গেছে। এখনো যে মুক্তিযোদ্ধারা বেঁচে আছেন, এখনো ধুঁকে ধুঁকে বেঁচে আছে অতীতের গৌরবের সাক্ষী হয়ে, তাদের আমরা মেরে ফেলছি। কখনো চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে, জবাই করে, কখনো হাতুড়ি-রড দিয়ে পেটাতে পেটাতে...
এই বাংলাদেশে আজো এমন অসংখ্য মানুষ ঘুরে বেড়ায়, যারা বলে হিন্দুরা মুক্তিযুদ্ধ করে নাই, হিন্দুরা একাত্তরে সব ভারত পালায়ে গেছিল, তাই এইটা হিন্দুদের দেশ না। তাদের কথা শুনে বীরশ্রেষ্ঠ জগতজ্যোতি মৃত্যুর ওপার থেকে মৃদু হাসেন, বড় আক্ষেপের এক দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে সেই হাসি চিরে। একাত্তরে ঠিক এভাবেই শেষ নিঃশ্বাসটুকু দিয়েও একটা স্বাধীন দেশ, স্বাধীন পরিচয় কিনে দিয়ে গিয়েছিলেন জগতজ্যোতির মত এমন হাজারো বীর, আজ স্বাধীন দেশে আধুনিক প্রজন্মের আফ্রিদিপ্রেমী উত্তরসূরীদের কথা শুনে জগতজ্যোতিরা আরেকবার বিস্মৃত হন, হারিয়ে যান, নিঃশব্দে, চুপচাপ...
পরিশিষ্ট: শহীদ জগতজ্যোতি দাস, গণবাহিনী, বীর বিক্রম, সেক্টর ০৫, ১৫৪ এবং তার অভুতপুর্ব গেরিলা দল দাস পার্টির হারাতে বসা ইতিহাসটা পরম যত্নে আর একরাশ মমতায় তুলে এনেছেন হাসান মুর্শেদ ভাই। তার দাস পার্টির খোঁজে বইটা মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম তথ্যানুসন্ধানী আকর গ্রন্থ বলে বিবেচিত হবে আমার বিশ্বাস। রক্তাক্ত জন্ম ইতিহাসের এই অসামান্য আখ্যানপর্ব তুলে আনার জন্য তাকে অশেষ কৃতজ্ঞতা। শ্রদ্ধা। অভিবাদন।
*
প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন