এমন একটা সময়ে গ্রেপ্তার হলেন, যখন তিনি আসন্ন অস্কারে সেরা অভিনেতার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন। সেলুলয়েডের পর্দায় আর্থার ফ্লেক চরিত্রে অভিনয় করা পরিবেশবাদী হোয়াকিন ফিনিক্স যেন বাস্তব জীবনেই হয়ে উঠেছেন জোকার।

গ্রীক পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, পবিত্র অনল প্রভা থেকে ফিনিক্স পাখির সৃষ্টি। রুপকথার সেই চিরঞ্জীব পাখির মতো করেই জোকারের চরিত্রায়নে পুনর্জন্ম লাভ করেছেন হোয়াকিন ফিনিক্স। হালের জোকার দিয়ে গোল্ডেন গ্লোব জয় করা ফিনিক্স অস্কার দৌড়েও এগিয়ে রয়েছেন এবার। তার করা সিনেম্যাটক চরিত্রগুলো নিয়ে আলোচনা করতে বসলে সেই আলোচনায় মানুষটির ব্যক্তিত্ব ঢাকা পড়ে যাবে। ব্যক্তিগত জীবনে এই হলিউড অভিনেতা একজন পরিবেশবাদী এবং নিরামিষভোজী। যেকোনো পরিবেশ বিষয়ক আন্দোলনে তিনি অংশগ্রহণ করেন।

ফায়ার ড্রিল ফ্রাইডেস আন্দোলনে হোয়াকিন ফিনিক্স

নিজের খ্যাতি ব্যবহার করে বারবার পরিবেশ এবং প্রাণী রক্ষায় অবদান রাখার চেষ্টা করেছেন। এবার গোল্ডেন গ্লোব জিতে মঞ্চে উঠে বলেছেন অস্ট্রেলিয়ার দাবানলের কথা। পরিবেশ দূষণে পরোক্ষভাবে মানুষের বিলাসযাপনের স্বভাবকেই দায়ী করছেন। শুধু কথা নয়, কাজেও নিজেকে বারবার পরিবেশবাদী হিসেবে প্রমাণ করেছেন ফিনিক্স। ৭৭ বছরের গোল্ডেন গ্লোবের ইতিহাসে এবারই প্রথম ডিনারে নিরামিষ খাবার পরিবেশনের পেছনেও নাকি তারই অবদান ছিলো। গত সেপ্টেম্বরেই টরন্টো ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের কিছুক্ষণ আগে সেন্ট জর্জ সাবওয়ে ট্রানজিট স্টেশনে ‘বি ফেয়ার বি ভেগান’ টিমের সাথে মিছিল করেছেন প্রাণীদের প্রতি মানুষের নিষ্ঠুরতা বন্ধের দাবিতে।

পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে হোয়াকিন হচ্ছেন তৃতীয়। বাকী ভাইবোনদের নাম প্রাকৃতিক উপাদান সম্পর্কিত হওয়ায় হোয়াকিন চাইতেন তারও এমন কোনো নাম থাকুক। তাই তিনি নিজের ডাকনাম রেখে দেন ‘লিফ’। মাত্র ৩ বছর বয়স থেকেই হলিউডের বিখ্যাত এই অভিনেতা একজন নিরামিষভোজী। মাছ, মাংস কিংবা প্রাণীজ খাবার ছেড়ে দিয়েছিলেন ছোটবেলার মাছধরার ঘটনা দেখে।

একটি ইন্টারভিউতে ফিনিক্স বলছিলেন, খুব ছোটবেলায় তিনি এবং তার বোনেরা মাছধরা দেখতে যেতেন। সেখানেই তারা দেখেছেন কী ভয়ানক নিষ্ঠুরতায় মানুষ বড় বড় মাছগুলোকে ধরে এবং মারে। ঐ দৃশ্য দেখেই হোয়াকিন ফিনিক্স নিশ্চিত হয়ে গেছিলেন যে, কোনভাবেই তিনি এই নৃশংস প্রক্রিয়ার অংশ হতে চান না। তার ভাষায়, “আমি এই বিষয়ে শতভাগ নিশ্চিত যে, আমি কোনভাবেই আরেকটি জীবন্ত, অনুভূতি সম্পূর্ণ প্রাণীর কষ্টের কারণ হতে চাই না। আমি তাদের কাছ থেকে সন্তান ছিনিয়ে নিতে চাই না, জোর করে খাঁচায় আটকে একদিন জবাই করবো বলে হৃষ্টপুষ্ট বানাতে চাই না।”

ফায়ার ড্রিল ফ্রাইডেস আন্দোলনে বক্তব্য প্রদান করেন হোয়াকিন ফিনিক্স

গতকাল শুক্রবার (১০ই জানুয়ারী) জলবায়ু পরিবর্তন বিরোধী সাপ্তাহিক আন্দোলন ‘ফায়ার ড্রিল ফ্রাইডেস’ এ অংশগ্রহণ করেন তিনি। সেখানে নিজের বক্তব্য প্রদান করেন। পুলিশি বাধার এক পর্যায়ে ওয়াশিংটন ডিসির ঐ আন্দোলন থেকে গ্রেপ্তার করা হয় এই হলিউড সুপারস্টারকে। এমন একটা সময়ে গ্রেপ্তার হলেন, যখন তিনি আসন্ন অস্কারে সেরা অভিনেতার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন। সেলুলয়েডের পর্দায় আর্থার ফ্লেক চরিত্রে অভিনয় করা হোয়াকিন ফিনিক্স যেন বাস্তব জীবনেই হয়ে উঠেছেন জোকার। তার কাছে অস্কার আসুক বা নোবেল। তাতে তিনি থোরাই কেয়ার করেন। ব্যক্তিগত জীবনের টানাপোড়ন যাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি, নিজ প্রতিভায় হয়েছেন বিশ্ববিখ্যাত, বারবার জেগে উঠেছেন ফিনিক্স পাখির মতো... এই গ্রেপ্তার তাকে কী করে ঠেকাবে?


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা