করোনার এই দুঃসময়ে খানিকটা স্বস্তির খবর এলো, রোগীরা যখন চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছে নানা জায়গা থেকে, তখন উত্তরায় ৩০০ শয্যার একটি কোভিড হাসপাতাল চালু হয়েছে, সেবাদান শুরু হবে আগামীকাল থেকে...

করোনার এই দুঃসময়ে খানিকটা স্বস্তির খবর এলো, রাজধানীর উত্তরায় ৩০০ শয্যার একটি কোভিড হাসপাতাল চালু হয়েছে। আজ থেকে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়েছে এই হাসপাতালের। তবে রোগী ভর্তির মাধ্যমে চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু হবে আগামীকাল, অর্থাৎ রবিবার থেকে। নতুন চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানটির নাম জাপান-ইস্টওয়েস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।

জাপান-ইস্ট ওয়েস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক চিকিৎসক মোয়াজ্জেম হোসেন। নিজের মালিকানায় থাকা একাধিক হাসপাতালের একটিকে তিনি কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে পরিণত করেছেন। এই দুর্যোগে যেখানে কিছু হাসপাতাল শুধু ব্যবসা করার জন্যে সরকারের সঙ্গে চুক্তিতে থাকতে চাইছেন না, কেউ আবার রোগী ফিরিয়ে দিচ্ছেন, চিকিৎসা দিচ্ছেন না ভয়ে, তখন মোয়াজ্জেম হোসেনের এমন সাহসী উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবীদার। 

মিঃ হাইজিন: জীবাণুমুক্ত হাতের প্রতিশ্রুতি

রোগীদের সেবা দেয়া প্রসঙ্গে মোয়াজ্জেম হোসেন বলেছিলেন, ‘করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা দেওয়া হবে। আগামীকাল স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালিক আমাদের কোভিড হাসপাতালটির উদ্বোধন করবেন। আগামী রবিবার থেকে রোগী ভর্তির কার্যক্রম শুরু হবে।' 

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ইস্ট ওয়েস্ট মেডিকেল কলেজ, জাপানের গ্রিন হাসপাতাল সাপ্লাই এবং জাপান ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন এজেন্সির (জাইকা) যৌথ উদ্যোগে এই হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এখানে নিজস্ব পিসিআর মেশিন স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার ৮০টি করোনার নমুনার পরীক্ষা করা সম্ভব হবে। ২৪ ঘণ্টা এই হাসপাতালে পরামর্শক চিকিৎসক সেবায় নিয়োজিত থাকবেন বলে জানানো হয়েছে।

মোয়াজ্জেম হোসেন আরও জানিয়েছেন, বাংলাদেশে এই প্রথমবারের মতো জাপান সরকারের উন্নয়ন সংস্থা (জাইকা) জাপান-ইস্টওয়েস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অংশীদার হলো। এই হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণও দিয়েছেন জাপানি চিকিৎসকেরা। কোভিড আক্রান্ত রোগীদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন তারা।

দৈনিক প্রথম আলোর সূত্রে জানা।গেল, জাপান-ইস্টওয়েস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তথ্য বলছে, কোভিড আক্রান্ত চিকিৎসকদের চিকিৎসার বিষয়টি অগ্রাধিকার দেবে প্রতিষ্ঠানটি। চিকিৎসকদের জন্য ২০টি শয্যা বরাদ্দ থাকবে। ফ্রন্টলাইন ওয়ারিয়রদের  অদম্য লড়াইটাকে সম্মান জানানোর চমৎকার এক উদ্যোগ এটি। হাসপাতালটির মোট ৩০০ শয্যার মধ্যে ২৪টি নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) থাকবে বলে জানা গেছে। আর আইসোলেশন বেড থাকবে মোট ৩৬টি।

জাপান ইস্ট-ওয়েস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

কোভিড আক্রান্ত রোগীদের মলমূত্র থেকে অন্যান্য বর্জ্য শোধনের জন্য বর্জ্য শোধনাগার (ইটিপি) তৈরি করা হয়েছে বলে জানালেন হাসপাতালটির এমডি মোয়াজ্জেম হোসেন। তিনি বলেছেন, ‘কোভিড আক্রান্ত রোগীদের বিভিন্ন প্রকারের বর্জ্য শোধনের জন্য ইটিপি-এসটিপি স্থাপন করা হয়েছে। আমরা রোগীদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি। অনলাইনের মাধ্যমে রোগীর চিকিৎসা সংক্রান্ত আপডেট তথ্য তাদের পরিবারকে জানানো হবে।’

শত শত করোনা রোগী যখন হাসপাতালে জায়গা না পেয়ে আহাজারি করছেন, তখন জাপান-ইস্ট ওয়েস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এই উদ্যোগ খানিকটা হলেও আশার আলো জ্বেলে।দিচ্ছে অন্ধকারে। অন্তত তিনশো জন রোগীর তো জায়গা হবে এখানে, মৃত্যুর মিছিলে যোগ দেয়া মানুষের সংখ্যাটা কমে আসবে খানিকটা হলেও। এমন উদ্যোগ আরও অজস্র দরকার আমাদের দেশে, নইলে করোনার ভোগান্তি এবং ভয়াবহতা কল্পনাকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে...


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা