জগদীশ চন্দ্র বসু: মুন্সিগঞ্জের যে সন্তান চমকে দিয়েছিল পুরো বিশ্ব!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
রেডিওর আবিষ্কার, জগদীশ চন্দ্র বসু বনাম মার্কোনি, উদ্ভিদেরও অনুভূতি আছে এবং বঞ্চনা ছাপিয়ে সংগ্রামী জগদীশের এগিয়ে চলার গল্প নিয়ে পাঠকদের জন্য এক বিশেষ লেখা...
১৮৯৬ সাল, লন্ডনের লিভারপুলের ব্রিটিশ অ্যাসোসিয়েশান। বক্তৃতা দিচ্ছেন তরুণ ভারতীয় বিজ্ঞানী। বক্তৃতার বিষয়- ‘অন ইলেকট্রিক ওয়েভ্স’। দর্শকসারিতে উপস্থিত সর্বজন শ্রদ্ধেয় বিজ্ঞানী লর্ড কেলভিন। বক্তৃতা শেষ হবার পর তিনি হাঁটুর ব্যথা নিয়ে কষ্ট করে দোতালায় উঠে আসলেন। সেখানে উপবিষ্ট বিজ্ঞানীর স্ত্রীর কাছে গিয়ে বললেন,“মহাশয়া, আপনি আপনার স্বামীর জন্য গর্ববোধ করতে পারেন। তিনি একজন সার্থক বিজ্ঞানী”'। কে এই বিজ্ঞানী? তিনি হলেন আমাদের সবার গর্ব স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু।
ইংরেজ শাসনামলে উপমহাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থার চরম অবনতি ঘটে। স্বাভাবিকভাবেই এর প্রভাব পড়ে শিক্ষা ব্যবস্থার উপর। সেই সময় বিজ্ঞানে আগ্রহী মানুষের সংখ্যা ছিল একেবারেই নগণ্য। স্বামী বিবেকানন্দ প্রকাশ্যেই বলেছিলেন,“আমরা ওদের (পাশ্চাত্য সমাজ) কাছ থেকে বিজ্ঞান নেব, বদলে দিব ধর্মীয় মূল্যবোধ”। তখন অধিকাংশ তরুণ উচ্চশিক্ষার জন্য ব্যারিস্টারি বেছে নিতেন। এর মাঝে প্রচলিত ধারার বাইরে গিয়ে ভারতবর্ষের মুখ উজ্জ্বল করেছিলেন আমাদের বাংলার স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু।
জন্ম ও শিক্ষাজীবন
মুন্সিগঞ্জের রাঢ়িখালের সন্তান জগদীশ চন্দ্র বসু। ব্রিটিশ সরকারের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ভগবান চন্দ্র বসু ও বনসুন্দরী দেবীর প্রথম সন্তান। জগদীশের জন্মের সময় তাঁর বাবা ফরিদপুরের ম্যাজিস্ট্রেট। তবে জগদীশ চন্দ্রের জন্ম ময়মনসিংহে, নানার বাড়িতে ১৮৫৮ সালের ৩০ নভেম্বর।
সে সময় ইংরেজদের স্কুলে ছেলেমেয়েকে পড়ানো ছিল আভিজাত্যের ব্যাপার। কিন্তু ভগবান চন্দ্র বসু তাঁর সন্তানকে এমনকি ফরিদপুরেও রাখলেন না, পাঠিয়ে দিলেন নিজ গ্রামে। সেখানে বাবার চালু করা পাঠশালায় জগদীশের পড়ালেখার হাতেখড়ি। প্রাথমিক পড়ালেখার পর ফরিদপুর হাইস্কুলে পড়ে অবশেষে ১৮৬৯ সালে জগদীশ চলে গেলেন কলকাতায়। ভর্তি হলেন সেন্ট জেভিয়ার স্কুল ও কলেজে।
সেখানে তখন বিজ্ঞান নিয়ে ভারতবাসীকে জাগানোর চেষ্টা করছেন ফাদার ইউজিন লাফো। বিজ্ঞানেই মুক্তি- এ ছিল তাঁর যুক্তি। জগদীশ হয়ে উঠলেন তাঁর ভক্ত। প্রবীণ এই অধ্যাপকের আকর্ষণীয় ক্লাস জগদীশ বসুকে ভীষণভাবে প্রভাবিত করে। তিনি ক্রমশঃ পদার্থবিদ্যার প্রতি গভীর আগ্রহ অনুভব করতে শুরু করেন। ১৮৭৭ সালে জগদীশ চন্দ্র এফ-এ পাশ করেন এবং ১৮৮০ সালে বি-এ। উভয় পরীক্ষাতেই পদার্থবিদ্যার পাশাপাশি ল্যাটিন ভাষা ছিল তাঁর অন্যতম বিষয়।
শুরুতে লক্ষ্য ছিল ডাক্তারী পড়বেন। কিন্তু ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে তাঁর স্বাস্থ্য নষ্ট হয়ে গেলো। বিলেতে গিয়ে ডাক্তারীতে ভর্তি হয়েও স্বাস্থ্যগত কারণে পড়া হলো না। পরে ন্যাচারাল সায়েন্সে উচ্চতর শিক্ষার জন্য ভর্তি হলেন কেমব্রিজে। ১৮৮২ সালে কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি থেকে ফিজিক্সে অনার্স সহ ট্রাইপস পাশ করেন এবং ১৮৮৪ সালে লন্ডন ইউনিভার্সিটি থেকে বি-এসসি পাশ করেন।
জগদীশ চন্দ্র বসুর ছাত্রাবস্থাতেই ১৮৭৬ সালের ১৫ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ‘ইন্ডিয়ান এসোসিয়েশান ফর দ্যা কালটিভেশান অব সায়েন্স’। ভারতীয় জনসমাজকে বিজ্ঞানের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন করার উদ্দেশ্যে ডাক্তার মহেন্দ্র লাল সরকার এই এসোসিয়েশান প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বাঙালিদের মধ্যে বিজ্ঞানচেতনা জাগানোর পক্ষে এই প্রতিষ্ঠান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। সেই সময়ের বাঙালি বিজ্ঞানী হিসেবে যারা স্বীকৃতি লাভ করেছেন তাঁদের অনেকেই এই এসোসিয়েশানের সঙ্গে কোন না কোন সময়ে যুক্ত ছিলেন। ১৮৮৫ সালে জগদীশ বসু এই এসোসিয়েশানে এক্সপেরিমেন্টাল ফিজিক্সের ক্লাস নিতে শুরু করলেন। এখান থেকেই তাঁর পদার্থবিদ্যার মৌলিক গবেষণা শুরু হয়।
বঞ্চনা ছাপিয়ে সংগ্রামী জগদীশ
জগদীশ চন্দ্র বসু দেশে ফিরে কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজে পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক হিসেবে চাকরিতে যোগদানের চেষ্টা করেন। ‘ভারতীয়রা পড়াতে পারে না’ অজুহাতে কলেজের সেই সময়কার অধ্যক্ষ চার্লস টনি এবং বাংলার পাবলিক ইনস্টিটিউটের পরিচালক স্যার আলফ্রেড ক্রফট প্রবল বিরোধিতা করেন। লন্ডনে থাকাকালীন সময়ে জগদীশ তৎকালীন ভারতের ভাইসরয় লর্ড রিপনের সাথে দেখা করতে যান। তাঁর পাণ্ডিত্য দেখে লর্ড রিপন মুগ্ধ হন এবং বাংলার শিক্ষা দপ্তরের কর্তাদের নির্দেশ দেন জগদীশের উপযুক্ত চাকরির ব্যবস্থা করতে। ভাইসরয়ের নির্দেশ অমান্য করতে না পেরে ক্রফট জগদীশকে প্রভিন্সিয়াল সার্ভিসে চাকরি দিতে চান। প্রভিন্সিয়াল সার্ভিসের চাকরির বেতন ও পদমর্যাদা দুই-ই ছিল ইম্পিরিয়াল সার্ভিসের তুলনায় কম। ইংল্যান্ড থেকে ডিগ্রি নিয়ে আসলে তখন সবাই ইম্পিরিয়াল সার্ভিসে চাকরি পেত। জগদীশ চন্দ্র বসু এই প্রস্তাব প্রত্যাখান করেন।
এদিকে লর্ড রিপন গেজেটে জগদীশের নাম অনুপস্থিত দেখে পুনরায় স্যার ক্রফটকে নির্দেশ দেন। তখন ক্রফট জগদীশকে ইম্পিরিয়াল সার্ভিসে অস্থায়ী চাকরি দিতে রাজি হন। কিন্তু চাকরির শর্ত ছিল জগদীশ ইংরেজ অধ্যাপকদের দুই-তৃতীয়াংশ বেতন পাবেন! জগদীশ চন্দ্র বসু চাকরি নিলেও শিক্ষা দপ্তরকে জানিয়ে দেন যতদিন ইংরেজ অধ্যাপকদের সমান বেতন না দেয়া হবে, ততদিন তিনি এক পয়সাও নিবেন না। টানা তিন বছর তিনি বেতন নিতে অস্বীকার করেন। এমতাবস্থায় সংসারে অভাব অনটনের মাঝে ১৮৮৭ সালে জগদীশ চন্দ্র অবলা দাসকে বিয়ে করলেন। অবলা দাস ছিলেন উচ্চ শিক্ষিতা ও বিদুষী। তিন বছর পরে কলেজ কর্তৃপক্ষ তাঁকে সসম্মানে পূর্ণবেতনে অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ দেয়। তাঁর তিন বছরের বকেয়া বেতনও পরিশোধ করা হয়।
প্রেসিডেন্সি কলেজে জয়েন করার পর থেকে অনেকদিন পর্যন্ত প্রিন্সিপাল টনি জগদীশের ক্লাস চলার সময় আড়াল থেকে লক্ষ্য করতেন। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল যেকোনো দুর্বলতার অজুহাতে জগদীশকে চাকরীচ্যুত করা। কিন্তু জগদীশ চন্দ্র বসু শুরু থেকেই ছাত্রদের মন জয় করে নিয়েছিলেন। তিনি কাঁটায় কাঁটায় ঠিক সময়ে ক্লাসে যেতেন। বিজ্ঞান পাঠ সহজ করে তোলার জন্য নিজ হাতে বিভিন্ন পরীক্ষার মডেল বানাতেন। প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রায় সকল অধ্যাপকের লক্ষ্য থাকত বিভাগীয় প্রধান হওয়া। কিন্তু তাঁর আকর্ষণ ছিল বিজ্ঞানের অজানা রহস্য উদঘাটন করা। কলেজে বাথরুমের মত ছোট অব্যবহার্য একটি রুম ছিল। সেটি পরিষ্কার করে তিনি গবেষণাগার হিসেবে ব্যবহার করতেন। সকল প্রয়োজনীয় যন্ত্র তিনি নিজে তৈরি করে নিতেন।
এ ব্যাপারে স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু একটি চমত্কার কথা বলতেন। তিনি বলতেন,“সে-ই প্রকৃত বিজ্ঞানী যে তার ল্যাবরেটরির সঙ্গে ঝগড়া করে না।” অর্থাৎ প্রকৃত বিজ্ঞানী সব সময় নিজের ল্যাবরেটরি তৈরি করে নেন, অন্যকে দোষারোপ করেন না। তাই হাতের কাছে সহজলভ্য উপকরণ যেমন টিন,দড়ি প্রভৃতি এবং দেশীয় মিস্ত্রিদের দিয়েই পদার্থবিজ্ঞানের জটিল সব যন্ত্র তৈরি করতেন। এক্স-রে রশ্মি আবিষ্কারের পর তিনি নিজস্ব উদ্ভাবনী ক্ষমতা দিয়ে ডাঃ মহেন্দ্রলাল সরকারকে এক্স-রে মেশিন তৈরি করে দিয়েছিলেন। সাধারণ বাঙালি মিস্ত্রিদের সহযোগিতায় তৈরি করেছেন স্ফিগমোগ্রাফ, ফটোমিটার, ফটোসিন্থেটিক বাব্লার প্রভৃতি যন্ত্র। বৈজ্ঞানিক যন্ত্রের উপাদান হিসেবে তিনি শজারুর কাঁটা পর্যন্ত ব্যবহার করেছেন!
গবেষণা শুরু ও বিশ্বজয়
জগদীশচন্দ্র বসুর গবেষণাকাল তিন পর্যায়ে বিভক্ত:
- ১৮৯৫-৯৯ সাল- (বিদ্যুৎ-তরঙ্গ সম্বন্ধে পদার্থ বিজ্ঞানে তাত্ত্বিক গবেষণা)
- ১৯০০-০২ সাল- (জড় ও জীবের সাড়ার ঐক্য)
- ১৯০৩-৩২ সাল-(উদ্ভিদের শারীরবৃত্ত-সম্পর্কিত গবেষণায় পদার্থবিদ্যার প্রয়োগ)
বিজ্ঞানীরা তখন মাত্র বুঝতে পেরেছেন বিদ্যুৎ ও চৌম্বক শক্তির যৌথ কম্পনেই আলোর সৃষ্টি হয়। প্রখ্যাত জার্মান বৈজ্ঞানিক হেনরিক হার্টজ(১৮৫৭-১৮৯৪) এক যন্ত্র আবিষ্কার করে দেখালেন একদিকে উৎপন্ন হচ্ছে অদৃশ্য আলো, আর দূরে রাখা একটি যন্ত্রে ধরা পড়ছে সেই অদৃশ্য আলোর ঢেউ। হার্টজ বিদ্যুতের সাহায্যে যে বিদ্যুৎ-চৌম্বক-তরঙ্গ সৃষ্টি করেন তার ক্ষুদ্রতম তরঙ্গদৈর্ঘ্য ৬৬০ মিলিমিটার। কিন্তু এতো দীর্ঘ তরঙ্গকে গবেষণায় শনাক্ত করা সম্ভব নয়। তাহলে অদৃশ্য আলোক ধরার কৌশল কী? এ প্রশ্নের জবাব হার্টজ দিয়ে যেতে পারেননি। জগদীশ চন্দ্র তাঁর অসমাপ্ত কাজ শেষ করেন।
দৃশ্যমান আলোর ধর্ম হলো তিনটি: এরা সরল গতিতে গমন করে; এরা বাধা পেলে প্রতিহত হয় এবং এক মাধ্যম থেকে অপর মাধ্যমে যেতে এর প্রতিসরণ ঘটে। জগদীশ চন্দ্র তাঁর আবিষ্কৃত উন্নতমানের গ্রাহক যন্ত্রে প্রমাণ করেন যে, দৃশ্য ও অদৃশ্য আলোকের ধর্ম এক ও অভিন্ন। হার্টজ ও মার্কনির সমসাময়িক জগদীশ চন্দ্র বসুই হলেন বিশ্বের প্রথম বৈজ্ঞানিক যিনি ১৮৯৫ সালে সর্বপ্রথম সাফল্যের সঙ্গে মাইক্রোওয়েভ বা অতিক্ষুদ্র তরঙ্গ উৎপাদন করেন এবং সেই সঙ্গে তাঁর ধর্মাবলিও নির্ধারণ করেন। উল্লেখ্য যে, বর্তমানে রিমোট কন্ট্রোল নামে আমরা যে ধারণার সঙ্গে পরিচিত তার প্রথম উদ্ভাবকও বৈজ্ঞানিক জগদীশ চন্দ্র!
১৮৯৫ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজে রিমোট কন্ট্রোল সিস্টেমের রিমোট সেন্সিং সর্বপ্রথম প্রদর্শন করেন তিনি। অধ্যাপক প্রফুল্লচন্দ্রের ঘরে রাখা হয় একটি প্রেরক যন্ত্র। আর আলেকজান্ডার পেডলার নামে আর একজন অধ্যাপকের ঘরে রাখা হয় গ্রাহক যন্ত্র। দুটো ঘরের মধ্যে ব্যবধান ৭০ ফুট এবং মাঝখানে রয়েছে দেয়াল। প্রেরক যন্ত্র থেকে অদৃশ্য বিদ্যুৎ তরঙ্গ গিয়ে অন্য ঘরের গ্রাহক যন্ত্রের মাধ্যমে একটি পিস্তলে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দেয়।
এর ক’দিন পরে জগদীশ বসু কলকাতার টাউন হলে ৭৫ ফুট দূরে রাখা বারুদের স্তুপে আগুন জ্বালাতে সমর্থ হন নিজের উদ্ভাবিত মাইক্রোওয়েভ কমিউনিকেশানের সাহায্যে! টাউন হলে ছোটলাট স্যার উইলিয়াম ম্যাকেঞ্জি আমন্ত্রিত ছিলেন। তিনি মুগ্ধ হয়ে তাঁকে সরকারের তরফ থেকে অর্থ সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেন। এই গবেষণায় সবাই খুশি হলেও জগদীশ চন্দ্র কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোন সহায়তা পাননি, বরং পেয়েছেন শুধু অবহেলা ও অপমান। ক্লান্তিহীন গবেষণার সময়ও তাঁকে সপ্তাহে ২৬ ঘণ্টা ক্লাস নিতে বাধ্য করা হয়। এক্ষেত্রে শিক্ষা বিভাগের মন্তব্য ছিলো,“অধ্যাপকের কাজ অধ্যাপনা, গবেষণা করা নয়!”
লন্ডনে জগদীশ চন্দ্রের শিক্ষক ছিলেন কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটির ক্যাভেন্ডিজ ল্যাবের বিখ্যাত বিজ্ঞানী লর্ড রেইলে (Lord Rayleigh)। তাঁর কাছে জগদীশ চন্দ্র নিজের দুটি গবেষণাপত্র পাঠিয়ে দেন। তিনি মুগ্ধ হয়ে তা বিখ্যাত বিজ্ঞানের পত্রিকা ‘দ্যা ইলেকট্রিশিয়ান’-এ ছাপার ব্যবস্থা করে দেন। ১৮৯৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি লন্ডনের ‘দ্যা ইলেকট্রিশিয়ান’ পত্রিকা লিখেছিল,“বর্তমান সময়ে বিনা তারে বার্তা প্রেরণ করার যতগুলো যন্ত্র উদ্ভাবিত হয়েছে, জগদীশ চন্দ্র বসু আবিষ্কৃত যন্ত্র সকলকে হটিয়ে দিলো।”
প্রেসিডেন্সি কলেজে জগদীশ চন্দ্র বসু তাঁর নিজস্ব ক্ষুদ্র গবেষণাগারে যে সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন, তার বিবরণ দিয়ে একটি পুস্তিকা ছাপান এবং লর্ড কেলভিনের কাছে পাঠিয়ে দেন। তিনি এগুলো পড়ে চমৎকৃত হন। এরপর জগদীশ তরঙ্গদৈর্ঘ্য নির্ণয়ের কৌশল নিয়ে একটি গবেষণাপত্র লেখেন। লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় এর জন্য তাঁকে ডিএসসি ডিগ্রি দানের ঘোষণা দেয়। একজন অনুপস্থিত ব্যাক্তিকে এরকম ডিগ্রি দেয়ার দৃষ্টান্ত আর নেই! এর কিছুদিন পর লর্ড রেইলে জগদীশের সঙ্গে দেখা করতে আসেন। তিনি দেখতে পান জগদীশ প্রেসিডেন্সি কলেজের এক বাথরুমে বসে দেশি মিস্ত্রিদের দিয়ে যন্ত্রপাতি বানিয়ে কাজ করছেন! এত সীমিত সুযোগের মধ্যেও জগদীশ যে এত কাজ করছেন – দেখে খুব খুশি হলেন লর্ড রেইলে। তিনি জগদীশকে ইংল্যান্ডে যাওয়ারও প্রস্তাব দেন। তিনি জগদীশের অনেক প্রশংসা করলেন কলেজের ইংরেজ প্রিন্সিপালের কাছে। এতে হিতে বিপরীত হলো। লর্ড রেইলে চলে যাবার পর প্রিন্সিপালের কাছ থেকে শো-কজ নোটিশ পেলেন জগদীশ বসু। কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে “কলেজের অধ্যাপনায় ফাঁকি দিয়ে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া নিজের ইচ্ছেমত গবেষণা করাটা কেন অপরাধের পর্যায়ে পড়বে না ?”
এখানেই শেষ না। নিজের তৈরির ল্যাবের যন্ত্রপাতি চুরির অপবাদও সইতে হয়েছে জগদীশ বসুকে! ডিএসসি ডিগ্রি লাভের পর থেকেই অন্যান্য অধ্যাপকদের মধ্যে কথা উঠেছিল যে জগদীশ বসু মন দিয়ে ছাত্রদের পড়ান না, সরকারের কাছ থেকে বেতন নিয়ে নিজের কাজ করে। জগদীশ কোন অভিযোগের উত্তর না দিয়ে ইংল্যান্ড যাবার জন্য ছুটির করেন। কিন্তু নানা অজুহাতে তা আটকে দেয়া হয়। তখন লর্ড রেইলে নিজে ভারত সচিবকে জগদীশ চন্দ্রকে ইংল্যান্ড পাঠাবার জন্য সুপারিশ করেন। রয়্যাল সোসাইটি তাঁর কাজ সম্পর্কে আগ্রহ প্রকাশ করায় বিরোধীরা বেশিদূর অগ্রসর হতে পারে না।
১৮৯৬ সালে জগদীশ চন্দ্র বসু অদৃশ্য আলোক সম্পর্কে লিভারপুলের ব্রিটিশ অ্যাসোসিয়েশনের বক্তৃতা দেন। ঐ সময় যদি তিনি নিজের নামে বেতার যন্ত্র পেটেন্ট করতেন, তাহলে মার্কোনি না, তিনিই হতেন বেতার যন্ত্রের সর্বপ্রথম আবিষ্কারক। এরপর লন্ডনে রয়েল ইনস্টিটিউটে তাঁকে বক্তৃতা দেওয়ার জন্যে আহবান করা হয়। এখন প্রশ্ন হল জগদীশ চন্দ্র বসু নিজের নামে পেটেন্ট করেননি কেন? ১৯০১ সালে রবীন্দ্রনাথকে (জগদীশ চন্দ্র বসু এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পরস্পরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন) লিখা একটি চিঠিতে বলেন যে,“আমি যদি একবার টাকার মোহে পড়ে যাই, তাহলে আর কোনদিন আর বের হতে পারব না।” টাকার প্রতি তাঁর লোভ ছিল না বলেই তিনি পেটেন্ট নিজের নামে করেননি। অনেক অনুরোধের প্রেক্ষিতে তিনি গ্যালেনা ডিটেকটরের পেটেন্ট করালেও পরে তা প্রত্যাহার করেন।
অনেকেরই ধারণা, জগদীশ চন্দ্র যদি মাইক্রোতরঙ্গ নিয়ে তাঁর কাজ আরও এগিয়ে নিতেন, তাহলে ১৯০১ সালের প্রথম নোবেল পুরস্কারটি একজন বাঙালি পেতে পারতেন। প্যাটেন্ট না করায় রেডিওর আবিষ্কারক হিসেবে কিছুদিন আগেও পুরো বিশ্ববাসী ইটালির বিজ্ঞানী মার্কোনিকেই জানত। কিন্তু ১৯৯৮ সালে প্রকাশিত IEEE (Institute of Electrical and Electronics Engineers) এর প্রসিডিং এ জগদীশ চন্দ্র বসুকে রেডিওর প্রকৃত আবিষ্কারক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয় (1)।
কারণ,মার্কোনি তার আবিষ্কারে অনেক সূক্ষ্ম যন্ত্রপাতি ব্যবহার করেছিলেন যার মধ্যে একটি হচ্ছে কোহেরার (২টি ধাতব পাতের মাঝে খানিকটা পারদ),যা ছিল রেডিও বা তারহীন সংকেত পাঠানোর প্রক্রিয়ার মূল বিষয়। মজার ব্যপার হচ্ছে এই কোহেরার এর প্রকৃত আবিষ্কারক স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু, যা মার্কোনি বা তার সমসাময়িক বিজ্ঞানীরা কেউ স্বীকার করেনি। মার্কোনি বসুর তৈরি কোহেরারটি সামান্য পরিবর্তন করেছিলেন। বসুর কোহেরারটি ছিল U আকৃতির মত আর মার্কোনিরটি ছিল সোজা। এভাবেই স্যার জগদীশ চন্দ্র বসুর রেডিও আবিস্কারে অনন্য অবদান সারা বিশ্ব স্বীকার করে নেয়।
লন্ডনে রয়েল ইনস্টিটিউটে বক্তৃতা দেওয়ার জন্যে জগদীশ চন্দ্র বসুকে আহ্বান করা হয়। রয়্যাল সোসাইটিতে জগদীশের বক্তৃতায় ইউরোপের প্রথিতযশা বিজ্ঞানী সমাজ মুগ্ধ হন। তাঁর বক্তৃতা শেষ হবার পর লর্ড রেইলে বলেন,“এমন নির্ভুল বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা আগে দেখিনি। জগদীশ, তুমি দু-একটা ছোটখাটো ভুল করলে তবু মনে হত জিনিসটা বাস্তব! এ যেন মায়াজাল!!!” লর্ড কেলভিন নিজে ভারত সরকারের কাছে সুপারিশ করেন কলকাতায় আধুনিক ল্যাবরেটরি তৈরি করে দেয়ার জন্য। ভারত সরকার রাজি হয়ে এ খাতে চল্লিশ হাজার পাউন্ড বরাদ্দ করে।
জগদীশ বসু ইংল্যান্ডের ইউনিভার্সিটিতে অধ্যাপনার অফার পান। ইংল্যান্ডের ইউনিভার্সিটিতে পড়ানোর সুযোগ মানে গবেষণার ব্যাপক সূযোগ হাতে পাওয়া। কিন্তু স্বদেশের সাথে, প্রেসিডেন্সি কলেজের সাথে সব সম্পর্ক ছিন্ন করে বিদেশের মাটিতে পড়ে থাকা জগদীশ বসুর পক্ষে সম্ভব হলো না। তিনি তাঁর দেশকে হয়তো তাঁর বিজ্ঞান গবেষণার চেয়েও বেশি ভালবাসতেন। লন্ডন প্রবাসকালে ১৯০০ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে ১৯০২ সালের ২০ জুন পর্যন্ত সময়ের মধ্যে লেখা অনেকগুলো চিঠিতে জগদীশ বসু তাঁর প্রিয় বন্ধু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছে বারবার তাঁর স্বদেশ প্রেমের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি লিখেছেন, “আমাদের হৃদয়ের মূল ভারতবর্ষে। যদি সেখানে থাকিয়া কিছু করিতে পারি, তাহা হইলেই জীবন ধন্য হইবে। দেশে ফিরিয়া আসিলে যেসব বাধা পড়িবে তাহা বুঝিতে পারিতেছি না। যদি আমার অভীষ্ট অপূর্ণ থাকিয়া যায়, তাহাও সহ্য করিব। ”
উদ্ভিদেরও অনুভূতি আছে?
ইংল্যান্ড থেকে দেশে ফিরবার পর জগদীশ চন্দ্র বসুর গবেষণার বিষয়ে পরিবর্তন আসে। তিনি তাঁর বিদ্যুৎ তরঙ্গ উৎপাদক যন্ত্র কোহেরার এর কর্ম ক্ষমতা পরীক্ষা করার সময় অদ্ভুত ভাবে যন্ত্রটির আচরণের সাথে জীবের মিল খুঁজে পান। তিনি দেখেছিলেন ক্রমাগত উদ্দীপনা প্রয়োগ করার ফলে কোন যন্ত্র বা ধাতব পাত ক্লান্ত হয়ে পরে অর্থাৎ সাড়ার পরিমান কমে যায়। অপর পক্ষে উত্তেজক রাসায়নিক প্রদানে সাড়া অনেক বৃদ্ধি পায়। তাঁর গবেষণা জীবনের মোড় ঘুড়িয়ে দেয় এই ঘটনা। তিনি তখন ‘ধাতব বস্তুর’ প্রাণ আছে কি না তা ভাবতে থাকেন। তবে তাঁর এই ভাবনাটা ক্রমেই উদ্ভিদের দিকেই চলে যায়।
এ সময়েই তাঁর উদ্ভিদ বিষয়ক যুগান্তকারী গবেষণা আরম্ভ করেন। ১৯০০ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক পদার্থবিদ্যা বিষয়ক সম্মেলনে যোগ দেন বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র। এখানে তাঁর বক্তৃতায় বিষয় ছিল জীব ও জড়ের উপর বৈদ্যুতিক সাড়ার একাত্বতা। সেখানে জীব ও জড়ের সম্পর্ক বিষয়ে ব্রিটিশ এসোসিয়েশনের ব্রাডফোর্ড সভায় বক্তৃতা দেন।
মে ১০, ১৯০১। লন্ডনের রাজকীয় বিজ্ঞান সমিতির কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে জগদীশ চন্দ্র বসু একটি পরীক্ষার আয়োজন করেন। দর্শকেরা অবশ্য খুব বেশি চমত্কৃত হলেন না পরীক্ষার বন্দোবস্ত দেখে। একটি গাছের মূল একটি বোতলের পানির মধ্যে দেওয়ার ব্যবস্থা, গাছ থেকে কিছু তার টেনে এটা কিম্ভূতদর্শন যন্ত্রের সঙ্গে লাগানো। দর্শকদের জ্ঞাতার্থে তিনি জানান, বোতলের ভেতরের তরল পদার্থটি পানি নয়, এটি ব্রোমাইড সলিউশন। উপস্থিত বিজ্ঞানীরা বুঝলেন অচিরেই গাছটি মারা যাবে। কারণ, হাইড্রোব্রোমিক অ্যাসিডের এই লবণের দ্রবণ সহ্য করার ক্ষমতা গাছের নেই। তাতে অবশ্য তাঁদের ভ্রুক্ষেপ নেই। তাঁদের লক্ষ্য কিম্ভূতকিমাকার যন্ত্রটি।
জগদীশ গাছের মূলকে সলিউশনে দিয়ে দিলেন আর চালু করে দিলেন তাঁর যন্ত্র। চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেটি কাগজের ওপর মানুষের হৃদযন্ত্রের ওঠা-নামার মতো গ্রাফ আঁকতে শুরু করল। তবে সেটিতে তেমন কোনো চাঞ্চল্য নেই। পেন্ডুলামের মতো একই নিয়মের ওঠা-নামা। কিন্তু একটু পরই যন্ত্রের গ্রাফে ব্যাপক চাঞ্চল্য দেখা দিল। গ্রাফ বেশ দ্রুত ওঠা-নামা শুরু করল। মনে হচ্ছে কার সঙ্গে যেন লড়ছে গাছটি! একসময় সব চাঞ্চল্য থেমে গেল। উদ্ভিদবিজ্ঞানীরা দেখলেন, গাছটি মরে গেছে!
উদ্ভিদেরও প্রাণীদের মতো প্রাণ আছে, এই ধারণা কিন্তু নতুন নয়। কারণ, সবাই দেখেছে বীজ থেকে চারা হয়, সেটি মহীরুহ হয় এবং একসময় মরে যায়। কিন্তু উদ্দীপনায় উদ্ভিদও প্রাণীর মতো প্রতিক্রিয়া করে, জোর করে মেরে ফেলা হলে আর্তচিত্কার করে—এমনটা কেউ এর আগে ভাবেননি। এই বৈজ্ঞানিক গবেষণার ভিত্তিতে বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র ১৯০২ সালে রচনা করলেন ‘Responses in the living and non living’। এই বইটিতে তিনি বিভিন্ন পরিস্থিতিতে জীব ও জড়ের যান্ত্রিক এবং বৈদ্যুতিক সাড়া দেয়ার প্রবণতা গ্যালভানোমিটারের কাঁটার বিচ্যুতি আর লিপিগ্রাফের মাধ্যমে দেখিয়েছিলেন। জীবের সাড়া পরিমাপের জন্য প্রাণী টিস্যু ব্যবহার না করে উদ্ভিদ টিস্যু ব্যাবহারের পক্ষে তিনি কারণ হিসাবে বলেছিলেন যে প্রাণী টিস্যু খুব জটিল এবং অল্পসময় বেঁচে থাকে ফলে দীর্ঘ সময় ধরে পরীক্ষার জন্য এর চেয়ে উদ্ভিদ টিস্যু বেশি উপযোগী। তিনি একই ভাবে দেখতে চেয়েছিলেন কোন নির্দিষ্ট উদ্দীপকের বিপরীতে উদ্ভিদ ও প্রাণিতে অনুরূপ সাড়া পাওয়া যায় কিনা। তিনি ইংল্যান্ড এবং আমেরিকায় গেলেন। আমেরিকার বিজ্ঞানীরা তাঁর আবিষ্কার সম্পর্কে যথেষ্ট আগ্রহী ছিলেন। ইংল্যান্ডের বিজ্ঞানীগণ ধীরে ধীরে গবেষণার সত্যতাকে স্বীকার করে নিচ্ছিলেন। তিনি প্রথম ভারতীয় হিসেবে ১৯০২ সালে রয়্যাল সোসাইটির সদস্য নিযুক্ত হন।
জগদীশ চন্দ্র বসু তাঁর রেজন্যান্ট রেকর্ডারের (উত্তেজনার বেগ ধরার যন্ত্র) সাহায্যে দেখিয়েছিলেন যে প্রাণীদেহ থেকে বিছিন্ন স্নায়ুকোষকে কৃত্রিম উপায়ে উত্তেজিত করলে যেমন সাড়া পাওয়া যায় তার সাথে একই ভাবে উদ্দীপিত উদ্ভিদ টিস্যু থেকে প্রাপ্ত সাড়ার বহুলাংশে মিল আছে। উদ্ভিদের সাড়া সংক্রান্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য তাঁর প্রিয় ছিল লজ্জাবতী গাছ। কারণ এটি খুবই স্পর্শকাতর উদ্ভিদ এবং উদ্দীপিত করলে সাড়া বাইরে থেকেই দেখা যায়। কিন্তু আপাত দৃষ্টিতে সাড়াহীন উদ্ভিদ যেমন, গাজর, মূলা, আঙ্গুর লতা, শালগম, বাঁধাকপি ইত্যাদিতেও তিনি একইরূপ গ্যালভানোমেট্রিক সাড়া পেয়েছিলেন।
উদ্ভিদকে উদ্দীপিত করার জন্য তিনি বিভিন্ন পদ্ধতি বেছে নিয়েছিলেন। উদ্ভিদকে আহত করলে তা কী রকম সাড়া প্রদান করে তা যেমন তিনি লিপিবদ্ধ করেছিলেন তেমনি দেখিয়েছিলেন চেতনানাশক রাসায়নিক দিয়ে উদ্ভিদকেও অচেতন করা যায়! উদ্ভিদের সাড়া সংক্রান্ত গবেষণার ফলাফল নিয়ে পরবর্তীতে জগদীশচন্দ্র বসু আরও দুইটি বই প্রকাশ করেন – Plant response: as a means of physiological investigations (1906) এবং Comparative Electro-Physiology: A Physico-Physiological Study (1907)।
জীবপদার্থবিদ হিসেবে আত্মপ্রকাশ
দেশে ফিরেই বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র তৃতীয় পর্যায়ের গবেষণা শুরু করলেন। উদ্ভিদ ও প্রাণীদের দেহকলার মধ্যে তুলনামূলক গবেষণা। গবেষণার এ পর্যায়ে তিনি উদ্ভাবন করলেন তাঁর বিখ্যাত যন্ত্র ‘ক্রেস্কোগ্রাফ।’ ক্রেস্কোগ্রাফ প্রকৃত অর্থে একটি বিবর্ধক যন্ত্র যা অপরিধান যোগ্য বৃদ্ধিকেও বহুগুন বিবর্ধিত করে প্রকাশ করে। প্রাথমিক অবস্থায় ক্রেস্কোগ্রাফ দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে উদ্ভিদের বৃদ্ধি দশহাজার গুন বিবর্ধিত করে লিপিবদ্ধ করা যেতো। এই যন্ত্রের সাহায্যে তিনি সবাইকে প্রদর্শন করতেন যে বিভিন্ন উদ্দীপকের বিপরীতে বা আঘাতের দ্বারা উদ্ভিদের স্বাভাবিক বৃদ্ধি কিভাবে থমকে যায় আবার কখন নতুন উদ্যমে বৃদ্ধি শুরু হয়। জগদীশচন্দ্র তার ক্রেস্কোগ্রাফ যন্ত্রটির কর্মক্ষমতা পরবর্তীতে বহুগুন উন্নত করেন এবং পরিবর্তিত ক্রেস্কোগ্রাফ উদ্ভিদের বৃদ্ধি পাঁচকোটি গুন বিবর্ধিত করে লিপিবদ্ধ করতে পারত।
উদ্ভিদের জৈবিক সঞ্চালন নিয়ে চার খণ্ডের বই ‘Life Movements in Plants’- এ জগদীশচন্দ্র পরিবেশের বিভিন্ন নিয়ামক যেমন আলো, তাপমাত্রা এমনকি মাধ্যাকর্ষণের প্রভাবে উদ্ভিদের বিভিন্ন অংশের সঞ্চালন নিয়ে তার গবেষণা লব্ধ ফলাফল বর্ণনা করেন। এই বইটিতে জগদীশচন্দ্র দেখিয়েছেন যে উদ্ভিদের উপর দৃশ্যমান আলোর অনুরূপ প্রভাব রয়েছে বেতার তরঙ্গের। ফলে তরঙ্গ অনুভব করার ক্ষমতা মানুষের চাইতে উদ্ভিদের অধিক। মাধ্যাকর্ষণের প্রভাবে কেন গাছের মূল মাটির দিকে আর কাণ্ড আলোর দিকে বেড়ে উঠে এই বিষয়টি তিনি ভূ-বৈদ্যুতিক সাড়া পরিমাপের মাধ্যমে দেখান যে একই উদ্দীপক মাধ্যাকর্ষণের প্রভাব কাণ্ডে প্রত্যক্ষ এবং মূলে পরোক্ষ।
জগদীশচন্দ্র বসু যে সাধারণ শারীরবিজ্ঞান নিয়ে আগ্রহী হয়েছিলেন সে কথাও তিনি বইটির ২য় খণ্ডের শুরুতেই বলেন। তাঁর ভাষায় সাধারণ শারীরতাত্ত্বিক বিক্রিয়া গুলো উদ্ভিদ এবং প্রাণী তে একইরূপ হওয়াতে একটিতে গবেষণা লব্ধ জ্ঞান অন্যটিতে ব্যবহার করা যেতে পারে। উদাহরণ হিসাবে তিনি বলেন যে উদ্ভিদে আকস্মিক স্নায়বিক তাড়না নিয়ন্ত্রণ করার একটি পদ্ধতি তাকে প্রাণির আকস্মিক স্নায়বিক তাড়না নিয়ন্ত্রণে সাফল্য এনে দিয়েছে। উদ্ভিদ এবং প্রাণী টিস্যুর অনেক আচরণই যে অনুরূপ তা জগদীশচন্দ্র দেখিয়েছিলেন। উদ্ভিদের সঞ্চালনকে তিনি তিন ভাবে ব্যাখ্যা করেন।
প্রথমত, কোন একটি উদ্দীপকের বিপরীতে সাড়া প্রদান করে সঞ্চালন। স্পর্শ করলে লজ্জাবতী উদ্ভিদ তৎক্ষণাৎ পাতা ভাঁজ করে যে সাড়া প্রদান করে তাই তিনি উদাহরণ হিসেবে দেখান। দ্বিতীয়ত, তিনি পরীক্ষা সহ যুক্তি দেখান যে প্রাণিদেহের হৃদ-স্পন্দনের মত উদ্ভিদ দেহে টিস্যুর স্বতঃসঞ্চালন বিদ্যমান। যেমন বনচাঁড়ালের ত্রিপত্রক পাতার দুইপাশের পাতা দুইটি সময়ের সাথে স্বতঃস্ফূর্ত চক্রাকার ঘূর্ণন। তৃতীয়ত, তিনি বৈদ্যুতিক উত্তেজনা পরিবহনের সাথে উদ্ভিদ টিস্যু সঞ্চালনের সম্পর্ক বর্ণনা করেন।
জগদীশ চন্দ্র বসু উদ্ভিদ সঞ্চালন নিয়ে গবেষণা কাজে পূর্বতন উদ্ভিদ বিজ্ঞানীদের মত শুধুমাত্র সঞ্চালন প্রক্রিয়াটির বর্ণনা করেই থেমে যান নি, এর অন্তর্নিহিত কার্যকরণ এবং কৌশলও অনুসন্ধান করেছেন। ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে উদ্ভিদ বিজ্ঞানীদের কাছে গবেষণার একটি প্রিয় বিষয় ছিল উদ্ভিদের রস উত্তোলন (ascent of sap)। ফলে এই বিষয়টি জগদীশ চন্দ্রকেও আকৃষ্ট করে। একশো বছর পরে আজো আকাশ ছোঁয়া উদ্ভিদ গুলোতে কি প্রক্রিয়াতে রস-উত্তলন ঘটে তার সর্বজনগ্রাহ্য কোন ব্যাখ্যা নেই। জগদীশ চন্দ্র বসু উদ্ভিদের রস উত্তোলন ব্যাখ্যা করতে একটি মতবাদ দিয়েছিলেন যা “Pulsation Theory of Ascent of Sap” নামে পরিচিত। তার মতবাদের বিশদ বর্ণনা এবং এ সংক্রান্ত গবেষণা গুলো লিপিবদ্ধ করে প্রকাশ করেন The Physiology of ascent of sap (1923) নামক বইটি। এই একবিংশ শতাব্দীতেও যখন ২০০ ফিট উঁচু উদ্ভিদে রস উত্তোলন কিভাবে ঘটে তার কোন একক ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না তখন অনেক বিজ্ঞানীই জগদীশের স্পন্দন মতবাদকে গুরুত্ব দেন।
বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু উদ্ভিদ-স্নায়ু সম্পর্কে সর্বপ্রথম ধারনা দেন। উদ্দীপনা একস্থান থেকে অন্যস্থানে প্রেরণের যে স্বাভাবিক স্নায়ু চরিত্র প্রাণিদেহে দেখা যায় তাই তিনি উদ্ভিদে দেখেছিলেন। এই সম্পর্কে Plant response বইটিতে তিনি দেখান যে উদ্ভিদ টিস্যুকে উদ্দীপিত করলে তাতে উত্তেজক মেরুক্রিয়ার (excitatory polar action) ফলে তড়িৎ তৈরি হয় এবং তা দুরাঙ্গে পরিবহন ঘটে, আর এতে এটাই প্রমাণ হয় যে উত্তেজনা পরিবহনের প্রক্রিয়া উদ্ভিদ এবং প্রানি স্নায়ুতে একই।
বহুকোষী প্রাণিতে স্নায়ুতন্ত্রের ক্রমাগত বিবর্তন এবং এই জটিল স্নায়ুতন্ত্রের মাধ্যমে প্রাণীর বিভিন্ন অঙ্গের মাঝে সমন্বয় সাধনের প্রক্রিয়া বিজ্ঞানীরা আগে থেকেই জানত। কিন্তু এইরূপ স্নায়ুতন্ত্রের কথা উদ্ভিদের ক্ষেত্রে জগদীশচন্দ্রের আগে কেউ কল্পনাই করেনি। ১৯১৪ সালে জগদীশ চন্দ্র চতুর্থবার ইংল্যান্ড যান। এ বার যাত্রার সময় তিনি সঙ্গে করে তাঁর বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির সঙ্গে নিয়ে যান লজ্জাবতী ও বনচাঁলড়াল গাছ। এ গাছগুলো সহজে সাড়া দিতে পারে। তিনি অক্সফোর্ড ও ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে, এছাড়া রয়েল সোসাইটিতেও তাঁর উদ্ভাবিত যন্ত্রের সাহায্যে প্রমাণ করেন, জীবদেহের মত বৃক্ষেরও প্রাণ আছে, তারাও আঘাতে- উত্তেজনায় অণুরণিত হয়। তাঁর গবেষণা তাঁকে পৃথিবীর প্রথম বায়োফিজিসিস্ট বা জীবপদার্থবিজ্ঞানীর মর্যাদায় অভিষিক্ত করে।
জগদীশ চন্দ্র বসুর আরেকটি অর্জনের কথা অনেকের অজানা। তাঁকে সেমি-কন্ডাক্টর ডায়োড এর প্রথম আবিষ্কর্তাদের একজন বলা হয়। ১৯০৪ সালে তিনি দেখতে পান যে গ্যালেনার (লেড সালফাইড; PbS) সেমি-কন্ডাক্টর বৈশিষ্ট্য আছে। একই বছর একটি পেটেন্টে এ কথা উল্লেখ করা হয়, যা ছিল সেমি-কন্ডাক্টর ডিভাইসের জন্য বিশ্বের প্রথম পেটেন্ট। এটি জগদীশ চন্দ্র বসুর একমাত্র পেটেন্টও। এ প্রসঙ্গে ডি.পি. সেনগুপ্ত বলেন-“It was the foundation stone of all the electronic revolutions that took place during the last century.”
শেষ সময়ের কথা
১৯১৩ সালে জগদীশচন্দ্রের চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তাঁর চাকরির মেয়াদ আরো দু’বছর বাড়ানো হয়। ১৯১৫ সালে সুদীর্ঘ ৩১ বছর অধ্যাপনা করার পর চাকরি জীবন থেকে অবসর নিলেন। তখন ভারত সরকার তাঁকে নাইট উপাধি দেন। চাকরি জীবন থেকে অবসর নিলেও গবেষণার কাজ চলতে থাকলো। এ সময় তিনি লন্ডনের রয়েল ইনস্টিটিউটের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। আর এ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের আলোকে ভারতবর্ষে এ ধরনের গবেষণা প্রতিষ্ঠান গড়ার পরিকল্পনা করলেন। কিন্তু একাজে বাধা হয়ে দাঁড়াল অর্থসংকট।
জগদীশ বসুর পাশে এসে দাঁড়ালেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ। বিভিন্ন জনের কাছ থেকে চাঁদা তুলে তিনি অর্থ জোগাড় করেন। এ কাজে আরও অনেক মানুষ এগিয়ে এলেন। এছাড়া দেশের বিভিন্ন প্রান্ত ঘুরে ঘুরে জগদীশচন্দ্র অর্থ সঞ্চয় করলেন। তাছাড়া তিনি নিজের সমস্ত জীবনের উপার্জিত অর্থ এ প্রতিষ্ঠানে দিলেন। সরকারের তরফ থেকে বার্ষিক অনুদান নির্ধারণ করা হলো। ১৯১৭ সালে ৩০ নভেম্বর জগদীশচন্দ্রের ৫৯তম জন্মদিনে প্রতিষ্ঠা হল ‘বসু বিজ্ঞান মন্দির।’ এই মন্দির উদ্বোধন উপলক্ষে স্বাগত ভাষণে জগদীশ চন্দ্র বলেছিলেন,
“বিজ্ঞান অনুশীলনের দুটি দিক আছে। প্রথমত নতুন তত্ত্ব আবিষ্কার। ইহাই এই বিজ্ঞান পাঠের মুখ্য উদ্দেশ্য, তাহার পর জগতে সেই নতুন তত্ত্ব প্রচার। …আমার আরো অভিপ্রায় এই যে, এই স্থানের শিক্ষা হইতে বিদেশবাসীও বঞ্চিত হইবে না। বহু শতাব্দী পূর্বে ভারতে জ্ঞান সার্বভৌমিকরূপে প্রচারিত হইয়াছিল। এই দেশে নালন্দা এবং তক্ষশিলায় দেশ দেশান্তর হইতে আগত শিক্ষার্থী সাদরে গৃহীত হইয়াছিল। যখনই আমাদের দিবার শক্তি জন্মিয়াছে, তখনই আমরা মুক্তহস্তে দান করিয়াছি। ক্ষুদ্রে আমাদের তৃপ্তি নাই। সর্বজীবনের স্পর্শে আমাদের জীবন প্রাণময়।” কালক্রমে এই প্রতিষ্ঠান বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞান গবেষণাগারে পরিণত হয়।
১৯২০ সালে জগদীশ চন্দ্র বসু রয়্যাল সোসাইটির ফেলো নির্বাচিত হন। ১৯২৭ সালে নির্বাচিত হন ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসের সভাপতি। বিজ্ঞানে তাঁর অসামান্য অবদানের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৩৫ সালে তাঁকে ডিএসসি ডিগ্রি প্রদান করে। বিজ্ঞান চর্চার বাইরে জগদীশ চন্দ্র প্রত্নতত্ত্ব ও ফটোগ্রাফিতেও আগ্রহী ছিলেন। এছাড়া জগদীশ চন্দ্র বসু ছিলেন বহু গ্রন্থের প্রণেতা। বাংলা সাহিত্যের প্রথম সায়েন্স ফিকশান ‘নিরুদ্দেশের কাহিনি’ তাঁর লিখা। তিনি মাতৃভাষা বাংলায় বিজ্ঞান চর্চার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন এবং বাংলায় বিজ্ঞান রচনায় মনোনিবেশ করেন। তাঁর রচনা ‘অব্যক্ত’ শীর্ষক গ্রন্থে সংকলিত হয়। গ্রন্থটি সকলের সমাদর লাভ করে। বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞান সাময়িকী ‘নেচার’-এ তাঁর ২৭টি পেপার প্রকাশিত হয়। তাঁর রচিত গ্রন্থগুলো হলো-
১) Responses in the Living and Non-living (1902)
২) Plant Responses as a Means of Physiological Investigations (1906)
৩) Comparative Electrophysiology (1907)
৪) Physiology of the Asent of Sap (1923)
৫) Physiology of Photosynthesis (1924)
৬) Nervous Mechanism of Plants (1925)
৭) Collected Physical Papers (1927)
৮) Motor Mecanism of Plants (1928)
৯) Growth and Tropic Movement in Plants (1929)
১০) অব্যক্ত (১৯২১)
স্যার জগদীশ চন্দ্র বসুর অর্জন শুধুমাত্র বিজ্ঞানের গণ্ডিতে আবদ্ধ করে রাখা ঠিক নয়। তাঁকে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে যেতে হয়েছে। প্রেসিডেন্সিতে তাঁর ল্যাবরেটরি ছিল একটি ২৪ বর্গফুটের অব্যবহার্য বাথরুমের মত ঘর। তখন ভারতবর্ষ শিক্ষায় পশ্চাৎপদ থাকায় দেশের মানুষের কাছে তাঁর সাফল্য খুব একটা গুরুত্ব পেত না। তাঁকে সর্বদা ইংরেজদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে হয়েছে। তিনি কখনও সমান সুযোগ-সুবিধা পান নি। প্রায়ই অর্থের অভাবে তাঁর গবেষণা বন্ধ হবার উপক্রম হত। কিন্তু কোন কিছুই তাঁকে পরাস্ত করতে পারে নি। তিনি ঠিকই বিজ্ঞানের সিংহাসনে আরোহণ করতে সমর্থ হন।
বিদেশে উন্নত গবেষণার লোভনীয় সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তিনি দেশে ফিরে আসেন এবং চারিপাশ হতে এত অপমান-বঞ্চনার পরও স্বদেশ ত্যাগ করেননি। তাঁর মূল লক্ষ্যই ছিল দেশবাসীকে বিজ্ঞান শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলা। সমাজের বিজ্ঞানের মশাল প্রজ্জলিত করা। ১৯৩৭ সালের ২৩ নভেম্বর, সকাল ৮টায় এই মহান বিজ্ঞানীর জীবন প্রদীপ নিভে যায়। শেষ হয় দেশপ্রেমিক বিজ্ঞানীর জীবন অধ্যায়। কিন্তু ব্যক্তি জগদীশের মৃত্যু ঘটলেও মৃত্যু ঘটবে না তাঁর অসামান্য অর্জনের, ম্লান হবে না তাঁর সমাজে দেয়া বিজ্ঞানের পরশ। তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করে বিজ্ঞানের পথে সমাজকে এগিয়ে নেয়াই হবে এই মহান বিজ্ঞানীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের সর্বোত্তম পন্থা।
1. Probir K. Bondyopadhyay, "Sir J. C. Bose's Diode Detector Received Marconi's First Transatlantic Wireless Signal Of December 1901 (The "Italian Navy Coherer" Scandal Revisited)," Proc. IEEE, Vol. 86, No. 1, January 1998.
তথ্যসূত্র-
i) আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু : মাইক্রো তরঙ্গ সৃষ্টির রূপকার
ii) স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু : মুক্ত দর্শনের বিজ্ঞানী
iii) আমাদের স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু
লেখক-
আদিত্য ভট্টাচার্য্য, ইন্ডাস্ট্রিয়াল & প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়
অর্ণব ভট্টাচার্য্য, প্রভাষক, তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক কৌশল, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়
*
প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন