ঝুও চেংইয়ু: চব্বিশ বছরের যে তরুণী আলোড়ন ফেলে দিয়েছে চীনজুড়ে!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
চব্বিশ বছর বয়সী একরত্তি মেয়ে ঝুও চেংইয়ু, চীনের সফল চন্দ্র অভিযান নেতৃত্বের প্রথম সারিতেই আছেন তিনি। সবাই তাকে ডাকে 'দ্য বিগ সিস্টার', দেশটির অল্পবয়স্ক স্পেস কমান্ডারও সে! চীনে চেংইউরা চন্দ্রজয় করে, আর আমরা বেগম রোকেয়াকে গালি দিয়েই কূল পাই না...
পৌরাণিক এক গল্প দিয়ে শুরু করি। অনেককাল আগে চায়নার এক নারী অমরত্বের ঔষধ পেয়েছিলেন। খুশির আতিশয্যে নিজে সেই ঔষধ খেয়ে ফেললেন পুরোটা। পরে হুট করে খেয়াল করলেন, তার প্রানপ্রিয় স্বামীর জন্যেই তিনি রাখেন নি কোনো ঔষধ। হুট করেই সব আনন্দ কেমন যেন ফিকে হয়ে যায় তার। সেই নারী এরপর ভগ্ন হৃদয়ে উড়ে চলে যান চাঁদে। যাতে স্বামীর মৃত্যুর পরেও স্বামীর সাথে কাছাকাছি থাকতে পারেন, এই আশায়। আমাদের শৈশবের ঠাকুরমার ঝুলির মতন চায়নার প্রত্যেক শিশুকিশোর ছোটবেলা থেকেই এই গল্প শুনে বড় হয়। অমরত্ব পাওয়া রোমান্টিক সেই নারীর নাম ছিলো চ্যাঙই। যাকে বলা হয় চন্দ্রের দেবতা। চীনে প্রতিবছর চন্দ্র উৎসবের সময়ে এই গল্প বেশ জাকজমকের সাথে চাউর করা হয়। উৎসবের বেশ ক'দিন চ্যাঙই যেন হয়ে থাকেন জাতীয় এক সুপারওম্যান হিসেবেই, পোস্টারে-ব্যানারে-ফেস্টুনে
সেই চ্যাঙই এর নামকে যুক্ত করেই সম্প্রতি একটি চন্দ্র অভিযান পরিচালনা করেছে চায়না। 'চ্যাঙই-৫' নামের এই অভিযানটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, এখানে মাত্র চব্বিশ বছরের একটি মেয়ে কাজ করেছে, যে আলোড়ন ফেলে দিয়েছে চীনসহ সারাবিশ্বে। মেয়েটির নাম ঝুও চেংইয়ু, যিনি এই চন্দ্র অভিযানের 'স্পেস কমান্ডার।' চেংইয়ু যে এরিয়ায় কাজ করছেন, সে এরিয়ায় তিনিই সর্বকনিষ্ঠ স্পেস কমান্ডার!
স্পেস সুপার-পাওয়ার' হওয়ার মিশনে বেশ কয়েক বছর ধরেই মহাকাশে একের পর এক অভিযান চালাচ্ছে চীন। মহাকাশ ভিত্তিক গবেষণা ও শক্তিবলে তারা যে ক্রমশ পরাশক্তি হয়ে উঠছে, সেটাই তারা বোঝাতে চাইছে পৃথিবীকে। এ কারনেই নিয়মিত নানারকম উদ্যোগ নিচ্ছেন তারা। গত বছরেই যেমন চাঁদের উল্টোপিঠে চীনের রোবটিক মহাকাশযান নেমেছিলো। এরপরেই শুরু করা হয় এই অভিযান। এই অভিযান সফল হওয়ার পরে এখন চীনের লক্ষ্য মঙ্গলগ্রহে। সেখানেও আগামী বছর মানুষ পাঠাবে চীন। এবারের অভিযানটি খুব অর্থবহ এই দৃষ্টিতে, চীন 'চ্যাঙই-৫' অভিযানে সফল হওয়ার পরে আমেরিকা ও সোভিয়েত ইউনিয়নের পরে তারাই হয়েছে তৃতীয় রাষ্ট্র, যারা চাঁদে মানুষ পাঠিয়েছে। এবং চাঁদ থেকে আনা মাটি তারা বিজ্ঞানীদের সরবরাহ করবে, যাতে তারা এই মাটি থেকে অনেক গবেষণা করতে পারে।
এবার কথা হচ্ছে, ঝুও চেংইয়ুকে নিয়ে এত মাতামাতির কী কারণ? চীনের সোশ্যাল মিডিয়া, অনলাইন মিডিয়া, প্রিন্ট মিডিয়া... সবখানেই চেংইয়ুকে নিয়েই কথাবার্তা, জল্পনা-কল্পনা। এটার পেছনে যে কারন জানা গেলো, চীনে নারীদের ক্ষমতায়ন কম হয়। পুরুষ ও নারীকে মোটেও এখানে সমান চোখে দেখা হয় না। সেরকম এক সময়ে চীনের জাতীয় জীবনের ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এক ঘটনার সর্বকনিষ্ঠ স্পেস কমান্ডার হিসেবে কাজ করছেন এক নারী, এটা নিঃসন্দেহে গর্ব করার মতই বিষয়। সরকারে পক্ষ থেকে তাকে বলা হচ্ছে- মহাকাশে চীনের সামনের কাতারের সৈনিক। তাছাড়া চেংইয়ু এর যে বয়স, এরকম বয়সে যে অসাধ্যসাধন তিনি করছেন, তা বিস্মিত করেছে সবাইকে। তাছাড়া তিনি তার কাজ প্রচণ্ড মনোযোগ দিয়েই করেন। অখণ্ড মনোযোগ রক্ষার জন্যে তিনি সাংবাদিকদের সাক্ষাৎকার পর্যন্ত দেন নি। তিনি বলেছেন- সাক্ষাৎকার দিলে কাজ থেকে মনোযোগ সরে যাবে। তার অদম্য সাহস ও কাজের প্রতি নিরলস আগ্রহের জন্যে সবাই তাকে ডাকে 'বিগ সিস্টার' নামেও
গতকাল ছিলো বাংলাদেশের নারী-জাগরণের পথিকৃৎ বেগম রোকেয়া শাখাওয়াত হোসেনের জন্মদিন ও মৃত্যুবার্ষিকী। তিনিই এ দেশের নারীদের প্রথম বলেছিলেন- বালিশের ওয়াড়ে চোখ না রেখে নক্ষত্রপানে তাকাতে। এ দেশের নারীরা সেটি করেছেন কী না, তা নিয়ে আর কথা না বলি বরং। তবে চীনে ক্রমশ যে নারীজাগরণ হচ্ছে, নারীরা যে পৃথিবী ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়ছে অন্যান্য গ্রহ-নক্ষত্রে, সেটাও তো এক অর্থে বেগম রোকেয়ারই বিজয়। নারীরা জাগলেই জাগবে সমাজ, রাষ্ট্র, পৃথিবী। এটাই তো আমাদের কামনা।
অদম্য সাহসী ঝুও চেংইয়ুর জন্যে রইলো শুভকামনা ও ভালোবাসা।
*
প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন