'জিনিয়া' নামের শিশুটি অপহৃত হয়েছে এক সপ্তাহ হয়ে গেলো। পুলিশ প্রশাসন অথবা রাষ্ট্র, এখন পর্যন্ত কেউই এই বাচ্চাটিকে উদ্ধারে এগিয়ে এলো না...
শাহবাগ এলাকার দিকে জ্যাম পড়লেই কিছু বাচ্চাকে আপনি নিশ্চয়ই দেখেছেন ফুল নিয়ে ছুটে যেতে গাড়ি, রিক্সা, সিএনজি বরাবর? হয়তো এর মধ্যে কোনো একটি বাহনে আপনিও ছিলেন। জ্যামে বিরক্ত হয়ে আশেপাশে তাকাচ্ছেন, হুট করেই দেখবেন হাতভর্তি ফুল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে কিছু ছোট ছোট শিশু। ফোকলা দাঁতে হেসে তারা ফুল নেয়ার আহ্বান জানাচ্ছে। এরকম অভিজ্ঞতা অনেকেরই হয়েছে নিশ্চিত। ফুল হাতে এই যে ছোট মানুষগুলি দৌড়ে আসতো, এরাও তো একেকটা সুন্দর ফুল। ঈশ্বরের বাগানের নিষ্পাপ কিছু ফুল। এই বাগানেরই একটি ফুটফুটে ফুল চুরি হয়ে গিয়েছে সম্প্রতি!
ফুল অথবা মনুষ্যশিশুটির নাম জিনিয়া। জিনিয়া নামে কিন্তু আসলেই ফুল আছে। সেইদিক থেকে মানুষ জিনিয়া ও ফুল জিনিয়ার অদ্ভুত মিল। সপ্তাহখানেক আগে এই বাচ্চাটি নিখোঁজ হয়ে গিয়েছে শাহবাগ এলাকা থেকে। মা বিস্তর খোঁজাখুঁজি করেছেন। থানায় জিডি করেছে। জিনিয়া ফিরে আসেনি। জিনিয়াকে আর পাওয়া যায় নি।
কেউ কেউ বলেছেন, জিনিয়াকে দুটি মহিলার সাথে যেতে দেখেছেন তারা। শাহবাগ থানার ওসি বলছেন, খুঁজে বের করবেন তারা জিনিয়াকে। কিন্তু আমরা ঠিক ভরসা খুঁজে পাই না এ কথাতে। এক সপ্তাহ পেরিয়ে গিয়েছে, বাচ্চাটি এখনো আসেনি। বাচ্চাটিকে খুঁজেও পাওয়া যায় নি আর। পুলিশ আশ্বাস দিচ্ছে কিন্তু আর কোনো অগ্রগতি পাওয়া যায় নি। এর সাথে আরেকটি অদ্ভুত ব্যাপার হলো, সিসিটিভি ফুটেজ দেখে যে শনাক্ত করা যাবে অপহরণকারীদের, সে আশাতেও গুড়েবালি। শাহবাগের প্রায় সবকটি সিসিটিভি ফুটেজ নষ্ট। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে যে কোনোকিছু জানা যাবে, সেটিও নেই আর। শাহবাগ বিভিন্ন কারণ মিলিয়েই একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জায়গা, অথচ সেখানের সিসিটিভি ক্যামেরাগুলো কাজ করছে না, সেখান থেকে একটা বাচ্চা উধাও হয়ে যাচ্ছে, কোনো খবর পাওয়া যাচ্ছে না তার। পুলিশ 'আশ্বাসের বানী' দিয়েই থেমে থাকছে। আর কোনো তৎপরতা দেখছি না আমরা।
এভাবে কী একটা রাষ্ট্র চলতে পারে? জিনিয়ার পরিবার দরিদ্র, অর্থের জোরে যে তদন্ত কাজকে চালাবেন, সে সামর্থ্যও তাদের নেই। আমরা সোশ্যাল মিডিয়াতে কিছু মানুষ হয়তো বিষয়টি নিয়ে লিখছি, কিন্তু বাকিদের কোনো হেলদোলই দেখছি না। পেপারে গুরুত্ব দিয়ে লেখাটি ছাপা হচ্ছে না, টিভিতেও কিছু বলা হচ্ছে না। কিন্তু কেন? জিনিয়ার পরিবার সামর্থ্যবান নয় বলে? জিনিয়ার বাবা-মা'র পেশিশক্তি নেই বলে? রাষ্ট্র তো বলে, বাংলাদেশের সব নাগরিকেরই নিরাপত্তার অধিকার আছে। তাহলে এ বৈষম্য কেন হচ্ছে?
আমরা ক্রমশ হতাশ হয়ে যাচ্ছি। নয় বছরের একটি নিষ্পাপ শিশুর নিরাপত্তা আমরা দিতে পারছি না, আইন-শৃঙখলা বাহিনী কোনো কিছু করছে না, গনমাধ্যমেরও কোনো হেলদোল দেখছি না। এরকম একটি অপরাধ আমাদের এভাবে গা সওয়া হয়ে যাচ্ছে!
আমরা কী স্বাভাবিক আছি? আমি ঠিক জানি না। তবে প্রশ্নটি থাকলো সবার কাছেই।
*
প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন