একটা প্রোগ্রাম আয়োজন করার নূন্যতম যোগ্যতা নেই অর্গানাইজারদের। যাকেতাকে মঞ্চে উঠিয়ে দেশের গান গাইতে বললেই হয়ে গেল জয় বাংলা কনসার্ট?

আমাদের দেশে আসলে কনসার্ট বলতে গেলে হয়ই না, কেন? এইসব অসভ্য দর্শক-শ্রোতার কারণে! একটা দেশের দর্শক শ্রেণী কতোটা অশিক্ষিত, বর্বর এবং ইতর হতে পারে সেটার প্রমাণ এই দুই ছবি। 

এবার আসি অর্গানাইজার এবং অনুষ্ঠান প্রসঙ্গে। জয় বাংলা কনসার্ট, প্রথমবারের মতো গেলাম আজকে। সকাল সকাল গিয়েছিলাম। বেশ হাবভাব নিয়ে চেক করলো কয়েকবার করে, সিলছাপ্পর মারলো হাতে। বেশ কয়েকটা গেট/সিকিউরিটি পাড়ি দিয়ে মূল স্টেডিয়ামে প্রবেশ করলাম। খুবই ভালো ব্যাপার। মঞ্চে গান চলছিল, অতিরিক্ত ভিড় নেই। 

কিন্তু বিকেল পার না হতেই শুরু হলো বিশ্শৃংখলা। হঠাৎ হুড়মুড় করে এক গাদা লোক ঢুকে পড়লো। একজন একটা প্লাস্টিকের চেয়ার মাথার উপর তুলে ছুঁড়ে ভেঙে উল্লাস প্রকাশ করলো। তার উল্লাসের কারণ জানলাম, তারা সবাই মিলে বাইরে সবকিছু ভাঙচুর করে ঠেলেঠুলে ঢুকে পড়েছে! চমৎকার! উল্লাসের মতোই ব্যাপার! 

এভাবেই ঝুঁকি নিয়ে লোকজন ঢুকে গেছে ভেতরে

টিকিটে অনেক কিছু নিয়ে আসতে নিষেধ করেছিল, সবকিছুই বেছে বেছে রেখে এসেছিলাম। কিন্তু দেখলাম এখানে অনেকেই দেদার সিগারেট খাচ্ছে, হাঁটতে গিয়ে দেখলাম লোকজন গায়ের উপর এসে পড়ছে। পানির সুব্যবস্থা আছে দেখে এগিয়ে গিয়ে দেখলাম উল্লাসের আতিশয্যে লোকজন কল ভেঙে অকেজো করে রেখেছে। 

রাত আটটার দিকে বের হতে গিয়ে দেখলাম বের হওয়ার কোনো উপায় নেই, সব গেট বন্ধ! কারণ প্রতিটা গেট ধরে চিড়িয়াখানায় আমরা যেমন পশুর দিকে তাকিয়ে থাকি, তেমন করে মানুষ তাকিয়ে আছে। বের হওয়ার জন্য গেট খোলামাত্র এরা নাকি হুড়মুড় করে ঢুকে পড়বে! এরমধ্যে ভেতরে একদফা লাঠি চার্জ হলো, সবাই যে যেদিক পারে দৌড়ে পালালো। 

রাত সাড়ে আটটায় আবিষ্কার করলাম আমি বন্দী অবস্থায় আছি, এখানে পানি নেই, কোনো খাবার নেই, বের হওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। একদল বর্বর শ্রেণির লোকজনের দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া তেমন কিছু করার নেই। এর মধ্যে গেট বন্ধ বলে লোকজন গাছের ডাল বেয়ে বেয়ে আসছে, কেউ কেউ বাইরে ঝুলানো অস্থায়ী সিঁড়ি বেয়ে আসছে। যেন ভেতরে এমন কিছু হচ্ছে যা জীবনবাজি রেখে না দেখলে ইসরাফিল শিঙ্গা ফুঁকবে যেকোনো সময়। 

বিশৃঙ্খল আয়োজন ছিল পুরো অনুষ্ঠানজুড়েই

ক্লান্ত শ্রান্ত হয়ে বের হওয়ার গেট খুঁজছি, এমন সময় এক সিকিউরিটির লোক বললো, আপু এখন বের হবেন না, 'ঝামেলায়' পড়বেন। তাহলে আপনারা কি করছেন এখানে? এই প্রশ্ন করে দেখলাম তিনি আর নেই পাশে। কাকে যেন লাঠি দিয়ে বারি দেওয়ার জন্য দৌড়াচ্ছেন। অবশেষে একজন প্রায় কানে কানে এসে জানালো কোনার গেট খোলা হয়েছে বের হতে পারবেন। সেটা জানা মাত্র স্রোতের মতো লোকজন ধাক্কাধাক্কি করে ছুটে চললো বের হওয়ার জন্য। এদের দেখে মনে হলো এই মুহূর্তে বের না হলে বুঝি ইসরাফিল শিঙ্গা ফুঁকবে। 

একটা প্রোগ্রাম আয়োজন করার নূন্যতম যোগ্যতা নেই অর্গানাইজারদের। যাকেতাকে মঞ্চে উঠিয়ে দেশের গান গাইতে বললেই হয়ে গেল জয় বাংলা কনসার্ট? আর যে প্রোগ্রামে খোদ পিএম অতিথি হিসেবে আসেন, সেই প্রোগ্রামের সিকিউরিটির এই অবস্থা? আমজনতার সিকিউরিটির তো কোনো প্রশ্ন করার জায়গাই নেই! শুনলাম কয়েকজনের পকেটমার হয়েছে নাকি। 

একজন গায়ক মঞ্চে 'ফাকি* শো' বলে বেশ বিতর্কিত হচ্ছেন। আদতে পুরা ব্যাপারটা এমনই। ফাকি* অর্গানাইজার, ফাকি* অডিয়েন্স এন্ড ইট ওয়াজ আ ফাকি* শো!


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা