যন্ত্রণায় বিড়ালটা হাঁটতে পারতো না, বসতে পারতো না, খাওয়াদাওয়া তো বন্ধই হয়ে গিয়েছিল, শুধু চিৎকার করতো আর করুণ চোখে তাকিয়ে থাকতো। কিন্ত সেই চোখের দিকে তাকিয়েও ধর্ষকদের একটুও মায়া হতো না...

ছবিতে যে বিড়ালের বাচ্চাটাকে দেখছেন, তার বয়স মাত্র তিন মাস। বাচ্চাটাকে কিছুদিন আগে কিনে এনেছিল পাকিস্তানী একটা পরিবার, লাহোরের এক দোকান থেকে। সেই পরিবারের বাচ্চারা বিড়াল পছন্দ করে, এজন্যেই আনা হয়েছিল বাচ্চাটাকে। কিন্ত সেই বাড়িতেই এমন মর্মান্তিক পরিণতি যে অপেক্ষা করছে অবুঝ প্রাণীটার জন্য, সেটা কেউ কল্পনাও করতে পারেনি তখন। 

বিড়ালের বাচ্চাটাকে বাড়িতে আনার পরে সেই পরিবারের বড় ছেলেটার লোলুপ দৃষ্টি পড়েছিল তার ওপর। সেই ছেলের বয়স মাত্র ১৫ বছর। ব্যাপারটা আপাতদৃষ্টিতে অবাস্তব মনে হতে পারে, কিন্ত পাকিস্তানে এর আগেও ছাগলের ওপর, ভেড়ার ওপর যৌন নিপীড়ন চালানোর হাজার হাজার ঘটনা ঘটেছে, পশুকাম জিনিসটা সেখানে দুর্লভ কোন ঘটনা নয়। এমনকি বাংলাদেশেও এরকম ঘটনার কথা শোনা গেছে। 

আমরা বিড়ালের বাচ্চাটার কাছে ফিরে যাই। সেই পরিবার তাকে কিনে আনার পরই তার দুঃস্বপ্নের দিন শুরু হলো। পনেরো বছরের ছেলেটা এই অবুঝ প্রাণীর ওপর চালাতে লাগলো অবর্ণনীয় নির্যাতন। সে একা নয়, তার ছয় বন্ধু আর কাজিন মিলে প্রায় এক সপ্তাহ একটানা ধর্ষণ করেছে বিড়ালটাকে। নির্যাতনের ভয়াবহতা এত বেশি ছিল যে, বিড়ালটার পায়ুপথ ছিদ্র দুটি এক হয়ে বড় একটা গর্তে পরিণত হয়েছিল। যন্ত্রণায় বিড়ালটা হাঁটতে পারতো না, বসতে পারতো না, খাওয়াদাওয়া তো বন্ধই হয়ে গিয়েছিল, শুধু চিৎকার করতো আর করুণ চোখে তাকিয়ে থাকতো। কিন্ত সেই চোখের দিকে তাকিয়েও ধর্ষকদের একটুও মায়া হতো না।

বিড়ালের বাচ্চাটার অবস্থা যখন সঙ্গীন, তখন সে বাঁচবে না ধারণা করে তাকে ফেলে দেয়া হয়েছে বাসার পাশের ডাস্টবিনে। পাশের বাসার এক মেয়ে বিড়ালটাকে এভাবে পড়ে থাকতে দেখে তাকে উদ্ধার করে পশু হাসপাতালে নিয়ে গেছে। চিকিৎসক আঁতকে উঠেছেন বিড়ালের বাচ্চার এই অবস্থা দেখে! তার কাছে গোটা ব্যাপারটা অভাবনীয় রকমের বিস্ময়কর ছিল। একটা নিরীহ বিড়ালের ওপর যে কেউ এভাবে নিজের কামলিপ্সা চরিতার্থ করতে পারে, সেটা তার কল্পনাতেও ছিল না। 

বিড়ালের বাচ্চাটার শরীর থেকে বের করা রক্ত ও স্পার্ম

বিড়ালের বাচ্চাটার পায়ুপথ এবং যৌনাঙ্গের ভেতর থেকে স্পার্ম, রক্ত, নির্যাতনের জন্য ব্যবহার করা নানা জিনিস যেমন পলিথিন- এসব বের করেছেন ডাক্তার। যত রকমের বিকৃত যৌনাচার আছে, তার প্রায় সবই করা হয়েছে বিড়ালটির সঙ্গে। রক্তপাত বন্ধ না হওয়ায় ডাক্তারদের সব চেষ্টা বিফলে গেছে, মৃত্যুর সাথে অসম্ভব একটা লড়াইতে হেরে গেছে বিড়ালটা। পৃথিবী আর তার শ্রেষ্ঠ জীব মানুষের প্রতি তীব্র ঘৃণা আর বিতৃষ্ণা বুকের ভেতরে পুষে মারা গেছে বাচ্চাটা। 

বিড়ালকে উদ্ধার করা মেয়েটা ভেটেরিনারি ডাক্তারদের পরামর্শ নিয়ে অ্যানিমেল রাইটস অর্গানাইজেশনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে, তারপর মামলা করেছে সেই ছেলে আর তার পরিবারের বিরুদ্ধে। এই ধর্ষকের পরিবার তখন নিজেদের পাপিষ্ঠ ছেলেকে বাঁচাতে মরিয়া হয়ে উঠেপড়ে লেগেছে। মেয়েটাকে তারা ক্রমাগত হুমকি দিচ্ছে, স্থানীয় প্রভাবশালীদের দিয়েও হুমকি দেয়া হচ্ছে। সেই মেয়ে এখন নিরাপত্তার জন্য নিজের এলাকা ছেড়ে অন্য কোথাও আত্মগোপন করেছে, তবে মামলা তুলে নেবে না বলে জানিয়েছে। 

ছোটবেলায় ঈশপের গল্প পড়েছিলাম, স্কুলের ছেলেরা ইটের টুকরো ছুঁড়ে মারছিল পুকুরে, তাতে মারা যাচ্ছিল।পুকুরের ব্যাঙেরা। কারো কাছে যেটা খেলা, কারো কাছে সেটা মরণ। কিন্ত এই ঘটনাটাকে কি খেলা বলে উড়িয়ে দেয়ার কোন উপায় আছে? এটা কোন ফাজলামি না, টাইম পাস না, এটা খুন, পৈশাচিক উপায়ে ঠান্ডা মাথায় একটা প্রাণকে স্তব্ধ করে দেয়া। এই বিড়ালের বাচ্চাটার তো কোন দোষ ছিল না। কোন অপরাধ সে করেনি। তাহলে কেন তাকে এমন পরিণতি বরণ করে নিতে হলো? কেন বিকৃতমনস্ক কিছু কিশোরের লালসার করুণ শিকার হতে হলো তাকে?

মানুষকে বলা হয় আশরাফুল মখলুকাত- সৃষ্টির সেরা জীব! এই সৃষ্টির সেরা জীবই নিজের স্বার্থে প্রাণীকুলের ওপর যে অত্যাচারটা চালায়, সেটা যদি কেউ মানুষের ওপর চালাতো, তাহলে মানবজাতি বিলুপ্ত হয়ে যেত অনেক আগেই। কখনও শুনেছেন, বিড়াল বা কুকুর, বা অন্য কোন প্রাণী, একটা মানবসন্তানের ওপর যৌন নির্যাতন চালাচ্ছে, ধর্ষণ করে তাকে মেরে ফেলেছে? শুনবেন না, কারণ কামুক প্রবৃত্তি তাদের থাকলেও, তারা সেটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে জানে, মানুষ জানে না। এরকম ন্যাক্কারজনক ঘটনার পরে আশরাফুল মখলুকাতের থিওরিটাকে মানুষের বানানো একটা মনগড়া বুজরুকি ছাড়া আর কিছুই মনে হয় না আমার কাছে। 

তথ্যসূত্র কৃতজ্ঞতা- রাতিন রহমান, এমএম নিউজ ডট টিভি

প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা