পেশোয়ারের এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের জিহাদি হওয়ার জন্যে অনুপ্রেরণা দেয়া হয়৷ যেখানকার ছাত্ররা বিভিন্ন সময়ে গিয়েছেন যুদ্ধে, হয়েছেন তালেবান নেতা। অভিযোগ আছে, বেনজির ভুট্টোর হত্যাকান্ডেও জড়িত ছিল এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক ছাত্র! এরকম নজির পাকিস্তানেই দেখতে পাওয়া যাবে শুধু...

বৈচিত্র‍্যের এ পৃথিবীতে বিচিত্র সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও কম নয়। তবে অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই খুব গড়পড়তা হলেও কিছু কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমন রয়েছে, যেখানে পড়াশোনার ধরণ ভিন্ন, ছাত্রছাত্রীর রকমসকম ভিন্ন, শিক্ষকদের পড়ানোর পদ্ধতিও ভিন্ন। এরকম অন্য ধাঁচের বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যাও মোটেও কম না। তবে সে সাথে এটাও ঠিক, অদ্ভুত অদ্ভুত অজস্র  বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা আপনি শুনলেও, আপনি কখনো 'জিহাদি ইউনিভার্সিটি'র কথা হয়তো শোনেননি। যদি না শুনে থাকেন,  তাহলে আজকের লেখা আপনার জন্যেই।

পাকিস্তানের পেশোয়ার থেকে ষাট কিলোমিটার দূরে পাবেন আপনি এই বিশ্ববিদ্যালয়কে। 'দারুল উলুম হাক্কানিয়া মাদ্রাসা' নামের এক মাদ্রাসা সময়ের ব্যবধানে পরিচিত হয়ে গিয়েছে 'জিহাদি ইউনিভার্সিটি' নামেই। এই নামের পেছনে সম্যক কারণও আছে। এখানকার বর্তমান বা প্রাক্তন ছাত্রদের অনেকেই সরাসরি যুক্ত জঙ্গিগোষ্ঠী তালেবানদের সাথে। এদের মধ্যে অনেকে তালেবানদের নেতা ছিলেন এবং আছেনও৷ বর্তমান সময়ে আফগানিস্তানে আফগান সরকারের সাথে তালেবান নেতাদের চলা হাইভোল্টেজ বৈঠক নিয়েও আমরা অনেকে হয়তো অবগত আছি। সেখানেও নেতৃত্ব দিচ্ছেন এই 'জিহাদি বিশ্ববিদ্যালয়' এর কৃতী শিক্ষার্থীরা। প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের এরকম সাফল্যে খুশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরাও।

'গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস' আছে আরও। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা 'জিহাদি' হিসেবে অংশ নিয়েছে বেশ কয়েকটি যুদ্ধে। উল্লেখ্য-  রাশিয়া-আফগান যুদ্ধেও দেখা গিয়েছে তাদের। সরব ভূমিকায়। কোনো এক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র যখন কোথাও সাফল্য অর্জন করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সবাই খুশি হয়ে যান, এও সেরকম। ছাত্রদের যুদ্ধে যাওয়ার খবরকে এই বিশ্ববিদ্যালয় বেশ ফলাও করে প্রচারও করে। এবং বর্তমান শিক্ষার্থীদেরও এভাবে যুদ্ধে যেতে প্রেরণা দেয় তারা। শিক্ষকেরা প্রকাশ্যে এও বলেন- রাশিয়াকে আর আমেরিকাকে যেভাবে তাদের শিক্ষার্থীরা ঠেকিয়ে দিয়েছে যুদ্ধে, তাতে তারা গর্বিত। যুদ্ধ যদি বাদও দেই, তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোকে হত্যার পেছনেও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী জড়িত।

এই 'জিহাদি বিশ্ববিদ্যালয়' এর যিনি প্রতিষ্ঠাতা, সামি-উল-হক, তিনি ছিলেন তালেবান জঙ্গিগোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমরের গুরু। লতায়-পাতায় সম্পর্ক যে বেশ ভালোই গভীর, তা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের তালেবানদের সাথে সম্পৃক্ততা দেখলেই বোঝা যায়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা চাইলেই তাই যেকোনো সময়ে ছুটি নিয়ে যেতে পারেন তালেবানদের আন্দোলনে, সম্মেলনে, যুদ্ধে। জিহাদি প্রশিক্ষণের জন্যেও যদি ছাত্ররা যেতে চায়, মিলবে সেই ছুটিও।

মাদ্রাসার বর্তমান শিক্ষার্থীসংখ্যা চার হাজার। মাদ্রাসা থেকেই খাবার, পোশাক, আশ্রয়স্থলের ব্যবস্থা করা হয়। অনেকে অভিযোগ করেন, মাদ্রাসার এই বড়সড় সংখ্যক শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক কাজেও ব্যবহার করেন কিছু কিছু রাজনৈতিক দল। পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন দল ইমরান খানের তেহরিক-ই-ইনসাফও রাজনৈতিক সমর্থন পেতে এদের ব্যবহার করেছে বলে অভিযোগ অনেকের। তবে এই অভিযোগ মোটেও স্বীকার করেন না বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

চার হাজার শিক্ষার্থীর ভরনপোষণের দায়িত্ব নিয়েছে এই 'জিহাদি বিশ্ববিদ্যালয়'! 

যেখানে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ এই 'জিহাদি আন্দোলন' এর বিপক্ষে,  এমনকী খোদ পাকিস্তানও যেখানে প্রকাশ্যে বলেছে, 'জিহাদি আন্দোলনকে সমর্থন দেয় না তারা', সেই তাদের দেশেই কাজ করছে 'জিহাদি বিশ্ববিদ্যালয়।' কোনো রাখঢাক, লুকোছাপা ছাড়াই। কেন এই দ্বিচারিতা স্ব-বিরোধিতা তাদের, সেটি বোধগম্য নয় কারো কাছেই। নাকি রাজনৈতিক কারণে চাইলেও কোনো কিছু করতে পারছে না তারা, সেটিও অস্বচ্ছ। তবে কারন যেটিই হোক, পৃথিবীর বুকে একখন্ড বৈচিত্র‍্য হয়ে এভাবেই প্রকাশ্যে টিকে আছে এক বিশ্ববিদ্যালয়, জিহাদি বিশ্ববিদ্যালয়।

*

প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা