কিয়ানু রিভস: পর্দার 'জন উইক'কে হার মানায় যার গল্প!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
তিন বছর বয়সে বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ। ফিল্ম করতে গিয়ে বন্ধুর মৃত্যু। সফল হওয়ার পর স্ত্রী-সন্তানের মৃত্যু। সিনেমার পর্দায় যিনি 'জন উইক' করছেন, তাঁর বাস্তব গল্পটা জন উইকের চেয়েও মর্মান্তিক...
হাওয়াই দীপপুঞ্জের ভাষায় কিয়ানু শব্দটির অর্থ পাহাড় থেকে বয়ে আসা শীতল, হাড়কাঁপানো বাতাস। যে বাতাস শুনে মনে হয় পাহাড়ের দীর্ঘশ্বাস। সেরকম নামে নাম যে মানুষটির, সে মানুষটির গল্প শুনলে বুক থেকে দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে আসবে অনেক মানুষেরই। এক জীবন থেকে যত যন্ত্রণা পাওয়া সম্ভব, তার প্রায় সবটুকুই পেয়েছেন বিশ্বখ্যাত এই অভিনেতা। তবু থামাননি কোনোকিছুই। প্রতিদিনই একটু একটু করে সামনে এগিয়েছেন, হয়তো তাঁর মাথায় ছিলো ঐ লাইনটিই-
দ্য শো মাস্ট গো অন!
এই অবেলায়!
বাবা ছিলেন ভূবিজ্ঞানী। মা ছিলেন ক্যাসিনো শো-গার্ল এবং কস্টিউম ডিজাইনার। দুইজনের প্রেম করে বিয়ে। সংসার শুরু করেন লেবাননের বৈরুতে। এরমধ্যেই মায়ের কোল আলো করে আসে ফুটফুটে এক সন্তান। যার নাম বাবা দেন, কিয়ানু চার্লস রিভস। বাবা-মা'র প্রেমের সংসার বেশিদিন স্থায়ী হয় না। বাবার জুয়াখেলা আর মদ্যপান পরিবারকে টুকরো টুকরো করে দেয় একসময়ে এসে। ডিভোর্স হয় বাবা-মা' এর। তিন বছরের ছোট্ট কিয়ানু'কে নিয়ে মা চলে যান বাবার থেকে বহুদূরে। এরপরে কিয়ানুর মা বিয়ে করেন আরো তিনটি। সেসব পরিবারে সন্তানও রয়েছে। কিন্তু একটা সুস্থ স্বাভাবিক পরিবার কোনোদিনই পাওয়া হয়না কিয়ানু'র। জন্মের পর থেকেই একরকম গুটিয়ে থাকা হয়ে যায় নিয়তি।
পড়াশোনা শুরু করেন স্কুলে। সেখানেও সমস্যা। এক স্কুলে বেশিদিন পড়াশোনা করতে পারতেন না। মায়ের বিয়ের সূত্রে ছুটতে হতো বিভিন্ন জায়গায়। তাই আগ্রহ নিয়ে সবকিছু শুরু করলেও শেষ পর্যন্ত সেগুলো নিয়ে আর সামনে এগোনো যেতো না। তবে তাও পড়াশোনা নিয়ে কিয়ানু'র ছিলো খুব আগ্রহ। বই পড়তে খুব ভালোবাসতেন। এখনো বাসেন। শ্যুটিং স্পটে শ্যুটিং এর ফাঁকে তাঁর হাতে বই দেখা যাবে প্রায় প্রত্যেকসময়েই। ছোটবেলায় নিয়মিত পড়াশোনা না করার জন্যেই বোধহয় আগ্রহটা হয়ে গিয়েছিলো অদম্য।
স্কুলের প্রসঙ্গে আসা যাক আবার। লেখাপড়ার চেয়ে থিয়েটারের অভিনয়ে তার আগ্রহ ছিলো বেশি। হতে চেয়েছিলেন খেলোয়ারও। নভোচারী হবারও স্বপ্ন ছিলো তাঁর। তবে সবকিছু ছাপিয়ে অভিনয়টাকেই বুঝি বেশি ভালোবেসেছিলেন। কানাডার ইটোবিকোক স্কুল অফ দ্য আর্টস-এ অডিশনও দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বাদ পড়ে যান তিনি বাছাইপর্বেই।
তবু জীবন কাটছিলো। পড়ালেখা ভালোই লাগতো শান্তশিষ্ট এ বাচ্চাটির। হঠাৎ করে তার ধরা পড়ে একটি রোগ- ডিসলেক্সিয়া, পড়াশোনা করতে অসুবিধা হওয়ার রোগ। এই রোগে আক্রান্তরা ঠিকঠাকভাবে পড়তে পারেন না, পড়তে সমস্যা হয়, বানান করতেও সমস্যা হয়। পড়া বুঝতেও সমস্যা হয়। বিধাতা যখন যাকে বিপদ দেন, হয়তো এভাবেই চারপাশ থেকে দেন। আগের সব ঝামেলা সামলে তাও উঠছিলেন কিশোর কিয়ানু, এই সমস্যার সাথে আর যুদ্ধ করে জেতা হয়ে ওঠেনা। পড়াশোনাই ছেড়ে দিতে হয় তাকে।
সেই কবে ছিলো উচ্ছ্বাস!
স্কুলে থাকা অবস্থাতেই থিয়েটারের নাটকে কিয়ানু ছিলেন নিয়মিত মুখ। ঘটনাচক্রে টিভিতেও অভিনয় করার সুযোগ পান। কোকাকোলার বিজ্ঞাপন, সিটকম সিরিজ, শর্টফিল্ম, মঞ্চনাটক... সবমিলিয়ে কিয়ানু তখন জনপ্রিয় কিশোর অভিনেতা। কানাডার একটি সিনেমা 'ইয়ংব্লাড' এ অভিনয় করেন তিনি। এরপরেই ভাবলেন, না! সিনেমাতেই থাকতে হবে। ডিসিশন পাকা করে লস এ্যাঞ্জেলসের দিকে পাড়ি জমান তিনি।
হলিউডে ভালো ভালো কিছু সিনেমায় অভিনয় করলেন। বেশ নামও পেলেন। এরমধ্যে 'বিল অ্যান্ড টেড’স এ্যাক্সিলেন্ট অ্যাডভেঞ্চার' সিনেমা হয়ে যায় ব্লকবাস্টার। মানুষজন বেশ পছন্দ করে সিনেমাটিকে। রাতারাতি 'টিনেজ হিরো'র তকমা লেগে যায় নামের সাথে। এর কয় বছর পরে এই সিনেমার সিক্যুয়েল হয়। সেটাতেও তিনি অসাধারণ অভিনয় করেন। তাকে নিয়ে মাতামাতি তখন তুঙ্গে। কিন্তু কিয়ানু তখন একটু দমে গিয়েছেন। নামের পাশের 'টিন হিরো' ট্যাগটা যাচ্ছিলোই না। তিনি অন্যরকম সিনেমায় অভিনয় করা শুরু করলেন। 'মাই ওউন প্রাইভেট আইডাহো' ছিলো সেই এক্সপেরিমেন্টেরই প্রথম সিনেমা। এরপর থেকেই নানারকম ভিন্নধর্মী সিনেমায় অভিনয়ের প্রস্তাব আসে। আস্তে আস্তে নামের পাশ থেকে 'টিন হিরো' তকমা খসে পড়ে।
ভালোই এগোচ্ছিলো। নামী নামী সব পরিচালক ও বৈচিত্র্যময় সিনেমাগুলোতে অভিনয় করে যাচ্ছিলেন। তখনই আবার ধাক্কা। কিয়ানু রিভস এর জীবন, আর সেখানে ধাক্কা আসবে না! তা হয় নাকি? হলিউডে নিজের কাজের সুবাদেই অনেক মানুষের সাথে সম্পর্ক হয়েছিলো কিয়ানু'র। রিভার ফিনিক্স ছিলেন হলিউডেরই এক উদীয়মান অভিনেতা। কিয়ানুর সাথে কাজসূত্রে রিভার ফিনিক্সের এর বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কিয়ানু ছোটবেলা থেকেই সম্পর্কের শেকড়ে সেভাবে আবদ্ধ হতে পারেননি কখনো। রিভার ফিনিক্স এর সাথে কথাবার্তা বলে সে একাকীত্ব কাটছিলো।
দুইজন মিলে অভিনয়ও করলেন এক সিনেমায়; আই লাভ ইউ টু ডেথ' এ। সেই সিনেমার তিন বছর পরেই কিয়ানু শুনলেন অতিরিক্ত ড্রাগ নেয়ার ফলে মারা গিয়েছেন রিভার। কিয়ানু আবার একলা হয়ে পড়লেন।
হতাশা কাটাতে কাজে মনোযোগ দিলেন। সিনেমা করলেন বেশ কিছু। খুব একটা সফল সিনেমা এলো না এই সময়টাতে। কিয়ানু নিজেও বিরক্ত ছিলেন নিজের উপর। কিন্তু এরপরেই যে সিনেমাটি এলো, সেটি হয়ে গেলো মাস্টারপিস। দ্য ডেভিল’স অ্যাডভোকেট এর কথা বলছি। এ সিনেমায় রক্তগরম আইনজীবীর চরিত্রে যে অভিনয় তিনি করলেন, সে তো অসাধারণ। তবে তার চেয়েও চমৎকার বিষয় ছিলো, আল প্যাচিনো, শার্লিজ থেরনের মতো মহাতারকাদের সাথে এক ফ্রেমে থেকেও অধিকাংশ আলো নিজে কেড়ে নেওয়া! এটা ছিলো খুবই অবিশ্বাস্য এক ব্যাপার। সেটাই তিনি করলেন। হুট করেই যেন ফরমুলা রেসিং এর লাস্ট থেকে লিডিং পজিশনে চলে এলেন। এ প্রসঙ্গে আরেকটা গল্প জানিয়ে রাখি, দ্য ডেভিল'স এ্যাডভোকেট এ আল পাচিনো কে আনতে যে টাকার দরকার ছিলো, তা প্রোডিউসারদের কাছে ছিলোনা। আল পাচিনো'কে ছাড়াই সিনেমা করার পরিকল্পনা হয় তখন। কিয়ানু তখন এগিয়ে আসেন, নিজে পারিশ্রমিক কম নিয়ে সে টাকা তিনি প্রযোজকদের হাতে তুলে দেন; আল পাচিনোকে কনফার্ম করার জন্যে। কিয়ানু তাঁর সিনেমা ক্যারিয়ারে এরকম কাজ করেছেন আরো অজস্রবার!
তোমরা কেউ কি দিতে পারো প্রেমিকার ভালোবাসা!
পরিবারে ছোটবেলা থেকে দেখেছেন ভাঙ্গনের সুর। ক্যারিয়ারের শুরুতেই পেয়েছিলেন এক বন্ধুকে। তাকেও হারালেন। জীবনে সাকসেস হয়তো আসছিলোই নিয়মিত, কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনে শান্তি বলতে যা বোঝাই, সেটিই আর পাওয়া হচ্ছিলোনা কিয়ানুর।
এরকমই এক সময়ে কিয়ানুর দেখা হয় জেনিফার সাইমি-র সাথে, যিনি ছিলেন ডেভিড লিঞ্চের সহকারী। 'লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট' এর মতন প্রথম দেখাতেই প্রেম হয়ে যায় তাদের। উথালপাতাল প্রেম চলছিলো।
কিয়ানু ভাবলেন, হয়তো সব ঠিক হয়ে যাবে এবার। বিধাতা কাউকে তো যাবজ্জীবন কষ্ট দিতে পারেন না কখনোই। সাইমির সাথে তাই ঘর সাজিয়ে বসেছিলেন কিয়ানু। তাদের এক কন্যাসন্তানও আসার কথা ছিলো পৃথিবীতে। সে কন্যা আর পৃথিবীতে আসেনা। জন্মের আগেই মারা যায় কন্যাসন্তানটি।
কিয়ানু, সাইমি ভেঙ্গে পড়েন দুইজনই। কিয়ানু দিশেহারা হয়ে যান। এরপর দুইজনের বিচ্ছেদ হয়ে যায়। বিচ্ছেদের কয়েক বছর পর সাইমি গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যান।
সাইমি'র মৃত্যুর পর কিয়ানু তখন আবার ফিরে এসেছেন সেই আগের জায়গায়। একাকীত্বের জায়গায়। যেন টাইম মেশিনে করে কেউ তাকে সেই আগের শাস্তি ফিরিয়ে দিয়েছে- একা থাকার শাস্তি। যেন নামের সার্থকতাই প্রমাণ করে যাচ্ছেন তিনি। পাহাড়ের দীর্ঘশ্বাস হয়ে বুকে বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছেন যে অনুভূতি, সে অনুভূতির ভাগ দেয়া যায় না কাউকেই।
ততদিনে 'ম্যাট্রিক্স' সিনেমার মূলচরিত্রে অভিনয় করে তিনি সুপারস্টার। এই সিনেমার সিক্যুয়েল শুরু হবে সম্প্রতি। কিন্তু সব ছেড়েছুড়ে দিয়ে ছন্নছাড়া জীবন কাটাতে শুরু করলেন কিয়ানু। কী করবেন! কতটুকু যন্ত্রণা আর নিতে পারে একটা মানুষ!
বাইক নিয়ে ঘুরতে লাগলেন এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায়। বাইক নিয়ে তো ভালোবাসা ছিলোই। সেই দু'চাকার বাহনে সওয়ার হয়েই তিনি দেখতে লাগলেন পৃথিবী। বাইক এ্যাক্সিডেন্টও করলেন বেশ ক'বার, পাঁজরের হাড়ও ভাঙ্গলেন। তাও সবকিছু হারিয়ে বাইক নিয়েই যেন বিশ্বসংসার তন্নতন্ন করে একটা জিনিসই খুঁজে বেড়াতে লাগলেন; সুখ।
একা বেঁচে থাকতে শেখো প্রিয়!
কিছুদিন পর আবার ফিরলেন সিনেমাজগতে। দুয়েকটা 'আউট অব বক্স' সিনেমার পর তিনি অফার পেলেন 'জন উইক' করার। নিজের জীবনের সাথে যেন মিলে গেলো সিনেমার স্ক্রিপ্ট। পরিবার হারানো পর্দার 'জন উইক'ই যেন বাস্তবের কিয়ানু রিভস! জন উইকের চোখের ভাষায় যে যন্ত্রণা আমরা দেখলাম সিনেমার পর্দায়, ও যন্ত্রণা বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা ছাড়া কোনোভাবেই ফুটিয়ে তোলা সম্ভব না। কিয়ানু করলেনও অসাধারণ অভিনয়।
সিনেমায় অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি এমন সব কাজ করছিলেন, মানুষের হৃদয়ে ঢুকে যাচ্ছিলেন। সিনেমায় কম পারিশ্রমিক নিতেন মাঝেমধ্যেই, সে টাকা দিয়ে দিতেন টেকনিশিয়ান ও অন্যান্য ক্রু'দের। ম্যাট্রিক্স সিনেমায় টেকনিশিয়ানদের দিয়ে দিয়েছিলেন নিজের থেকে ৮০ মিলিয়ন ডলার। যাতে করে তারা সিনেমার পেছনে আরো বেশি খাটতে পারেন।
যখনই দেখা গিয়েছে বড় কোনো তারকাকে আনতে গিয়ে টাকার ঘাটতি দেখা দিচ্ছে, নিজের পারিশ্রমিককে কমিয়ে দিয়েছেন। ক্ষেত্রবিশেষে বাদও করে দিয়েছেন।
২০০৩ সালের আগ পর্যন্ত নিজের বাড়িও ছিলোনা৷ কী করবেন বাড়ি দিয়ে? একলা মানুষ। তিনি পাহাড়ে, পর্বতে, অরণ্যে ঘুরে বেড়াতেন৷ আর ঘর থেকে পালিয়ে পালিয়ে থাকতেন। প্রয়োজন হলে হোটেলে থাকতেন। কিন্তু ঘরে থাকতেন না। ঘরে গেলেই অতীতের সব যন্ত্রণা এসে ভীড় করতো। নিজেই বলতেন-
আমি মাটির কাছাকাছি থাকতে পছন্দ করি। ঘরে থাকলে দমবন্ধ লাগে খুব।
মাঝেমধ্যেই তাকে নিয়ে ছবি বা ভিডিও ভাইরাল হয়েছে৷ দেখা গেছে, রাস্তায় উদ্বাস্তু কারো সাথে বসে আড্ডা মারছেন, তার থেকে খাবার নিয়ে খাচ্ছেন। অথবা সাবওয়েতে নিজের সীটটা কাউকে দিয়ে দিচ্ছেন।
আবার তাঁর এমনও ছবি ভাইরাল হয়েছে, যেখানে তিনি পার্কের বেঞ্চে বসে আছেন একা। হাতে একটা স্যান্ডউইচ। মাথা নিচু করা। পায়ের কাছে এক ধূসর কবুতর। তাঁর চোখমুখ বিষন্ন, পাণ্ডুর। যেন তাঁর সারাজীবন ফুটে উঠছে এই একটি মাত্র ছবিতেই। এই ছবির নাম হয়ে যায়- স্যাড কিয়ানু।
কিয়ানুর ভক্তরা এসব ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেছে, ভাইরাল করেছে, দুঃখপ্রকাশ করেছে কিয়ানু'র জন্যে। ওদিকে কিয়ানু তখন বাউন্ডুলে জীবন কাটিয়ে চলছেন নিজের মতন।
আমার এ পথ চলাতেই আনন্দ!
কিয়ানু রিভস সম্পর্কে জানেন অথচ তাকে অপছন্দ করেন এরকম মানুষ নেই একটিও। তাঁর জীবনগল্পটাই এতটা বিষাদের, মানুষের মন থেকে নিজের অজান্তেই ভালোবাসা চলে আসে তাঁর জন্যে। নামের অর্থটা আরেকবার মনে করিয়ে দেই। কিয়ানু শব্দের অর্থঃ পাহাড় থেকে বয়ে আসা শীতল বাতাস। নিজের নামকে সার্থক প্রমাণ করার জন্যে এমন অদম্য চেষ্টা দেখিনি আর কারো। পাহাড়ের মতই অবিচল, অথচ বুক থেকে মাঝেমধ্যেই বের হয়ে আসছে দমকা বাতাস, দীর্ঘশ্বাস। সে দীর্ঘশ্বাসে কখনো মিশে থাকছে পরিবার, কখনো প্রিয় বন্ধু, কখনো অনাগত সন্তান, কখনো প্রেমিকা। জীবনে সাফল্য অনেক পেয়েছেন, বাইরে নামলে তাঁর অটোগ্রাফের জন্যে এখনো লাইন পড়ে যাবে নিশ্চিত। কিন্তু এটাও তো ঠিক, জনতার মাঝে নির্জনতার মত তিনি একা। যে নির্জনতার ভাগ দেয়া যায়না কাউকে। সাফল্য পাচ্ছেন নিয়মিতই, কিন্তু সে সাফল্যের খবরে কাউকে জড়িয়ে ধরার মত কেউ নেই তাঁর। যে নির্জনতা নিয়ে তাঁর অস্তিত্ব, সে নির্জনতা নিয়ে কথাও বলা যায় না কারো সাথে।
কিয়ানু রিভস বেঁচে আছেন আমাদের সবার মাঝেই। একাকীত্বকে 'চাদর' হিসেবে শরীরে জড়িয়ে পার করে ফেলেছেন জীবনের ৫৫টি বছর। আজ তাঁর ছাপ্পান্নতম জন্মদিন। তিনি সফল, তিনি সুপারস্টার, তিনি অনেকেরই আইকন, কারো কারো চোখে কিংবদন্তিও। কিন্তু জীবনের গল্পে তিনি হয়তো পরাজিত একজন মানুষ। যিনি বিধাতার পান্ডুলিপির বেড়াজাল থেকে বেরোতে পারেননি। যে বেড়াজাল তাকে একা করে রেখেছে আজীবনের জন্যেই।
যে বেড়াজাল তাকে বানিয়েছে রাতের বোকা বিলবোর্ডের মতন অখণ্ড একা! নিঃসীম একা!
*
প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন