বাংলাদেশ যেভাবে ভারতকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাচ্ছে...
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
'বাংলাদেশের তুলনায় অর্ধেক জিডিপির একটা দেশের মন্ত্রী হয়ে কিভাবে বাংলাদেশকে ব্যাঙ্গ করা যায়, সেটা রেড্ডি সাহেবকে দেখে কেউ শিখুক!'
করণ থাপাড়কে চিনি নরেন্দ্র মোদির একটা বিখ্যাত ইন্টারভিউ'র মাধ্যমে। মিনিট পাঁচেক দৈর্ঘ্যের সেই অসমাপ্ত ইন্টারভিউতে মোদিকে সরাসরি 'খুনি' বলে আখ্যায়িত করেছিলেন বিবিসির সাংবাদিক করণ, পাঁচ মিনিটের মধ্যে দুই দফা পানি খেতে হয়েছিল সেই সময়ে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে। পাঁচ মিনিটের মাথায় জামার সঙ্গে লাগানো মাইক্রোফোনটা খুলে রেখে তিনি ইন্টারভিউ দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন, করণ থাপাড়ের প্রশ্নবানে জর্জরিত হবার চাইতে পালিয়ে বাঁচাটাকেই শ্রেয় মনে করেছিলেন মোদি। এখনও ইউটিউবে সার্চ দিলেই বিখ্যাত সেই সাক্ষাৎকারটা খুঁজে পাওয়া যাবে অনায়াসে।
প্রগতিশীল হিসেবে করণ থাপাড়ের সুনাম আছে, ডানপন্থী অতি রক্ষণশীল নীতির ঘোর বিরোধী তিনি। বয়সের ভারে মেইনস্ট্রিম জার্নালিজম ছাড়লেও, পত্রিকায় লেখালেখি জারী আছে এখনও। হিন্দুস্তান টাইমসে নিয়মিতই তার কলাম ছাপা হয়, সেখানে বিভিন্ন ইস্যুতে মোদি সরকারের সমালোচনা করেন তিনি। ভারত এখন সিটিজেনশীপ অ্যামান্ডমেন্ট বিল এবং ন্যাশনাল রেজিস্ট্রার অফ সিটিজেনশীপ নিয়ে উত্তাল, আন্দোলন চলছে। অথচ অর্থনীতির বেহাল দশা নিয়ে সরকারের কোন মাথাব্যথা নেই, তারা পড়ে আছে সিএএ এবং এনআরসি নিয়ে।
তার ওপর ভারতের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিষান রেড্ডি বলেছেন, বাংলাদেশীদের ভারতীয় নাগরিকত্বের প্রস্তাব দেয়া হলে নাকি অর্ধেক বাংলাদেশ খালি করে সবাই দলে দলে ভারতে চলে যাবে! এই বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করতে গিয়ে করণ থাপাড় একদম তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে বুঝিয়েছেন, কীভাবে বাংলাদেশ দিনকে দিন পেছনে ফেলে দিচ্ছে ভারতকে। ভারতে নাগরিক হিসেবে বেঁচে থাকার চেয়ে যে বাংলাদেশে 'উইপোকা' হয়ে বেঁচে থাকাও ভালো, এমন কথাও উঠে এসেছে করণের কলামে। সেই কলামের চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো আপনাদের জন্যে-
হেনরি কিনিঞ্জারকে প্রথমেই কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে চাই। সত্তরের দশকে তিনি বলেছিলেন, আন্তর্জাতিক মানচিত্রে বাংলাদেশ হচ্ছে একটা তলাবিহীন ঝুড়ির মতো। কথাটা হয়তো সেই সময়ের জন্যে মিথ্যা ছিল না, সদ্য স্বাধীন হওয়া একটা দেশ, ভঙ্গুর অর্থনীতি, নিজেদের পায়ে দাঁড়ানোর জন্যে তারা লড়ছিল তখন। সাদাকালো টেলিভিশনে বন্যা আর দুর্ভিক্ষের ছবিগুলো দেখলে কিসিঞ্জারের কথাটা মিথ্যে মনে হওয়ার কথা নয়।
কিন্ত আজকের বাংলাদেশ- পুরোপুরি আলাদা একটা দেশ এখন! ওদের নিয়ে পুরো বিশ্বের মানসিকতা এখন বদলে গেছে, অথচ আমাদের দেশের (ভারতের) রাষ্ট্রক্ষমতায় বসে থাকা মানুষ এখনও কি দাম্ভিকতার সাথে বাংলাদেশকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে! আমাদের একজন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আছেন, যিনি সম্ভবত মাথায় মগজ ব্যতীত অন্য কিছু নিয়েই ঘোরেন। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষকে ভারতীয় নাগরিকত্বের প্রস্তাব দেয়া হলে নাকি অর্ধেক বাংলাদেশ খালি হয়ে যাবে!
কিষান রেড্ডি (ভারতের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী) যে ভব্যতার সীমা ছাড়িয়েছেন, এতে কোন সন্দেহ নেই। প্রতিবেশী বন্ধুরাষ্ট্রের সম্পর্কে কীভাবে কথা বলতে হয়, সেই এটিকেট তাকে কেউ শেখায়নি। তবে একটা জিনিস আমি তাকে জানিয়ে দিতে চাই, যেটা রেড্ডি হয়তো জানে না। জীবনযাত্রার ধাপগুলোর বেশিরভাগেই ভারতের চেয়ে অনেক অনেক এগিয়ে আছে বাংলাদেশ, ভারতীয় নাগরিকদের চেয়ে ভালো আছে প্রতিবেশী দেশটির নাগরিকেরা।
প্রথমেই জিডিপির কথায় আসি। বাংলাদেশের জিডিপি গ্রোথ রেট আট ছুঁইছুঁই, আমাদের অর্থমন্ত্রী যে জায়গাটায় আরও দুই-তিন বছরের মধ্যে পৌঁছানোর মিথ্যে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন জাতিকে। ভারতের জিডিপি বৃদ্ধির হার এই মুহূর্তে বাংলাদেশের অর্ধেকের কাছাকাছি, চারের সামান্য ওপরে। বাংলাদেশের তুলনায় অর্ধেক জিডিপির একটা দেশের মন্ত্রী হয়ে কিভাবে বাংলাদেশকে ব্যাঙ্গ করা যায়, সেটা রেড্ডি সাহেবকে দেখে কেউ শিখুক!
গার্মেন্টস সেক্টরটাকেই দেখুন, বাংলাদেশকে ছোঁয়ার সাধ্য আছে আমাদের? কত এগিয়ে গেছে ওরা, ওদের সাথে কম্পিটিশনে নামার মতো অবস্থাতেও তো নেই আমরা। নিউইয়র্ক বা লন্ডন, যেখানেই যাই, মেড ইন বাংলাদেশ ট্যাগটা চোখে পড়বেই। বাংলাদেশ সরকার তাদের জনগনের কাছ থেকে ট্যাক্স নিচ্ছে, সেটা দিয়ে কাজও হচ্ছে। আমাদের কেন্দ্র সরকার আর রাজ্য সরকার দুই দফায় ট্যাক্স নেয় জনগনের কাছ থেকে, কাজের ফিরিস্তি কেউই দেয় না।
অর্থনীতি বাদ দিলাম, এটা তো একটা ধাপ কেবল। স্বাস্থ্যের দিকে তাকান। বাংলাদেশের পুরুষ এবং নারী, সবারই গড় আয়ু ভারতের পুরুষ এবং নারীদের চেয়ে বেশি। জন্মের সময় প্রতি হাজারে ত্রিশটা বাচ্চা মারা যায় ভারতে, অথচ বাংলাদেশে এই হারটা মাত্র সতেরো! গ্রাম কিংবা মফস্বল অঞ্চলে ওরা চিকিৎসা ব্যবস্থাটাকে ছড়িয়ে দিয়েছে, অথচ আমরা বড় শহরগুলোর বাইরে বেরুতে পারিনি এখনও। আমাদের সরকার বলে মেয়ে বাঁচাও, মেয়েকে পড়াও- অথচ বাংলাদেশে ছেলেদের চেয়ে স্কুলে মেয়েদের সংখ্যা বেশি। আর আমাদের এখানে?
সেজন্যেই বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন যখন বলেন যে কিছু ভারতীয় নাগরিক সীমানা পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা করেছে এবং আটক হয়েছে, তখন আমি বিস্মিত হই না। লোকে তো খারাপ জায়গা থেকে জীবনকে উন্নত করার স্বপ্ন নিয়ে ভালো জায়গায় যাবেই। আর গরুর মাংস খাওয়া বা হিন্দু মেয়েকে বিয়ে করার মতো 'অপরাধে' যখন কাউকে অন্যায়ভাবে মেরে ফেলে পুরো সম্প্রদায়কে একটা বার্তা দেয়ার চেষ্টা করা হয়, তখন ভারতকে মুসলমানরা অনিরাপদ মনে করবে, এতে অবাক হবার তো কিছু নেই!
শেষ করার আগে আরেকটা পয়েন্ট যোগ করি। কেউ দয়া করে রেড্ডি সাহেবকে বলুন, আমেরিকা যদি আগামীকাল তাদের দেশে নাগরিকত্ব অফার করে, তাহলে কিন্ত পুরো ভারতই খালি হয়ে যাবে। কাজেই নাগরিকত্ব নিয়ে এসব ঠুনকো গরিমার কোন মূল্য নেই...